RSS

Wednesday, June 10, 2009

চোখ রূপের আনন্দলোক

রূপকড়চা’র বিশেষ আয়োজনে চোখের জন্য সময় উপযোগী ভিন্ন ৫টি সাজ তৈরি করেছেন এবং চোখের মেকআপ সম্পর্কে বিশেষ এই প্রতিবেদনটি লিখেছেন রূপ বিশেষজ্ঞ ও হেরোবিক্স ব্রাইডালের কর্ণধার তানজিমা শারমীন মিউনি। মডেল হয়েছেন এলিনা আর ছবি তুলেছেন সাফাওয়াত খান সাফু

চোখের ত্বক বুঝে মেক আপ : প্রথমে আপনার ত্বকের ধরনটি জানুন। তৈলাক্ত ত্বকে পাউডার আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। স্বাভাবিক ত্বকে যেকোনো আই শ্যাডোই চলতে পারে।
চোখের শেপ : ছোট চোখে যথা সম্ভব কম মেকআপ ব্যবহার করুন। গাঢ় আই শ্যাডো লাগাবেন না। চোখের উপরে এবং নিচে লাইনার দিন। মাস্কারা কম লাগাবেন।
যাদের দু’চোখের দূরত্ব কম তারা নাকের কাছাকাছি চোখের ভেতরদিকে থেকে বাইরের দিকে হালকা রঙের আইশ্যাডো লাগালে চোখ দুটো বিস্তৃত দেখায়।
যাদের দু’চোখের দূরত্ব বেশি তারা রঙ মিশিয়ে চোখের ভেতরের দিকের কোণায় লাগান। চোখের পাতা ঘেঁষে সরু করে লাইনার দিন।
বসা চোখে হালকা করে আইশ্যাডো ব্যবহার করুন, ব্রাউন মাস্কারা লাগান।
ভাষা চোখের ওপরে ও নিচে কোল ঘেঁষে শ্যাডো লাগান। ভাল করে মিলিয়ে নিন।
মেক-আপ যেভাবে করবেন : চোখের মেক-আপ শুরু করার আগে দেখে নিন আপনার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে ডার্ক সার্কেলের ওপর তিন ফোঁটা কনসিলার লাগিয়ে নিন। নাকের পাশের চোখের কোণ থেকে শুরু করে মাঝখানের অংশ পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন। তারপর আস্তে আস্তে বাইরের অংশে মিলিয়ে নিন।

০ ফেস পাউডার লাগিয়ে অতিরিক্ত পাউডার ঝেড়ে ফেলুন। চোখের পাতা থেকে ব্রোকেন পর্যন্ত ক্রিম বেজ শ্যাডো লাগিয়ে নিন। ক্রিম বেজ শ্যাডো লাগানোর উদ্যোগ হচ্ছে পরবর্তী পর্যায়ে আপনার কালার শ্যাডোটি যেন ভালভাবে লেগে থাকে।
০ আই শ্যাডোর ব্যবহার : আই-শ্যাডো লাগানোর ক্ষেত্রে সময়, পোশাক চুলের রঙ সবকিছু খেয়াল রেখে আইশ্যাডো চোখের ভেতরদিক থেকে বাইরের দিকে লাগান। দু’তিনটি শেড মিলিয়ে লাগাতে পারেন। বর্তমানে ট্রেন্ডকে কালো করে আপনি তিনটি রঙকে রঙধনুর শেপ-এ ব্লেন্ড করে নিন। এমনভাবে ব্লেন্ড করুন যেন চোখের পাতার উপর গাঢ় কালার থাকে এবং আইব্রোকোণে এসে হালকা কালারটি রেখাপাত করে।
০ গাঢ় রঙেও শ্যাডোকেই আপনি আই লাইনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। একটি পয়েন্টেড ব্রাশকে পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে তাতে গাঢ় শ্যাড মিলিয়ে চোখের পাতায় আইল্যাশের কোণ ঘেষে লাগিয়ে নিন।
০ আপনার চোখ কতটা আকর্ষণীয় তা নির্ভর করবে আপনি কিভাবে লুক দিচ্ছেন তার উপর। আপার স্মোকি আইজ নিঃসন্দেহে সবাইকে আকর্ষণীয় করবে। ট্রেন্ড হিসেবে এখন অনেকেই কালো, সিলভার, নীল, সবুজ রঙ ব্যবহার করছে।

আই মেকআপ কিভাবে তুলবেন : মেকআপ না উঠিয়েই কখনোই ঘুমাতে যাবেন না। ভাল ক্লিনজার অথবা আই মেকআপ রিমুভার প্যাড দিয়ে মেকআপ তুলে ফেলুন। অয়েল বেসড রিমুভার প্যাড ত্বককে শুষ্ক করে না। মেক-আপ তুলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

চোখের মেকআপ করার পদ্ধতি :চোখের মেকআপ করার পদ্ধতি একদিনে আয়ত্ত করা যায় না। প্রাকটিস প্রয়োজন। চোখ আঁকা এবং শেড মেলানোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে চোখের মেকাপের চমক। ফাউন্ডেশন লাগানোর সময় চোখের ওপর এবং নীচে ভাল করে লাগাবেন। চোখের তলায় কালি থাকলে কনসিলার দিয়ে মিলিয়ে নিন। চোখের নিচে লুজ পাউডার লাগিয়ে নিন। চোখের ওপর সারা পাতা জুড়ে বেজ আই-শ্যাডো লাগান। তারপর পোশাকের সাথে মিলিয়ে বা আপনার পছন্দমত আই-শ্যাডো চোখের ভেতরদিকে থেকে বাইরের দিকে লাগান। দু’তিনটে সেট মিলিয়ে লাগাতে পারেন।
আইব্রু কোণে হাইলাইটার লাগান। কাজল পরুন চোখের ভেতরে। ওপরে ও নীচে আই লাইনার লাগান। তবে ব্যক্তিগত পছন্দ থাকতেই পারে। চোখের নিচে আই-লাইনার এর বদলে স্মাজড্ স্মাজড্ কাজল ট্রাই করতে পারেন। বাঙালির চেহারায় ও ত্বকে কালো লাইনার ভাল দেখায়। ফর্সা ত্বকে বাদামি লাইনার লাগান। মাস্কারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখবেন চোখের পাপড়িগুলো যেন একটির সাথে অন্যটি লেগে না যায়। লেগে গেলে ব্রাশ দিয়ে আলাদা করুন। জমকালো পাটিতে গ্লীটার ব্যবহার করতে পারেন। দিনের বেলা কালার শ্যাডো না লাগালোই ভাল। মেকআপের ক্ষেত্রে ব্রাশ ব্যবহার করবেন তবে আইমেকাপ ক্লেনজিং-এর জন্য আঙ্গুলের ডগার জবাব নেই। আপনার পছন্দমত শেড হালকা হাতে সাবধানে মিলিয়ে নেবেন।

চোখ সুস্থ, সুন্দর রাখতেঃ
আলোকিত সুন্দর পৃথিবী দেখি যে চোখ দিয়ে, যে চোখ মনের কথা বলে, সে চোখ শুধু একটি ইন্দ্রিয় নয়, সৌন্দর্যও। চোখের মধ্যে ফুটে ওঠে আনন্দ, বেদনা, হতাশা। মুখখানির সৌন্দর্য বহন করে এক জোড়া উজ্জ্বল চোখ। চোখ দিয়ে দেখি, চোখ দিয়ে কাঁদি, চোখ দিয়ে হাসি, চোখ দিয়ে পড়ি, চোখ দিয়ে কাজ করি। প্রতিদিন চোখ প্রচুর কাজ করে। তাই চোখের এই কাজের পাশাপাশি দরকার চোখের জন্য আলাদা যতœ, ব্যায়াম এবং বিশ্রাম। চোখ খুব সেনসেটিভ। শুধু চোখ নয়, চোখের চারপাশের ত্বকও সংবেদনশীল ও নরম। তাই সেদিকেও নজর দেয়া জরুরি। ছোট হোক, বড় হোক, এক জোড়া চোখ শুধু সৌন্দর্যই এনে দেয় না, সুস্বাস্থ্যেরও পরিচয় বহন করে। চোখ দুটো উজ্জ্বল সুন্দর রাখার কিছু টিপস্ দেয়া হল-

০ ভিটামিন এ জাতীয় খাবার যথেষ্ট পরিমাণে চোখের জ্যোতি বাড়ায়। তাই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খাবেন।
০ ছোট মাছ, দুধ, মাংস, সবুজ শাকসবজি, ভিটামিন বি ও সি জাতীয় ফল ইত্যাদি চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে উপযোগী খাবার। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই সব খাদ্য রাখতে ভুলবেন না যেন।
০ চোখের পাশাপাশি চোখের চারপাশের ত্বকের যতœ নেয়া জরুরি। মেকআপ বেশিক্ষণ রেখে দিলে চোখে ইনফেকশন হতে পারে। তাই চোখের মেকআপ তোলার বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে।
০ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চোখে কোনো রকম ড্রপ, লোশন, তেল বা ক্রিম ব্যবহার করবেন না। করলে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
০ চোখের চারপাশে ফেসপ্যাক, মাস্ক, অ্যাসট্রিনজেন্ট জাতীয় কিছু লাগাবেন না।
০ চোখের চারপাশের ত্বক টানাটানি, ঘষাঘষি করবেন না।
০ কম আলোয় বা অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলোয় বই পড়া চোখের জন্য ক্ষতিকর। আলো ঝিকমিক করলে বা দপদপ করলে সেই আলোয়ও পড়া উচিত নয়। খুব ছোট ছাপার অক্ষর বেশি পড়লে চোখের সমস্যা হতে পারে।
০ একটানা টিভি দেখলেও চোখ দুর্বল হয়ে পড়ে। খুব কাছে বসে টিভি দেখবেন না। টিভি থেকে অন্তত ৬/৭ ফিট দূরে বসে টিভি দেখুন।
০ অত্যাধিক ধূমপান শরীরের যেমন ক্ষতি করে, তেমনি চোখেরও ক্ষতি করে। ধূমপান করলে শরীরে ভিটামিন সি’র ঘাটতি হয়। চোখের চারপাশে বলিরেখাও পড়ে তাড়াতাড়ি। রোদে বেরুলে চোখে সানগ্লাস পড়ুন।
০ মানুষের জীবনে শোক থাকে। সেই শোকে কেউ কেঁদে ফেলে; কেউ কান্না চাপিয়ে রাখে। চোখের যে জল ঝরতে চায় তাকে ঝরতে দিন। চোখে জল চেপে রাখবেন না। চেপে রাখা জল চোখে বসে গেলে চোখের প্রচুর ক্ষতি হয়, চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। তাই বেশি কাঁদবেন না। কান্না আসলে কান্না শেষ করে চোখ মুখ ধুয়ে ফেলুন।
০ চোখের প্রসাধন তুলতে ভেজা তুলো ব্যবহার করতে পারেন অথবা ভেজা টিস্যু। এর জন্য গোলাপজলে তুলো ভিজিয়ে রাখবেন। পারলে ফ্রিজে রেখে দিবেন। চোখের প্রসাধন তোলার সময় নিচের দিকে আলতো করে মুছে নেবেন। খুব সাবধানে তুলবেন যাতে চোখে কিছু না ঢোকে।
০ খুব তৈলাক্ত ত্বক যাদের তারা চোখের তলায় অল্প ক্রিম লাগাতে পারেন শোবার আগে। মিনিট পনেরো রেখে তুলে নিবেন।
০ হালকা গরম পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে কটন বাড দিয়ে ভিজিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন মাসে অন্তত একবার। চোখে ময়লা জমে চোখে চুলকানি হয়। এভাবে চোখ পরিষ্কার করলে চোখে আরাম লাগবে, চোখ ফ্রেস থাকবে। দিনে দু’বার চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে ধোবেন। চোখ ধুতে বরফ পানি ও গোলাপ জলের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে।

চোখের ম্যাসাজ
০ চোখের চারপাশের ত্বকে কোনো তৈলাক্ত গ্রন্থি নেই। তাই এই অংশের ত্বকে খুব চট করে দাগ বা বলিরেখা পড়ে। তাই চোখের চারপাশের ত্বক কখনো টানা হেঁচড়া করবেন না।
০ চোখ ম্যাসাজ করতে হলে, ম্যাসাজটা ঠিকঠাক জানা চাই। ভালভাবে না জেনে কখনো চোখের ম্যাসাজ করবেন না। চোখের ম্যাসাজের সময় খুব হালকাভাবে আলতোভাবে চোখ স্পর্শ করবেন।
০ একমাত্র চোখের ম্যাসাজেই ম্যাসাজের সময় হাত, মুখের বাইরের দিক থেকে ভেতরের দিকে অর্থাৎ মধ্যখানে যায়। হাতের প্রথম দু’টি আঙ্গুল দিয়ে চোখের ম্যাসাজ শুরু করবেন। চোখের কোণ থেকে চি ঘেঁষে নাকের দিকে আলতো করে আঙুল দিয়ে যাবেন। নাকের কাছে এলে ঘুরিয়ে উপর দিয়ে আঙুল দুটো আলতো করে চোখের বাইরের দিকে নিয়ে আসুন। দুটো চোখেই একইভাবে ম্যাসাজ করবেন।

জুন ০৯, ২০০৯, মঙ্গলবার : ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৬

0 comments:

Post a Comment