RSS

Wednesday, June 17, 2009

ভাবনা যখন স্নানঘরের

অনেকেই বলেন, একটি পরিবারের স্নানঘর এর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আর উপকরণ দেখেই নাকি বাড়ির কর্তাব্যক্তির রুচি সম্পর্কে আঁচ করা যায়। কাজেই যারা সুন্দর থাকতে ভালোবাসেন তারা বাড়ির অন্য সব দিকের মতো নজর দেন স্নানঘরের দিকেও। আর একটি স্নানঘরকে পরিপাটি করে গড়ে তুলতে হলে বাড়ি বানানোর শুরু থেকেই এগোতে হয় সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে। অন্যদিকে যারা ভাড়া বাড়িতে অন্যের রুচিতে তৈরি স্নানঘরে তাদের প্রয়োজন মেটান তারাও কিন্তু বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন এনে খানিকটা হলেও পাল্টে দিতে পারেন স্নানঘরের আদল।

স্নানঘর তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথমেই যে বিষয়টি ভাবতে হবে তাহলো এর আকার-আয়তন। অনেকেই তাদের বেডরুমটিকে খানিকটা বড় দেখানোর আয়োজন করতে যেয়ে স্নানঘরের জায়গাটিকে করে তোলেন অপ্রতুল। অথচ এটি দেখতে যেমন দৃষ্টিকটু দেখায় তেমনি প্রয়োজনীয় কাজে নানা অসুবিধারও সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ স্নানঘরে কমোড বা প্যান বসানোর পর যদি গোসলের জায়গাটি অপরিসর হয়ে পড়ে তবে সেটা পরবর্তীতে অনেকের জন্যই অস্বস্তির কারণ হয়। তাছাড়া যেসব গৃহিনী স্নানঘরে কাপড় ধোয়ার কাজটিও সারেন তাদের জন্যও খানিকটা বাড়তি স্থানের প্রয়োজন হয়। এছাড়া নিরাপত্তার ঝুঁকি না থাকলে স্নানঘরের দেয়াল তোলার সময় আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় জানালাটি খানিকটা বড় রাখাই ভাল।

স্নানঘরের আয়তনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর দেয়াল এবং মেঝের বিষয়টি। এক্ষেত্রে স্নানঘরের মেঝে নেট ফিনিশিং, মোজাইক বা টাইলস যেটি দিয়েই করা হোক না কেন খেয়াল রাখতে হবে যেন তা পিচ্ছিল বা মসৃণ হবার পরিবর্তে খানিকটা খসখসে হয়। তা নাহলে ভেজা স্নানঘরে পিছলে গিয়ে অকারণ বিপত্তির মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়া স্নানঘরের ঢাল যেন একদিকে থাকে এবং এতে যেন কোনোমতেই পানি জমাট বাঁধতে না পারে সেদিকেও বাড়তি লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যদিকে বাথরুমের অংশটিতে যারা কমোডের পরিবর্তে প্যান বসান তারা সামান্য উঁচু একটি ভিত্তির উপর প্যান বসালে তা দেখতে যেমন ভাল লাগে তেমনি অকারণ অস্বস্তি থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। আর স্নানঘরের দেয়ালে টাইলস বা মোজাইকের পরিবর্তে রঙ ব্যবহার করলে তা অবশ্যই নীচ থেকে তিন-চার ফিট ছেড়ে উপরের অংশ রঙ করাতে হবে। আর রঙ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে এমন ধরনের প্লাস্টিক বা এনামেল পেইন্ট যেগুলো পানির সংস্পর্শে সহজে নষ্ট না হয়।

স্নানঘরে যারা মুখ ধোয়া বা অন্যান্য ছোটখাটো কাজের জন্য বেসিন রাখতে চান তারা যেকোনো একটি কোণে এটা রাখলেই ভাল করবেন। সেই সাথে বেসিনের ওপর প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য একটি স্ট্যান্ড ও লুকিং গ্লাসও লাগানো যেতে পারে। এছাড়া একটি পরিপূর্ণ স্নানঘরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ‘হার্ডওয়্যার’ এর মধ্যে রয়েছে পানির কল, ফ্ল্যাশ এক্সেসরিজ, কমোডের জন্য হ্যান্ড শাওয়ার ও গোসলের জন্য পৃথক শাওয়ার, তোয়ালে রাখার স্ট্যান্ড, টিস্যু পেপার হোল্ডার, সাবান রাখার স্ট্যান্ড প্রভৃতি। তবে যারা সাধারণ মানের চাইতে অনেক বেশি অভিজাতভাবে তাদের স্নানঘরকে সাজিয়ে তুলতে চান তাদের জন্য বাথটাব, গিজার থেকে শুরু করে শাওয়ার কার্টেন এর মতো আরো অনেক এক্সেসরিজেরই প্রয়োজন পড়বে। অন্যদিকে যারা মধ্যবিত্ত হলেও একটু শৌখিনভাবে তাদের স্নানঘরটিকে সাজিয়ে তুলতে চান তারা চাইলে কৃত্রিম বা সত্যিকারের গাছ, সাবান-টুথপেস্ট রাখার রকমারী সেট, ছোট্ট কাবার্ড, ম্যাগাজিন স্ট্যান্ড ইত্যাদি অনেক কিছুই যোগ করে নিতে পারেন তাদের স্নানঘরের উপকরণের তালিকায়।

প্রয়োজনীয় জিনিসের দরদাম

যারা ভাড়াবাড়িতে থাকেন না তাদের জন্য স্নানঘরের প্রথম উল্লেখযোগ্য খরচ শুরু হয় টাইলস বা মোজাইক থেকে। বর্তমানে বাজারে যেসব টাইলস পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে মোটামুটি ভাল মানের টাইলস বসাতে হলে আপনার খরচ পড়বে ফ্লোর টাইলস্ এর ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট ২৯-৩৫ টাকা এবং ওয়াল টাইলস এর ক্ষেত্রে ২৬-৩৩ টাকার মতো। আর মোজাইকের ক্ষেত্রে গড়পরতা প্রতি বর্গফুট সাধারণ মোজাইকের জন্য প্রয়োজন পড়বে ৫০-৮০টাকা।

ফ্লোর টাইলস বা মোজাইকের পর ভাবতে হবে প্যান বা কমোড এবং বেসিনের কথা। আমাদের দেশে বর্তমানে যেসব প্যান পাওয়া যায় সেগুলোর গড়পড়তা দাম ১৫০০-৩০০০টাকা। অন্যদিকে দেশীয় কমোডগুলোর দাম পড়ে ২০০০ থেকে ৬০০০ টাকার মতো। তবে যারা বিদেশী কমোড এবং বিদেশী ফিটিংস ব্যবহার করতে চান তাদের ক্ষেত্রে এসব খরচ দ্বিগুন থেকে শুরু করে তিন-চারগুন পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত কমোডের সাথে ফ্ল্যাশ সংযুক্ত থাকলেও প্যান বসালে এটি আলাদাভাবে কিনতে হয় এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি ফ্ল্যাশের দাম পড়তে পারে ১২০০-৩০০০টাকার মতো। এছাড়া বাথরুমের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দরদাম হলো বেসিন ৮০০ থেকে ৬০০০টাকা, লুকিং গ্লাস ২৫০ থেকে ৫০০০টাকা, গ্লাস সেলফ ১২০ থেকে ৮০০ টাকা, সাবান-টুথপেস্ট রাখার সেট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, টিস্যু পেপার হোল্ডার ১০০ থেকে ৮০০ টাকা, তোয়ালে রাখার স্ট্যান্ড ১৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, হ্যান্ড শাওয়ার ২৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, গোসলের শাওয়ার ২০০-৮০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের কল ২৫০-৩০০০ টাকা এবং টবসহ ছোট কিংবা মাঝারি মাপের গাছ ১৫০ থেকে ১০০০ টাকা।

0 comments:

Post a Comment