RSS

Friday, June 12, 2009

বাচ্চাকে স্বাবলম্বী করে তুলুন

কেস স্টাডি-১ : তিথী ও শওকতের একমাত্র মেয়ে রাইসা। তিথী এবং শওকত দু’জনেই চাকরিজীবী। চাকরির কারণে দু’জনকেই সারাদিন বাসার বাইরে থাকতে হয়। ফলে সারাদিন বলতে গেলে একাই বাসায় থাকতে হয় রাইসাকে। রাইসার বয়স ১০। মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে। বাবা-মা বাসায় না থাকলেও খুব বেশি অসুবিধা হয় না তার। কারণ নিজের যেসব কাজ তা নিজে থেকেই করতে শিখে গেছে রাইসা। স্কুল থেকে ফিরে নিজেই জামা জুতো খুলে গোসল সেরে নেয় সে। দুপুরে খাওয়া শেষ করে হোমওয়ার্ক নিয়ে বসে। মা বাসায় থাকে না বলে এসব কাজে কখনোই ফাঁকি দেয় না। এরপর সন্ধ্যায় মা বাসায় ফেরার পর টুকটাক কাজে সাহায্যও করে মাকে। মা বাসায় নেই দেখে কখনই সে অগোছালো থাকে না। এসব কারণে তিথী এবং শওকতের চাকরি করতে কোনো সমস্যাই হয় না।

কেস স্টাডি-২ : তিথীর মত সীমাও একজন চাকরিজীবী মহিলা। সেও একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার স্বামী রুবেল অনেক ব্যস্ত ব্যবসায়ী। ফলে তাদেরও একমাত্র ছেলে জারিফকে সারাদিনই একলা থাকতে হয় বাসায়। জারিফ পড়ে ক্লাস থ্রীতে। কিন্তু এখনও মাকে ছাড়া একরকম কিছুই করতে পারে না সে। এখনও মাকে ছাড়া খেতে চায় না জারিফ। সব কাজেই তার বাহানা। সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় ফেরার পর সীমা নিজ হাতে তাকে না খাইয়ে দিলে একদম খাবে না। আর মার বা সংসারের কোনো কাজেই সহযোগিতা করে না জারিফ।

আমাদের সমাজে জারিফের মতো ছেলেমেয়ের সংখ্যা কম নয়। এরকম সমস্যার জন্য অনেক মহিলাকেই তাদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হয়। আবার রাইসার মতো ছেলেমেয়েদের উদাহরণও রয়েছে বেশ। আপনার বাচ্চাকে স্বাবলম্বী করতে ছোটবেলা থেকেই ট্রেনিং শুরু করে দিন। এ ব্যাপারে কিছু টিপস্ দেওয়া হলো-
০ ছোট অবস্থায় বাচ্চাকে দিয়ে তার নিজের কাজগুলো একটু একটু করে করাতে শুরু করুন। যেমন জামা পরা, বোতাম আটকানো, জুতা পড়া, জুতার ফিতা বাঁধা এসব কাজ তাকে শিখিয়ে দিন। স্কুলের ব্যাগ আপনি গুছিয়ে না দিয়ে তাকে দিয়ে গোছান। তবে বাধ্য করবেন না। এই বয়সের বাচ্চাদের অনেক ব্যাপারে উৎসাহ থাকে। সেই উৎসাহকে কাজে লাগান।
০ সন্তান নিজে থেকে কাজ করতে গেলে প্রথমে অনেক ভুল ভ্রান্তি হবে। এতে তাকে বকাবকি করবেন না। বরং তার ভুল ধরিয়ে দিন। এক সময় নিজে থেকে ঠিকমত করতে শিখে যাবে সে। ভাল কাজ করলে প্রশংসা করুন।
০ আপনার সন্তানকে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে পরিবারে তারও একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান এবং দায়িত্ব আছে। এতে তার ভেতর একটা দায়িত্ববোধের সৃষ্টি হবে। সন্তান একটু বড় হলে তাকে রুটিন মাফিক কিছু কাজ দিন। যেমন বিল দেওয়া, সঙ্গে করে বাজারে নিয়ে যাওয়া, ঘরের টুকিটাকি জিনিস গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি।
০ সন্তান একটু একটু বড় হয়ে গেলে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ হাত খরচ দিন। এতে তার প্রয়োজনীয় ছোটখাট জিনিস কেনার জন্য আপনার ভরসায় বসে থাকতে হবে না। তবে টাকা দিয়ে কি করছে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে ভুলবেন না।
০ বাচ্চাকে দায়িত্বের পাশাপাশি স্বাধীনতাও দিন। পোশাক পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ব্যাপারে তার পছন্দ অপছন্দকে মূল্য দিন। তার পার্সোনালিটি এবং প্রেস্টিজের দিকে লক্ষ্য রাখুন। সবার সামনে কখনই বকাঝকা করবেন না। ওর চাওয়াগুলোকে বিবেচনা করে দেখুন। সাজেশন দিতে পারেন।
০ বিভিন্ন অকেশনে বাচ্চাকে উপহার দিন। সারাদিন একা থাকে বলে তার মনে যেন এই ধারণা না বাসা বাঁধে যে আপনারা তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। তাকে বুঝান যে আপনারা যা করছেন তা তার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই করছেন।

0 comments:

Post a Comment