RSS

Friday, June 12, 2009

বাজেট সামলানোর উপায়

গুছিয়ে সংসার করাটা একটা আর্ট। আর খরচ বাঁচানোও একধরনের সঞ্চয়। ভবিষ্যত জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা।

প্রাথমিক প্রস্তুতি

০ আয়, ব্যয়, ধার এবং সঞ্চয়-চারটি ক্ষেত্রে নজর দিন।
০ আলাদা আলাদা ফাইল মেইনটেইন করুন। ইন্স্যুরেন্স পলিসি ইনভেস্টমেন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ক্রেডিট কার্ডের হিসেব আলাদাভাবে রাখুন।
০ এই সব ফাইল উল্টে দেখার জন্য প্রত্যেক দিন অন্তত ১৫ মিনিট ব্যয় করুন অথবা সপ্তাহে একদিন এক ঘন্টা।
০ বেতন বাড়া, ইনভেস্টমেন্টের ইন্টারেস্টের ওঠানামা, বাড়িতে উৎসব, অনুষ্ঠান অথবা অসুস্থতার জন্য আয়-ব্যয়ের তারতম্য ঘটতেই পারে। তাই মাঝে মাঝেই নজর রাখুন।
০ সঞ্চয়ের জন্য বরাদ্দ টাকা ট্যাক্স দেওয়ার মতো বাধ্যতামূলক খরচ বলে মনে করুন। প্রয়োজন হলে ডিপোজিট জাতীয় স্কিমে টাকা রাখুন।
০ বাজেট করা এবং খরচে নজর রাখা একবার অভ্যাস করলে সঞ্চয় করা সহজ হয়।
০ ছোটবেলা থেকে সামান্য হলেও জমাতে শুরু করুন।
০ দু’মাসের বেতনের পরিমাণ টাকা ব্যাংকে সবসময় রাখতে চেষ্টা করুন।
০ আর্থিক অস্বস্তি থাকলে বুঝতে চেষ্টা করুন কোন খরচ সমস্যা তৈরি করছে। অতিরিক্ত নিমন্ত্রণ এবং গিফট, রেস্তোরাঁ বিল, পার্লার খরচ, কিংবা মোবাইল বিল যাই হোক না কেন সেই মতো নিজেকে কন্ট্রোল করুন।
০ একটা লোন চলাকালীন আবার লোন নেবেন না।
০ অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে চেষ্টা করবেন না।
০ চাহিদার শেষ নেই। নিজের আয় বুঝে ব্যয় করুন।

সাধারণ নিয়ম
০ বেতনের ১০% জমাতে চেষ্টা করুন। হঠাৎ প্রয়োজনে অসুবিধায় পড়তে হবে না।
০ ইনভেলাপ সিস্টেম মেনে চলুন। ইএমআই, ফোন, ইলেকট্রিক বিল, বাড়ি ভাড়া, বাচ্চার টিউশান ফি, কাজের লোকের বেতন, পেট্রোল খরচ ইত্যাদি নিয়মিত খরচের টাকা আলাদা আলাদা খামে রাখুন।
০ তারপর মাসিক খরচের টাকা রাখুন।
০ মাসের শেষে যদি কিছু বাঁচে, ‘সেভিংস’ ইনভেলাপে রাখুন।
০ বাড়ির সবাইকে অযথা আলো, ফ্যান চালিয়ে রাখার বদ অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন করুন।
০ অযথা পানির কল খোলা যাতে না থাকে। পানির অপচয় সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করুন।
০ খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে রাখুন। ঠান্ডা খাবার গরম হতে বেশি গ্যাস খরচ হবে।
০ সব সরঞ্জাম গুছিয়ে নিয়ে রান্না শুরু করুন। বারবার গ্যাস জ্বালালে এবং বন্ধ করলে গ্যাস বেশি খরচ হয়।
০ মোবাইলের প্রি-পেইড কানেকশন নিন এবং খরচের হিসাব রাখুন। যে মাসে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কার্ড শেষ হয়ে যাবে, সে মাসে আর কার্ড ভরবেন না। তবেই খরচ কন্ট্রোলে রাখতে পারবেন।
০ টেলিফোনে কল নোট রাখুন। নির্দিষ্ট খরচের ওপরে চলে গেলে ফোন করা কমিয়ে দিন।
০ খুচরা পয়সা একটা আলাদা জায়গায় নিয়মিত রাখুন। এতে রিক্সা ভাড়া বা বাসভাড়া দেওয়ার সময় বড় নোট দিতে হবে না।

যানবাহান
০ যানবাহনের খরচ কমানোর সুযোগ থাকলে অপেক্ষাকৃত কম খরচের বাহনে চড়ুন। যেখানে বাসে যাওয়া সম্ভব, সে ক্ষেত্রে ট্যাক্সি চড়বেন না। হাঁটার সুযোগ থাকলে রিক্সা চড়বেন না।
০ নিজের গাড়িতে সপ্তাহে কতটুকু পেট্রোল লাগে তার হিসাব করুন।
০ একদিকের অনেক কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা করুন। এতে পেট্রোলের সাশ্রয় হবে।
০ ছেলেমেয়েদের যতটা সম্ভব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কিংবা স্কুলবাসে যাতায়াত করতে দিন। সাশ্রয় হবে, ওদের গড়ে ওঠার পক্ষেও ভাল।

কেনাকাটা
০ মাসের পুরো খরচ কেনার সময় ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি’ কিংবা ‘পাঁচ কিলো চালের সঙ্গে ১ কিলো চিনি ফ্রি’ ইত্যাদি অফার খেয়াল করে কিনুন।
০ লিস্ট করে কেনাকাটা করুন। তা না হলে দোকানে গিয়ে সেই মুহূর্তে জরুরি নয় এমন জিনিস কেনা হয়ে যায়।
০ কমপ্যারিজন শপিং অভ্যাস করুন। ৫০০ মিলির শ্যাম্পুর দাম বেশি হলেও ২০০ মিলির চেয়ে অনেক বেশি ইকোনোমিক্যাল।
০ বন্ধু বা কারো সঙ্গে শপিংয়ে গেলে নিজের কেনাকাটা না থাকলে অতিরিক্ত টাকা বা ক্রেডিট কার্ড সঙ্গে নেবেন না।
০ প্রতিদিন ব্যবহারের জুতো এবং ব্যাগ একটু দাম দিয়ে ভাল কোয়ালিটির কিনুন।
০ সারপ্লাস এক্সপোর্ট গার্মেন্টসের দোকানে যান। কম দামে পছন্দের জামা-কাপড় পাবেন।
০ বড় বড় দোকানে যখন ডিসকাউন্ট চলে সে সময় নিজেদের এবং উপহারের জামাকাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী কিনে রাখুন।
০ বাজেট ছিল ৫০০ টাকা, সুন্দর পোশাক পেয়ে গেলেন ৪৫০ টাকায়। বেঁচে যাওয়া ৫০ টাকা ‘সেভিংস’ ইনভেলাপে জমিয়ে রাখুন।
০ অনলাইন পারচেজের ফাঁদে পা দেবেন না। শিপিং কস্টের জন্য দাম বেশি পড়ে।
০ বাচ্চাকে বই নিশ্চয়ই কিনে দেবেন। সেই সঙ্গে লাইব্রেরীর মেম্বার করে দিন। টাকা বাঁচবে, অনেকরকম বই পড়ার সুযোগ পাবে।
০ সিনেমার সিডি, ডিভিডি ভাড়া নিয়ে বাড়িতে দেখুন। টিকেটের দাম ছাড়াও যাতায়াত খরচ, পপর্কন, কফির দাম মিলিয়ে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।

ক্রেডিট কার্ড টেম্পটেশনস্
০ ক্রেডিট কার্ড ভাল যদি ব্যবহারে বিচক্ষণ হন।
০ পছন্দসই জিনিস প্রয়োজন না হলেও ক্রেডিট কার্ড আছে বলেই কিনবেন না। পরে হলেও টাকাটা আপনাকেই দিতে হবে।
০ নিজেকে সামলাতে না পারলে ক্রেডিট কার্ড রাখবেন না।
০ ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পা দেবেন না।
০ ইন্টাররেস্ট, ইন্স্যুরেন্স এবং ক্যাশ ফ্যাসিলিটিজের তুলনামূলক বিচার করে ক্রেডিট কার্ড নিন।
০ মহিলাদের জন্য বিশেষ সুযোগ আছে এমন ক্রেডিট কার্ড নিন।
০ কার্ড ব্যবহার করলে নিয়মিত প্রতি মাসে পেমেন্ট করুন।

খাওয়া-দাওয়া
০ ছ’মাসে একবার বাইরে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রতি মাসে যদি বাইরে খান, তাহলে লোভ সামলানোর চেষ্টা করুন।
০ বড় রেস্তোরাঁয় কোল্ড ড্রিংস কিংবা ফ্রেশ লাইম অর্ডার দেবেন না।
০ খাওয়ার পর আইসক্রিম খেতে মন চাই রেস্তোরাঁতে না খেয়ে বাইরে খান। খরচ অনেক কম হবে।
০ পরিমাণ জেনে অর্ডার দিন। বেহিসেবি হবেন না।
০ বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনকে বাড়িতে নিয়ন্ত্রণ করাই শ্রেয়। একান্তই বাইরে খাওয়াতে নিয়ে গেলে মেন্যু নির্বাচনে সতর্ক থাকুন।
০ খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে ডাকলে মাঝে মাঝে প্রত্যেককে একটা কিছু বানিয়ে আনতে বলুন। রকমারিও হবে, খরচও বাঁচবে।

নিমন্ত্রণ
০ যে সময়ে বিভিন্ন শপিংমলে অনেক রকম অফার্স থাকে, তখন মগ, ট্রে, পেন্সিল বক্স, ওয়াটার বটল কিংবা টাওয়েল সেট, বেডশিট, পিলো কভার সেট কিনে রাখুন।
০ নিজের তৈরি ব্যাগ, কুশন কভার, চকলেটস, কিংবা ঘর সাজানোর জিনিস দিতে পারেন। সাশ্রয় হবে, হাতে তৈরি জিনিসের কদরও আলাদা।
০ বন্ধু-বান্ধবদের পার্টিতে নিজে রান্না করে কিছু নিয়ে যান।
০ নিমন্ত্রণ বা পার্টিতে নতুন পোশাক পরার ইচ্ছো হতেই পারে। তাই বলে যখন তখন নতুন শাড়ি, জামা কাপড় কিনবেন না।

সঞ্চয়
বাড়ি করবেন? বিদেশে বেড়াতে যাবেন? নাকি নিছকই শেষ বয়সের চিন্তা?
০ আগে থেকে প্ল্যান করুন।
০ খরচের একটা এস্টিমেট করুন।
০ ডেডলাইট ঠিক করুন।
০ সেই মতো টাকা জমান।

কোথায় কতটা ইনভেস্ট করবেন?
যে পরিমাণ টাকা আপনি ইনভেস্ট করবেন তার-
০ ২০-২৫% পিপিএফ কিংবা লাইফ ইন্সুরেন্স।
০ ৩০-৪০% বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ড।
০ বাকিটা ইকুয়িটি ফান্ড।

0 comments:

Post a Comment