RSS

Saturday, June 13, 2009

সন্তানের পরীক্ষায় আপনার দায়িত্ব

আর কয়েকদিন বাদেই এইচএসসি পরীক্ষা। সারাদেশে কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেবে এবারের পরীক্ষায়। আমাদের মধ্যে একটা বিষয় সবসময়ই কাজ করে পরীক্ষার সময় যাবতীয় দায় দায়িত্ব বুঝি পরীক্ষার্থীর ঘাড়ে। কিন্তু তার পাশাপাশি অভিভাবকেরও আছে সমান দায়িত্ব। আসুন জেনে নিই তেমনই কিছু কর্তব্যের ফর্দ-

আচ্ছা, পড়াশোনার একমাত্র উদ্দেশ্যই কি পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়ে ভাল রেজাল্ট করা। ভাল ফলাফলের সাথে শিক্ষার যোগাযোগটা যে খুব বেশি জোরালো নয় সেটা সবাই নির্দ্বিধায় মানেন। কিন্তু সেই ভাবনায় বাস্তবায়নে সবসময়ই অদ্ভুত এক বাঁধা কাজ করে। পরীক্ষার সময় আপনার সন্তানকে যতœ করে রাখুন। সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন, যা সন্তানের ভালর জন্য বেশ কাজে দেবে।

পরীক্ষার আগে

কলেজ, কোচিং, প্রাইভেট টিউশন ছাড়াও যেন প্রতিদিন অন্তত দুইঘন্টা নিজে পড়ার সুযোগ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। একগাদা শিক্ষক চাপিয়ে দেবেন না। প্রয়োজন মতো কোচিংয়ে দিন। প্রয়োজনটাও জেনে নিন আপনার সন্তানের কাছ থেকেই। আপনার সন্তান যখন পড়ছে তখন আপনিও তার পাশে অন্যকোনো কাজ নিয়ে বসে যান। কি পড়ছে সেটা নিয়ে আলোচনা করুন। বিষয়টা মজার কি না জিজ্ঞেস করুন। সে বিষয়ে আপনার কিছু জানা থাকলে শেয়ার করুন। পরীক্ষার মাস দুয়েক আগে তার সাথে বসে সিলেবাসে চোখ বোলান। কী পড়া হয়েছে, কী একেবারেই ধরা হয়নি, কোন কোন বিষয় রিভাইস করতে হবে, কোনটা বেশি শক্ত ঠেকছে ইত্যাদি একটা তালিকা করুন। আপনার সন্তানকে নিজের মত করে রুটিন তৈরি করে পড়াশোনা করতে উৎসাহ দিন। প্রতি সপ্তাহে একটা ছোট পরীক্ষাও নিয়ে দেখতে পারেন। তাতে তার উন্নতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। পরীক্ষা এসে যাচ্ছে বলে তার অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ করে দেবেন না। বিকেলে খেলতে যাওয়া, টিভি দেখা ইত্যাদি নিয়মিত করতে দিন। তাতে চাপ কম অনুভূত হবে। তবে পড়ার সময় অন্য কিছু করতে না করুন। যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বললে সে অবশ্যই বুঝবে এবং শুনবে।

পরীক্ষার সময়

আপনার সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে টেনশন হলেও তাকে তা বুঝতে দেবেন না। ওর জামা, জুতা, ব্যাগ গুছিয়ে দিন। পড়া নিয়ে খানিকটা আলোচনা করতে পারেন। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তাকে উৎসাহ দিন। তাকে বলুন তার দ্বারা যতটা ভাল উত্তর দেয়া সম্ভব ততটুকুই যেন দেয়। এতেই আপনি খুশি থাকবেন। তবে পুরো অ্যানসার স্ক্রিপ্ট একবার পড়ে দেখার কথা মনে করিয়ে দিন। পরীক্ষার সময় রাত জাগতে দেবেন না। দুপুর বেলা বা সন্ধ্যার মধ্যেই রিভিশন শেষ করে ফেলতে বলুন। পরীক্ষার আগের রাতে অন্তত ৮ ঘন্টা টানা ঘুম স্নায়ুকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। পরীক্ষার পর প্রশ্ন নিয়ে ঘাটাঘাটি না করাই ভাল। পরীক্ষা যেমনই হোক সেটা নিয়ে বেশি আলোচনা করা বৃথা। বরং পরের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলুন। পরীক্ষা খারাপ হলে, সেটা নিয়ে বকাঝকা করলে তা পরের পরীক্ষাকে প্রভাবিত করবে।

ফলাফলের পর

ফলাফল প্রকাশের আগে বাড়ির স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখুন। কোন বিষয়ে কত নাম্বার পাবে, মেধা ক্রমে থাকবে কিনা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে সত্যিই কি কোনো লাভ আছে। তার চেয়ে ভাল তাকে আশ্বাস দিন ফলাফল যেমনই হোক আপনি সন্তুষ্ট হবেন। এতে করে সে আরো ভাল করার উৎসাহ পাবে। পরীক্ষার ফলাফল বেরুনোর পর যদি দেখেন যে আশানুরূপ হয়নি তা হলে তাকে বকা দেবেন না। সবার সামনে তো নয়ই। বাড়িতে এসে তাকে শান্ত হতে দিন। এরপর তার সাথে বসে নাম্বারগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। কোথায় কী সমস্যা ছিল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। কোন বিষয়ে নাম্বার বেশি হতে পারতো, কী করলে আরো ভাল হবে ইত্যাদি খুঁজে বের করুন। এসব বিষয়ে তারও মতামত নিন। অথবা বকাবকি করলে তার আরো জেদ বেড়ে যেতে পারে। ফলাফল ভাল হলে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস দেখাবেন না। আপনি যে তার ফলাফলে খুশি সেটা বোঝানোর জন্য বাড়িতে ভাল খাবার রান্না করতে পারেন। কয়েকজন বন্ধু ডেকে ছোটখাটো পার্টি দিতে পারেন। অথবা সবাই মিলে বাইরে থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। তবে সাধ্যতীত কোনো উপহার দেবেন না। তাতে পরবর্তীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।

0 comments:

Post a Comment