RSS

Saturday, June 13, 2009

দেশীয় আবহে ঘর সাজানো

বসার ঘর হোক আর শোবার ঘরই হোক, প্রতিটি ঘরের সৌন্দর্য অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে নানা ধরনের শোপিস। আর তা যদি হয় দেশীয় উপকরণের, তবে তো কথাই নেই। দেশীয় উপকরণের তৈরি ঘরসাজানোর জিনিসপত্র বা শোপিসগুলো একদিকে যেমন আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে ধারণ করে, অন্যদিকে ঘরে আনে বৈচিত্র্য। আজিজ সুপার মার্কেটে এসব দেশীয় উপকরণের শোপিস বিক্রির প্রতিষ্ঠান আইডিয়াস। আইডিয়াসের স্বত্বাধিকারী নিপা খালেদ বলেন, "বহুদিন আগে থেকেই মানুষ তাদের ঘরটাকে একটু সুন্দর করে সাজাতে নানা ধরনের শোপিস ব্যবহার করত। ঘর সাজাতে আশি বা নব্বইয়ের দশকেও মাটি, কাঠ, বাঁশ, বেতসহ তামা-পিতলের উপকরণ ব্যবহার করেছে মানুষ। তখনকার দিনে ঘর সাজানোর মাটির উপকরণ আলাদা করে কিনতে পাওয়া যেত না। বিভিন্ন ধরনের মেলা যেমন−পয়লা বৈশাখ বা বিভিন্ন ধরনের উৎসবে যে মেলা হতো, সেখান থেকেই মাটির নানা ধরনের শোপিস কিনত। এটা আমাদের একটা ঐতিহ্য।"
আড়ংয়ের বিপণন বিভাগে কর্মরত মার্জিয়া হক জানান, আড়ংয়ে শোপিস কিনতে আসা বেশির ভাগ মানুষই শোপিস হিসেবে পছন্দ করে কাঁসা-পিতলের জিনিস। কাঁসা-পিতলের নানা ধরনের শোপিসের মধ্যে বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রতিকৃতি, রিকশা, ফুলদানি, ঘটি, গ্লাস, কলস, পানের বাক্স, সুরাই, সুরাইদানি, মোমদানি, ফুলের টব, দেয়ালে সাজানোর থালা,
আয়না−এসবই বেশি কিনতে দেখা যায়। অ্যান্টিক এবং ব্রাশ অ্যান্টিক দুটোই পাওয়া যায়।
আসাদগেটের "সোর্স"-এ পাওয়া যায় নানা ধরনের কাপড়, কাগজ এবং বিভিন্ন উপকরণে তৈরি শোপিস। এ ছাড়া কাচ, মাটি, চীনামাটির বিভিন্ন ধরনের শোপিসে আনা হয়েছে একটু বৈচিত্র্য। আর দামের দিক থেকে এগুলো কোনোটিই ২০০ টাকার বেশি নয়। ঘর সাজানোর জন্য বাঁশের তৈরি ফুল, ফুলদানি বেশি দৃষ্টিনন্দন। সোর্সে শোপিস কিনতে আসা রুকাইয়া
ইসলাম খান বলেন, "আমি উপহার দিতে গেলে প্রথমেই বেছে নিই শোপিস। এ ক্ষেত্রে দেশীয় উপকরণের শোপিসের দিকে আমার নজর বরাবরই একটু বেশি।"
"আমি ঘরের বারন্দাটা সাজিয়েছি বিভিন্ন ধরনের ফুল আর পাতাবাহারের গাছ দিয়ে। সব গাছের টব পিতলের তৈরি। সেই সঙ্গে পাটের তৈরি একটা দোলনা ঝুলিয়ে দিয়েছি সেখানটায়। এতে আমার বারান্দাকে মনে হয় যেন বাগান। দেশীয় উপকরণে তৈরি এসব শোপিস আসলেই ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে বারান্দাকে।" বললেন "যাত্রা"য় শোপিস কিনতে আসা ফাইয়াজ হাসান।
কেমন শোপিস চাই ঘরের সোফাগুলোর মাঝে যে ছোট টেবিলগুলো আছে, সেগুলোতে রাখতে পারেন টেরাকোটার ছোট ধরনের শোপিস। দেয়ালে টাঙাতে পারেন বড়সড় মাটির আয়না। ঘরের এক কোণে রাখতে পারেন রঙিন কাগজে তৈরি টেবিল ল্যাম্প। এ ছাড়া ঘরের বিভিন্ন জায়গায় আপনার পছন্দমতো সাজিয়ে ফেলুন টব, মোড়া, প্রদীপ (তিন স্তর), কয়েল স্ট্যান্ড, কলমদানি, মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, সিংহ, হরিণ, মুরগিসহ জীবজন্তুর প্রতিকৃতি। দরজায় টাঙাতে পারেন চাইম অথবা ঘণ্টা, ঝাড়ঘণ্টা। এ ছাড়া রয়েছে ফুলদানি, দেয়াল, কুপি, প্রদীপ, মোমদানি। আরও আছে পাটের তৈরি ম্যাট আর দোলনা।
বাজুক না টুংটাং ঘণ্টা ঘণ্টার টুংটাং শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে। কাপড়, কাগজ, পুঁতি, চুমকি, এমনকি নানা ধরনের বিডস ব্যবহার করে চাইম বা ঘণ্টা বানানো যায়। এ ছাড়া দেশীয় উপকরণের পাট ও কাঠের তৈরি চাইমগুলো খুব সহজেই আকৃষ্ট করবে। দেশীয় পণ্য তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান পিরানে পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের ঘণ্টা। পিরানের স্বত্বাধিকারী হোসেনে বানু ছোটনা জানান, বিভিন্ন ধরনের চাইমের মধ্যে মেটালের বিভিন্ন রঙের চাইমটা এখন খুব চলছে। এর মধ্যে গোল্ডেন, সিলভারের কোটিং বা অ্যান্টিক কালারের চাহিদাটা বেশি। এ ছাড়া কাঠের বিডস করা লুকিং গ্লাস কেটে তৈরি করা হয়েছে চাইম এবং এর নিচে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বেতফল। তা ছাড়া মাটির পট, প্রদীপ, মেটালের মুখোশ, বাঁশের মুখোশ, বাঁশের মগ পাওয়া যাবে এখানে।
যাত্রার লুবনা জাহান বলেন, "আমরা ফেলে দেওয়া টিন, ক্যান পুনরায় ব্যবহার করে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করেছি ঘর সাজানোর জন্য। এসবের মধ্যে পাখি, ঘর, ফুলদানিসহ অনেক কিছুই রয়েছে। এ ছাড়া রিকশা পেইন্ট ব্যবহার করে তৈরি
করা হয়েছে বিভিন্ন পণ্য−ঘড়ি, গয়না রাখার বাক্স, মোমদানি, ধুপদানিসহ অনেক কিছুই। পছন্দমতো দেশীয় উপকরণের শোপিস দিয়ে সাজিয়ে ফেলুন আপনার শান্তির আশ্রয় ঘরটি।

0 comments:

Post a Comment