RSS

Saturday, June 13, 2009

বিয়ের কেনাকাটা দেশেই হোক

সিনথিয়ার বিয়ে। হাতে সময় আছে মাস দুয়েক। বরপক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলো কনে কি শাড়ি পরবে। শাড়ির রংটাই বা কেমন হবে? কনের উত্তর, লাল রঙের মিরপুরি কাতান। উত্তর শুনে তো বরপক্ষের মাথায় হাত। মিরপুরের কাতান শাড়ি কি আর বিয়ের জৌলুস ফোটাতে পারবে? এ রকম ধারণা অনেকেরই। আমাদের দেশি পোশাক বা শাড়িগুলোকে আমরা আমাদের বড় বড় আয়োজনগুলো থেকে যেন দুরে সরিয়ে রাখছি কেবল চাকচিক্যের অভাব আছে মনে করেই। কিন্তু বারবারই ভুলে যাই দেশীয় কাপড়ের আভিজাত্যের কথা, ঐতিহ্যের কথা। মিরপুর, টাঙ্গাইল, রূপগঞ্জের তাঁতিবাড়ীগুলোতে হরহামেশাই তৈরি হচ্ছে দেশীয় উৎসব-আমেজে গড়া শাড়ি। আর সেগুলো পরে বউ সাজছেন অনেকেই।

বিয়েতে সবারই থাকে নানা পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনার অনেকটাই জুড়ে থাকে বর-কনের পোশাক নিয়ে। বলতে কোনো সমস্যা নেই, বরের চেয়ে কনের পোশাকের দিকে সবার নজর বেশি থাকে। তাই কনের পোশাক হওয়া চাই উৎসবমুখী, মার্জিত এবং রুচিসম্মত।
ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠান তো কয়েকটা ভাগে বিভক্ত। আর কনেকে তাই কয়েকটা দিন সাজতে হয়। এই জন্য কনেকে মাথায় রাখতে হবে বিয়ের দিনের পোশাক এবং সাজটাই যেন সবচেয়ে ভালো হয় সেই দিকে। আর পোশাকের ক্ষেত্রে মাহিনের পরামর্শ হলো, শাড়িকেই বেছে নেওয়া। তিনি মনে করেন, বিয়ের দিনে শাড়িতে
বাঙালি মেয়েদের যত সুন্দর দেখায় তা অন্য কোনো পোশাকে সম্ভব নয়। তার কাছ থেকেই নকশা বিয়ের আয়োজনে কনের পোশাকের একটা দিকনির্দেশনা বের করার চেষ্টা করেছে।
এখন কনের পোশাকের ক্ষেত্রে কেবল এক দিন ব্যবহার করা হবে তেমন শাড়ির কদর খুব একটা নেই। আর তাই জবরজং কিছু নয়, বরং অন্য রকম রুচিসম্মত পোশাকের দিকেই এখন সবার ঝোঁক। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে যায় পানচিনি (এনগেইজমেন্ট) থেকেই। পানচিনিতে কনের পোশাকটা কেমন হবে জানতে চাইলে মাহিন খান বলেন, একটু
হালকা যেন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই মাহিন খান গুরুত্ব দেন মসলিন, শিফন বা সিল্ক শাড়িতে। আমাদের দেশীয় এসব কাপড়ে হাতের কাজ, কারচুপি, এপ্লিক ইত্যাদির মাধ্যমে বেশ একটা উৎসব-আমেজ আনা যায়। পানচিনির শাড়ি হতে পারে নীল, গোলাপি, পিচ, হালকা বেগুনি, লাল ইত্যাদি রঙের। এ ধরনের অনুষ্ঠানে হালকা রঙের
শাড়িগুলোতেই কনেকে দেখতে বেশি সুন্দর লাগবে। গায়ে হলুদের ক্ষেত্রে এখন অনেক ধরনের শাড়ি ব্যবহার হতে দেখা যায়। তবে মাহিন খান বলেন, সুতি শাড়িই সবচেয়ে
বেশি সুন্দর। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ধরনের সুতি, হাফ সিল্ক, সফট সিল্কের শাড়ি খুব ঐতিহ্যবাহী আবার দেখতেও অনেক সুন্দর। তাঁর মতে কালের বিবর্তনে গায়ে হলুদে রং খেলা বা হলুদ মাখামাখি করার মতো যে উৎসবগুলো এখন আর হয় না। কিন্তু কনেসহ সবাই যদি সুতি ধাঁচের শাড়ি পরে সে ক্ষেত্রে এগুলো হয়তো আবার ফিরে আসবে। মনে রাখতে হবে,
হলুদে কনের শাড়িটা হতে হবে দেশীয়, আরামদায়ক এবং খুবই রঙিন। সে ক্ষেত্রে হলুদ শাড়ি লাল পাড়ের একটা ঐতিহ্য তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে চলতে পারে কমলা, কাঁচা মেহেদি রং, গাঢ় সবুজ রং। টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ির পাশাপাশি একরঙা থানে কাতানের পাড় বসিয়েও তৈরি করা যায় হলুদের শাড়ি। সেই সঙ্গে এন্ডি কটন বা এন্ডি সিল্কের শাড়ি এখন
বেশ জনপ্রিয়। এগুলো পরতেও অনেক আরামদায়ক। এসব শাড়িতে কাজ করে নিয়েও কনের হলুদে পরার শাড়ি তৈরি করা সম্ভব। অনেকে হলুদে জামদানি শাড়িও বেছে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কমলা, হলুদ, সবুজের মধ্যে থাকাটাই ভালো।
বিয়ের দিনটা অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় অন্য রকম। তাই এই দিনে ঐতিহ্য আর সমসাময়িকতা এই দুইয়ের মিশেলেই কোনো পোশাক বেছে নেওয়া উচিত। আর তাই বিয়ের পোশাকে মাহিন খানের প্রথম পছন্দ শাড়ি এবং লাল রঙের শাড়ি। তাঁর কথায়, আসলে বউ মানে আমাদের মনের মধ্যে যে ছবিটা তা কিন্তু ধরা দেয় লাল বেনারসি পরেই।
এটা যেন একদমই বউয়ের রং। তাই লাল রঙটাই বিয়েতে সবচেয়ে বেশি মানানসই। আর বেনারসি শাড়ি তো আজকাল আবার ফিরে এসেছে ফ্যাশন ধারায়। তো একটা লাল বেনারসি বা জামদানি কিন্তু কনের সাজ-সজ্জাতে একটা অন্য রকম আবেদন তৈরি করতে পারে। খুব পিটানো কাজের আর জরির মিনা করা জামদানি বিয়ের জন্য খুবই উপযুক্ত। সেই সঙ্গে
জামদানি দোপাট্টা চলতে পারে। আবার এখন অনেক সুন্দর সুন্দর ঝালর এবং লেইস পাওয়া যায়। সেগুলোও যুক্ত করে শাড়িকে করা সম্ভব অনেক বেশি আকর্ষণীয়। বিয়ের দিনে জামদানি শাড়ি পরতে চাইলে লাল, রানি রং, কমলা রঙটা প্রাধান্য পেতে পারে। তবে বৌভাতে জামদানি শাড়ি পরলে এই রংগুলোর পাশাপাশি অফহোয়াইট, সাদা, সোনালি, নীল,
বেগুনি রংগুলোও প্রাধান্য পেতে পারে। বেনারসি বা কাতান শাড়ির ক্ষেত্রে শাড়িতে পিটানো কাজ দেখেই কিনতে হবে। আঁচল এবং পাড়ের পিটানো কাজ আর জমিনে বুটির কাজ করা শাড়িও বেশ সুন্দর দেখায়। কাতানের শাড়ির সঙ্গে চলতে পারে কাতানের দোপাট্টা অথবা মসলিনের কাপড়ের চারপাশে কাতানের পাড় দিয়ে তৈরি করা ওড়না। যেহেতু বিয়ের অনুষ্ঠান তাই ওড়নায় স্বচ্ছতা থাকলে অনেক বেশি ভালো লাগবে। কাতান শাড়িতে মেরুন, গাঢ় সবুজ, গাঢ় জাম রং, গাঢ় নীল, বেগুনি এসব রং বেশ ব্যবহূত হচ্ছে।
অনেকে জামদানি বা কাতান শাড়িতে আরামবোধ নাও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাহিন খানের মতে শিফন সিল্ক বা দেশি ক্রেপ সিল্কে কাজ করা শাড়িও পরতে পারেন। তবে কাজ করা শাড়ি নিজেও করিয়ে নিতে পারেন আবার ডিজাইনার ওয়্যার থেকেও করিয়ে নিতে পারেন। মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন বেনারসি পল্লীতে রয়েছে অসংখ্য দোকান। যারা তৈরি শাড়ি বিক্রিও করে আবার অর্ডারও নিয়ে থাকে। এখানকার বেনারসি কুঠি, জরিন সিল্ক ইন্ডাস্ট্রি, বেনারসি আড়ং ও মোহাম্মদী সিল্কের মতো দোকানগুলো বিয়ের শাড়ি বিক্রি করে থাকে। আবার বিয়ের শাড়ির অর্ডারও নেয়। সে ক্ষেত্রে ডিজাইন বুঝে সময় লাগবে এক থেকে তিন মাস। আর দামও ডিজাইন বুঝে ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজারের মধ্যেও হতে পারে।
আড়ংয়ে গেলে পাওয়া যাবে কাতান এবং জামদানি শাড়ির বিশাল সম্ভার। এখানে হাতের কাজ করা সিল্ক এবং মসলিনের শাড়িও রয়েছে। পছন্দমাফিক শাড়ির দাম শুরু অবশ্যই ১০ হাজার টাকা থেকেই। বেইলি রোডের টাঙ্গাইলের শাড়ি কুটিরের তিন তলায় রয়েছে এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের কাতান বেনারসি শাড়ি। তবে বিভিন্ন ধরনের ক্রেতার কথা চিন্তা করে
এখানে দাম শুরু হয়েছে সাত হাজার টাকা থেকে। ফ্যাশন হাউস কুমুদিনীতেও রয়েছে এক্সক্লুসিভ জামদানি শাড়ির সম্ভার। আবার ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জের অদুরে রুপগঞ্জ থানার রূপসী নোয়াপাড়ায় রয়েছে জামদানি পল্লী। সেখানে গিয়ে রং এবং ডিজাইন পছন্দ করে অগ্রিম টাকা দিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও তাঁতিরা বিয়ের জামদানি শাড়ি তৈরি করে
দেবে। সেইসঙ্গে শাড়ির ওড়নাও। আবার সেখানে গিয়ে পছন্দ হয়ে গেলে অর্ডার দেওয়ারও প্রয়োজন পড়বে না। জামদানি, কাতান শাড়ির পাশাপাশি মসলিন, ক্রেপসিল্কের ফেব্রিকে বিয়ের শাড়ি উপযোগী করে কারচুপি, জারদৌসী, হাতের কাজ, মেশিন এমব্রয়ডারি করা শাড়ি বিক্রি করছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। তারা দেশীয় ফেব্রিকে দেশীয় ডিজাইন
নিয়েই তৈরি করছে বিয়ের শাড়ি। এতে শাড়ি তে আসছে আরামের পাশাপাশি নতুনত্ব। সেই সঙ্গে থাকছে আভিজাত্য। আড়ং, ড্রেসিডেল, মায়াসীর, হকস এমদাদ, বিবিয়ানা, রং ও কুমুদিনীতে পাওয়া যায় বিয়ের শাড়ি। এসব প্রতিষ্ঠানে অর্ডার দিলে তারা সেই অনুযায়ী পোশাক ডিজাইন করে থাকে। তবে আড়ং কোনো ধরনের অর্ডার নেয় না। আর গায়ে হলুদের
শাড়ি দেশীয় যেকোনো শাড়ির মার্কেটেই কিনতে পাওয়া যায়। তবে ডিজাইনারদের দিয়ে করালে একটু নতুনত্ব আসবে।

0 comments:

Post a Comment