RSS

Monday, June 22, 2009

বাবা-সন্তান এবং মা

সফোক্লিসের বিখ্যাত নাটক ‘রাজা ঈদিপাস’ যে বিখ্যাত গ্রিক ট্র্যাজেডি’র জন্ম দিয়েছিল সেই ট্যাজেডি’র আলোকেই একটা অদ্ভূত রকমের তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছিলেন মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড। ‘ইডিপাস কমপ্লেক্স’ নামের এই তত্ত্ব অনুযায়ী বাবার প্রতি মেয়েদের কিংবা মায়ের প্রতি ছেলেদের নাকি একটা বাড়তি টান থাকে। কিন্তু যেখানে মা-বাবা আর প্রতিটি সন্তানের আদর-ভালোবাসাতেই সৃষ্টি হয় একটি সুখের পরিবার সেখানে এই ফ্রয়েডিয় বিভাজনকে স্থান দিতে গেলে পুরো বিষয়টাই হয়ে পড়ে প্রশ্নবিদ্ধ। একথা হয়তো সত্য যে মা-বাবার কাছে তার প্রতিটি সন্তান যেমন সমতুল্য তেমনি সন্তানের কাছেও মা-বাবার অবস্থান একই সমান্তরালে। তবু সন্তান লালন-পালনের প্রক্রিয়া আর সামাজিক বাস্তবতার কারণেই অনেক সময় সন্তানের সাথে বাবা কিংবা মায়ের একটা অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি হয়। কখনো যেমন এটির শিকার হন মায়েরা তেমনি সন্তানের দূরত্ব তৈরি হতে পারে বাবার সাথেও। তবে দূরত্বের ধরন আর কারণ যাই হোক না কেন, সন্তান বেড়ে ওঠার সময়টিতে এই দূরত্ব দূর করার দায়িত্ব কিন্তু মা-বাবার উপরই বর্তায়।

বাবা দিবসকে সামনে রেখে মূলত বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক নিয়েই এবারের আলোচনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাবা থাকেন একটু বহির্মূখী। মা যেমন হতে পারেন চাকরিজীবী তেমনি তিনি হতে পারেন গৃহিনীও। তবে বাবা বরাবরই পেশা আর জীবিকার কারণে বহির্মূখী। ফলে বাবার সাথে সন্তানের সময় কাটানোর সুযোগটা তুলনামূলক কমই হয়ে ওঠে। তার উপর সংসারে সন্তানের মঙ্গলের জন্য যে শাসন, সেটিও যদি বাবার উপরই বর্তায় তাহলে সেখানে সন্তানের অভিমানটাও বাড়ে। ক্রমে ক্রমেই মা হয়ে ওঠেন প্রশ্রয়ের আর বাবা ভয়ের। তবে আধুনিক জীবনধারায় এখন মায়ের পাশাপাশি বাবারাও হয়ে উঠেছেন অনেক বেশি বন্ধুবৎসল।

শাসনই হোক কিংবা ভুল বোঝাবুঝি, বাবার সাথে সন্তানের দূরত্ব তৈরি হতেই পারে। তবে সেই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য বাবা আর সন্তানের পাশাপাশি মায়ের ভূমিকাটিও কম নয়। বাবার কোনো আচরণে সন্তানের মনে কষ্ট তৈরি হলে সেটির প্রতি লক্ষ্য রেখে সন্তানকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলবার দায়িত্ব নিতে হবে মা-কেই। এমনকি দাম্পত্য সম্পর্কের অস্থিরতার কারণে যদি তিনি তার সঙ্গীর প্রতি কোনো কারণে বিরক্তও হোন তবুও বাবার প্রতি সন্তানের এই অনিহাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। অন্যদিকে বাবা যদি কোনো কারণে সন্তানের প্রতি বিরূপ হন বা হতাশ হয়ে পড়েন তবে সন্তানকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবার পাশাপাশি বাবার আস্থাভাজন করে তোলা এবং সঙ্গীকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার দায়িত্বটিও পালন করতে হবে মা-কেই।

প্রায়শই দেখা যায় যে, সন্তান যখন বাবার কাছ থেকে কোনো অনুমতি বা আবদার করে ব্যর্থ হয় তখন মায়ের সহয়তা নিয়েই এটি অর্জনের চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে অকারণ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে সন্তানকে সমর্থন করতে যেয়ে বাবার ভূমিকাকে কখনো হেয় করা ঠিক নয়। বরং মায়েরা যদি বিষয়টিকে এমনভাবে সামলে নেন যে মা এবং বাবা’র যৌথ আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাহলে সকলের প্রতিই সন্তানের সমান শ্রদ্ধা বজায় থাকে। এছাড়া সন্তানের সাথে বাবার সম্পর্কটি যেন ভীতিকর না হয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সেজন্যও মায়ের ভূমিকা রয়েছে। বাবার শাসনের যৌক্তিকতা এবং বাবা যে সন্তানের মঙ্গলের জন্যই সবকিছু করেন এটি সন্তানকে জানতে দেয়ার পাশাপাশি বাবাকে ভয় না করে তার সাথে সবকিছু ভাগাভাগি করতেও মা-ই সন্তানকে উৎসাহিত করতে পারেন।

আরো কিছু টিপস্
০ দাম্পত্য কলহের সময় সন্তানের সামনে একে অন্যকে অসম্মান করে কোনো কথা বলবেন না।
০ সন্তান কোনো কারণে বাবার বিরূদ্ধাচরণ করলে নীরব না থেকে তাকে সংযত করুন এবং বুঝিয়ে বলুন।
০ বাবা এবং সন্তুান যেন একে অন্যের সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে পারে সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।
০ সন্তানের মনে বাবার প্রতি কোনো ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সচেতন থাকুন। এ জাতীয় কিছু আঁচ করতে পারলে সঙ্গীকে তা জানিয়ে রাখুন এবং সন্তানের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করুন।
০ ‘এই সন্তান আমাকে বেশি ভালোবাসে আর ঐ সন্তানটি বাবাকে পছন্দ করে’ মনের মাঝে কখনোই এ জাতীয় কোনো বিভাজন আনবেন না।

0 comments:

Post a Comment