RSS

Saturday, June 13, 2009

আধুনিক গয়নায় দেশি আমেজ

কোনো কিছুই শুরুতে থেমে থাকে না। মসৃণ হোক বা বন্ধুর, পথ চলা শুরু হলে গন্তব্য খুঁজে নেয় পথিক। এদেশে প্রথম যখন প্রচলিত ধারার বাইরে গয়না গড়ানো শুরু হয়, তখন এর চাহিদা এখনকার মতো ছিল না, এ কথা বলা যায় নিঃসন্দেহে। কিছু সাহসী ডিজাইনারের নিরীক্ষণধর্মী কাজের ফলাফল আজকের ফ্যাশনেবল গয়না। আশার বিষয়, ম্যাটেরিয়াল, মোটিফ, নকশার আমেজ সব মিলিয়ে ডিজাইনাররা ভরসা পেয়েছেন দেশীয় ধারায়। দেশীয় এসব গয়নাকে জনপ্রিয় করেছেন আজকের প্রজন্েনর তরুণের কাছেও।
দেশীয় ধারার গয়না বলতে আমাদের প্রথমেই মনে হয় মাটির কথা। বাংলাদেশে এ উপাদান সহজলভ্য হওয়ায় ডিজাইনাররা এ নিয়ে কাজ করার অবকাশ পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি। জনপ্রিয়ও হয়েছে তাই। এ ছাড়া সময়ের ডানায় ভর করে গযনার বৈচিত্র্যে এসেছে সুতা, মাটি, কাঠ কিংবা পাথরের নকশা। একটা সময় ছিল যখন এদেশের ফ্যাশন সচেতন
নারী পুরুষেরা পশ্চিমা দেশগুলো থেকে গয়না এনে স্টাইলিশ হয়ে উঠতেন। সময় পাল্টেছে, তাঁরাই এখন নিজের স্টাইল প্রকাশে বেছে নিচ্ছেন এদেশীয় গয়না।
শুরুর দিকে যাঁরা এ সাহস দেখিয়েছেন, তাঁদেরই একজন ডিজাইনার মাহিন খান। আশির দশকে প্রথম যখন মাহিন কাজ শুরু করেন, তখন প্রথমেই মাটি কিংবা কাঠের বেইজে কাজ করেননি। তখনো অপ্রচলিত, কিন্তু পরিচিত এমন এক উপাদান ছিল রুপা। সেই রুপাকেই মাহিন বেছে নিয়েছিলেন গয়নার ম্যাটেরিয়াল হিসেবে। তাতে যোগ হয়েছিল দেশজ নকশা। মার্কড়ি, কড়া, বালা, হাঁসুলি এমন সব ঐতিহ্যবাহী নকশা এসেছিল মাহিনের নিরীক্ষায়। মাহিন জানান, শুরুতে এ ধারা জনপ্রিয় হতে বেশ সময় লেগেছে। তবে এখন এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে মাটি, কাঠ, সিমেন্ট, কাপড় কিংবা পাটের মতো একান্ত দেশীয় ম্যাটেরিয়াল, তরুণ প্রজন্েনর আগ্রহ এখন এগুলোকে ঘিরেই। সোনার দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া আর দেশের ডিজাইনারদের প্রতি ভরসা এ পথকে খানিকটা সহজ করেছে। মাহিন আদিবাসীদের নিজস্ব ঘরানার প্রতি ভালোবাসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে, তাঁদের গয়নার ধারাও আধুনিক ফ্যাশনকে প্রভাবিত করেছে
ভীষণভাবে। আদি'র ডিজাইনার আম্মান রশীদ প্রথম উৎসাহ পান আফ্রিকার গয়নার ধরায়। তিনি এ ধারাকে ব্যবহার করেছেন একেবারে দেশীয় আমেজে। ম্যাটেরিয়ালে তামা, রূপা, কড়ি, শেল বা শোলা−যাই হোক না কেন, নকশায় থাকে ঐতিহ্যের টান। আম্মান বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই নিজস্ব নকশা প্রচলিত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধার করা নকশা নিয়েছি ঠিক, তবে এখন সময় বদলেছে। পশ্চিমের হালকা ধাঁচ কিংবা আফ্রো-ইন্ডিয়ান ভারী মুড,
যেকোনো কিছুই এখন মানিয়ে যায় আমাদের নকশায়। নতুন ডিজাইনারদের সাহসী করে তুলতে পথ চলা শুরু করেছিলেন যে কজন ডিজাইনার তাঁদের একজন নিপা খালেদ।
আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় আইডিয়াস একসময় কেবল একটি বইয়ের দোকানই ছিল। বাবার সে দোকানের একপাশে ছাত্রী থাকতেই কিছু মাটির গয়না দিয়ে যাত্রা শুরু নিপার। নিপা অকপটে স্বীকার করেন, শুরুতে এও জানতাম না মাটি পুড়িয়ে দীর্ঘস্থায়ী কী করে করতে হয়। কাঁচামাটি দিয়েই তৈরি করতাম গয়না। বিভিন্ন মেলা আর ক্লাবগুলোতে পর্যন্ত স্টল দিয়েছি এ ধরনের গয়নাকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। আর এখন তরুণরা নিজের আগ্রহে খোঁজে দেশের গয়না। কাঠ, কাপড়, শুকনো ফুল, শোলা, তালপাতা, পাটজাত গয়না, পুঁতি, প্লাস্টিক-ম্যাটেরিয়াল−যাই হোক না কেন, ফ্যাশনের চলতি বাজারে তরুণ-তরুণীরা আপন করছে দেশজ ধারাকেই।
যেকোনো দেশীয় ধারার ফ্যাশনের কথা উঠলে যুগপৎ উঠে আসে আড়ংয়ের নাম। জ্যেষ্ঠ বিপণন ব্যবস্থাপক ফারহিম খুররম জানান, বিশ্বের সর্বজনীন ফ্যাশন ধারা ঢুকেছে এ দেশেও। তাতে যুক্ত হয়েছে আমাদের ঐতিহ্য আর নিজস্বতা তাই এসেছে আপন মহিমা। দেশাত্মবোধ আমাদের সহজাত ব্যাপার। প্রকাশিত হোক বা না হোক, তার অস্তিত্ব আছেই। এখনকার ভিন্ন ধারায় গয়না কেবল তাকে প্রকাশ করছে তারুণ্যের মাধ্যমে।

0 comments:

Post a Comment