RSS

Monday, June 15, 2009

স্টাইলিশ টিন


বন্ধু মহলে সোহানার নিজেকে সাজিয়ে তোলার রুচি বেশ প্রশংসিত। ১৬ বছরের মেয়েটির পোশাক-আশাক এখনো অনেকটাই ঠিক করে দেন মা। তবে ইদানীং সাজসজ্জাটা সে নিজেই করতে চায়। মায়ের সঙ্গে এ নিয়ে একটা গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায় মাঝেমধ্যেই। বিরক্ত হয়ে মা নিয়ন্ত্রণটা ছেড়েই দিলেন। বিপত্তি ঘটল তখনই। পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলোয় সোহানাকে নিয়ে চলল হাসাহাসি, ফিসফাস। কারণ কড়া মেক-আপ, চুলের বাহারি সাজ আর পোশাকের অসামঞ্জস্যতা, কিশোরী বয়সের সঙ্গে যা পুরোপুরি বেমানান।
ফ্যাশনের চাহিদা ও কৌতুহল অনেক সময়ই কিশোরী বয়সটিতে নিয়ে আসে দ্বন্দ্ব। সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি তেমন পরা হয় না এ বয়সে। বন্ধুর বাসা বা কেনাকাটায় বেরিয়ে যে পোশাকটা পরা যায়, তা অনেকটাই বেমানান দেখায় বিয়ে বা কোনো জমকালো পার্টিতে। কিন্তু দেশি বা বিদেশি দুটো পোশাকই হয়ে উঠতে পারে চমৎকার মানানসই, যদি তা পরা হয় বয়সের কথা মাথায় রেখে।

বিদেশি পোশাকে স্বদেশি মেয়েরা
আরামপ্রিয় কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয়তার শিখরে এখন প্যান্ট, টপ, স্কার্ট, টিউনিকসহ নানা পাশ্চাত্য পোশাক। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কোচিং, শপিং মলে অথবা বন্ধুদের আড্ডায়ই ছিল এর সীমানা। কিন্তু ধীরে হলেও গুটি গুটি পায়ে ঝলক দেখাচ্ছে এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও। প্যান্টের মধ্যে ডেনিমই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানান ফ্যাশন ডিজাইনার মায়াসিরের কর্ণধার ও মাহিন খান। সাধারণ সময়ে হালকা নকশার টি-শার্ট বা শার্ট পরলেও দাওয়াতে এটি একেবারেই মানায় না। ফতুয়ায় থাকা উচিত উৎসবের ছোঁয়া। এ সম্বন্ধে মাহিন খান জানান, সুতোর জমকালো কাজ, পাথর বা চুমকি বসানো ফতুয়া পরলে ভালো লাগবে। খারাপ লাগবে না কাচের একটু ঝিলিকমিলিক।
একঘেয়েমি কাটাতে ফতুয়ার সঙ্গে টি-শার্টের অদল-বদল করে নেওয়া হয় মাঝেমধ্যেই। কী রকম হওয়া উচিত দাওয়াতমুখী শার্ট বা টপ? ‘শার্ট পরলে তা হওয়া উচিত অবশ্যই একদম মাপমতো। কোথাও একটুও ঢিলেঢালা বাঞ্ছনীয় নয়।’ এমনটি জানান ক্যাটস আইয়ের পরিচালক ও ডিজাইনার দলের সদস্য রুম্মায়লা সিদ্দিকী। ফ্রিলের বাহার অথবা পিন টাক শার্ট বা টপ সাধারণ ভাবটা কাটিয়ে আনুষ্ঠানিক আমেজ দেবে। পাশ্চাত্য পোশাক পরা উচিত ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই। তাই ফ্যাশন অনুযায়ী এখন একটু লম্বা ফতুয়া বা শার্টই বেশি মানানসই বলে তিনি মনে করেন। আর প্যান্টটা যদি হয় চুড়িদার পায়জামার মতো নিচের দিকে চাপা, তাহলে তো কথাই নেই।
তবে সব কথার ওপরে সবচেয়ে বড় কথা নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম। রুম্মায়লা সিদ্দিকীর মতে, কেউ যদি স্বচ্ছন্দবোধ না করে, তাহলে কখনোই এমন পোশাক পরা উচিত নয়; বরং মাঝেমধ্যে এটি এ বয়সী মেয়েদের মধ্যে জড়তা এনে দেয়। আর যাই হোক, উচ্ছলতার ঈর্ষণীয় সময়ে জড়সড় হয়ে থাকাটা মোটেই কাম্য নয়।
লেহেঙ্গা এখন আমাদের দেশে খুব একটা জনপ্রিয় নয়। মাহিন খান জানান, এর পরিপূরক হিসেবে অনায়াসে পরা যেতে পারে লং স্কার্ট। খাটো স্কার্টগুলো এসব অনুষ্ঠানে না পরাটাই বাঞ্ছনীয়। উৎসবমুখর পরিবেশে এটা খুব একটা মানায় না। বায়াজড কাট, মারমেইড কাট, ফিশ কাট, নি লেংথ কাট ও কলির ঘের দেওয়া লম্বা স্কার্টগুলো ঘাগরার একটা প্রতিফলন নিয়ে আসে। পাশাপাশি হালকা হওয়ায় কৈশোরের দুরন্তপনায় ভালোই খাপ খেয়ে যায়। পরা যেতে পারে চোলি কাটের ব্লাউজ, শর্ট ব্লাউজ বা ফতুয়া।
তবে এ ক্ষেত্রে স্কার্টটা এক রঙের হলেই বেশি ভালো দেখাবে বলে মনে করছেন রুম্মায়লা সিদ্দিকী। টপটাই বরং বর্ণিল হোক বাহারি রঙে।

দেশি ছাঁটে কৈশোরের ঢং
‘১৬-১৭ বছর বয়সে নিজেকে বড় ভাবার প্রবণতা মাঝেমধ্যে হয়েই থাকে। দেশীয় অনুষ্ঠান বা জমকালো নিমন্ত্রণে এ জন্য শাড়ি পড়ার ভাবনাটা আসতেই পারে। শাড়ির ক্ষেত্রে এ বয়সটা একটু অপরিপক্ব। সে ক্ষেত্রে শিফন, জর্জেট ও নেটের শাড়িগুলোই বেশি মানানসই হবে এ বয়সে।’ এমনটি মনে করছেন মাহিন খান। স্বাচ্ছন্দ্যও আসবে আবার ভারিਆি ভাবও লাগবে না। তবে উৎসবমুখর অনুষ্ঠানে এখন পর্যন্ত সালোয়ার-কামিজই জয়ী। চুড়িদারের সঙ্গে কলির ছাঁটে অথবা হাঁটু পর্যন্ত কামিজগুলোই বেশি মানানসই। এ ছাড়া শর্ট কামিজের সঙ্গে ধুতি সালোয়ার কৈশোরের উচ্ছলতার সঙ্গেই তাল মেলাবে।

রঙের বাহার
কৈশোর মানেই রঙিন। নিজের রঙে চারদিক রাঙানো। তাহলে পোশাকের রং বাছাইয়ে কেন থাকবে সীমারেখা। যেমন খুশি রং করব, ভাবনাটি থাকা উচিত এমনই এ বয়সে। তবে দিনের বেলায় গাঢ় রংটি না পরাই ভালো। খুব ম্রিয়মাণ রংও যেন সঙ্গী না হয় এ বয়সে। বরং হালকা কিন্তু উজ্জ্বল রংই প্রকাশ করুক আপনার উচ্ছলতা। আকাশি, হালকা সবুজ, জলপাই, নীল, চাপা সাদা, সাদা অথবা বিভিন্ন পেস্টেল রং পরার পরামর্শ দিলেন মাহিন খান। কাপড়ের রঙে বেশি সাদামাটা ভাব চলে এলে ওড়নাটি উজ্জ্বল রঙের পরা উচিত।
দিনের মতো রাতেও কিছু রং পরার কথা জানালেন রুম্মায়লা সিদ্দিকী। লাল, কালো ও সাদার পাশাপাশি পরা যেতে পারে গাঢ় নীল, লালচে সোনালি, গাঢ় বেগুনি ইত্যাদি রং। আলমারি থেকে বের করে আনা হোক প্রিয় গাঢ় রঙের পোশাকগুলো রাতের জমকালো অনুষ্ঠানের জন্য।

প্রসাধনীর ব্যবহারে অনাড়ম্বরতা
মা কিংবা বড় বোন এখন ঘরে নেই। টুক করে একটু লিপস্টিক বা নতুন কেনা কাজলটা লাগিয়ে দেখা যাক। প্রসাধনীর প্রতি আগ্রহটা বাড়তে থাকে এভাবেই এ বয়স থেকে। তবে তা থাকা উচিত নির্দিষ্ট একটা সীমারেখার মধ্যেই। কারণ শৈশবের মজা তো এখানেই। বয়সের উচ্ছলতা, ঈর্ষণীয় ত্বকের জৌলুশ ও সৌন্দর্য যে প্রকাশ পায় অনাড়ম্বরতার মধ্য দিয়েই। অনুষ্ঠানগুলোতে পাকামি করে তাই একগাদা প্রসাধনীর ব্যবহারকে আজ থেকেই ‘না’ বলা হোক। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে দেওয়া হোক হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়া। ‘এখনকার প্রসাধনীর ব্যবহারটা হচ্ছে হালকা। খুব একটা চোখে লাগবে না।’ বললেন এলিগেন্স বিউটি স্যালনের কর্ণধার নীপা মাহবুব।
পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে মেলাতে চোখে একটু মোটা করে কাজল লাগালে ভালো লাগবে। জিনসের সঙ্গে আই শ্যাডো খুব একটা ভালো হয় না। তাই এটা না ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন তিনি। ব্লাশ অন একদম হালকা। লিপ গ্লসটাও খুব কড়া করে না লাগানোই ভালো।
প্রসাধনী ব্যবহার করার মনের যে বাসনা, তা পূরণ করে নিন দেশীয় পোশাকের সঙ্গে। একটু জমকালোভাবে সাজার স্বাধীনতা এখানে পাওয়া যাবে। গ্লিটার দেওয়া আই লাইনার, হালকা আই শ্যাডো ও ব্লাশ অন ব্যবহারে সাজানো যাবে নিজেকে। তবে অবশ্যই পরিমিত আকারে। দিনের চেয়ে রাতের অনুষ্ঠানে লিপ গ্লসটা বেশি ভালো লাগবে।
অনুষ্ঠান ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে চুলের স্টাইলটা করতে হবে। এই বয়সের সঙ্গে খুব ভারিਆি স্টাইল কখনোই মানাবে না। সে ক্ষেত্রে খোঁপা না করাই ভালো, বরং পনিটেল করা যেতে পারে। চুলটাকে একটু কোঁকড়া করে খোলা রাখা যায়। চুলে ব্যাংসের স্টাইলও মন্দ লাগবে না একেবারে।

হালকা গয়নায় প্রাণবন্ততা
ভারী ভারী গয়না পরে কৈশোরের প্রাণবন্ততা ঢেকে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সোনার গয়না বাদ দিয়ে একটু মজার গয়নাগুলো পরা যেতে পারে। পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে এক পায়ে নুপূর বা আংটি পরা যেতে পারে। এতে ভালো লাগবে বলে জানালেন মাহিন খান। তিনি বলেন, কানে ছোট দুল, হাতে একটা বড় বালাই এ বয়সের উপযোগী। খুব বেশি অলংকার ব্যবহারের জন্য কৈশোরটা মোটেও উপযুক্ত নয়।
রুম্মায়লা সিদ্দিকী জানান, চেহারার গড়ন অনুযায়ী দুল পরা উচিত। কানে বা হাতে কাঠের, হাড়ের, মাটির তৈরি গয়নাগুলো পরা যেতে পারে। বৈপরীত্য আনতে চাইলে শুধু গলায় লম্বা, ভারী মালা অভিনবত্ব আনবে পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে।

পায়ের তালে নজর কাড়ুন
‘ছোট ছোট পা মায়ের ছোট হিল দেওয়া স্যান্ডেলের দিকেই বারবার দৌড়ে যায়। নিষেধ করার পরও যায় না আকর্ষণ। দু-তিন বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি হরহামেশাই দেখা যায়। ফ্যাশনটা একটু বুঝে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৫-১৬ বছর বয়সে এ চাহিদাটা বেড়ে যায় আরও। ফলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায় পায়ে হাই হিলের বাহার। কিন্তু এই বয়সে হাই হিল একদমই পরা উচিত নয়।’ বললেন মাহিন খান। জিনসের সঙ্গে ক্লোজ জুতো, ফ্ল্যাট বা ব্যালেরিনা জুতোগুলোই মানানসই। দেশীয় পোশাকে নাগরা, দুই ফিতাওয়ালা, ছোট একটু হিল দেওয়া স্যান্ডেলগুলোই ভালো ছন্দ মেলাবে বলে তিনি মনে করেন। বাদ যাবে কেন ব্যাগটি। রিস্ট পার্স বা ক্লাচ ব্যাগে হয়ে উঠুন ফ্যাশনেবল কিশোরী।

পরিচ্ছন্নতাই সৌন্দর্য
কৈশোরে ত্বকের যত্ন নেওয়ার একটাই উপায় জানালেন নীপা মাহবুব। তা হলো ত্বক পরিষ্ককার রাখা। দিনে দুবার ক্লিনজার দিয়ে মুখ নিয়মিত ধোয়া উচিত। সাবান দিয়ে মুখ পরিষ্ককার না করাই ভালো।
পানির পরিমাণ বেশি এমন একটি ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। মুখ, গলা ও হাতে ভালোভাবে ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। শুষ্কক ত্বক প্রায় প্রতিদিন স্ক্রাব দ্বারা পরিষ্ককার রাখতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের কষ্ট একটু কম হবে এ ক্ষেত্রে। সপ্তাহে এক দিন ধুলেই হবে। কৈশোরের এ বয়সটি থেকেই ম্যানিকিওর পেডিকিওর নিয়মিত করানো উচিত বলে মনে করছেন নীপা। তবে ফেসিয়াল নয়। এর জন্য কৈশোর পেরোতে হবে। যাদের ত্বকে ব্ল্যাকহেডস বেশি, তারা শুধু সেটুকু উঠিয়ে ফেলুন।

0 comments:

Post a Comment