RSS

Wednesday, June 17, 2009

ও বন্ধু আমার

বন্ধুত্বের কি আর শেষ আছে! শিশুকাল থেকে বুড়ো কাল পর্যন্ত সববয়সেই মানুষের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। রাস্তায় চলতে কিংবা নতুন কোনো আড্ডায় নতুন নতুন মুখের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটছেই। এরই মধ্যে কারো সাথে আমাদের মনের মিল কথার মিল ঘটলেই তার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তার সাথে কথা বলতে মন ব্যাকুল হয়। হয়তো এটাকেই বন্ধুত্ব বলে। কারো বন্ধু কম থাকে কারো বন্ধু বেশি থাকে। গম্ভীর প্রকৃতির মানুষের বন্ধু একটু কম হয়। আর কেউ কেউ আছে যারা যেচে মানুষের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে। তাদের বন্ধুর সংখ্যাও বেশি হয়। নতুন বন্ধুত্বের সংখ্যা তাদের বাড়তেই থাকে। তবে আমাদের সমাজে মেয়েদের মেয়ে বন্ধু আর ছেলেদের ছেলে বন্ধুত্বের ঘটনা সাধারণত বেশি দেখা যায়। খুব কম মেয়েদের ছেলে বন্ধু থাকে। মেয়েদের বন্ধুত্বের বিষয়টা আমাদের সমাজে বিশেষ করে ভাল চোখে দেখে না। আর বিয়ের পর যদি থাকে ছেলে বন্ধু আর তাদের সাথে মিশলে তো কথায় নেই। অন্য ছেলের সাথে বন্ধুত্বকে মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না পরিবারের কাছে। ঘটতে পারে নানা সমস্যা। এতে নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন বা অপবাদের মধ্যে পড়তে হতে পারে।

এই যেমন তনিমা। বাচ্চাকে নিয়ে প্রতিদিন সকালে স্কুলে গিয়ে স্কুল ছুটি হওয়ার পর আবার বাচ্চাকে নিয়ে ফিরতে হতো। এই তিন ঘন্টা বাইরে অপেক্ষা করাটা তার কাছে বেশ অস্বস্থিকর লাগতো। মহিলাদের আড্ডায় বসলে সেখানে আবার মহিলারা অন্যের সমালোচনা ছাড়া আর কোনো গল্পই যেনো জানতো না। তনিমার এসব ভাল লাগতো না। তনিমা লক্ষ্য করল প্রতিদিন একটা লোক একাকী বসে বই কিংবা পত্রিকা পড়ে। স্কুল ছুটির পর বাচ্চাকে নিয়ে চলে যায়। তনিমা একদিন যেচে তার সাথে আলাপ করতে গেল। লোকটা একটা পত্রিকার সাব এডিটর। তার স্ত্রী ব্যাংকার। তাই ছেলেকে প্রতিদিন তিনিই স্কুলে নিয়ে আসেন। এভাবে সেই লোকটার সাথে প্রতিদিন বসে আড্ডা দিত তনিমা। লোকটা অনেক পড়াশোনা করতো। তার কাছ থেকে বই পড়ার অভ্যাসটাও হয়ে গেল তনিমার। সে অনেক বই পড়ে ফেলেছে তার কাছ থেকে নিয়ে। সেই তিন ঘন্টা সময় তাদের গল্পের ভিতর কীভাবে কেটে যায় তা বুঝতেই পারত না তনিমা। মাঝে মাঝে যখন দাঁড়িয়ে থেকে বোর হত তখন তারা রাস্তায় হাটত। রাস্তার ওপাশে কফিশপে গিয়ে গল্পগুজব করত। তবে রাজনীতি, সিনেমা, নাটক, ফ্যাশন, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, ছেলের ভবিষ্যত এসব নিয়েই বেশি আলোচনা হতো তাদের। তাদের মধ্যে খুব সুন্দর একটা বোঝাপড়া গড়ে উঠতে থাকলো। কোনো দিন তাদের একে অপরের সাথে দেখা না হলে বেশ মিস করত একে অপরকে। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও হতো টুকটাক। কিন্তু তারা এটাকে প্রেমের প্রথম অধ্যায় বা অন্য কোনো সম্পর্ক বলতে নারাজ। তনিমার ভাষায় এটা স্রেফ বন্ধুত্ব, প্রেম নয়। কারণ আমার স্বামীর প্রতি আমার আকর্ষণ বা ভালোবাসা তো কমেনি। সন্তান, সংসার বা কেরিয়ার কোনও ব্যাপারেই অবহেলা করতে মন চায় না কখনোই। সেই ভাবে দেখতে গেলে আমি আগেও যা ছিলাম এখনও তাই আছি। আমার সংসারের প্রতি আমার টান এতটুকুও কমেনি। শুধু আমার একজন নতুন বন্ধু হয়েছে যে নানা দিক থেকে আমাকে ভাল পরামর্শ, সহযোগিতা করে চলছে। কথাটা যদিও তনিমা তার স্বামীকে এখনো বলতে পারেনি। কারণ তার ভয় এ সম্পর্ককে যদি তার স্বামী মেনে না নেয় বা খারাপ ধারণা পোষণ করে। তনিমা বলে জানিনা এ সম্পর্ক আমার স্বামী কেমন ভাবে নিবে। তবে একদিন হয়তো বলেই দিব। কারণ আমাদের সম্পর্কের মধ্যে তো তিলমাত্র অপরাধবোধ নেই।

নতুন ভাবনা
০ বন্ধুত্ব নানারকম হতে পারে। বন্ধুর সাথে আপনি ঠিক কতটা অন্তরঙ্গ হবেন, সেটা নিজের বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে ঠিক করে নিন। তবে এই কাজগুলো এমনভাবে করবেন যাতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কোনও ভাবে নষ্ট না হয়।
০ আপনার বন্ধুদের সাথে নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা (বিশেষ করে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক) নিয়ে যত কম আলোচনা করবেন, ততই ভাল। কারণ এসব নিয়ে পরে দাম্পত্য সমস্যা হতে পারে।
০ বন্ধুত্ব একটা চিরন্তন সম্পর্ক। বয়স, অবস্থান, বা লিঙ্গ কখনও বন্ধুত্বের পথে কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মনের ক্লান্তিকে ঝেরে ফেলতে বন্ধত্বের কোনো বিকল্প নেই। সেই জন্য কারো সাথে মনের মিল হলে তার সাথে বন্ধুত্ব করতেই পারেন।

মনে রাখুন
০ আপনার নতুন বন্ধুর ব্যাপারে আপনার স্বামীকে যত দ্রুত সম্ভব অবশ্যই জানাবেন। এতে ভবিষ্যতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকবে না। দরকার হলে তাকে তার পরিবার সহ নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন। এতে তিনি হয়তো আপনাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডও হয়ে উঠতে পারেন।
০ বন্ধুর সঙ্গে গল্প, আড্ডার সব বিষয়ের বিবরণ বাড়িতে ফিরে না বলাই ভাল। সবার সম্পর্কের একটা ব্যক্তিগত দিক আছে, সেটাকে সম্মান দিয়ে চলাই মঙ্গলজনক। এতে অসম্মানজনক কিছু না হবার সম্ভাবনাই বেশি।

0 comments:

Post a Comment