RSS

Saturday, June 13, 2009

অবদমনের মানসিকতা

বিয়ে মানে দুই হৃদয়ের এক অলিখিত সংবিধান। আর এই অলিখিত সংবিধানের জোড়েই এক ছাদের নীচে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে নতুন জীবনের সন্ধান করেন দু’টি ভিন্ন হৃদয়ের মানুষ। দাম্পত্য সম্পর্কের মাঝে সঙ্গীকে ভালোবেসে আর তার ভালোবাসাটুকু বুঝে নিয়ে দু’জনের ভাললাগা-মন্দলাগাকে একই সুরে নিয়ে আসার সুযোগ সন্ধান করেন অনেকেই। তবে যখন নিজের ভাললাগার অবমূল্যায়ন আর সঙ্গীর ভাল-মন্দকে মেনে নেয়ার জন্য চাপ তৈরি হয় তখনই ভালোবাসার মাঝে দেখা দেয় বিভেদ। প্রিয় মানুষটির সকল পরামর্শই তখন মনে হয় নিয়ন্ত্রণের একেকটি উপলক্ষ। আর স্বামী কিংবা স্ত্রী’র এই অবদমন করবার মানসিকতা বা অন্যের মতকে উপেক্ষা করে নিজের মতকে চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা থেকেই তৈরি হয় নানা সমস্যা।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সীমা ছাড়ানো ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে যেয়ে কিংবা অহেতুক সন্দেহের জায়গা থেকে তৈরি হয় অন্যকে অবদমিত করে রাখার সমস্যাটি। স্বামী হয়তো ভাবছেন যে তার স্ত্রী’কে অযাচিত স্বাধীনতা দিলে এই সুযোগে তার অবিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আবার কখনো সখনো কারো কারো মনে এই ভাবনাও খেলা করে যে তিনি তার সঙ্গী বা সঙ্গীনীর ভালোমন্দ যেভাবে বোঝেন সে হয়তো সেভাবে সেটি বোঝে না। আর এ জাতীয় ভাবনা থেকে প্রিয় মানুষটি কোথায় যাবে, কখন যাবে থেকে শুরু করে কার সাথে যাবে, জীবন বা জীবিকা নিয়ে কোন আঙ্গিকে ভাববে ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের ভাবনাকে জুড়ে দেন বিপরীত লিঙ্গের মানুষটি। ফলে সৃষ্টি হয় ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের সংঘাত আর সংশয়।

আপনার স্বামী বা স্ত্রী’র মাঝে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা সেটি নানা কারণেই আপনাকে বিরক্ত করতে পারে। তবে এই বিরক্তিটিকে সরাসরি প্রকাশ না করে প্রিয় মানুষটির সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আপনাকেও হতে হবে কৌশলী। কোথায় নিজের স্বাতন্ত্র্যটাকে তুলে ধরে আবার কোথাও ছাড় দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে ভালোবাসার সম্পর্কটিকে।

সঙ্গী বা সঙ্গীনির বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রথমেই আপনাকে তার মানসিকতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে হবে। সঙ্গের মানুষটি কি তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য নাকি সন্দেহের কারণে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন সেটি আগে বোঝার চেষ্টা করুন। যদি শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণই আপনাকে নিয়ন্ত্রণের কারণ হয় তাহলে এর প্রতিবাদ করুন। এর পাশাপাশি আপনি যে প্রিয় মানুষটির কথা গুরুত্ব দিয়েই শোনেন সেটি জানাতে তার সঠিক সিদ্ধান্তগুলোর প্রশংসা করুন। এছাড়া যেসব বিষয়ে আপনাকে অযাচিত সন্দেহ করা হচ্ছে সেই বিষয়গুলোতে ‘ইগো’ না দেখিয়ে সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করুন।

স্বামী এবং স্ত্রী যখন একই পেশায় থাকেন বা দু’জনই যখন কর্মজীবি হন, তখন সঙ্গী বা সঙ্গীনির পেশাগত সাফল্যের কারণেও অনেকে ‘ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স’-এ ভোগেন। এক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী’র সাফল্যকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর সাফল্য হিসেবে না দেখে ভাবুন যে, উন্নতি যারই হোক না কেন সেটি আপনাদের পরিবারেরই উন্নতি। এছাড়া নিজের উন্নতির কথা বলে অন্যকে হেয়-প্রতিপন্ন করা বা ঠাট্টা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। নিজের সমস্যাগুলো সঙ্গীকে জানানোর পাশাপাশি বুঝতে হবে তার ক্যারিয়ারের সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথাও। তবে আপনি যে মুহূর্তে আপনার স্বামী বা স্ত্রী’র দমনমূলক আচরণের কথা ভাবছেন তখন আপনিও নিজের অজান্তে একই ধরনের মানসিকতা পোষণ করছেন কিনা সে বিষয়েও সচেতন হতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার মত গৃহীত হওয়া মানেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান নয়। বরং দু’জনের মতামতের মাঝে তুলনামূলক আলোচনার পরিবেশ এবং প্রত্যেকের মতের প্রতি শ্রদ্ধাই হতে পারে দাম্পত্য সুখের মূলমন্ত্র।

0 comments:

Post a Comment