RSS

Wednesday, June 10, 2009

গয়না পোশাকের অনুষঙ্গ

গয়না প্রচলনের ইতিহাসে বাঙালি নারীর সৌন্দর্যচর্চা আর আব্রু রকক্ষার তাগাদটাই ছিল বেশি। শুরুর সেই প্রয়োজন পরবর্তীতে প্রয়োজনের সীমা পেরিয়ে রূপ মাধুর্য বৃদ্ধিতে আর ঔদার্যতা প্রদর্শনের উপজীব্য হিসেবেই গয়নার বিবর্তন ঘটেছে। শুধু বাঙালি নারীর কথা নয়, সময় যতই এগিয়ে চলেছে, সভ্যতার চাকা যত সামনে চলেছে, মানবীর এই চাওয়া ততবেশি চিরায়ত হয়ে উঠেছে-আর সমযের দাবিতে প্রতিনিয়ত নিজেকে সাজাতে তার প্রয়োজন হয়েছে গয়না। সভ্যতার নানা স্তর পেরিয়ে গয়না আজ আধুনিক ফ্যাশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। পোশাকের সাথে মানানসই গয়না যেন আপনার ব্যক্তিত্বকেই প্রস্ফুটিত করে। ফ্যাশনের এই অনবদ্য অংশ গয়না নিয়ে তাই এবারের কড়চা’র মূল ফিচার। লিখেছেন এমএইচ মিশু

কড়চা’র এই সেশনে সবগুলো গয়না সরবরাহ করেছে শহরের স্বনামধন্য গয়না বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জেমস গ্যালারি। এসব গয়না পাওয়া যাবে জেমস গ্যালারির রাইফেলস স্কয়ার, মেট্রো শপিং মল, বসুন্ধরা সিটি ও গুলশান পিংক সিটির শাখায়। ফোন : ৮১৫৩৪১৬। রকমারী গয়নায় সেজেছেন মডেল সারিকা ও

ছবি তুলেছেন ইকবাল আহমেদ

নারীর অলংকৃত হওয়ার একটি সাধারণ মনস্তত্ত্ব হচ্ছে পুরুষের চোখে নিজেকে দ্রষ্টব্য তথা রমণীয় করে তোলা। অবশ্য এর পেছনে রয়েছে পুরুষের প্রচ্ছন্ন তাগিদ। বস্তুত নারী অলংকার পরে যতোটা সৌন্দর্যশৈলীর অনুরাগী হয়েছে তার চেয়ে বেশি নিজেদের পরিণত করেছে শোভিত পণ্যে, যা তাকে পরিচিত করেছে পুরুষের ইচ্ছাবিলাসের মহার্ঘ্য।ে মনোবিদদের অনেকে বলেন, অলংকার পরার আদি মনস্তত্ত্ব হচ্ছে শারীরিক সৌন্দর্যের উপযোগিতা বাড়ানো। পুরুষ প্রাধান্যের ধারাবাহিক প্রভাবে নারী অলংকৃত হয় নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জ্ঞাত অজ্ঞাত তাড়না থেকে। কাজেই নারীর অলংকৃত হওয়ার বিষয়টি পুরুষের ইচ্ছানির্ভর।

বাঙালির সোনাপ্রীতির কথা চিন্তা করলে বলতে হয়, এখন আগের যে গয়নায় সোনার একচ্ছত্র আধিপত্য কমেছে। তবু এখনও সোনার বিকল্প নেই। উচ্চবিত্ত তো বটেই। মধ্যবিত্তদের ঘরেও সোনার প্রাচুর্য মোটামুটি চোখে পড়ে। এমনকি নিম্নবিত্তরাও মনে করে সামান্য এক রতি সোনা কিনতে না পারলে জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাদের কাছে সোনা হচ্ছে সম্পদ, বিপদের বন্ধু। মধ্যবিত্তের কাছেই তাই। কেবল উচ্চবিত্তের কাছে সোনা ফ্যাশনের ট্রেন্ড বা ধারা। আমাদের সমাজের সোনাপ্রীতি ও রূপের অদল বদল নিয়ে একটি স্বনামধন্য জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানালেন, অলংকারের ডিজাইনে সাধারণত পরিবর্তন আসে তিন-চার বছর পর পর। কিন্তু এখনকার প্রজন্মের পছন্দে একটু বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। তারা ভারী গয়না পছন্দ করেন না। বেশিরভাগ লোকই এখন হালকা গয়না পছন্দ করে। এখন আর সোনার ঝকঝকে হলদেটে রং-এর প্রতি মেয়েদের আগ্রহ নেই। এখন ম্যাট কালার, অক্সিডাইজডকালার, কপার কালার শব্দগুলো অলংকারের জগতে খুব পরিচিত শব্দ। শোনা যায় হোয়াইট গোল্ড, মীনা করা গয়না, জড়োয়া, ক্রিস্টাল, পুঁতি সেটিং, মুক্তা সেটিং, পাথর সেটিং গয়নার কথা। এগুলো রুচির বদলের কারণে ঘটেছে। তবে দেশের নব্বই শতাংশ লোকের কাছে স্বর্ণ এখনও সম্পদ। বাকী দশ শতাংশের কাছে ফ্যাশন মাত্র। তাই এ শ্রেণীর সৌখিন লোক এখন ডায়মন্ডসহ নানারকম দামী পাথরের দিকে ঝুঁকছেন।

এছাড়াও আজকাল এমনি সব জিনিসের গয়না মিলছে বাজারে। তবে ঠিক চাঁদের দুল নয়। তবে মাটি, কাঠ, কড়ি, ঝিনুক, ড্রাই ফ্লওয়ার, লেস, লতা, প্লাস্টিক, ফলের বীজ, তালপাতা, কচুরিপানা-এ জাতীয় উপাদান থেকে তৈরি হচ্ছে গয়না। মানুষ এখন বৈচিত্র্য চায়। আর তাই বোধহয় এত ম্যাটারিয়ালের গয়না। মাটির গয়নার বাজার সবচেয়ে ভালো। জাহানারা কটেজ, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, মাইডাস মিনিমার্ট, আড়ং, নিপুণ, কারিকা, প্রবর্তনা। মেলা বিভিন্ন দোকান মাটির গয়নার জন্য বিখ্যাত। বিভিন্ন মার্কেটের হকারদের কাছেও পাওয়া যাবে মাটির গয়না। দাম গয়না ও ডিজাইন ভেদে পনেরো টাকা থেকে চার পাঁচশ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রীর দোকানে পাওয়া যায় কাঠের গয়না। বিভিন্ন মার্কেটের ফুটপাত কাঠের মালা, দুল ও বালা বিক্রি হয়। দাম বিশ টাকা থেকে কয়েকশ’ টাকার মধ্যে। শাহবাগের ব্যতিক্রমী ধারার দোকান আইডিয়াস এবং আড়ংসহ নানা বিখ্যাত হস্তশিল্প সামগ্রীর দোকানে আরও ভিন্ন ধারার গয়না যেমন-তালপাতা কচুরিপানা, কড়ি, ফলের বিচি, ড্রাই ফ্লাওয়ার প্রভৃতি দিয়ে তৈরি গয়না পাওয়া যায়। বেশ সস্তা এসব গয়না। আর বেশ ফ্যাশনেবলও বটে। দাম সর্বোচ্চ দু’তিনশ টাকা। এছাড়া অক্সিডাইজড গয়না ও প্লাস্টিকের গয়নাতো প্রায় সব মার্কেটে এবং হকারদের কাছে পাওয়া যায়।

গহনা কোন্ অঙ্গের কোনটি :

কানের অলংকার : ইয়ারিং, কর্নিকা, কর্ণপুর, কর্ণবেস্ট, কর্ণবেস্টন, কর্ণপালি, কর্ণদর্পণ, কর্ণকুন্তল, কর্ণমালা, কানপাশা, কানবালা, টাব, চৌদানী, ঝুমকা, দুল, পাশা, বারবৌরি, মকরকুণ্ডল, মাকড়ি ইত্যাদি।

নাকের অলংকার : বেশর, টানানথ, নাকছাবি, নাকসোনা,নোলক, নথ ইত্যাদি।

মাথার অলংকার : কলগা, কীরিট টোপর, তাজ মুকুট, মোর, মৌলি, শিরোমনি, শেখর, সিঁথিমোর ইত্যাদি।

গলার অলংকার: অর্ধহার, ইন্দ্রচ্ছদ, একাবলী, কক্তী, গোটহার, গোস্তন, গুঞ্জার, চন্দ্রহার, চারনরী, চেন, চিক, পাটিহার, পাঁচনরী, পুঁতি, প্রাণশ্চ, প্রালম্বক, পুঁতিমালা, ফুলোহার, মঙ্গলসূত্র, মধ্যমণি, মালা, মতিহার, দমাহার, নেকলেস, রশ্মিমালা, লকেট, শেলি, সাতনরী, সীতাহার, হাঁসুলি, হেঁসোহার ইত্যাদি।

হাতের অলংকার :অনঙ্গ, অঙ্গদ, আর্মলেট, কঙ্কন, কাঁকর, খাড়, চূড়, চুড়ি, টাড়, তাবিজ, তার, বলয়, বাউটি, বালা, বাহুবন্ধ, বাজুবন্ধ, ব্রেসলেট, জশম, পঁইছা, মানতাসা, রতনচূড়, প্রতিশর, নোয়া, রাখি, শাঁখা ইত্যাদি।

কোমরের অলংকার : কটি বন্ধ , ক’টি সূত্র, কোমরবন্ধ, কিঞ্চি, কিঞ্চিনি, গোট ঘুনসি, চন্দ্রহার মেঘলা, বিছা, টোরা, রসনা, সারসন, সপ্তকি ইত্যাদি।

আঙ্গুলের অলংকার : অঙ্গুরি, অঙ্গুরীয়, আংটি ইত্যাদি।

জুন ০৯, ২০০৯, মঙ্গলবার : ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৬

0 comments:

Post a Comment