RSS

Wednesday, June 10, 2009

সু-স্বাস্থ্যের সু-নিয়ম

সব সৌন্দর্য এবং সব সুখের মূল সু-স্বাস্থ্য। সু-স্বাস্থ্য ছাড়া আপনার সব আয়োজনই বৃথা। তাই সবার আগে সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। তারপর অন্যগুলো এমনিই চলে আসবে; যেমন কান টানলে মাথা আসে। আর এই সু-স্বাস্থ্যের জন্য চাই সু-নিয়ম। এই সু-নিয়মের টিপস্গুলো মেনে চলা জরুরি।

সঠিক খাবার বাছুন

কম ফ্যাট জাতীয় খাবার বাছুন। মাংস বেশি খাবেন না। প্রচুর শাক-সবজি খান। ময়দার চেয়ে আটা বেশি পুষ্টিকর। তাই আটার রুটি খান। গোটা মুগ, ছোলা, রাজমা রাখুন প্রতিদিনের ডায়েটে। যে খাদ্য সমষ্টি গ্রহণে ক্ষুধা মিটবে, প্রয়োজনীয় পরিমাণে তাপশক্তি পাওয়া যাবে এবং দেহের সার্বিক প্রয়োজন মিটবে সেই খাদ্য সমষ্টি অর্থাৎ সুষম খাদ্য খান। দুধে প্রায় সকল খাদ্য উপাদান বিদ্যমান থাকে। কার্বোহাইড্রেট হিসেবে থাকে ল্যাক্টোজ ও দুগ্ধজাত শর্করা। প্রোটিন হিসেবে থাকে কেজিন ও অ্যালবুমিন। দুধে থাকে ছোট দানা আকারে দুগ্ধ চর্বি। খনিজ পদার্থ হিসেবে থাকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। ভিটামিট ‘সি’ ছাড়া সকল ভিটামিনই দুধে বর্তমান। এছাড়া দুধে থাকে প্রচুর পরিমাণে পানি। খাদ্যের সকল উপাদান দুধে বর্তমান থাকায় দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। তাই খাদ্য তালিকায় দুধকে প্রাধান্য দিন।

ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলুন

ফাস্ট ফুডের রকমারি খাবার এড়িয়ে চলুন। এইসব খাবারে ক্ষতিকারক উপাদান বেশি থাকে। এ ধরনের খাবারে বীট লবণ, টেস্টিং সল্ট এসব থাকেই। এগুলো শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। রঙ দিয়ে পঞ্চব্যঞ্জনে সাজানো খাবার এড়িয়ে চলুন। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। যেকোনো ধরনের খাবার বাসায় তৈরি করে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

সময়মত খান

কম করে হলেও ঠিক সময়ে খান। প্রতিদিন একই নিয়মে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে, এনার্জি পাওয়া যায়। একবারে অনেক খাবার খাবেন না। তাতে শরীরের হজম করার শক্তি স্তিমিত হয়ে আসে। শরীরে আলস্য আসে এবং ঘুম পায়। হঠাৎ করে বেশি খেলে শরীর তা সামলে নিতে পারে না। এবং প্রতিদিন যে সময় আপনার খাবার কথা সেই সময়ে আপনি না খেলেও আপনার শরীরের খাবার হজম করার যে জারক রস তা খাদ্য নালীতে পড়ে। তাই তখন খালি পেট থাকলে আপনার খাদ্যনালীতে সমস্যা হয়ে গ্যাসট্রিক আলসারে পরিণত হয়।

ধীরে সুস্থে খান

তাড়াহুড়ো করে খাবেন না। খাবার গলায় বেধে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আস্তে আস্তে ভাল করে চিবিয়ে খেলে খাবার হজম হয় তাড়াতাড়ি। আস্তে খেলে খাবারের স্বাদ ও উপভোগ করা যায়। তাই তৃপ্তি সহকারে ধীরে সুস্থে খান।

খাদ্য তালিকায় সব ধরনের খাবার রাখুন

প্রতিটি খাবারের খাদ্য মূল্য আছে; যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিন কম হলেও সব ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। তেল, ঘি, মাখন কিংবা মাংস খাদ্যতালিকা থেকে একেবারে বাদ দিয়ে দেবেন না। সবুজ শাকসবজি দুধ, ছানা, ডিম ফল পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খান। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

বেশি বেশি পানি খান

আমাদের শরীরে খাদ্য তালিকার ৭০ ভাগই পানি। পানি শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পানি কম খেলে ডিহাইড্রেশন হয়। ফলে জয়েন্ট পেইন, ক্র্যাম্প, মাথা ধরার সমস্যা দেখা দেয়। পানি কম খেলে কিডনী সমস্যা এবং জন্ডিস হতে পারে। বেশি পানি খেতে না পারলে পানি জাতীয় খাবার খান এবং রসালো ফল খান।

দুধ-চা, কফি কম খান

রঙ-চা বেশি খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু দুধ-চা কিংবা কফি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে ত্বক ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। ফলে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কফি বেশি পরিমাণে খেলে ঘুম কম হয়। আর ঘুম কম হলেই শরীরে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। তাই খাওয়ার প্রয়োজন হলে অথবা খেতে বাধ্য হলে একেবারে কম খাবেন।

ধূমপানমুক্ত থাকুন

ধূমপান প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমাদের প্রচুর ক্ষতি করে। তাই ধূমপান এবং ধূমপায়ী থেকে দূরে থাকুন। ধূমপান করলে ফুসফুসের প্রচন্ড ক্ষতি হয়। এমনকি ফুসফুসের ক্যান্সারও হতে পারে। একেবারে ছাড়তে না পারলে প্রতিদিন তালিকা থেকে একটা করে কমিয়ে দিন। এভাবে কমাতে কমাতে দেখবেন অবশেষে আপনার তালিকায় অবশিষ্ট থাকবে না।

দুশ্চিন্তা এবং চাপের মধ্যে থাকলে বেশি খাবেন না

দুশ্চিন্তা এবং চাপের মধ্যে থাকলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু এতে চাপ কমে না। তখন বেশি খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয়। কারণ মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে থাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিশ্রাম নিন। একটা তালিকা তৈরি করুন। কি কি কাজ করেছেন এবং কি কি কাজ করতে চান। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি এসব ভাবতে থাকুন। ভাবতে ভাবতে একসময় দেখবেন আপনার দুশ্চিন্তা পালিয়ে গেছে।

রাতের খাবার তাড়াতাড়ি শেষ করুন এবং রাতে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন

ঘুমানোর সময় হজমের কাজ বন্ধ থাকে। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার তিন ঘন্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন। বেশি রাত জাগবেন না। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যান এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন। রাতে কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। যে খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে সেই খাবার রাতের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন। রাতের খাদ্য তালিকায় সালাদ রাখুন।

প্রতিদিন ব্যায়াম করুন

সু-স্বাস্থ্য মানে বেশি মোটা কিংবা ি ম হওয়া নয়। শরীর এবং মন সুস্থ থাকার নামই সু-স্বাস্থ্য। তাই শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কেউ মোটা বলে মোটা কমানোর জন্য ব্যায়াম করবেন তা কিন্তু নয়। সবার জন্যই ব্যায়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে, আলস্য দূর হয় এবং কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায়।

নিয়মিত বিশ্রাম নিন এবং পরিমিত ঘুমান

যতই ব্যস্ত থাকুন তিনি/চার ঘন্টা পর পর একটু বিশ্রাম নিন। বিশ্রাম নিলে কাজের একঘেঁয়েমি দূর হয় এবং কাজে ভুল কম হয় এবং পরবর্তীতে কর্মস্পৃহা সচল থাকে এবং বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ৭/৮ ঘন্টা ঘুমান। ঘুম শরীর সুস্থ রাখে। পরের দিনের কাজের জন্য শরীরকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। তাই কখনো নির্ঘুম থাকবেন না।

০ কাজী সানজিদা আফরিন

জুন ০৯, ২০০৯, মঙ্গলবার : ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৬

0 comments:

Post a Comment