RSS

Wednesday, June 10, 2009

কাজের জায়গায় যেমন...

বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশে এখন অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে শুরু হয়েছে করপোরেট সংস্কৃতি। তার ছোঁয়া পড়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। শুধু করপোরেট নয়, সব প্রতিষ্ঠানেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী কাজ করছেন। কাজের জায়গা অর্থাৎ অফিসে তাঁদের পোশাক এবং সাজসজ্জাটাও হওয়া চাই একটু অন্য রকম। বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে বা কোনো অনুষ্ঠানে যেতে যে সাজপোশাক মানিয়ে যায়, কাজের জায়গায় তা অনেকটাই অন্য রকম। অফিসে পোশাক ও সাজসজ্জা দুটিই বেছে নিতে হবে বিবেচনা করে।
ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান মনে করেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে উঁচু পদে কাজ করেন এমন নারীরা শাড়িটিকেই তাঁদের অফিস পোশাক হিসেবে বেছে নেন। তবে শাড়ি বলতে যে সব ধরনের শাড়িই হবে তা কিন্তু নয়। মাহিন বলেন, শাড়ির উপাদান ও রংটা একটু বুঝে পরতে হবে। কোনো গাঢ় রং একদমই তাঁদের জন্য মানানসই হবে না। শুধু নিজের জন্য নয়; অন্যদের চোখেও যেন দেখতে ভালো লাগে, সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
কোন ধরনের শাড়ি অফিসের জন্য প্রযোজ্য, তা জানতে চাইলে মাহিন খান বলেন, সুতি, কোটা, টাঙ্গাইলের হাফসিল্ক শাড়িগুলো অফিসের জন্য খুবই উপযোগী। কিন্তু কেউ যদি সিনথেটিক শাড়িতে বেশি স্বচ্ছন্দ হয়ে থাকেন, সফট সিল্ক শাড়িও ব্যবহার করতে পারেন। শাড়ি যেমনই হোক না কেন, তার আঁচল যদি ভাঁজ করে পরা হয়, তাহলে অনেক বেশি করপোরেট লুক আসবে। সেটা অনেক বেশি কার্যকরও বটে। তবে শাড়ি পরার সময় কর্মস্থলের পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে আগেই। যেমন হালকা টিয়া, সবুজ, নীল, মভ, বেগুনি, বাদামি, বাঙ্গি−রংগুলো অফিসের পরিবেশের সঙ্গে খুবই মানানসই হবে। আর শাড়ির সঙ্গে মেলানো (ম্যাচিং) ব্লাউজ পিস না থাকলে একরঙা ব্লাউজই বেশি ভালো দেখাবে। তবে ব্লাউজের কাটের দিকেও একটু মনোযোগী হতে হবে। পিঠ বন্ধ, কলার দেওয়া বা উঁচু গলার ব্লাউজ পরাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সেই সঙ্গে লক্ষ রাখা উচিত, ব্লাউজের হাতা যেন খুব ছোট না হয়। অন্তত কনুই পর্যন্ত হওয়াটা ভালো। তাতে অফিসের একটা আনুষ্ঠানিক (ফরমাল) লুক পাওয়া যায়। এখন বেশির ভাগ বড় অফিসেই দেখা যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। আর এ কারণে কোনো কোনো সময় বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভুত হয়। তাই অফিসের নারী কর্মীদের শাল ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে মাহিন খানের পরামর্শ হলো, একটা কালো বা ধুসর রঙের লম্বা হাতার জ্যাকেট তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। যেটা অফিসে ব্যবহার করা যাবে। তাহলে একটা ফরমাল লুকও আসবে আবার প্রয়োজনটাও মিটবে। শালের চেয়ে জ্যাকেটটা অনেক বেশি ব্যবহার উপযোগীও বটে।
তবে সব অফিসে যে শাড়িই নারীদের পোশাক, তা কিন্তু নয়। একটু কম বয়সী কর্মকর্তারা বরং সালোয়ার-কামিজকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাঁদের জন্য মাহিনের পরামর্শ হলো, ছোট প্রিন্টের কামিজ ব্যবহার করা ভালো। থ্রিপিস হলে কামিজের ছাপা যেন একটু ছোট ছোট হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আর একরঙা হলে ওড়নাটা হতে হবে একটু রঙিন। তবে চোখ আটকে থাকে, এ রকম রঙিন যেন না হয়। কাটের দিকে দিতে হবে গুরুত্ব। এখন ‘এলাইন কাট’ (চাপা, একছাঁট) বেশ চলে। তাই এ ধরনের কাটের কামিজের সঙ্গে সালোয়ারটাও হবে একটু চাপা। কামিজের গলা হাইনেক বা চাইনিজ কলার হলে ভালো দেখাবে। ব্যবহার করা যেতে পারে চিকন পাইপিং, নানা ধরনের বোতাম। আর থ্রি-কোয়ার্টার বা লম্বা হাতাই কাজের জায়গায় পরার উপযোগী। ছোট প্রিন্ট ছাড়াও স্ট্রাইপ কামিজ অনেক বেশি ভালো দেখাবে বলে জানালেন মাহিন খান।
সিনথেটিক থ্রিপিস এখনকার কর্মরত মেয়েদের পছন্দ। এ ছাড়া জুট, লিনেন, তাঁতের থ্রি-পিসও অফিসে যেতে অনেক বেশি ব্যবহার উপযোগী। তবে তাঁতের কামিজ পরলে অবশ্যই ঠিকঠাক ইস্ত্রিরি করে নিতে হবে। শাড়ি ও কামিজের পাশাপাশি আজকাল অনেক অফিসেই ফরমাল শার্ট-প্যান্টও পরছে মেয়েরা। আর সে ক্ষেত্রে তারা ফরমাল প্যান্ট ও ফরমাল শার্টকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। সময়ভেদে হয়তো শীতের সময়ে ব্লেজারও ব্যবহার করা হয়। সে ক্ষেত্রে এগুলো হয়ে থাকে স্ট্রাইপ ফেব্রিকেরই। শার্টের রংটাও অনেক বেশি ফরমাল হালকা একরঙা হতে পারে। কোথাও শার্ট ইন করে, কোথাও নিচে গোল প্রিন্সেস কাট শার্টই মেয়েরা বেশি ব্যবহার করে। শার্টের কাফ ও কলার একটু চওড়া হলেই কিন্তু ভালো দেখায়। আর প্যান্টে স্ট্রেইট কাটই চলে বেশি।
শাড়ি কিংবা কামিজেই নয়, মাহিন খান মনে করেন, সঙ্গের ব্যাগটিও হওয়া চাই ষোল আনা করপোরেট লুকের। তাই বড় বড় অনেক পকেটসহ ব্যাগ ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আর পায়ে একটা চটি কিন্তু কখনোই কাজের জায়গায় মানানসই নয়। একটু হিল থাকাটা খুবই জরুরি। হোক সেটা শাড়ি বা কামিজের সঙ্গে। আরও ভালো হয় যদি স্যান্ডেলের ফিতা আপনার পায়ের গোড়ালির সঙ্গে আটকানো থাকে। তাহলে হিলের টক টক শব্দ কাজের নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগের অন্তরায় হয়ে উঠবে না। টুকটাক অনুষঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একটু যত্নবান হতে হবে। শার্ট-প্যান্টের সঙ্গে তো চাই একেবারে পা ঢাকা ফরমাল জুতো। সেটা কালো হওয়াটাই ভালো এবং আকারটাও হওয়া চাই সময় উপযোগী। তাই টপজাতীয় কানের দুল ব্যবহার করাটাই ভালো। সেই সঙ্গে চিকন চেইন থাকতে পারে গলায়। আর হাতে একটা ঘড়ি কিন্তু খুবই জরুরি। অন্য হাতে হালকা ব্রেসলেট বা চিকন সাদামাটা চুড়ি পরলে খারাপ হবে না। তবে রুনুঝুনু কাচের চুড়ি একদমই নয়।
অফিসে কর্মরত নারীদের চেহারায় একটু সাজসজ্জা থাকা চাই। আর এ জন্য রূপ-বিশেষজ্ঞ ফারজানা আরমান মনে করেন, চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্যটা বজায় রেখেই মেক-আপ করা উচিত। তাই একটু ময়েশ্চারাইজার ও ফাউন্ডেশন হালকা করে মুখে দেওয়া যায়। তবে ত্বক যদি মসৃণ সুন্দর হয়, সে ক্ষেত্রে হালকা পাউডার ব্যবহার করাটাই ভালো। এর বেশি কিছু দরকার হয় না। আবার ত্বক বেশি ভালো না হলে তাঁর পরামর্শ হলো ডুয়েল ফিনিশড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা। স্পঞ্জ একটু ভিজিয়ে নিয়ে তারপর এটা ব্যবহার করতে হবে। আর আই শ্যাডো ব্যবহার করতে হবে একদমই হালকা রঙের। তার সঙ্গে চিকন করে চোখের পাতায় আই লাইনার এবং চোখের কোলে কাজল ব্যবহার করতে হবে। আর মাশকারা দিতে পারেন মেক-আপের ধরন বুঝে। তবে এসব উপাদান যেন ওয়াটারপ্রুফ হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নয়তো এই গরমে মেক-আপ গলে পড়বে।
মুন্নী বলেছেন, লিপস্টিক ব্যবহার করতে হবে একদমই ম্যাট; মোটা যে লিপ পেন্সিল পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করলে ভালো হয়। ঠোঁটের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে দুই টোন গাঢ় লিপস্টিক ব্যবহার করতে হবে।
এই সময়ে যেহেতু গরম বেশি, তাই লম্বা চুল হলে পনিটেল করলে ভালো দেখাবে; আবার চুলগুলো পেঁচিয়ে ফ্রেঞ্চ রোলেও বাঁধতে পারেন। ছোট চুল যাঁদের, তাঁরা ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বেশি রঙিন নয়, কালো বা সাদা রঙের ব্যান্ড ব্যবহার করতে হবে। অথবা ক্লিপে আটকানো যেতে পারে সামনের চুল, যাতে কাজের কোনো ক্ষতি না হয়। যাঁদের কোঁকড়া চুল, তাঁরা সফট মুজ ব্যবহার করতে পারেন বা সিরাম দিয়ে চুল টেনে বাঁধতে পারেন। এতে সারা দিনে চুল বেশ ফিটফাট থাকবে। আবার বাজারে এক ধরনের হেয়ার ওয়াক্স পাওয়া যায়, সেটাও কোঁকড়া চুলের জন্য অনেক বেশি প্রযোজ্য। তবে মেক-আপ ও গেট-আপে থাকতে হবে ফিটফাট ভাব। তবেই না কাজের জায়গায় হওয়া যাবে মানানসই।

0 comments:

Post a Comment