RSS

Friday, June 12, 2009

মুঠোফোনে নাগরিক সেবা

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহকের সংখ্যা এখন মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশেরও বেশি! তথ্যপ্রযুক্তির এই কার্যকরি ‘ম্যাজিক’ ব্যবহার করে গণমানুষের জীবনের অনেকখানিই বদলে দেওয়া যায়−এটি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। একটি আধুনিক, দক্ষ সরকার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন নাগরিক ও সরকারি পরিষেবাকে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় (নাকি হাতের মুঠোয়!) পৌঁছে দিতে পারে। আমাদের দেশেও নানা রকম নাগরিকসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মুঠোফোন হয়ে উঠছে অন্যতম হাতিয়ার। এর অনেকগুলোই হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে।এখন যেসব সেবা মুঠোফোনে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে, সেসব নিয়েই এ প্রতিবেদন।

পরীক্ষার ফলাফল
মুঠোফোনে ব্যাপক আকারে তথ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি শুরু হয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল এসএমএসে (মুঠোবার্তায়) প্রকাশের মাধ্যমে। বেশ কয়েক বছর ধরে এইসব পরীক্ষার ফলাফল ডেটাবেইসের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মুঠোফোনে কনটেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সার্ভারের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের ডেটাবেসের সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে কেউ যখন তার বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর (যেমন ঢাকা বোর্ডের জন্য ফযধ, রাজশাহী বোর্ডের জন্য ৎধল) এবং ফাঁকা জায়গা রেখে তার রোল নম্বর একটি নির্ধারিত নম্বরে এসএমএস করে, তখন ওই এসএমএস সার্ভার, বোর্ডের সার্ভার থেকে নির্ধারিত ফলাফলটি নিয়ে আসে এবং ফিরতি বার্তায় তা গ্রাহককে জানিয়ে দেয়।
ফলাফল প্রকাশের আগে শিক্ষাবোর্ড কতৃপক্ষ নির্ধারিত নম্বর ও ফলাফল প্রাপ্তির পদ্ধতি গণমাধ্যমের সহায়তায় সবাইকে জানিয়ে দেয়। বর্তমানে স্মাতক পরীক্ষা, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ অনেক পরীক্ষার ফল মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছে।

হাজিদের অবস্থান
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৪০ হাজারের বেশি মুসল্লি সৌদি আরবে যান হজব্রত পালন করতে। ২০০২ সাল থেকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হাজিদের সর্বশেষ অবস্থানের তথ্য জানানোর পদ্ধতি চালু হয়। পরবর্তী সময়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয় মুঠোফোন। নির্ধারিত নম্বরে (হজ মৌসুমে ঘোষণা করা হয়) নির্ধারিত সংকেত শব্দ (এ ক্ষেত্রে ঐধলর) লিখে হাজির পরিচিতি নম্বর (পিলগ্রিম পাস নম্বর) লিখে পাঠিয়ে দিলে ফিরতি এসএমএসে হাজির নাম এবং সৌদি আরবে বর্তমানে তাঁর অবস্থান জানা যায়।

পরিষেবা বিল পরিশোধ
একটি বড়ো নাগরিক যন্ত্রণা হলো বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ। প্রচলিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন (বিটিসিএলের ল্যান্ডফোন) বিল পরিশোধের জন্য নির্ধারিত ব্যাংকের কাউন্টারে হাজির হয়ে নগদ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এই দুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে পরিষেবা বিল পরিশোধ সহজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সময়ে সময়ে একাধিক নির্দেশনা ও গাইড লাইন দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশের একাধিক স্থানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন বিল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাচ্ছে।
এর দুটি উপায়−মোবাইল ফোন সেবাদাতার নির্ধারিত কাউন্টার বা ‘বিলস পে’ কেন্দ্রে নগদে এবং নিজের মোবাইল ফোন থেকে সরাসরি বিল পরিশোধ। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য জেলা ও ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ, ঢাকার গ্যাস এবং ঢাকার শেরেবাংলানগর এক্সচেঞ্জের বিটিসিএলের ল্যান্ডফোন বিল পরিশোধ করতে পারেন।

কেন্দ্রের মাধ্যমে বিল পরিশোধ
এটি প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতির মতো। তবে এখানে সুবিধা হলো ব্যাংকের নির্ধারিত শাখার পরিবর্তে এক এলাকায় যেকোনো বিল পরিশোধ কেন্দ্র থেকে ছুটির দিনসহ প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা যায়।
এই পদ্ধতিতে বিল পরিশোধ করার জন্য গ্রাহকের নিজের মোবাইল ফোন থাকা জরুরি নয়। বিলসহ নির্ধারিত কেন্দ্রে হাজির হয়ে নগদ অর্থে বিল পরিশোধ করা যায়। প্রথমবার বিল পরিশোধের সময় নিজের নম্বরটি পরিষেবা হিসাব নম্বরের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া যায়। দোকানি বিল পরিশোধের পর ওই মোবাইল ফোনে পরিশোধের মুঠোবার্তা আসে। যাঁদের মোবাইল ফোন নেই, তারা এ জন্য দোকানের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন।
যাঁরা মোবাইল ফোন নম্বর পরিষেবা হিসাব নম্বরের সঙ্গে যুক্ত করবেন, তাঁদের একটি বাড়তি লাভ রয়েছে। প্রতি মাসে পরিষেবাপ্রতিষ্ঠান বিল তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সব বিলের তথ্য একটি এসএমএসের মাধ্যমে পেয়ে যান। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধের জন্য গ্রামীণ ফোনের ‘বিলস পে’ কেন্দ্রে এবং বিটিসিএলের টেলিফোন বিল পরিশোধের জন্য টেলিটকের টেলিচার্জ কেন্দ্রে যেতে হবে।

সরাসরি মুঠোফোনেই
গ্রামীণফোনের গ্রাহকেরা তাঁদের মুঠোফোন ব্যবহার করে ঘরে বসেই বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল দিতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে বিল পরিশোধ করতে প্রথমে মুঠোফোনের গ্রাহককে বিল পরিশোধের জন্য নিবন্ধন করতে হয়। এ জন্য নিজের গ্রামীণফোন (যে ফোনের মাধ্যমে বিল দিতে চান) সংযোগ থেকে 1200 নম্বরে একটি এসএমএস পাঠাতে হয়। এসএমএসে লিখতে হয় Reg <> [কোম্পানি কোড] <> [কোম্পানির অ্যাকাউন্ট নম্বর>। এখানে কোম্পানির কোড হলো চার অক্ষরের (বর্তমানে চারটি কোম্পানির কোড−ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি DPDC, ডেসকো DSCO, তিতাস গ্যাস TTAS ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড BPDB)। আর অ্যাকাউন্ট নম্বর হলো গ্রাহকের পরিষেবার অ্যাকাউন্ট নম্বর।
বিলের কাগজে এ নম্বরটি রয়েছে। যেমন−ডিপিডিসির গ্রাহকদের জন্য বিলে উল্লিখিত কাস্টমার নম্বর ও চেক ডিজিট একই সঙ্গে লিখতে হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষেত্রে এটি হবে Consumer No। <> চিহ্ন দিয়ে একটি ফাঁকা স্পেস বোঝানো হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে একটি এসএমএসে সংশ্লিষ্ট তথ্য এবং একটি চার অঙ্কের পিন গ্রাহকের মোবাইলে পৌঁছে যাবে। নিরাপত্তার খাতিরে প্রথমেই পিনটি পরিবর্তন করে নেওয়া ভালো। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিল পরিশোধের জন্য আপনার একটি হিসাব চালু হলো। নিকটস্থ কোনো বিলস পে সেন্টারে অথবা গ্রামীণফোনের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে এই হিসাবে টাকা জমা রাখতে হবে। তবে সাধারণ ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে এটি হবে না। এর জন্য কোনো সার্ভিস চার্জ দিতে হয় না।
পিন পরিবর্তন বা বিল পরিশোধের জন্য *৭৭৭# নম্বরে ডায়াল করলে একটি মেন্যু পাওয়া যাবে। এটি একটি এসএমএস-চালিত প্রোগ্রাম। অর্থাৎ মেন্যু আইটেমের যেটি আপনি করতে চান, সেই নম্বরটি লিখে এসএমএস পাঠিয়ে দিতে হয়। এখানে পিন নম্বর, কোম্পানি কোড, বিলের নম্বর, বিলের পরিমাণ একবার একবার করে দেওয়ার পর যদি আপনার হিসাবে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকে, তাহলে বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ হয়ে যাবে।
অপারেটরের মাধ্যমে বা মোবাইলে
বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ রয়েছে। ৪০০ টাকার কম বিলের জন্য ৫ টাকা, ৪০১-১৫০০ টাকার জন্য ১০ টাকা এবং ১৫০১-৫০০০ টাকার জন্য ১৫ টাকা সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য। তিতাস গ্যাস বিল পরিশোধের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

রেলযাত্রার বিবরণ
যাঁরা রেলগাড়িতে যাতায়াত করেন, তাঁদের জন্য যাত্রাপথের শুরু থেকে গন্তব্য পর্যন্ত কয়টি ট্রেন রয়েছে, গন্তব্যের ভাড়া কত এবং ওই মুহুর্তে স্টেশনে গেলে টিকিট পাওয়া যাবে কি না−এই তথ্য জরুরি। মুঠোফোনে এই তথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে চালু করেছে তাদের এসএমএস সেবা। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের গ্রাহকেরা ১৩১৩ নম্বরে এসএমএস করলে ফিরতি এসএমএসে এই তথ্যগুলো পাবেন।
তিন ধরনের তথ্যের জন্য নির্ধারিত সংকেত শব্দ হলো−রেলগাড়ির তালিকার ও সময়সুচি জানার জন্য LIST, গন্তব্যের ভাড়া জানার জন্য FARE এবং খালি আসনের সংখ্যা জানার জন্য SEAT। এ ছাড়া বার্তায় লিখতে হবে যাত্রার স্টেশন, গন্তব্যের স্টেশন, শ্রেণী এবং যাত্রার তারিখ।
১৩ জুন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে কয়টি ট্রেন আছে, যেগুলোতে প্রথম শ্রেণী রয়েছে যদি সেটি জানতে চান, তাহলে আপনার বার্তাটি হবে− LIST<>Dha<>ctg<>1 <>130609। এখানে <> চিহ্ন মানে হলো একটি ফাঁকা জায়গা। একইভাবে ভাড়ার হার জানতে চাইলে লিস্টের পরিবর্তে ঋঅজঊ এবং খালি আসনসংখ্যা জানার জন্য SEAT লিখে, একইভাবে ১৩১৩ নম্বরে পাঠাতে হবে।
এই সেবা আপাতত ঢাকা স্টেশনের সব আন্তনগর ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর টিকিটের বেলায় পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তা সব স্টেশনের জন্য এবং সব মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের জন্য চালু করার উদ্যোগ রয়েছে।

আরও সেবা
সরকারি সেবার মধ্যে ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা দিতে শুরু করেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন ২৭৭৭ নম্বরে একটি হেল্পডেস্ক চালু করেছে, যার মাধ্যমে গ্রামীণফোনের গ্রাহকেরা কিছু তথ্যসেবা পাচ্ছেন।

0 comments:

Post a Comment