RSS

Saturday, October 3, 2009

কামিজে কাটিং স্টেটমেন্ট

ফ্যাশন মানেই হচ্ছে পরিবর্তন। তাইতো ইদানীং সালোয়ার কামিজের ফ্যাশনেও বেশ বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আর এই পরিবর্তনের ব্যাপকতা চোখে পড়ার মতো। কাট, কলার, টেক্সটাইল সব ক্ষেত্রেই চেঞ্জটা এসেছে। প্রথমে কাটের কথাই বলি। পেছনের বছরগুলোর ফ্যাশনের দিকে তাকালে দেখা যায় যে শর্ট কামিজের আধিপত্যটাই বেশি ছিল। আজকাল আবার শর্ট কামিজের পাশাপাশি হাটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা ঝুলের কামিজও বেশ চলছে। যা কিনা আট দশ বছর আগেও দেখা যেত। ঈদে যেসব কামিজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল তার মধ্যে আনারকলি, আঙরাখা, মাজাককালি কামিজ হঠাৎ করেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আবার এ সময় ঠিক এর কন্টিনিউশন দেখা যাচ্ছে না।

এক শ্রেণীর ক্রেতারাই এটা পছন্দ করছেন, সবাই না। বাকিরা শর্ট কামিজেই সাবলীল। কিন্তু লম্বা ঝুলের এসব কামিজ কাটিং এর দিক থেকে কিন্তু হঠাৎ করে ফিরে আসার কথা বলছে। আবার স্ট্রেইট কার্ট এর পাশাপাশি এখন অনেক লেয়ার, অনেক ঘের, অনেক কাল নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটা একটা বিশাল বড় চেঞ্জ হঠাৎ একদম বিপরীত একটা স্টাইলে চলে যাওয়া। আগামী ৫ বছরের ভেতরে রং কামিজের ট্রেন্ডটা চলে আসবে। একটু চিন্তা করলেই দেখা যায় যে আমাদের দেশে প্রতি দশ বছরে একবার বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। আমাদের প্রতিবেশি ভারত পাকিস্তানে দু’বছর হয়ে গেল লং কামিজ বেশ দাপটের সঙ্গে চলছে। প্রতি পাঁচ বছরে ভারতে একটা বড় পরিবর্তন আসে মেয়েদের পোশাকে। ফ্যাশনের নতুন ট্রেন্ডগুলো ধরতে বাংলাদেশের একটা সময় লাগে। তবে বলা ভাল কামিজের ওই লং শর্টই চক্রকারে চলতে থাকে। মা-খালাদের আমলেও ঘটেছে এমন। এখনও হচ্ছে। আমাদের সময়ও হয়েছে। এতো গেল কামিজের কথা, এবার আসা যাক সালোয়ার প্রসঙ্গে। সালোয়ারের প্রসঙ্গ যদি আসে তবে বলতেই হবে যে এত বছরে এত ধরনের এত কাট আগে কখনও বাংলাদেশে আসেনি। এখন যুগটাই চলছে ডিজিটাল। তাই সবকিছুই এখন ডিজিটাল। তাইতো গত এক বছর ধরে আমরা দেখছি শট কামিজের ট্রেন্ডের কারণেই সালোয়ারের কাটে এসেছে অনেকখানি পরিবর্তনের সুযোগ। পুরোনো দিনের পায়জামা ও চুড়িদারের আদলে বা হাল আমালের প্যান্ট স্টাইলের প্রভাবে সালোয়ারের কাটে এসেছে অনেকখানি বৈচিত্র্য। বেশ কিছু সালোয়ার তৈরি হয়েছে ধুতির আদলে। সালোয়ার বাটন, পাইপিং ব্যবহারে তারই পোশাক। এর মধ্যে কিছু দেখতে ধুতির মত, কিন্তু খানিকটা চাপা। ধুতিরই এরকম সাত আটটা স্টাইল দেখা যায়। চোস্ত পায়জামারও একাধিক স্টাইল, চুড়িদারেরও দুই তিনটা ভেরিয়েশন করা হয়েছে। উপরে রাজস্থানী নিচে চুরিদার স্টাইলে দেখা হয়েছে অনেক ঘের। টিনএজ মেয়েদের কাছে এটা ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। সবার কাছে অবশ্য ততটা পায়নি। নতুন কিছু পেলে স্বভাবতই টিনএজরা আগে পিক করে তাই এটাও করেছে। ইদানীং আবার কামিজে কাজ করা কিন্তু সালোয়ারটা সিম্পল চোখে পড়ে। কামিজে আবার হালকা কাজ হচ্ছে তবে সালোয়ারটা আবার গর্জিয়াস হচ্ছে। এটা একটা নতুনত্ব বলা যেতে পারে। আমরা নিজস্ব স্টাইলে থেকেই আলাদা আলাদাভাবে এসব ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুসরণ করছি। অনুকরণ হচ্ছে না অনুসরণ তো হচ্ছে। মূল অনুসরণটা আসে ভারত কিংবা পাকিস্তানী ফ্যাশন থেকে। একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ব্যাপারটা সবাই একসঙ্গে দেখছি। ইন্টারনেট আর স্যাটেলাইট এর যুগে, একজন শুরু করলে, পাশাপাশি দেখে অন্যজনও শুরু করলো এমনটাও হচ্ছে। কে শুরু করলো সেটা কিন্তু ততটা মূখ্য নয়। একই জিনিস, একেকজন একেকভাবে পড়ছে। ি ভ এর ক্ষেত্রেও চেঞ্জটা কিছুটা সালোয়ারের মত। আজকাল আবার অনেক ধরনের ি ভ চোখে পড়ে। শর্ট ি ভ, ি ভলেস থেকে শুরু করে ম্যাগি হাতা, ফুল ি ভ, থ্রি কোয়াটার, অনেক ভ্যারাইটি কখনও কখনও আবার বাটন, ক্লিপ দিয়েও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এমনকি ঘটি হাতাও চোখে পড়ছে অনেক। কালারেরও বিরাট একটা চেঞ্জ আসছে। গত পাঁচ ছয় বছর খুব ভাইব্রেন্ট কালার, ফ্ল্যাশি কালার যেসব খুব চোখে লাগে- লাল, ম্যাজেন্টা, কমলা ইত্যাদি ব্যবহার হয়েছে বেশি। একটা সময় ছিল যখন এসব কালারের ড্রেস পরলে সবাই খাটি বাংলায় খ্যাত বলে সম্বোধন করতো। এরপর আবার খুব ফ্লরোসেন্ট কালারগুলোই চলছে। দেখতেও কিন্তু খুব ভাল লাগে। এক সময় আবার কমলার সাথে ম্যাজেন্টার কথা চিন্তাও করা যেত না, কিন্তু সেটাও খুব সমাদর চলেছে। ইনডিরেক্ট কালার যেগুলোকে বলি- ব্লুর একটু আপটোন কিংবা গ্রিন, সবাই সেগুলোর একটু ব্রাইট সবাই পছন্দ করে। তাই এমব্রয়ডারিটা হয়ত উজ্জ্বল হবে। কিন্তু বেইজ কালারটা একটু ম্যাট থাকবে।

সাইকোলজির ভাষায় বলতে গেলে চেঞ্জগুলো আসার পেছনে যে কারণ তাহলো মানুষ গতানুগতিকতা দীর্ঘায়িত করতে চায় না। মানুষ মাত্রই একটু চেঞ্জ চায়। প্রতিদিন ডাল ভাত খেতে খেতে মনে হয় আজকে বিরিয়ানি খাই। এক রকম জিনিস কেউ বেশি পছন্দ করে না। নিজেকে বদলে ফেলার ইচ্ছে থেকেই ফ্যাশন ভাবনায় আসে পরিবর্তন। সবার ক্ষেত্রেই এক। ডিজাইনাররা প্রতি সপ্তাহেই নতুন কিছু দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু সালোয়ার কামিজে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ আনাটা একটু কঠিন তবে সেটা ওয়েস্টার্ন ড্রেসে সহজ, যেগুলোতে সহজেই বেশি বৈচিত্র্য আনা যায়। সালোয়ার কামিজে ইদানিং চুমকি, পুতি, লেইসের মত অ্যাক্সেসরিজের ব্যবহারও বাড়ছে। সত্তর দশকের যে-লেইসের ব্যাপকতা ছিল আজকাল আবার তা চোখে পড়ছে। ডিজাইনাররা মূলত অতীতটাই বর্তমানে এনে একটা মোডিফাই করে। এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে অনেক, কাপড়ের টেক্সচারেরও আসছে পরিবর্তন, ওড়না নিয়েও চলছে গবেষণা যেমন- কি থাকলে ভাল লাগবে, লেইস না চুমকি। আগে ডিজাইনাররা কাপড়ের উপর বিভিন্ন ডিজাইন করতো এখন কাপড়টাই ইটসেলফ ইজ এ ডিজাইন। কাপড়ের ডিজাইনে ভেরিয়েশন আনা হচ্ছে ছোট্ট একটা কাট দিয়েই। ব্রাউন, পিচ, লাইলাক, পিংক এসব টোন এবছর বেশি চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লেইসের ব্যবহারও অনেক বেশি থাকবে। প্যাচওয়ার্কও বেশি থাকবে। শাড়ির ক্ষেত্রে তো হচ্ছেই, সালোয়ার কামিজেও থাকবে। ব্লক প্রিন্ট এমন একটা জিনিস যা বরাবরের মতই অপরিবর্তিত থাকবে। পরিশেষে বলা বাহুল্য চাহিদার জায়গায় পরিবর্তন আসবে না, কিন্তু কালারের ভেরিয়েশন থাকতে পারে।

0 comments:

Post a Comment