RSS

Tuesday, October 20, 2009

কাটিয়ে উঠুন হতাশা

প্রতিযোগিতার দৌড়ে মানুষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্র। যান্ত্রিক জীবনে আনন্দ-বিনোদনের স্থান দখল করে নিয়েছে কাজের ব্যস্ততা। ব্যস্ততা আর কাজের চাপে কেউ হচ্ছেন জয়ী, আর কেউ যাচ্ছে হেরে। পরাজিত অনেকেই ডুবে যাচ্ছেন হতাশার সাগরে। শুধু কাজের ব্যস্ততা নয়, অনেকে একাকিত্বের ভাবনায় হচ্ছেন হতাশ। শত কাজের ব্যস্ততায় নিজেকে ভাবছেন একা, জড় পদার্থ। আবার অনেকে অকারণেই নিজেকে ছোট ভেবে কষ্ট পাচ্ছে। এর কোনোটিই ঠিক নয়। হতাশার পরিণতি সর্বদাই নেতিবাচক। ঝেড়ে ফেলুন হতাশা, অবসাদ।
যে ব্যক্তি যত বেশি হতাশ হবে, সে জীবন থেকে তত বেশি পিছিয়ে যাবে। হতাশা শুধু কষ্টই ডেকে আনে, কোনো সাফল্য নয়। মানুষের মস্তিষ্ক তার চিন্তা-চেতনা আর আবেগের স্থান। মস্তিষ্কই নিয়ন্ত্রণ করে যাবতীয় মানসিক বিষয়। মস্তিষ্কে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা আর স্নায়ু। মন খারাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। একটি স্নায়ু অপর স্নায়ুকেও প্রভাবিত করে। ফলে অপর স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে অন্য অঙ্গগুলোর ওপর। ফলে দেহ তার স্বাভাবিক কাজকর্মের গতি হারিয়ে ফেলে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলের ওপর। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে ত্বক অকালেই বৃদ্ধ মানুষের মতো দেখায়। দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো দুর্বল হওয়ার জন্য চুলও ঝরতে শুরু করে। হারিয়ে যায় চুলের ঔজ্জ্বল্য। ত্বকে সৃষ্টি হয় অজস্র ভাঁজ এবং বলিরেখা।

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। ফলে দেহের রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরিণামে হূিপণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। হূিপণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এ জন্য অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক হয়। তাই ঝেড়ে ফেলুন সব হতাশা। জীবনকে ভাবতে শুরু করুন নতুন করে। যেকোনো বিপদে মনোবল না হারিয়ে দ্বিগুণ উত্সাহে কাজ করার শপথ নিন। কখনোই নিজেকে ছোট ভাববেন না। যে ব্যক্তি যত উত্ফুল্ল, তার কাজ করার ক্ষমতা তত বেশি। চলার পথে সুখের পিছু ধরেই আসে কষ্ট-বেদনা। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। জীবনের দুঃখকে দেখতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। আমরা তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। আমাদের দেশে দুঃখ-দুর্দশা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। তাই বলে হতাশ হলে চলবে না। সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। দুঃখের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে সুখ। নিজে সুস্থ থাকুন। আশপাশের সবাইকে সুখী করার চেষ্টা করুন। আপনার সামান্য মনোযোগ, সামান্য সচেতনতাই চারপাশের পরিবেশকে করে তুলবে আরও বেশি সুন্দর। বাড়িয়ে তুলুন সবার সঙ্গে আপনার মানসিক যোগাযোগ। এতে দূর হবে আপনার একাকিত্ব। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি অনুভব করবেন বন্ধুত্বের পরশ। নিজেকে বদলে ফেলুন। সর্বদা নিজেকে ভাবুন সবচেয়ে সুখী মানুষ। প্রাণ খুলে হাসুন। দেখবেন, বিষণ্নতা পালিয়েছে হাজার মাইল দূরে। হতাশা, অবসাদ থেকে জন্ম নেয় নানা অসুখ। এ জন্য বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট প্রাণ খুলে হাসুন। মেনে চলার চেষ্টা করুন কিছু বিষয়। আপনার জীবন হোক হতাশামুক্ত আর সাফল্যে ভরপুর।
লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো—
 জীবনের প্রতিটি সমস্যাকে সর্বদা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখুন। যতই বিপদ আসুক, মনোবল হারাবেন না। বিপদ আপনাকে মোকাবিলা করতেই হবে। এই শপথ নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
 সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়ুন। দেখবেন, তাঁরা প্রায় সবাই অক্লান্ত সংগ্রাম করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তাঁদের জীবনী আপনাকে দেবে অনুপ্রেরণা।
 শত ব্যস্ততার মধ্যে অন্তত একটি দিন বা একটি ঘণ্টা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান। বেড়াতে যান কোনো পছন্দের স্থানে। পছন্দের তালিকায় শুধু স্ত্রী, বান্ধবী বা স্বামী নয়, হতে পারে আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন বা শ্বশুর-শাশুড়ি। প্রিয়জনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুন দূরে কোথাও বা পাশাপাশি বসে টিভিতে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠান দেখুন। এতে মন ভালো থাকবে।
 নিজেকে কখনোই দুঃখী মানুষ ভাববেন না। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, যার পরিণতি ভয়াবহ। অবসরে ভালো কোনো গল্পের বই পড়ুন, ভালো চলচ্চিত্র দেখুন। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক প্রদর্শনী হয়। এসব স্থানে যান। একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, আপনার চেয়ে আরও অনেক কষ্ট ও অসহায়ভাবে পৃথিবীর অনেকেই দিন যাপন করছে। এই মানুষগুলোর কথা চিন্তা করলে আপনার কষ্ট কমবে।
নিজের চেয়ে বড় ও ভালো অবস্থানে যারা আছে, তাদের দেখে কষ্ট পাবেন না। চেষ্টা করুন তাদের মতো হওয়ার। আপনার সততা আর পরিশ্রম আপনাকে এনে দেবে সাফল্য।
 সময়ের অভাবে পছন্দের মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। আপনার পছন্দের কোনো উপহার তাকে দিন।
 দুঃখের স্মৃতিগুলো বাদ দিয়ে প্রিয় স্মৃতি স্মরণ করুন।
 তৈরি করুন একজন ভালো বন্ধু। তার সঙ্গে ভাগ করুন আপনার সব মনোভাব। কষ্ট ভাগ করে নিলে নিজেকে অনেক হালকা মনে হবে। ‘সুখের সঙ্গে দুঃখও অনিবার্য’—এই চরম সত্যটা মেনে নিয়েই আপনাকে পথ চলতে হবে।
 ভোরবেলা মুক্ত বাতাসে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটুন। হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়ামে দেহের প্রতিটি অঙ্গে, বিশেষত মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে সুষ্ঠুভাবে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। তখন আমাদের দেহের বিষণ্নতা, ক্লান্তি দূর হয়। মনে আসে সতেজ ভাব।
 বছরের ছুটির দিনে দূরে কোথাও পিকনিকে যান বা বেড়াতে যান।
 অফিসের কর্মীদের সঙ্গে গড়ে তুলুন সুসম্পর্ক। প্রতিযোগিতা যতই থাকুক, কর্মক্ষেত্রে এ মানুষগুলোই আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। এই বন্ধুত্বের পরিবেশ আপনাকেই তৈরি করতে হবে।
 অফিসের টেবিল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারে রাখতে পারেন আপনার প্রিয়জনের ছবি। ছোট্ট ফুলদানিতে প্রিয় কোনো পাতাবাহার বা ছোট্ট ফুলের টব আপনার ঘরের এক কোণে রাখতে পারেন। প্রকৃতির সবুজ রং চোখের পুষ্টি জোগায় এবং ফুল আমাদের মন ভালো রাখে। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায় এমন কোনো শোপিস বা ছবি দেয়ালে রাখতে পারেন।
 একটানা কাজ না করে একটু বিরতি দেওয়ার চেষ্টা করুন। কাজের মাঝখানে একটু বিরতি পেলে মস্তিষ্কের বিশ্রাম হবে। কম্পিউটারের কাজে দীর্ঘক্ষণ থাকলে একটু বিরতি দেওয়ার চেষ্টা করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট একটানা চোখ বন্ধ করে রাখুন। এতে চোখ ও চোখের আশপাশের মাংসপেশিগুলোর বিশ্রাম হবে। চেহারায় সহজে ক্লান্তির ভাব আসবে না।
 নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করুন। নির্জনে কোনো এক স্থানে বসে ২০ থেকে ৩০ মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখুন। জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ভাবতে থাকুন আপনি ভীষণ সুখী মানুষ। আপনার কোনো সমস্যা নেই। জীবনযুদ্ধে আপনি সফল হয়েছেন এবং হবেন। এ ধরনের ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং জোরে শ্বাস নিন। মনে করুন, জীবনের কষ্টগুলো দুঃস্বপ্ন মাত্র। সামনে আপনার সাফল্যের দিন। আপনি যত বেশি ইতিবাচক চিন্তা করবেন, আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ ততই বাড়বে। ধ্যান বা মেডিটেশনে প্রতিটি অঙ্গের ওপর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মেডিটেশনে বিষণ্নতা দূর হয়। দেহের প্রতিটি অঙ্গ হয়ে ওঠে কার্যকর। তাই প্রতিদিন ধ্যান করুন। সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত একটি দিন মেডিটেশন করুন।
 বছরে একবার সারা দেহের সব অঙ্গের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। এতে রোগ দ্রুত ধরা পড়বে। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সুষম খাবার খান।
মনকে চিরসবুজ ও প্রফুল্ল রাখুন।

0 comments:

Post a Comment