RSS

Monday, January 4, 2010

বিয়েতে বর বরেণ্য

বিয়ে মানেই কনেদের সাজ-পোশাক ও রূপচর্চার ধুম। তবে আজকাল বরও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জমকালো পোশাকের সঙ্গে তাদের আজকাল দেখা যায় রূপসচেতন হতে। নকশার এ অংশে থাকছে বরের বিয়ের অনুষ্ঠানে পোশাকের বিভিন্ন ধরন, রূপচর্চাসহ এসবের খোঁজ।
বিয়ের অনুষ্ঠান সার্থক করার জন্য পরিকল্পনাই সহায়ক। বললেন, কে ক্র্যাফটের উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান। বাংলাদেশে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। কেবল একটু সময় ও সুষ্ঠু পরিকল্পনাই পারে সবকিছু বাজেটের মধ্যে রেখে আপনার জীবনের এই বড় ঘটনাটি আনন্দঘন করতে।

পানচিনি: বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে পানচিনি সবার আগে হয়। এ অনুষ্ঠানটিতে মোটামুটি নিকটাত্মীয়রা উপস্থিত থাকে। এ অনুষ্ঠানে পোশাকটা হয় কিছুটা হালকা নকশার। পোশাক হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন একটু ভারী কাজ করা পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি ছাটের হালকা কাজ করা পাঞ্জাবি অথবা স্যুট। পাঞ্জাবি অথবা শেরওয়ানির ক্ষেত্রে রং হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন মেরুন, সোনালি, রুপালি, হালকা নীল, হালকা হলুদ, হালকা বাদামি, সাদা, চাপা সাদা। আজকাল সুতা, জরি, চুমকি ও পাথরে কাজ করা হালকা বা ভারী ধরনের অনেক পাঞ্জাবি বা পোশাক পাওয়া যায়। স্যুটের ক্ষেত্রে হালকা ছাই, ছাই, গাঢ় নীল, চাপা সাদা রং বাছাই করতে পারেন। অনেকেই শুভ মুহূর্তে বা বিয়ের অনুষ্ঠানে কালো রং পরতে পছন্দ করেন না, সে ক্ষেত্রে অন্য রংগুলো বাছাই করতে পারেন।
পাঞ্জাবির ছাট-কাটেও আছে ভিন্নতা। শেরওয়ানি ছাটের পাঞ্জাবি পরতে পারেন। শেরওয়ানি বা পাঞ্জাবির চলনে আজকাল এক ছাটের একটু টাইট ফিটিং এবং কোমরে সামান্য বাঁকানো কাট চলছে। ভি, পাঞ্জাবি বা উঁচু গলার পাঞ্জাবিও চলছে।
পায়জামার ক্ষেত্রে চুড়িদার বা সোজা কাটের আলীগড়ি পায়জামার চলন আছে। আজকাল শেরওয়ানি বা পাঞ্জাবি একটু ছোট, হাঁটু পর্যন্ত বা তার সামান্য নিচে পর্যন্ত পরার চল।
জুতার ক্ষেত্রে নাগরা বা স্যান্ডেল সু পরতে পারেন। আর স্যুটের সঙ্গে অবশ্যই সু। পাঞ্জাবির সঙ্গে রং মিলিয়ে উত্তরীয় বা শীতকালে হাতের কাজ করা শালও পরতে পারেন।
গায়ে হলুদ
আগে গায়ে হলুদ মানেই ছিল ছেলেদের সাদা অথবা ঘি রঙের সিল্কের পাঞ্জাবি। তবে আজকাল এর ভিন্নতাও দেখা যায়। সিল্ক, ধুপিয়ান, হাফ সিল্কের ওপর হালকা কাজ করা পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানি ছাট পাঞ্জাবির চলন আছে আজকাল। পায়জামার ক্ষেত্রে চুড়িদার বা সোজা ছাটের পায়জামাও পরতে পারেন। অনেকে খাটো পাঞ্জাবিও পরতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে ধুতি ছাটের পায়জামা নিতে পারেন। আজকাল গায়ে হলুদে বিভিন্ন রঙের প্রাধান্য রয়েছে যেমন মেহেদি রং, হালকা সবুজ, হালকা হলুদ, গেরুয়া, মেরুন, কমলা। গায়ে হলুদের জুতা হালকা ধরনের স্যান্ডেল, কোলাপুরি স্যান্ডেল বা কারুকাজ করা নাগরা ধরনের স্যান্ডেল সুও হতে পারে।
বিয়ে: বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয় সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ। তাই পোশাকটি হওয়া চাই সবার থেকে আলাদা। শেরওয়ানি বিয়ের দিনের আদর্শ পোশাক। পুরোটা সুতা বা গলায় হালকা জরি ও চুমকির কাজের শেরওয়ানি পরতে পারেন। শেরওয়ানির রঙের আছে বৈচিত্র্য। আজকাল বিভিন্ন রঙ পরার চলন এসেছে বিয়েতে। যেমন: সোনালি, রুপালি, হালকা নীল, মেরুন, কপার, সবুজ ও কমলা। তবে উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবি পরতে চাইলে কনের শাড়ির রংটাও একটু খেয়াল রাখা দরকার। বরের পোশাকের রং এমন হওয়া উচিত যেন কনের পোশাকের রঙের সঙ্গে বৈপরীত্য হয়—বললেন খালিদ মাহমুদ খান। এ ছাড়া শেরওয়ানি কাটের ভারী কাজ করা পাঞ্জাবিও পরতে পারেন।
পাঞ্জাবির সঙ্গে অনুষঙ্গ: নাগরা ও পাগড়ি নির্বাচন করতে পারেন পাঞ্জাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। শেরওয়ানির রং বা তাতে কাজ করা যে রঙের, সেই রংটির পাগড়ি পরতে পারেন। অথবা এই দুই রঙের কাজ করা চুন্দ্রি পাগড়িও পরতে পারেন। আবার পাগড়িতে শেরওয়ানির কাজটি হালকাভাবে করিয়ে নিতে পারেন।
নাগরা বাছাই করতে পারেন পাঞ্জাবির রঙে। অথবা শেরওয়ানির কাপড় দিয়ে নাগরার ওপরের অংশ ও শেরওয়ানি কাজের রঙে নাগরার বর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার নাগরা।
বৌভাত: বৌভাতে প্রিন্স কোট পরতে পারেন, সেটা অনেক বেশি ঐতিহ্যময়। কেবল কলার, হাতে ও পুরো পোশাকে হালকা কাজ করা প্রিন্স কোট পরতে পারেন। আবার ভারী কাজ করাও নির্বাচন করতে পারেন। চাইলে স্যুট পরতে পারেন।
রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে, কালো, সাদা, ঘি বা হালকা সোনালি রঙের প্রিন্স কোট করতে পারেন। স্যুট পরলে চকলেট, গাঢ় নীল, কালো, হালকা বাদামি, চাপা সাদা রঙের স্যুট পরতে পারেন। আজকাল একটু বডি ফিটিং, কাটের চলন চলছে। ব্লেজারটা একটু বডি ফিটিঙে এবং প্যান্টটা চাপা সোজা ছাটের বানাতে পারেন। স্যুটের শার্ট নির্বাচন করুন স্যুটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। হালকা স্যুটে গাঢ় রঙের এবং গাঢ় রঙের স্যুটে হালকা রঙের স্লিম ফিট শার্ট নির্বাচন করতে পারেন।
টাই এর ফ্যাশনেও আজকাল পরিবর্তন লক্ষণীয়। আজকাল চিকন লম্বা টাইয়ের ফ্যাশন। চেক বা এক রঙের টাই নির্বাচন করুন স্যুট ও শার্টের রঙের সঙ্গে মিল রেখে।
প্রিন্স কোট বা স্যুট যেটাই পরুন না কেন, জুতা অবশ্যই সুন্দর ও চকচকে হতে হবে।
কোথায় কী পাবেন: ছেলেদের বিয়ের পোশাক এখন দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো বানাচ্ছে। আড়ং, কে ক্র্যাফট, বাংলার মেলা, রঙ, মায়াসির, কুমুদিনি, আলমিরা ইত্যাদি ফ্যাশন হাউসে তৈরি পোশাক কিনতে পারবেন বা ফরমায়েশ দিয়ে বরের পোশাক তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও অনেক দোকান আছে ঢাকা শহরে। পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানি কিনতে পারেন বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, ইস্টার্ন প্লাজা, রাইফেলস স্কয়ার থেকে। এ ছাড়া এলিফ্যান্ট রোডে আছে বিয়ের পণ্যদ্রব্যাদি কেনার সবচেয়ে ভালো জায়গা। স্যুট পাবেন ফিট এলিগেন্স, ওয়েস্টেক্স, ক্যাটস আই, একস্ট্যাসি, রেমন্ড, রিচম্যান ইত্যাদি দোকানে। জুতা পাবেন চৌরঙ্গী, এলিফ্যান্ট রোড, আড়ংয়ে। এসব দোকানে উত্তরীয়ও পাবেন।
এ ছাড়া আপনার হাতে যদি সময় থাকে, তবে ডিজাইন দেখিয়ে ফরমায়েশ দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন দর্জিকে দিয়ে। পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি সেলাই করতে পারেন গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন দোকান থেকে। স্যুট সেলাই করতে পারেন ফিট এলিগেন্সের মতো বিভিন্ন দোকান থেকে।
দাম যেমন পড়বে: পাঞ্জাবির দাম পড়বে হালকা কাজ হলে দুই হাজার ৫০০ ও ভারী কাজ হলে তিন হাজার ৫০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শেরওয়ানির দাম পড়বে ৭০০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। স্যুট পাবেন ১৫ হাজার টাকায়। নাগরা পাবেন এক থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। সু পাবেন দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে।
বরের রূপচর্চা: আজকাল ছেলেদের জন্য অনেক সেলুন আছে, সেখানে অনায়াসেই করা যেতে পারে বিয়ের আগে একটা গ্রুমিং সেশন।
ছেলেরা যেহেতু ত্বক সম্পর্কে থাকে একটু উদাসীন এবং বাইরেও বের হন বেশি। তাই তাদের বিয়ের আগে ত্বকটা অবশ্যই পরিষ্কার রাখা উচিত। মুখের কালো ছোপ, ব্ল্যাক হেডস বা ব্রণ দূর করতে বিয়ের দুই-তিন মাস আগ থেকেই ফেসিয়াল করা ভালো। তাতে ত্বক সজীব থাকবে। এ ছাড়া ম্যানিকিউর-প্যাডিকিউর করে হাত-পা অবশ্যই পরিষ্কার রাখা উচিত।
চুলের ক্ষেত্রেও নিতে পারেন বিভিন্ন হেয়ার ট্রিটমেন্ট; যা বিয়ের দিন প্রাণবন্ত ও সজীব দেখাবে।
অনুষ্ঠান ভেদে নিতে পারেন বিভিন্ন চুলের স্টাইল। জেল দিয়ে ব্যাক ব্র্যাশ, স্পাইক বা যেকোনো কাট দিয়ে চুল সেট করে নিতে পারেন। চাইলে বিভিন্ন কালারও ব্যবহার করতে পারেন।
অনুষ্ঠানের দিন হালকা পাফ করতে পারেন মুখের দাগ বা তৈলাক্ততা দূর করতে।
বরের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী: বরের পোশাক আর জুতার সঙ্গে পারফিউম, শেভিং ক্রিম বা আফটার শেভ, পাউডার, লোশন, শেভিং কিট, সাবান, বডি স্প্রে, পেস্ট, ব্রাশসহ আরও অনেক কিছু দিতে পারেন আপনার সাধ ও সাধ্যমতো। বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকানে পাবেন এগুলো।
সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং ইচ্ছা থাকলেই সুন্দর ও পরিপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা সম্ভব। যা-ই নির্বাচন করুন না কেন, তা আপনার সাধ্য, রুচি ও মানসিকতার মধ্যে রেখে করুন। বিয়ের এক মাস আগে আপনার করণীয় কাজের তালিকা তৈরি করে নিন।
পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে নিজের ত্বক ও চুলের দিকেও নজর দিন। বিয়ে মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আনন্দ, সৌন্দর্য ও রুচিশীলতার মধ্য দিয়ে জীবনে স্মরণীয় করে নিন আপনার মুহূর্তগুলোকে।

0 comments:

Post a Comment