RSS

Thursday, January 28, 2010

হাত ও পায়ের যত্ন

শহরের কর্মব্যস্ত মানুষের কি আর শীতের হিম হিম হাওয়া, ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা ঘরে বসে উপভোগের
সময় আছে? একদম নেই। তাই তো আদুরে কম্বল আর বিছানা ছেড়ে ছুটতে হয় নিজ নিজ কাজে।
আর ঘরের বাইরে বের হলেই টের পাওয়া যায় শীতের কত দাপট! তাই বলে কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে
হাত বাড়িয়ে দিতে ভুল হয় না কারও। কিন্তু বন্ধুর দিকে বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা শীতে রুক্ষ আর
খসখসে হয়ে উঠেছে কি না খেয়াল করেছেন? শুধু হাত নয়, যে দুটো পায়ের ওপর দিয়ে আমরা পাড়ি
দিচ্ছি পথ, শীতে সে পায়েরও চাই বাড়তি পরিচর্যা।



হাত ও পায়ের পরিচ্ছন্নতায়

শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে হাত ও পা শুষ্ক হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা প্রথমেই জোর দেন হাত ও পায়ের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে। শীতে হাত ও পায়ের যত্নের প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিকভাবে তা পরিষ্কার করা।
 গরম পানিতে তরল সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে হাতের কিছু অংশ ভিজিয়ে রাখুন। তারপর হালকা করে ব্রাশ দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।
পায়ের ক্ষেত্রেও তাই। তবে হাতের চেয়ে কিছুক্ষণ বেশি সময় ধরে পা ভিজিয়ে রাখুন। গরম পানিতে শ্যাম্পুর পাশাপাশি এক চিমটি লবণ দিয়ে নিন। তারপর ঝামা দিয়ে ঘষে মৃত চামড়া ও ময়লা তুলে ফেলুন। এরপর পরিষ্কার পানিতে পা ধুয়ে নিন ।

হাত ও পায়ের আর্দ্রতা

‘শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বকের কোষগুলো ঠিকমতো পানি পায় না, তাই রুক্ষ হয়ে ওঠে হাত-পা। এ সময় হাত ও পায়ের আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি।’ বললেন হলিফ্যামিলি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আফজালুল করিম। প্রতিদিন হাত-পা পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। হাতে লাগাতে পারেন হ্যান্ড ক্রিম। যাঁরা প্রতিদিন অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের জন্য বেশি জরুরি এটি। রাহিমা সুলতানা মনে করেন, তাঁদের অবশ্যই একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে রান্নাঘরে কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, একটা তোয়ালে যেন পাশে থাকে। কাজ শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে হাতটা মুছে ফেলুন।
হাত ও পা কখনই ভেজা রাখা যাবে না। মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।

ঘরে তৈরি ময়েশ্চারাইজার

বাজারে পাওয়া ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি আপনি ঘরে বসেও বানিয়ে নিতে পারেন আপনার হ্যান্ড ও ফুট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার।
 হাতের জন্য তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল সমপরিমাণে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তিলের তেলের পরিবর্তে জলপাইয়ের তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
 পায়ের জন্য মধু, গ্লিসারিন, লেবুর রস ও ঘৃতকুমারীর রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
 সয়াবিন গুঁড়া হাত ও পায়ের জন্য খুবই ভালো। বাজার থেকে সয়াবিন কিনে কড়াইয়ে তেল দিয়ে হালকা আঁচে কিছুক্ষণ নেড়ে গুঁড়া করে সেটা দিয়ে হাত ও পা ধুতে পারেন। এটা পরিষ্কারের পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজারের ভূমিকা রাখে।
 সপ্তাহে একদিন মাস্ক লাগানো যেতে পারে। মুলতানি মাটি, সয়াবিন গুঁড়া, কাঁচা হলুদ ও জলপাইয়ের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে হাত ও পায়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

হাত ও পায়ের বিভিন্ন সমস্যায়

শীত মানেই হাতের চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, পা ফাটে, কাল দাগ বিভিন্ন সমস্যা। কিন্তু চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। আপনি নিজে নিজেই এর সমাধান করতে পারেন।
 যাঁদের হাতের চামড়া অত্যধিক রুক্ষ হয়ে যায়, তাঁরা ক্ষারযুক্ত সাবান বর্জন করুন। সে ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। অথবা বেসন দিয়ে ধুতে পারেন।
 যাঁদের হাত ও পায়ের হাড়ের সন্ধিস্থানে কালো দাগ পড়ে, তাঁরা সাবান বর্জন করুন। কাল দাগযুক্ত স্থানে লেবুর রস ও মধু লাগান। এতে খুব ভালো কাজ হয়।
 অনেকের চামড়া ফাটে। তাঁদের জন্য রাহিমা সুলতানার পরামর্শ হচ্ছে—তিলের তেল ব্যবহার। তিলের তেল এ ক্ষেত্রে ওষুধের মতো কাজ করে।
 শীতে অনেকের নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে লেবুর খোসা খুব কার্যকর। মুড়ি বা চানাচুরের সঙ্গে লেবুর খোসা মিশিয়ে ১৫ দিন নিয়মিত খেলে নখ ভাঙা বন্ধ হয়ে যায়।
 অতিরিক্ত শুষ্ক হাত-পায়ে কাঠবাদামের মাস্ক লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
 যাঁদের পা ফাটে, তাঁদের উদ্দেশে আফজালুল করিম বলেন, ‘খেয়াল রাখতে হবে, পা যেন নোংরা কম হয়। খোলা জুতা না পরে শীতে ঢাকা জুতা বা কেডস পরলে পা ফাটা অর্ধেক কমে যায়।’ তবে যাঁদের পা ফাটার প্রবণতা খুব বেশি, তাঁরা অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

হাত ও পায়ের ব্যায়াম

ত্বকের সজীবতার জন্য শরীরের রক্তসঞ্চালন খুব বড় ভূমিকা রাখে। তাই হাত ও পায়ের ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন রাহিমা সুলতানা। হাত মুঠ করা, মুঠ ছাড়া, বসে বসে পা সামনে পেছনে টেনে ব্যায়াম করা যেতে পারে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত ও পায়ে ভ্যাসলিন লাগিয়ে ম্যাসাজ করাও ভালো। এতেও রক্তসঞ্চালন বেড়ে ত্বক সজীব হয়ে ওঠে।
শীতকালে প্রচুর তাজা ফলমূল পাওয়া যায়, সেটা থেকে আপনি কেন বঞ্চিত হবেন? পানি পান করুন প্রচুর পরিমাণে। আর কর্মব্যস্ত সময়ের ফাঁকে মাসে অন্তত একবার কোনো ভালো পার্লার থেকে মেনিকিউর ও পেডিকিউর করার সময়টা বের করে নিন।

0 comments:

Post a Comment