RSS

Monday, January 18, 2010

শীতের পুরুষ সমগ্র

প্রকৃতির পালাবদলে শীত বহু আগেই তার আগমনী ধ্বনি জানিয়ে গেছে আমাদের। তবে এবারের শীতটা যে এতোটা জাঁকিয়ে বসবে সেটা অনেকের ভাবনাতেই ছিল না। আর তাই শীতের এই সময়টায় তাপমাত্রা যতো কমছে শীত পোশাকের প্রয়োজনীয়তাটাও যেন ততোটাই বাড়ছে। কড়চা’র এবারের আয়োজনে তাই জানিয়ে দেয়া হলো পুরুষদের জন্য হাল ফ্যাশনের কিছু শীত পোশাকের কথা।

শুধু শীত তাড়াতে শীতের পোশাক ব্যবহারের চল বহু আগেই উঠে গেছে স্টাইল দুনিয়া থেকে। আর তাই কী শীত কী গ্রীষ্ম, একেকটি পোশাক মানেই এখন একেকটা স্টাইল স্টেটমেন্ট। কাজেই শীতের জুজুবুড়ির ভয়ে অন্য অনেক কিছু পালিয়ে গেলেও স্টাইল আর ফ্যাশন টিকে আছে বহাল তবিয়তেই। পুরুষদের শীত পোশাকে এই স্টাইল-এর বিষয়টি যেমন ফুটে উঠতে পারে ফ্যাশনেবল কোনো সোয়েটার এর মাধ্যমে তেমনি পুরুষের শীতের সঙ্গী হতে পারে হাল ফ্যাশনের মাফলার আর কানটুপিও। তবে এই শীতে নিজেকে উষ্ণ রাখার অনুষঙ্গ যাই হোক না কেন সেটি যেন আপনার সাথে মানানসই হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

পুরুষের শীত পোশাক এর প্রসঙ্গ এলে প্রথমেই সবার ভাবনায় আসে সোয়েটার, জ্যাকেট কিংবা স্যুট-কোট এর কথা। এছাড়া কিছু কিছু পোশাকের সঙ্গে শীতের চাদরও বেশ মানিয়ে যায়। তবে বর্তমান সময়ে স্টাইলিশ শীত পোশাক হিসেবে জ্যাকেটের চলটাই সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে আমাদের দেশে দেশীয় জ্যাকেটের পাশাপাশি দেখা মেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশী জ্যাকেটও। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেনিম, ফ্লানেল, কর্ড, উল, মোটা ক্যানভাস কাপড়, প্যারাসুট কাপড় এবং চামড়ার তৈরি জ্যাকেট। এর মধ্যে এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে মোটা ক্যানভাস কাপড় ও চামড়ার জ্যাকেট। এর মধ্যে চামড়ার তৈরি জ্যাকেটগুলো মূলত স্থায়িত্ব, আরাম, রং ও টেক্সচারের জন্য হালফ্যাশনের শীত পোশাক হিসেবে অধিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। চামড়ার জ্যাকেটের জনপ্রিয় কিছু স্টাইল হচ্ছে বেসিক ওয়েস্টলেস জিপ ফ্রন্ট জ্যাকেট, ক্লাসিক লেন্থ জিপ ফ্রন্ট কিংবা টু বাটন, ফোর বাটন জ্যাকেট, ভেলেন্ট লেদার রাইডিং জ্যাকেট, ইলাস্টিকসহ বোম্বার স্টাইল জ্যাকেট, মোটরবাইক, মিলিটারি, এভিয়েটর, রকস্টার, পাঙ্ক, পুলিশ জ্যাকেট ইত্যাদি। তবে মোটা দাগের এই ধরনগুলোর বাইরেও এখন স্টাইলিশ চামড়ার জ্যাকেটে বিভিন্নভাবে নতুনত্ব আনা হচ্ছে। কাফে জিপার, ওয়েল্টেট পকেট, ল্যাডেন স্ট্রাইপ, পাইপিং প্যাচওয়ার্ক, এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক, মেটাল, বাকল ইত্যাদির ব্যবহারও তাই বাড়ছে। অন্যদিকে মোটা ক্যানভাস কাপড়ের জ্যাকেটগুলোতে হুডি এবং ফ্লোরাল মোটিফ বা প্রিন্টেড নানা ডিজাইনের আধিপত্য দেখতে পাওয়া যায়।

বাজারে বর্তমানে যেসব ডেনিম জ্যাকেট দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো মূলত শেডের ভিন্নতার কারণেই একশ্রেণীর ক্রেতার কাছে আদরণীয় হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি রয়েছে ফ্লোরাল ডিজাইন, কাটওয়ার্ক আর দেশি-বিদেশি স্টিকারের সমারোহ। তবে ডেনিম, ক্যানভাস কাপড় কিংবা চামড়ার জ্যাকেটের সাথে এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হুডি’র জনপ্রিয়তাও। গেঞ্জির কাপড় কিংবা ট্রাউজারের কাপড়ের মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি এই হুডিগুলোতে শরীরের শীত নিবারণের পাশাপাশি থাকে স্টাইলিশ হুড যা শীত থেকে রক্ষা করে মাথা এবং কানকেও।

পুরুষদের স্টাইলিশ শীত পোশাক হিসেবে সোয়েটারের গুরুত্ব খানিকটা কম হলেও এর কদর এখনো কমেনি। তবে এখন একেবারে বেসিক উল নিটেড সোয়েটারের চাইতে মিক্স স্টাইলের সোয়েটারই বেশি চলছে। এসব সোয়েটারে জ্যাকেট এর মতো জিপার বা হুডও দেখতে পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি একরঙা বা স্ট্রাইপের গোলগলা সোয়েটারের চাহিদাও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু সোয়েটারে আবার আকর্ষণীয় অ্যাপ্লিকের কাজও দেখতে পাওয়া যায়। শীতের সময় জ্যাকেট কিংবা সোয়েটার এর সাথে নানান স্টাইলের জিন্সের চলটাই সবচেয়ে বেশি। তবে এর পাশাপাশি গ্যাবাডিন এর প্যান্টও কম জনপ্রিয় নয়। ছেলেদের শীতের পোশাক সস্তায় কেনার আদর্শ জায়গা বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, খিলগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, তালতলা, মিরপুর, মুহাম্মদিয়া মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, শাহ আলী মার্কেট ও রাজধানী সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে। এছাড়া বসুন্ধরা সিটিসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শপিং মলেও দেখা মেলে স্টাইলিশ শীত পোশাকের।

ক্যাজুয়াল পরিবেশে জ্যাকেট বা সোয়েটার পুরুষের সাজ পোশাকের সাথে বেশ মানানসই হলেও যারা একটু কর্পোরেট পরিবেশে ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য প্রয়োজন পড়ে স্যুট কিংবা ব্লেজার এর মতো কেতাবী পোশাকের। এক্ষেত্রে স্যুট, ব্লেজার কেনা কিংবা বানানোর সময় এটি যেন ভালভাবে ফিটিং হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণত খুব বেশি ঢিলেঢালা বা আঁটসাটো স্যুট এর চাইতে মধ্যম মাপের স্যুটই বেশি মানায়। এজন্য স্যুট বা ব্লেজারের ভিত এমন হতে হবে যেন কমপক্ষে আধ ইঞ্চি শার্টের কাফ বাইরে থেকে দেখা যায়। স্যুটের জন্য মানানসই রং বেছে নেওয়াটাও খুব জরুরি। অনেক সময় বিভিন্ন রঙের স্যুট বানানো হয়। কিন্তু বেশি পরা হয় কালো, ছাই, ধূসর, নীল, অফহোয়াইট ও ক্রিম রঙের স্যুট। তবে এখন স্ট্রাইপ কাপড়ের স্যুটও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে চেকের জন্য পিনস্ট্রাইপ, চকস্ট্রাইপ, বিডেড স্ট্রাইপ, মাল্টি স্ট্রাইপ ধরনের কাপড় এখন ভাল চলছে। সব সময় স্যুট ব্যবহার করলে ক্লাসিক স্টাইলের স্যুট ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া ডাবল ব্রেস্টেড, সিঙ্গেল ব্রেস্টেড, ব্রিটিশ, ইতালিয়ান ও আমেরিকান স্যুট এরও চল রয়েছে। এর মধ্যে ডবল ব্রেস্টেড স্যুটের সামনের অংশ দুই দিক থেকেই একটু বাড়তি থাকে, যাতে দুটি বোতাম সমান্তরাল থাকে। তবে সিঙ্গেল ব্রেস্টেড স্যুটে একদিকে বোতাম থাকে, আর বাকি স্যুটের বেশির ভাগই সরু। সঙ্গে কাঁধে প্যাড ব্যবহার করা হয়। রেডিমেড স্যুট কেনার জন্য ক্যাটস আই, মেনজ ক্লাব, ওয়েস্টেকস, ফিট এলিগেন্স খুবই জনপ্রিয়। আর কাপড় কিনে বানানোর সময় লক্ষ রাখতে হবে, কাপড় যেন ঘন গাঁথুনির মসৃণ কাপড় হয়। অল্পতে কুঁচকে যায় বলে লিলেন ধরনের কাপড় বাদ দেওয়াই ভালো। আর স্যুট ও শার্টের রং বিপরীত হলে ভালো লাগে। সাদা শার্টের সঙ্গে গাঢ় রঙের স্যুট এবং হালকা রঙের স্যুটের সঙ্গে রঙিন শার্ট পরা যেতে পারে।

অন্যান্য অনুষঙ্গ

হাল আমলের পুরুষের শীত আভরণ যেন জ্যাকেট, সোয়েটার আর জিন্সের মাঝেই পূর্ণতা পায় না। আর তাই এ সময়কার শীতের আয়োজনে যুক্ত হয়েছে বাহারী ফ্যাশনের মাফলার আর কানটুপিও। এক্ষেত্রে একসাথে অনেকগুলো পাকানো দড়ির মতো দেখতে মাফলারগুলো বেশ জনপ্রিয়। সেই সাথে কম দৈর্ঘ্যরে একরঙা সরু মাফলারও বেশ চলছে। অন্যদিকে কানটুপির ক্ষেত্রে একরঙা উলেন ফোল্ডেড বা নন ফোল্ডেড কানটুপিগুলোর চলই সবচেয়ে বেশি।

0 comments:

Post a Comment