RSS

Tuesday, December 8, 2009

শীতে শাল

বাংলাদেশে গ্রামের শীত আর শহরের শীতের মধ্যে বিস্তর তফাত। শহরে শীতের আমেজ উপভোগ করার সময় যেন কারোরই নেই। শীতের রূপ তাই দুই জায়গায় দুই রকম। এ কারণেই শহরে শীতের পোশাকটিও যেন নগরের যান্ত্রিকতা মাথায় রেখেই করা। তাই পাঁচ হাত লম্বা আর আড়াই হাত বহরের শীতের শাল এখানে হাল সময়ে এসে যেন একটু খাটো হয়ে যায়। দিনের বিভিন্ন সময়ে শীতের তারতম্য, আর ব্যবহারিক উপযোগিতা—এ দুই বিষয় মাথায় রেখেই যেন শীতের শালে এই নতুনত্ব।

শাল কি কেবল শাড়ির সঙ্গেই পরতে হবে? নাকি সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে? এমন ধরাবাঁধা ধারণায় এখন আর তরুণীরা আটকে নেই। তাঁরা শাল পরছেন অনেক কিছুর সঙ্গেই। শাল পরা এবং শালের ধরন—দুই ক্ষেত্রেই এসেছে বৈচিত্র্য। দেশি শালের মধ্যে বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দ খাদি শাল। তাতে ব্লক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট করা থাকলেও যেমন কোনো সমস্যা নেই, তেমনি একরঙা শালেও নেই কোনো আপত্তি; তা দিব্যি শাড়ি, কামিজ, ফতুয়া, টপস যে পোশাকে যাচ্ছে, সেই পোশাকের সঙ্গেই গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন তরুণীরা। আর তাই ব্লক-বাটিকের সঙ্গে যদি কখনো স্লোগানও থাকে, তাও কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। আবার একরঙা পশমিনা শালের ফ্যাশনও দারুণ চলছে। নরম এবং বহর কম বলে ব্যবহারে আরামদায়ক; তাই তরুণীরা এই শালে বেশ স্বচ্ছন্দ। আর এ কারণেই ঢাকা শহরের প্রায় সব বিপণিবিতানেই এখন এই শাল পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে নিউমার্কেটে আছে খাদি শাল, আদিবাসী শাল, পশমিনা শাল, উলের শালের পসরা।
খাদি বা সুতি শাল যেমন একরঙা বা কাজ করা কিংবা ব্লক করা, তেমনি আদিবাসী শালগুলোতে কখনো বুটি থাকে, আবার কখনো তা শুধুই একরঙা। চেকের ব্যবহারও দেখা যায়। এসব শাল আসে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার থেকে। এগুলোর দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। সাধারণত স্ট্রাইপ চেক নকশাতেই এসব শাল বোনা হয়। বিশ্বজুড়ে খাটো শালের ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই যেন আদিবাসীরাও তাদের শালের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ খানিকটা কমিয়ে এনেছে।
এখন যে শালটি খুব চলছে, তা হলো পশমিনা। চীন, পাকিস্তান, ভারত—বিভিন্ন দেশের পশমিনা শাল এখন পাওয়া যায় বাংলাদেশে। এ শালগুলো ২৫০ থেকে দুই হাজার টাকায় পাওয়া যায় ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানে। এসব শালে ফুলের নকশা বা কলকা মোটিফের চাহিদাই বেশি। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোও শাল তৈরি করছে। ফ্যাশন হাউস আড়ং-এর শালের সম্ভারে হাতের কাজ, অ্যাপ্লিক, ব্লক কিংবা একরঙাই চলছে। সেই সঙ্গে রঙেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে আড়ংয়ে পাওয়া যাবে সব ধরনের শালই। এসব শালের দাম ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
শীতের সময় রঙিন শাল পরতে হবে—ক্রেতাদের এমন চাহিদার কথা মাথায় রেখেই নিত্য উপহার এনেছে রং-বেরঙের শাল। নিত্য উপহারের ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারী বাহার রহমানের কথায়, শীতের শুষ্কতাকে রঙিন করতেই টাইডাই করে সবুজ, হলুদ, নীল, লাল, কমলা, বেগুনি রঙের শাল এনেছেন তাঁরা। আর এসব শালেও আছে স্ক্রিনপ্রিন্ট, টাইডাই কিংবা হাতের কাজ। নতুন এসব শালের বাইরে নিত্য উপহারের নদী, ম সিরিজের শালগুলো তো আছেই। তবে এবারের শালগুলো লম্বা-চওড়ায় খানিকটা খাটো বলে জানালেন বাহার রহমান। নিত্য উপহারের শালের দাম ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা।
২৮-৩২ ইঞ্চি চওড়ার কুমিল্লার খাদি শাল হালকা করার জন্য এতে ব্যবহূত হয়েছে নেটিং। মাঝখানে কোথাও কোথাও ফাঁকা রেখে বোনা হয়েছে এই শাল। জানালেন বিবিয়ানার লিপি খন্দকার। এই শালই এক রঙে ব্লকে পছন্দ করছেন তরুণীরা। সেই সঙ্গে অ্যাক্রিলিকের মিশ্রণে একটু নরম করেও একধরনের শাল তৈরি করা হচ্ছে। লিনেনের আঙ্গিকে টাঙ্গাইলে বোনা শালও এবার বিবিয়ানা এনেছে। বিবিয়ানায় আরও আছে নকশিকাঁথার শাল। বিবিয়ানার শালের দাম ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।
নরসিংদীর সুতি, সিল্কি কটন, শাইনি কটন শালে বেশি চলছে হালকা গোলাপি, ম্যাজেন্টা, ছাই রং। দুই পাশে পাড় এবং আধাআধি ভিন্ন রঙের শাল এসেছে এবারের ফ্যাশনে। টু-টোন চলছে বরাবরের মতোই। তবে অন্যদের মতো অঞ্জন’স-এর শাহীন আহমেদও জানালেন, বাহারি রঙের শালই এবারের ফ্যাশনে বেশি চলবে। কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জের শাল আছে অঞ্জন’স-এর সম্ভারে। এসব শালের দামও তেমন বেশি নয়—৩৫০ থেকে ৮৫০ টাকা।

0 comments:

Post a Comment