RSS

Tuesday, December 8, 2009

একাকিত্বের ঘেরাটোপে

পরিবর্তনটা হঠাত্ই চোখে পড়ে। প্রান্ত কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। জেদি, একরোখা। কারও সঙ্গে কোনো কিছু ভাগ করে নিতে পারে না। স্কুল থেকেও অভিযোগ। ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তনটা বাবা-মা খেয়াল করেন। তত দিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে। নিজেদের ব্যস্ততায় একমাত্র সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা ফিকে হয়ে গেছে, বেড়েছে দূরত্ব। এদিকে একাকিত্বের ঘেরাটোপে প্রান্তও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

নাগরিকজীবনের চার দেয়ালের মধ্যে অনেক শিশুর ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটছে। এ নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একমাত্র সন্তানের প্রতি বাবা-মায়েরা একটু দুর্বল থাকেন। সে ক্ষেত্রে সন্তান অনেক জেদি হয়ে উঠতে পারে। বাড়িতে আনা প্রতিটি জিনিস শুধু তার। এ রকম মনোভাব তার গড়ে ওঠে। ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন আসে। এ ক্ষেত্রে ছোট থেকে সন্তানের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তবে নজরদারি নয়।’
তিনি আরও বলেন, বাবা-মা দুজনই চাকরিজীবী হলে একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে। তার সঙ্গে কীভাবে সময় কাটাবেন তা ঠিক করে নিন। আপনার অনুপস্থিতিতে সে কী করে গল্পের ছলে তা জেনে নিতে পারেন। ওর সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করলে ভালো হয়। যাতে করে সে একাকিত্বে না ভোগে। বয়স ও সমাজের সঙ্গে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে আপনার ভালোবাসা যেন সে বুঝতে পারে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে ফোন করতে ভুলবেন না। তাকে যে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন এটি তাকে উপলব্ধি করাতে হবে। কাজ থেকে ফিরে আপনি হয়তো ক্লান্তবোধ করেন, গৃহস্থালির কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। তখন সন্তানকে সেভাবে সঙ্গ দেওয়া হয় না, সে ক্ষেত্রে বাড়ির কাজের সময় তাকেও ডেকে নিতে পারেন। এতে করে সন্তান আপনার সংস্পর্শ পাবে। এবং মানসিকভাবে নির্ভরশীলতা খুঁজে পাবে। আসল কথা হলো, শিশুটি যেন অবহেলা ও অসহায়বোধ না করে। এ ছাড়া আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়। তা হলো একমাত্র সন্তান হলে অনেক সময় শিশু অন্যের সঙ্গে কোনো কিছু ভাগাভাগি করতে পারে না। নিজের মনের কথাও না। সে ক্ষেত্রে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাকে যুক্ত করতে হবে। তা শুরু হবে পরিবার থেকেই। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের সন্তানকে দাওয়াত করতে পারেন। এতে সবাই মিলে কিছু করার অভ্যাস গড়ে উঠবে। ওর বয়সী কারও জন্মদিনে গেলে ওকে সঙ্গে নিয়ে উপহার কিনুন। ওর হাত দিয়ে উপহারটি দিন। ওকে দিয়েই বাসার কাজের লোককে নানা জিনিস দিন। এতে অন্যের সঙ্গে ভাগ করার ও দেওয়ার প্রবণতা গড়ে উঠবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক জিল্লুর কামাল মনে করেন, নিরাপত্তাহীনতা শিশুকে বেশি একা করে তোলে। প্রথমে তার মন থেকে এটি দূর করতে হবে। যেহেতু বাসার কাজের লোকটির সংস্পর্শে সে থাকছে তাই কাজের লোকটিকে প্রাথমিক শিক্ষা দিতে হবে। ভালো আচার-ব্যবহার শেখাতে হবে। শিশুর সাংস্কৃতিক মান বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজের লোকটিকেও সে বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞান দেওয়া উচিত। বাসায় ফিরে ওর মতো করে সময় কাটান। খেলাধুলা করুন। টেলিভিশন, কম্পিউটার ও ফোনের প্রতি ওর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনুন। আপনার আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই তা সম্ভব। ছুটির দিনগুলোতে ওকে নিয়ে বেড়িয়ে আসুন। দেখবেন আপনার অবসাদ-ক্লান্তি দূর হবে। সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও নিবিড় হবে। নিজেকে সে আর একা ভাবার অবকাশই পাবে না।

0 comments:

Post a Comment