RSS

Tuesday, December 8, 2009

শীত চাদরের আদর

ফ্যাশনে চাদর উপকরণটির সম্পর্ক অনেক পুরানো। এমন অনেক স্টাইল আছে যেগুলো ঠিক চাদর ছাড়া যেনো জমে ওঠে না। কিন্তু আমাদের উষ্ণ অঞ্চলে শীতের ৩-৪টা মাসই কেবল চাদর ব্যবহার করা যায়। এক সময় আমাদের দেশে বিদেশী শাল বা চাদর জনপ্রিয় হলেও এখন কিন্তু দেশী ফ্যাশন হাউজগুলোও মনযোগী হচ্ছে শীতের চাদর তৈরিতে। শীতের এই ফ্যাশন অনুসঙ্গ নিয়েই আমাদের এবারের কড়চার মূল আয়োজন। লিখেছেন এমএইচ মিশু

হিম আদরের ডাক

শীতের আগমনটা এদেশে খুব জাকজমকের সাথে কখনই হয় না। খুব ধীর গতিতে শীত এসে আড়াল করে হেমন্তের হলদে আলোকে। আর তখনই হঠাৎ করেই শহরবাসীর শীত কাপড় কেনার প্রয়োজনীয়তাটা উপলব্ধি হয়। শীতে চাদর ব্যবহারটা এখনো আমাদের দেশে নারীদের মাঝেই প্রধান। কারণ এ সময়ে ওড়নার জায়গাটা সহজেই দখলে নেয় শীত-চাদর। পাশাপাশি চাদরটা একটু পাতলা গড়নের হলে কম শীতে বেশ কাজের হয় এই চাদর। এক চাদরে মাথা মুড়িয়ে শরীর পেঁচিয়ে শীতের মোকাবেলা করা যায় বলেও হয়তো অনেকেই শীতে চাদর ব্যবহার করে থাকেন। এই সময় ফ্যাশনে চাদর ছাড়াও আরো নানান রকম পোশাক জনপ্রিয়তা পেলেও শীতের চাদরের আছে একটা ভিন্ন আদর। বাড়ির মায়েদের কাছে এখনো চাদরটাই শীত মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার। এক চাদরে মা তার সন্তানকেও আড়ল করেন শীতের প্রকোপ থেকে, এমনটা কেবল শীতের চাদরেই সম্ভব।

চাদরের রকমফের

একসময় শীত চাদরের একটা বড় বাজার দখল করে রেখেছিলো ভারতীয় শীতের চাদর। বিশেষ করে কাশমীর থেকে আসা চাদর ছিলো এদেশের চাদর ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ধীরে ধীরে এই ধারণায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। উলে বোনা সেই চাদরের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয় পাশমিনা চাদর। এই চাদর বা শালগুলো মূলত সিল্ক আর উল দিয়ে তৈরি এক ধরনের ফিউশন। এই শালগুলো তুলনামূলক ভাবে হালকা হয়ে থাকে তাই এটা ব্যবহার করা অপেক্ষাকৃত সহজ। দেশের বাইরে থেকে এই শালের আমদানী প্রচুর। তবে ইদানিং আমাদের দেশেও পাশমিনা শাল তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে আমাদের দেশের খাদি শালেরও এখন বেশ প্রচলন শুরু হয়েছে। এই শালগুলো অপেক্ষাকৃত কমদামী হলেও খুব স্টাইলিশ হওয়াতে ধনী-দরিদ্র সবার মাঝেই জনপ্রিয় হচ্ছে।

ফ্যাশন হাউজগুলোর চাদর

শীতের চাদরের একটা বড় আয়োজন থাকে এখন আমাদের দেশের ছোট-বড় বুটিক হাউজগুলোতে। এই হাউজগুলোতে চাদর শীত পোশাকের মূল আকর্ষণ। সিল্ক, খাদি, মোটা সুতি ইত্যাদি নানান কাপড়ের উপরে নির্মিত হচ্ছে আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউজগুলোর শীতের চাদর। এসব চাদরের ডিজাইনেও থাকছে ভিন্নতা। ডিজাইনের কখনো ব্যবহার করা হচ্ছে ব্লক বাটিকের কাজ। কখনো শুধুই সেলাই করে তৈরি আলপনা। দামের ভিন্নতায় পাওয়া যাচ্ছে জড়ি পুতির কাজ করা শালও।

শীতের চাদর কিনতে

শীতের চাদর যেমনই হোক না কেনো কেনার সময় খেয়াল রাখুন এটা যেনো আপনার শীত নিবারণের জন্য যথেষ্ট হয়। নচেৎ একটা চাদরের পাশাপাশি আরো শীত কাপড়ের ঝামেলা পোহাতে হবে। শীতের চাদর কেনার সময় খেয়াল রাখুন একটু পাতলা ধরনের কিনতে পারেন সারাদিন ব্যবহারের জন্য। আর রাতের শীত মোকাবেলায় রাখুন একটু মোটা গড়নো চাদর। ভারি কাজ করা ঝলমলে চাদর দিনের আলোয় বেমানান, এসময় সাদা কিংবা হালকা রঙের কোনো চাদর ব্যবহার করুন। আর রাতের পার্টিতে রাখুন অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল রঙের কোনো শাল। ঢাকাতে শীতের চাদর কিনতে যেতে পারেন বিভিন্ন ফ্যাশনহাউসগুলোতে। এছাড়া নিউমার্কেট, গাউসিয়া, বাইতুল মোকাররম ফুটপাতে পাবেন শীত চাদরের পসরা। যদি ভারতীয় শাল কিনতে চান তাহলে নিউমার্কেট, গাউসিয়া, ইস্টার্ন প্লাজা, পিংক সিটি, বসুন্ধরা সিটি এসব মার্কেটে ঢুঁ মারতে পারেন। পাশমিনা শাল কোনার জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। তবে ওখানকার শালগুলো এখন ঢাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার সপুরা সিল্ক সহ সিল্কের দোকানগুলোতে পাবেন এমন কিছু পাশমিনা শালের সম্ভার। এছাড়া একটু সস্তায় পাশমিনা কিনতে চাইলে যেতে পারেন গাউসিয়া আর নিউমার্কেটের ফুটপাতে।

শীত হতে রক্ষা পাবার জন্য কিছু সতর্কতার কথা নিচে উল্লেখ করা হল-

(১) গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার না করাই ভাল। তবে শীতের সকালে গোসল করতে যদি একান্তই সমস্যা হয় তাহলে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করা যেতে পারে।

(২) সাধারণত দিনের তুলনায় রাতে বেশি শীত পড়ে। তাই আপনার যাবতীয় কাজ দিনের মধ্যে শেষ করতে চেষ্টা করুন। রাতে বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে শীত আপনাকে চেপে ধরবেই।

(৩) শীতের দিনে অতিরিক্ত ফ্যাশন দেখাতে গিয়ে শীতের কাপড় পরা থেকে বিরত থাকবেন না। বরং শীতের চাদর, জ্যাকেট, কিংবা সোয়েটার পরেই ফ্যাশনেবল হবার চেষ্টা করুন।

(৪) দূরের কোন পথে যাত্রা করলে বাসা থেকে বেরুনোর সময় শীতের পোশাক সঙ্গে নিয়ে নিন। শীতের পোশাক হাতে নিয়েটা বাড়তি যন্ত্রণা মনে হলেও সন্ধ্যার পর তা আপনাকে জড়িয়ে রাখবে।

(৫) শীতের হাত থেকে ঠোঁটকে সুরক্ষায় রাখতে হলে লিপগ্লস, লিপজেল, চ্যাপস্টিক কিংবা ভ্যাসলিন ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল এসব পণ্য নানান সুগন্ধে ও সুদৃশ্য মোড়কে বাজারজাত করছে কোম্পানিগুলো। ফলে সহজেই এসব পকেটে রাখতে পারবেন।

(৬) বাসায় কিংবা বাইরে সব সময় আপনি হাত-মোজা কিংবা পা-মোজা ব্যবহার করতে পারেন।

(৭) বাজারে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের কানটুপি পাওয়া যায়। মাথা থেকে কান পর্যন্ত আবৃত করা এসব টুপি ব্যবহার করতে পারেন, ফ্যাশনের জন্যও এসব টুপি চমৎকার। মাথা ও কান ঢাকা থাকলে শীত আর আপনাকে কাবু করতে পারবেন না।

(৮) শীতে প্রায় সবারই সর্দি লেগে নাক বন্ধ হয়ে যায়। সর্দির হাত হতে রক্ষা পেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। নয়তো সর্দি আপনাকে যেকোন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।

(৯) শীতের দিনে খাবার পানি বেশ ঠান্ডা হয়ে যায়। এই পানি পান করলে যে কোন সময় সর্দি জ্বর হয়ে যেতে পারে। তাই খাবার পানি ফুটিয়ে গরম করে পান করুন। এতে করে খাবার পানি জীবাণুমুক্ত হবে সেই সঙ্গে সর্দি জ্বর থেকেও রক্ষা পাবেন।

0 comments:

Post a Comment