RSS

Wednesday, December 30, 2009

এই শীতের রূপকড়চা

সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন থাকাটা এখন জরুরি। প্রয়োজনের সেই তাগিদেই বাস্তবতা এখন আপনাকে রূপ সচেতন করে তুলেছে। আর আপনার যে রূপটি আগে মানুষের চোখে পড়ে তা হচ্ছে আপনার ত্বক। ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা তাই এখনকার জীবনে নিত্যদিনকার রুটিনে খুব সহজেই জাগয়া দখল করে নেয়। সুন্দর ত্বকের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করার যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনি একগাদা প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারেরও উপযোগীতা নেই। আপনার ত্বককে সুরক্ষা করতে চাইলে যত কম পরিমাণ প্রসাধন ব্যবহার করতে পারেন ততই মঙ্গল। এই শীতে আপনার ত্বক বাড়তি যতœ চাইতেই পারে। শীতের আপনার ত্বকের জন্য উপযোগী বাড়তি যতেœর তত্ত্বতালাশ করে লিখেছেন মোর্শেদ নাসের
শীতের শিরশিরে বাতাস শুধু শরীরে হিম অনুভূতিই জাগায় না বরং একই সঙ্গে আপনার ত্বক থেকে কেড়ে নেয় নমনীয়তা, ফলে আপনার ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক প্রাণহীন। মনে রাখবেন, এই ঋতুতে আপনার চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি আপনার ত্বককে আক্রমণ করতে প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুন্দর ত্বকের অধিকারী হতে হলে আপনাকে এই আক্রমণ মোকাবেলা করতে হবে ধৈর্য আর কৌশলের সঙ্গে। সুন্দর ত্বকের অধিকারী হতে হলে আপনাকে যে বিষয়গুলো প্রতিদিন ত্বকের যতেœ করতে হবে তা হচ্ছে ঠিকমত ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিং। মনে রাখতে হবে ত্বকের জন্য খুব ঠান্ডা বা খুব গরম পানি মোটেও উপযোগী নয়। আর কখনো শক্ত কিছু দিয়ে বা অন্যকোনো উপায়ে ত্বকের উপরের পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘষাঘষি করবেন না। যখন মুখ ধুয়ে নেবেন তখন নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুখের পানি মুছে নিন। দিনে অন্তত দু’বার মুখ পরিস্কার করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। আর ত্বক বুঝে নানারকম প্যাক ব্যবহার করাও প্রয়োজনীয়। তবে ঘরোয়া প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করার আগে হাতের কাছে কিছু উপকরণ জোগাড় করে রাখুন। আর কিভাবে প্যাক লাগাবেন তা জেনে নিন। যে উপকরণগুলো সংগ্রহ করবেন তাহলো-

০ মাস্ক লাগানোর জন্য ফ্ল্যাট ও চওড়া ব্রাশ।
০ চওড়া হ্যান্ড ব্যান্ড বা স্কার্ফ।
মনে রাখবেন স্কার্ফ দিয়ে চুল পিছনের দিকে টেনে পনিটেল করে ফেলুন। প্যাক ব্যবহার করার আগে যাতে কপালের উপর কোনো চুল পড়ে না থাকে।

প্যাক লাগানোর সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন তাহলো-

০ অন্তত ২০ মিনিট প্যাক লাগিয়ে শুকিয়ে এলে তারপর ধুয়ে ফেলুন।
০ প্যাক শুকিয়ে যাওয়ার পর অল্প পানি দিয়ে নরম হাতে ঘষতে থাকুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
০ প্যাক লাগানোর সময় ঠোঁট ও চোখের চারপাশ বাদ দিয়ে মাস্ক লাগান।

শুকনো ত্বকের যতœ

ত্বক শুকনো ধরনের হলে তা দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। এধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে একটু ভারী ক্রিম লাগানো প্রয়োজন। আর রাতে এধরনের ত্বকে শুকনো ভাব ফুটে উঠে বলে ঘুমানোর আগে ত্বকে ক্রিম ব্যবহার করা ভাল। এ ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে যেধরনের প্যাক ব্যবহার করা উচিত তাহলো-

গাজরের প্যাক

০ গাজর ও বাঁধাকপি এই শীতের সহজলভ্য সবজি। এই দু’ধরনের সবজি একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। সেদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে এই পানি ব্যবহার করতে পারেন বাকী সবজিগুলো ম্যাশ করে নিন। ফেস মাস্ক হিসেবে এটি ব্যবহার করুন। গাজরের রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ আর বাঁধাকপিতে প্রচুর ভিটামিন। এ প্যাকটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও গাজর একেবারে পাতলা করে কেটে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে পারেন। তারপর ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

হ্যানি প্যাক

০ ডিমের কুসুমের সঙ্গে হাফ চা চামচ মধু ও এক চা চামচ মিল্ক পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বক ঝরঝরে হয়ে উঠবে।
০ মধু শুষ্ক ত্বকের অন্যতম বন্ধু। তাই এক চা চামচ অরেঞ্জ জুসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। তারপর তা মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। ত্বক নরম রাখতে এর কোনো জুড়ি নেই।

গ্লিসারিন প্যাক

০ গোসলের পর প্রথমে আটা ও দুধের মিশ্রণ দিয়ে এক্সফলিয়েট করে পরে ১ ভাগ গ্লিসারিন ও তিন ভাগ গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।

তৈলাক্ত ত্বক

০ তৈলাক্ত ত্বকে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড বা তৈলগ্রন্থি খুব সক্রিয় থাকে তাই এধরনের ত্বকে বাড়তি জেল্লা সবসময়ই দেখা যায়। কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদির আক্রমণ থাকে সবসময়। তাই এ ধরনের ত্বকে আদর্শ টোনার ব্যবহার করা জরুরি। আর দরকার অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যে প্যাকগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে তাহলো-

টমেটো মাস্ক

০ পাকা টমেটো কুচিয়ে মিক্সারে ব্লেন্ড করে নিন। এক চামচ লেবুর রসের সাথে ভাল করে মেশান। এই মিশ্রণটি মুখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তার পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক যেমন পরিষ্কার হয় তেমনি অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমে যায়। সপ্তাহে তিন চারবার এ প্যাক ব্যবহার করুন।

হ্যানি প্যাক

০ এক চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ দই আর সামান্য হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি একটি চমৎকার প্যাক।
০ এক চা চামচ লেবুর রস, মুলতানি মাটি, ডিমের সাদা অংশ আর হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।

ত্বক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখবেন তা হচ্ছে-

০ তাড়াহুড়া না করে কিছু সময় হাতে নিয়ে ত্বক পরিচর্যা করবেন। ত্বক পরিচর্যায় টাটকা সবজি ও ফল ব্যবহারের চেষ্টা করবেন।
০ ত্বকের পরিচর্যায় মুখ, গলা, ঘাড়ের সাথে হাত ও পায়ের যতœ নেয়া সমান জরুরি।
০ শীতের দিনে হাত-পা সতেজ ও মসৃণ রাখতে প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে গ্লিসারিন, গোলাপজল ও পানি মিশিয়ে রাখবেন।
০ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে আসরোট ভাল কাজ করে। আসরোট বেটে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মেশান। এই পেস্ট ক্রিমের কাজ করে। শীতে মুখে ও ঘাড়ে ২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
০ ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে দুই চা-চামচ বাঁধাকপির পাতার রসে কোয়ার্টার চা-চামচ ইস্ট ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘন করে সারা মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর হাল্কা গরমপানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
০ আপেল টুকরো সেদ্ধ করে ভেতরের নরম অংশ কুরিয়ে নিন। এর সঙ্গে অল্প মধু মিশিয়ে মুখে গলায়, হাত-পায়ে লাগান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। হাল্কা গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের ফাটা ও শুষ্কভাব দূর করতে এই প্যাক কার্যকর ভূমিকা রাখে।
০ শীতকালে বেশি বেশি টাটকা শাক-সবজি, সালাদ ও ফল খাবেন। এতে পেট পরিষ্কার থাকবে, এনার্জি পাওয়া যাবে। আর সেই সাথে পরিমিত ঘুম। ত্বকের সু-স্বাস্থ্যে এগুলোর জুড়ি নেই।

0 comments:

Post a Comment