RSS

Monday, January 24, 2011

গায়ে হলুদ

বাংলাদেশসহ ভারতীয় বিয়ের আগে যেসব আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, তার অন্যতম প্রধান একটি হলো গায়ে হলুদ। বাংলাদেশে আবহমান কাল থেকে পালিত হয়ে আসছে এই রীতি। তবে, বর্তমানে যেমন জাঁকজমকপূর্ণভাবে গায়ে হলুদ পালিত হয়, প্রাচীনকালে সেভাবে পালিত না হলেও বিয়ের আগের অন্যতম একটা প্রধান অনুষ্ঠান হিসেবে গায়ে হলুদের ঐতিহ্য সহস্র বছরের পুরোনো। প্রায় ৪ হাজার বছর আগে থেকে মশলার পাশাপাশি প্রসাধনী হিসেবে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদের গুণ হচ্ছে এটি সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে। কাঁচা হলুদ অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে।

ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় বিয়ের মাধ্যমে। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটা স্মরণীয় করে রাখতে সবাই চায়। নারীর জীবনে এটি একটি প্রত্যাশিত স্বপ্ন। তাই, বিয়ের সব আয়োজনই হওয়া চাই মনের মতো। আর বিয়ের অনুষ্ঠানের সূচনাই হচ্ছে মেহেদি আর গায়ে হলুদের মধ্যদিয়ে।

হলুদের পোশাক

'গায়ে হলুদ' নামটির সঙ্গে মিল রেখে আবহমান কাল থেকে বিয়ের কনেরা হলুদ রঙের শাড়ি ব্যবহার করে আসছে গায়ে হলুদে। এক সময় গায়ে হলুদের জন্য নির্ধারিত ছিল কেবলমাত্র হলুদ শাড়িই। বর্তমান সময়ে এ রকম ধারণার একটু পরিবর্তন হচ্ছে। এখন কেবল হলুদ নয়, বরং একরঙা লাল, কাঁচা মেহেদির রং, সবুজও চলতে পারে। আমার মনে হয়, সাদাও বেশ ভালো লাগবে। ফেব্রিক হতে পারে মসলিন, সিল্ক, কটন, জামদানি। শাড়িতে খুব জমকালো কাজ না থাকলেই ভালো। এই অনুষ্ঠানে বরপক্ষের ও কনেপক্ষের আত্মীয়রাও একই ধরনের বা রঙের কাপড় পরলেই ভালো লাগে। উভয়পক্ষকে সহজেই আলাদা করা যায় এবং দেখতেও ভালো লাগে, অতীতে এই প্রচলনটাই ছিল। এ আয়োজনের মাধ্যমেই বিয়ের অনুষ্ঠানের শুরু, তাই যতটা সম্ভব সুন্দর ও রুচিসম্মতভাবে সাজা যায় ততই ভালো। এ অনুষ্ঠানে শাড়ি সাধারণত একপঁ্যাচেই পরতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই শাড়ি পরার পরে মাথায় ঘোমটা দেওয়ার জন্য অসুবিধা হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে মাথার আলাদা ওড়না রাখা যেতে পারে, হলুদের অনুষ্ঠানেও মাথায় কাপড় রাখতেই হবে নইলে অসম্পূর্ণ লাগে।

হলুদের গহনা

হলুদের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে গহনা তৈরির চিন্তাটাও মাথায় রাখতে হবে। হলুদের সাজের পূর্ণতা আনতে গহনা অবশ্যই জরুরি। সময়টা যেহেতু শীতকাল। তাই এখন ফুলের মৌসুম। কাঁচা ফুলের গহনাই বেশি মানানসই এ ছাড়া শুকনো ফুলের সঙ্গে পুঁতি, জরির কাজ, স্টোন দিয়ে তৈরি কৃত্রিম গহনাও কিনতে পাওয়া যায়। যা আপনার শাড়ির রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে অর্ডার দিয়ে বানিয়েও নিতে পারেন। যেমন গহনাই পরা হোক না কেন, ফুলের আকার ছোট হলেই ভালো। সাজের একটু ভিন্নতা আনতে চাইলে রুপা বা পুঁতির গহনাও পরতে পারেন। হাতে থাকতে পারে ফুলের গহনা, বাজুতে ফুল এবং হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি।

সাজ

গায়ে হলুদের মেকআপ হালকা হলে ভালো, কারণ, বিয়ের জন্য গর্জিয়াস মেকআপ করতে হবে। তা ছাড়া হলুদের অনুষ্ঠানে একটা ঘরোয়া ভাব সবসময় বজায় থাকে। গায়ে হলুদে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হলুদ রঙের শাড়ি পরানো হয়। তাই মেকাপে গোল্ডেন, ব্রাউন, ব্রোঞ্জ শেড ব্যবহার করলেই ভালো লাগে। বেস-মেকআপ হালকা হলেই ভালো দেখায়, চোখের সাজে নিজের চোখটাকে হাইলাইট করে তুলুন। গোল্ডেন, ব্রোঞ্জ, ব্রাউন আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। সঙ্গে গাঢ় করে আইলাইনার, মাশকারা ও আইলাশের ব্যবহার চোখ দুটোকে করে দেয় অনেক বেশি প্রমিন্যান্ট। গালে ব্রাউন বস্নাশন শেড আর ঠোঁটে ন্যাচারাল লিপস্টিক। গস্নস না লাগানোই ভালো। এমন লিপস্টিক সিলেক্ট করুন যা বেশিক্ষণ পর্যন্ত থাকে এবং হলুদে অনেক মিষ্টি খাওয়ার পরেও তা অক্ষত থাকে।

চেহারায় বাড়তি একটি সোনালি আভা আনার জন্য ব্যবহার করুন গোল্ডেন ব্রাউন শিমার। চুলে করতে পারেন খোঁপা, খোঁপায় পরতে পারেন ফুল। এ ছাড়া খোঁপার পরিবর্তে লম্বা বিনুনি করে ফুলের মালা জড়িয়ে দিতে পারেন বেণীতে বা অন্য কোনোভাবে বেণীটিকে ডেকোরেট করুন।

মেহেদি

আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে বিয়ের অনুষ্ঠানে মেহেদি একটি বিশেষ স্থানে আছে। উৎসব, আনন্দ ও মেহেদি যেন একই সুতোয় গাঁথা। হিন্দু, মুসলমান এমনকি বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতিতে মেহেদির প্রভাব লক্ষণীয়। এই হাত-রঞ্জিকার প্রধান কাজটিই হচ্ছে জীবনকে রাঙানো। হাতে পায়ে নকশা করতে টিউব মেহেদি আজকাল বেশি জনপ্রিয়। সহজলভ্য বলে এর চাহিদাও বেশি। বাটা মেহেদি দেওয়ার ক্ষেত্রে গতানুগতিক রীতিই প্রচলিত। হাতের তালু ও আঙুলের মাথা রাঙানো হয়। এতে হাতের ও নখের ত্বক রঙিন হওয়ার পাশাপাশি উজ্জ্বল হয় এবং ভালো থাকে। অগণিত আধুনিক সাজের মধ্যেও মেহেদি আছে। এবং থাকবে। কেননা, কনের বিয়ের স্বপ্ন আর ভালোবাসা যে প্রকাশ পায় এর মধ্যে দিয়েই। অনেকেরই ধারণা কনের হাতের মেহেদির রং যত গাঢ় হবে, তাদের ভালোবাসার ভিতও ততই মজবুত হবে।

বিয়ের কনের ক্ষেত্রে হাতের কনুই পর্যন্ত জমকালো মেহেদি প্রথাটাই বর্তমানে প্রচলিত আছে। অনেকেই আবার দুপায়ের হাঁটুর নিচ পর্যন্তও মেহেদি ডিজাইন পছন্দ করেন। বর্তমানে মেহেদির ডিজাইনের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় অ্যারাবিয়ান ডিজাইন।এ ক্ষেত্রে কালো মেহেদি এবং সাধারণ মেহেদি দুটোই ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে বর্ডারের রংটায় কালো মেহেদির ব্যবহার হয়। এবং ভেতরের সূক্ষ্ম ডিজাইনটি হয় সাধারণ মেহেদির দ্বারা। এ ছাড়া হলুদের অনুষ্ঠানে যদি মেহেদি পরতে চান, তা হলে ডিজাইনটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন ফেব্রিক্স, স্টোন ও চুমকি_মেহেদির ডিজাইনের মধ্যে। হলুদের দিন মেহেদি এবং হাতের উল্টোদিকে আলপনা করতে চাইলে টুকটুকে লাল গোল ডিজাইন এবং তার সঙ্গে করতে পারেন হলুদ ও সবুজের ব্যবহার।

হলুদে কনের বন্ধু, বোন বা আত্মীয়রা মেহেদি পরতে চাইলে, ডিজাইনটি ব্যতিক্রম হলেই ভালো লাগবে। সেক্ষেত্রে হাতের তালুভর্তি ডিজাইন বা এক লাইন ডিজাইন করতে পারেন।

মেহেদিতে অ্যালর্জির সমস্যা থাকলে সতর্কতা

কালো মেহেদিতে অনেকেরই অ্যালার্জির কারণে র্যাশ বেরোয়। বিয়ের সময়ে এ কারণে কনের হাতে এটি ব্যবহার না করাই ভালো। তবে ব্যবহার যদি করতেই হয়, তা হলে আগে একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন কালো মেহেদিতে আপনার স্কিনে অ্যালার্জি বেরুচ্ছে কি না।

অনেক সময় স্কিনে কাঁচা হলুদ পেস্ট লাগালেও র্যাশ বেরোয় ও ত্বক চুলকায়। অনেকে আবার কাঁচা হলুদের গন্ধও সহ্য করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের সঙ্গে বাড়তি কিছু উপকরণ মিশিয়ে নিলেই এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। গাজর, চালের গুঁড়া, মসুরের ডাল বাটা, বাদাম বাটা প্রভৃতি যেকোনো উপকরণ বাটা হলুদের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে র্যাশ থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে এবং এটি ত্বকের জন্যও ভালো হবে।

0 comments:

Post a Comment