কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি হলো না। অকারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চোখ রাঙালেন। সহকর্মীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি। পাশাপাশি প্রতিদিনের কাজের চাপ তো আছেই। এমন অবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অনেকে। মনে হলো কোনো কিছুই নিজের অনুকূলে নেই। চারপাশের সবই বিরক্তিকর লাগে। দিনের শেষে তার প্রভাব গিয়ে পড়ে পরিবারে। অফিসের চাপের ভার যেন বইতে হয় পরিবারের অন্য সদস্যদের।
কিন্তু এমন হওয়া উচিত নয়। বরং পরিবারই হতে পারে সব নির্ভরতা ও শান্তির আশ্রয়। চরম বিরক্তি আর ক্লান্তি নিয়ে হয়তো অফিস থেকে বেরিয়েছেন। তার রেশ যেন আপনার পরিবারে না পড়ে। বাড়িতে প্রবেশ করে সেসব ভুলে যেতে হবে। কাজের ক্ষেত্র আর পরিবার মিলিয়ে ফেললে নিজের অশান্তি বৈ আর কিছু হয় না। করপোরেট কোচের মুখ্য পরামর্শক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ যিশু তরফদারও এমনই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই আমরা বাসা-অফিস মিলিয়ে ফেলি। বাসার কোনো সমস্যার প্রভাব যেমন অফিসে গিয়ে পড়ে, অফিসেরটাও তেমন। এ দুটি আলাদা করতে শেখেননি অনেকেই। ফলে অফিস-বাসা কোনো জায়গাতেই মনোযোগ থাকে না। এতে ক্যারিয়ারের ক্ষতি হয়। নিজের পরিবারের প্রতিও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করা হয় না।’
এ সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য তিনি দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।
জীবনের প্রতিটি দিন মসৃণ যায় না, চড়াই-উতরাই থাকে। তাই বলে আবেগকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। যিনি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, তিনিই এগিয়ে যাবেন। আত্মনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকা চাই। তা না হলে পরিবারের সদস্যরাও আপনাকে ভুল বুঝবেন। খিটখিটে মেজাজ হলে অফিসেও আপনার কাজের দক্ষতা কমে যাবে। সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু পরিবারে যদি এর প্রভাব ফেলেন, তারাও অযথা দুশ্চিন্তা করবেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। এ জন্য সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। মনের চাপ কমাতে কাছের কোনো মানুষ, যে আপনাকে বোঝে, তাকে সমস্যার কথা খুলে বলতে পারেন। একেকজনের আবেগ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি একেক রকম। যে কাজটি করলে মন ভালো হয়ে যায়, তা করার চেষ্টা করুন। অফিস থেকে সরাসরি বাসায় না ফিরে কিছুটা পথ হাঁটুন। দেখবেন ভালো লাগছে। কোনো কফির দোকানে গিয়ে ধোঁয়া ওঠা এক মগ কফি খেতে পারেন। বাসায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটান। তখন অফিসের কথা মনে করার দরকার নেই। কথা বলতে ইচ্ছা না করলে টিভি দেখুন। প্রিয় গান শুনে নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারেন। চাইলে প্রিয় কোনো বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে পারেন। ক্লান্তি তো কাটবেই, মেজাজও ফুরফুরে হবে। হঠাৎ করে কোনো অদ্ভুত আচরণ করবেন না। যা আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই নয়। মনে রাখবেন, বাড়ির ছোটরা বড়দের অনুসরণ করে। আপনার কোনো অসংগত আচরণ তাদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে।
হতাশা, ক্রোধ ও ভয়কে বেশি কাছে ঘেষতে দেবেন না। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখলেই এসব প্রতিহত করা সম্ভব। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের চাপ নিয়ন্ত্রণ করার নানা রকম পদ্ধতি আছে। সেগুলো করতে পারেন। তার মধ্যে একটি হলো মেডিটেশন। সঠিকভাবে মেডিটেশন করলে সব ক্লান্তি চলে যায়। অন্ধকার ঘরে খানিকটা সময় চোখ বন্ধ করে থাকুন। বেশ সতেজ থাকবে আপনার মন। মনে রাখুন, দায়িত্ববান ব্যক্তি কখনো তাঁর অফিসের কাজের প্রভাব বাড়িতে ফেলেন না।
ব্র্যাক ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান তাহিনয়্যাত আহমেদ করিম জানান, অফিসে যা-ই হোক না কেন, তা নিয়ে বাসায় কোনো আলোচনা বা মন্তব্য করা উচিত নয়। বিশেষ করে পরিবারের ছোট সদস্য বা সন্তানের সামনে। আপনার কর্মক্ষেত্র ও সহকর্মীর সম্পর্কে তাদের বিরূপ ধারণা তৈরি হবে। যা ভবিষ্যতে হয়তো আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে। নিজের কাজের যেকোনো সমালোচনা ইতিবাচকভাবে নিন। অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেটি নিয়ে কথা না বলে পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে বলুন। যুক্তি থাকলে তাঁরা অবশ্যই আপনার কথা মেনে নেবেন। যেহেতু দিনের বেশি সময় অফিসেই কাটাতে হয়, সেটিও পরিবারের মতো হয়ে যায়। সেখানে রাগ, মান-অভিমান থাকবে। তবে তার মাত্রা অতিক্রম করা যাবে না।
প্রতিটি দিনকে নতুন করে শুরু করুন। দেখবেন অস্থির, দুঃসময় কেটে গেছে।
0 comments:
Post a Comment