RSS

Monday, January 24, 2011

বরের প্রস্তুতি

বিয়ের জন্য নানা পোশাক
বিয়ের দিনের সাজ-পোশাকটা সবাই চায় এমন হোক যেন তা পাত্রের ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠ বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ফ্যাশন দুনিয়ার নিত্যনতুন ডিজাইন আর স্টাইলের বিয়ের পোশাকের বৈচিত্র্য চিরায়িত পোশাকভাবনাতে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বিয়ের আগে ও পরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন_এনগেজমেন্ট, গায়ে হলুদ, বিয়ের দিন ও বৌভাতে কিভাবে প্রায় কাছাকাছি ধরনের কিন্তু অনুষ্ঠানের ভাব গম্ভীরতার সাথে মিল রেখে পোশাক পরিকল্পনা করতে হবে, সে বিষয়ে ফ্যাশন ডিজাইনারদের বিস্তর গবেষণার ফসল হিসেবে নতুন অনেক ট্রেন্ড এখন বাজারে প্রচলিত।

হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে এনগেজমেন্টের দিন সবচেয়ে উপযুক্ত পোশাক হবে ওয়েস্টার্ন স্টাইলের সু্যটের সাথে ভেস্টসহ রেশমি সুতার কাজ করা শার্ট ও ম্যাচিং প্যান্ট। গায়ে হলুদের দিনে ফ্যাশন হাউসগুলোর মেহেদিরাত উপলক্ষে বিশেষভাবে ডিজাইন করা পাঞ্জাবিগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে নিজের গায়ের রঙের সাথে ম্যাচ করে এমন কিছু পছন্দ করলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাকি পাঞ্জাবিওয়ালাদের চেয়ে নিজেকে পৃথক করে চেনানো যাবে। বিয়ের দিনের পোশাক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ট্র্যাডিশনাল কিংবা ওয়েস্টার্ন স্টাইলের মধ্যে যেকোনো একটা বেছে নিতে পারেন। হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলাতে গেলে ফুল সিস্নভ শার্টের সাথে কাফলিন, ম্যাচিং টাই-কোট আর প্যান্ট পরে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখনো শেরওয়ানিকেই বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্রের সবচেয়ে উপযুক্ত পোশাক বলে বিবেচনা করা হয়। শেরওয়ানিতে যে পৌরুষত্ব আর অতীন্দ্রিয়ভাব ফুটে ওঠে অন্য কিছুতেই তার ছোঁয়া পাওয়া যায় না। বিয়ে এবং বৌভাতের অনুষ্ঠানের জন্য পাত্রের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবে শেরওয়ানি বেছে নেওয়া, কেননা এতে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য উভয় সংস্কৃতির সমন্বয় খুঁজে পাওয়া যায়। আবার রাজকীয়ভাব আনতে শেরওয়ানির কোনো বিকল্প ফ্যাশন ডিজাইনাররা এখনো বের করতে পারেন নি। নিজের রুচি, পছন্দ আর হাল ফ্যাশনের সাথে মানিয়ে পোশাক নির্বাচন করাটা তাই পাত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কেননা, এ ক্ষেত্রে সামান্য হেলাফেলা হলে সারাজীবনই অতৃপ্তি থেকে যাবে। কাজেই বিয়েতে কি পরবেন, তার পরিকল্পনা এখন থেকেই শুরু করুন। তবে, যা-ই পরিধান করুন না কেন, তার সাথে ম্যাচ করে পাগড়ির অর্ডার দিতে ভুলবেন না। কেননা, বাঙালি বিয়েতে পাগড়ি অহংকার আর গৌরবের প্রতীক। নানা ধরনের কারুকার্যখচিত ও পালক শোভিত পাগড়ি আবহমান কাল থেকেই বাঙালি বিয়ের প্রতীক বলে স্বীকৃত। আজও এর কদর এতটুকুও কমেনি। তাই বিয়ের পোশাকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পাগড়ির গুরুত্ব অপরিসীম।

স্কিন কেয়ার

বিয়ের দিন নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর, আকর্ষণীয় ও আদর্শ সুপুরুষ হিসেবে উপস্থাপনের স্বপ্ন প্রত্যেক যুবকই মনের গহীনে লালন করে। তবে, শুধুমাত্র ভাবাভাবিতে থেমে থাকলে চলবে না। চারপাশের দূষিত আবহাওয়া, ময়লা, পঁচা বাসী খাবার যেমন আমাদের শরীরের অপূরণীয় ক্ষতি করছে, তেমনি কর্মব্যস্ত জীবনের চাঞ্চল্য ও সঠিক শারীরিক পরিচর্যার কোনো সময় দিচ্ছে না। অন্যান্য সময় হেলাফেলা করলেও বিয়ের আগে শরীরের প্রতি যত্নবান না হলে জীবনের সবচেয়ে আরাধ্য দিনে ফ্যাকাশে আর বুড়িয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি নিয়েই হাজির হতে হবে। আর এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সঠিক নিয়মে খাওয়া-দাওয়া আর ত্বকের যত্নের জন্য আলাদা সময় বের করে নিতে হবে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে নিজেকেই সচেতন হতে হবে। আর ত্বকের যত্নের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো_

সবচেয়ে প্রথম আর প্রধানতম বিষয় হচ্ছে, প্রতিদিন সোপ ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া। এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে যাতে ব্যবহার্য পণ্যটি প্রাকৃতিক নির্যাস দিয়ে তৈরি হয়। কেননা, কেমিক্যাল সামগ্রী আপনার ত্বকের অপূরণীয় ক্ষতি করবে। বেশি ফ্রেশনেস পেতে চাইলে চা-পাতা ডুবানো ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। এ ছাড়াও ক্লিনজিং লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে ত্বকের সুষ্ঠ পরিচর্যার জন্য।

মুখের মৃত কোষগুলো পরিষ্কার করতে এবং মসৃণভাব আনতে নিয়মিত স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্ক্রাব ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিতে হবে। কেননা, শুষ্ক ত্বকে স্ক্রাব-এর প্রয়োগ ত্বককে আরো শুষ্ক করে তুলবে। ময়শ্চারাইজিং স্ক্রাব সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযুক্ত। পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত স্ক্রাবের ব্যবহার ত্বকে নতুন সজীবতা নিয়ে আসে।

চোখের যত্নে শসা গোল গোল করে কেটে নিয়ে দুচোখের উপর দিয়ে রাখলে এবং চা পাতা লবন পানিতে মিশিয়ে ঠান্ডা করে চোখে ডিপ দিলে চোখের চারপাশের বলিরেখা থেকে মুক্তি পেতে ও ক্লান্তি কাটাতে ভালো ফল পাওয়া যায়।

বিয়ের নু্যনতম ছয়মাস আগে থেকে প্রতি মাসে একবার করে ফেসিয়াল করে ত্বকে অন্যরকম দু্যতি নিয়ে আসা যায়, পার্লারে না গিয়ে ঘরে বসে ফেসিয়াল প্যাক বানিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রনমুক্ত থাকতে এবং ত্বকে সজীবতা নিয়ে আসতে প্রতিদিন ১০-১২ গস্নাস পানি পান করতে হবে।

প্রচুর ফলমূল আর শাক-সবজিসহ ব্যালেন্স-ডায়েটে নিজেকে অভ্যস্ত করতে হবে। প্রয়োজনে ভিটামিন ট্যাবলেটও নেওয়া যেতে পারে, সুস্থ আর সবল থাকার জন্য।

যেকোনো ধরনের ত্বকের সমস্যার জন্য স্পেশালিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।

হেয়ার কেয়ার

বর্তমানে পুরুষরাও তাদের চলনে বলনে বৈচিত্র্যের স্বাদ আনতে সদা তৎপর। পোশাক-পরিচ্ছদের ধরন, চুলের স্টাইল, শরীর ও ত্বকের যত্ন সব বিষয়েই তারা এখন সচেতন। চুলের যত্ন ও নতুন নতুন চুলের স্টাইলের ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ সীমাহীন। আর ছেলেদের বিউটি স্যালুন আর হেয়ার এক্সপার্টরাও এখন তাদের এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। জনপ্রিয় তারকা কিংবা মডেলের আলোকে চুল কাটতে তারা পুরোপুরি পারঙ্গম। আবার মার্কেটেও চুলের যত্নের নানা সামগ্রী যেমন_হেয়ার জেল, অ্যান্টি ডেনড্রাফট শ্যাম্পু ইত্যাদি অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে। আর তাই বিয়ের আগে চুলের যত্ন নেওয়াটা এখন আর কঠিন কোনো কাজ নয়। কেননা, সবাই চায় বিয়ের দিনে চুল পরিপাটি অবস্থায় থাকুক। এরজন্য মাসখানেক আগে থেকেই অতিরিক্ত পরিচর্যার কাজ হাতে নিতে হবে। কেননা, দু-একদিনের বা সপ্তাহের চেষ্টায় চুলকে কোনোভাবে আকর্ষণীয় রূপ দেওয়া সম্ভব নয়। পাত্রের চুলের যত্নের জন্য কিছু টিপস নিচে উলেস্নখ করা হলো_

মেডিকেটেড অ্যান্টি ডেনড্রাফট শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে।

চুলের রং ধূসর হয়ে গেলে কালার ব্যবহার করে চুলে ন্যাচারাল কালোভাব ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

চুলের কোন ধরনের স্টাইল ব্যক্তিত্বের সাথে সঠিকভাবে খাপ খায়, সেটা জানতে হেয়ার স্পেশালিস্টের সহায়তা নিতে হবে। কেননা, চুলের স্টাইলের সাথে বিয়ের পোশাকের ম্যাচিং পাত্রের মধ্যে পরিপূর্ণতা এনে দেয়।

বিয়ের অন্তত এক সপ্তাহ আগে চুল কাটিয়ে নেয়া ভালো, চুলের কার্টিন মার্জিত ও গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। খুব ছোট করে চুল কাটা কখনোই উচিত নয়।

চুল বেশি এলোমেলো ও ঢেউ খেলানো হলে জেল ব্যবহার করা উচিত। চুল ভালোভাবে সাজাতে এবং পুরুষালিভাব আনতে জেল-এর কোনো বিকল্প নেই।

চুলে ঝকমকেভাব আনতে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে।

চুল পড়ে যাবার সমস্যা থাকলে স্পেশালিস্টের সাথে দেখা করুন। অনেক সময় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেও সুফল পাওয়া যায়।

0 comments:

Post a Comment