RSS

Friday, January 21, 2011

কম কথায় বাজিমাত

কথা বলাটা মানুষের বিশাল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বন্ধুত্ব, প্রেম বা যেকোনো ক্ষেত্রে কথা বলা অত্যন্ত জরুরি। কারো সঙ্গে যদি কথা বলতেই ভালো না লাগে, তবে প্রেম তো অনেক দূরে, ছোট কোনো সম্পর্কও গড়ে ওঠে না। আর তাই যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই কথা বলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মোট কথা হলো, শোয়েব-সানিয়ার বিয়ের মাতামাতিসহ ফুটবল তারকা মেসির কৌশল এবং সাম্প্রতিক সকল বিষয় সম্পর্কে যে জানে, তার সাথেই তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করা সম্ভব। সব ব্যাপারে একটু-আধটু জ্ঞান বিতরণ করা যার পক্ষে সম্ভব, তাকেই পছন্দ করে সবাই। কিন্তু সমস্যা হয় কখনোই যখন কেউ এই বিতরণের ইতিটা কোথায় কীভাবে টানতে হবে তা বুঝাতে পারেন না। সামনে না হলেও আড়ালে-আবডালে এইসব মানুষকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। আর তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি এবং উচিত কথা বলার সময় একটু মেপেঝেপে বলা। শুধু বন্ধুত্ব বা প্রেম নয়, চাকরি বা পড়াশোনার জগতেও এই বেশি কথা বলার স্বভাবই অত্যন্ত ভয়াবহ। এই ভয়াবহতা আপনার সামাজিক অবস্থান, আপনার মূল্যায়ন অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে অনেক নাজুক করে দিতে পারে, তাই এর সমাধানে যাওয়া উচিত। আর সমাধানের পথ একটাই_মুখে কুলুপ এবং প্রয়োজন হলে সেই কুলুপ খোলা। যেখানে প্রয়োজন সেখানে বেশি কথা বলেন সমস্যা নেই; বরং কিছু লাভ হলে হতেও পারে। যেমন, কলেজ বা চাকরির পরীক্ষার খাতায় অথবা চাকরির ইন্টারভিউয়ে জ্ঞান ফলালে সেটা কাজে লাগতে পারে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো_ভালো বক্তা হওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন ভালো ও মনোযোগী শ্রোতা হওয়া। সবসময় নিজে না বলে অন্যরা কী বলছে, সেটা শোনাও জরুরি। স্কুল বা কলেজে ব্যাপারটা ততটা গুরুতর আকার না-ও নিতে পারে, কিন্তু কর্মস্থলে কেউ যদি অন্যকে কথা না বলতে দিয়ে নিজেই বলে যেতে থাকে, তার পক্ষে সেখানে টিকে থাকা শুধু কষ্টেরই নয়; প্রায় অসম্ভবও বটে। নির্ভেজাল বা বন্ধুদের আড্ডাতেও এই ব্যাপারটা খাটে। সকলে বসে কোথায় গল্প করবেন তা নয়, একজন একই লেকচার দিয়ে গেল ঘণ্টাদুয়েক। এমন চাপাবাজ বন্ধুকে কে সমর্থন করবে বলুন! আর বেশি কথা বললে যে বেশি ফায়দা_এই ভাবনাটা সম্পূর্ণ বোকামি। বরং বেশি কথা বললে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই চেষ্টা থাকা উচিত অল্প কথাতে বাজিমাত করা যায় কি না। অল্প কথার অনেক লাভ। শরীরে ধকল হয় না, মন শান্ত থাকে, মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে, ভুল হয় কম, চিন্তাশক্তি বাড়ে, সমাজের সাথে সম্পর্কটা হয় খুব সুন্দর। আবার, অনেকে বলে থাকেন, কম কথায় আয়ুও বাড়ে। তাই কী দরকার বেশি বেশি কথা বলে সব জায়গাতেই লেকচার বা চাপাবাজের পদবি নেওয়ার। সবশেষে বলি, এই বেশি কথা বলার ব্যাপারটা চাইলেই চালু করা বা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। এটা এক ধরনের অভ্যাস। কম কথা বলা অভ্যাস করতে হলে নিজের সাথে কমিটমেন্ট করতে হবে যে, আমি আর বেশি কথা বলব না। কষ্ট হলেও বিষয়টা বারবার স্মরণে রাখতে হবে। আশা করা যায়, এভাবে চলতে থাকলে কম কথা বলার অভ্যাসটা হয়ে যাবে। আর তখনই অবাক হয়ে দেখবেন, সবাই আপনাকে অন্যরকম ভাবছে, অন্যচোখে দেখছে। বিষয়টা দারুণ বাজিমাতের মনে হবে। তাই কথা যেন কম হয় প্রয়োজনের মাত্রায়।

0 comments:

Post a Comment