RSS

Monday, January 24, 2011

বাসর সজ্জা

বিয়ে করা কিংবা করানো, দুটো কাজই আসলে ছোট ছোট অনেকগুলো কাজের সংমিশ্রণ। এর সবগুলো কাজে সবার অংশগ্রহণ না থাকলেও সবাই মিলে কাজ করার যে মজাটা তা কিন্তু আসলেই উপভোগ্য। ইন্টেরিয়র লিখতে এসে এসব কথা বলার কারণ হলো, যেহেতু দৈনিক ইত্তেফাক আপনার প্রিয় পত্রিকা, তাই কড়চা'র এই আয়োজনে আমরা বিয়ের সাথে ইন্টেরিয়র সংশিস্নষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। জীবনে একবারই বিয়ের আমেজ উপভোগ করেন সবাই। পুরো বিয়ে অনুষ্ঠানের সবকিছু হয়তো বর-কনেকে ওভাবে ছুঁয়ে যায় না। তবে, একটা জিনিস কিন্তু তাদের মনে বাজবে সারা জীবন। আর সেটা হচ্ছে বাসর রাতের কথা।

তো এই বাসর রাতটাকে একটু জাঁকজমক পূর্ণ করতেই কিন্তু বাসর সাজানো রীতির শুরু। একটা মাত্র রাত, আর সেই রাতটিকে স্মৃতিতে তুলে রাখতে একটু বাড়তি আয়োজন।

বাসর সাজানোর প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আগেই রুমটা দেখে, মাপঝোঁক বুঝে নেওয়া দরকার। এরপর ঘরের বেসিক রংটাও দেখে নিন। ঘরে আসবাবপত্র যেমনই থাকুক, চেষ্টা করুন বিছানাটা ঘরের মাঝামাঝি সেট করতে। এতে ফোকাসটা বিছানাতে থাকবে। বিছানার চাদরে রং ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেটাও নির্ভর করছে ফার্নিচার আর দেয়ালের রং এবং পর্দার রঙের উপরে। ঘরে দুই ধরনের লুক আনতে পারেন। একটা হচ্ছে খুব ট্র্যাডিশনাল গর্জিয়াস লুক। যেটা মূলত গাঁদা- গোলাপের সংমিশ্রণে হয়ে থাকে। এই লুকটাতে ঘরের রং যেমনই হোক পর্দায় লালের দিকের কোনো গাঢ় রং ব্যবহার করুন। আর আসববগুলো কাঠের হলেই বেশি মানাবে। ইন্টেরিয়রে খুব বেশি পরিবর্তন আনতে ঘরের আসবাবগুলো একটু রিঅ্যারেঞ্জ করুন। কিন্তু মনে রাখবেন প্রয়োজনীয় সবকিছুই যেন হাতের কাছে থাকে। এবারে বড় গাঁদাফুলের মালা কিনে সেগুলো সিলিং থেকে একাধারে ছড়িয়ে দিন খাটের চারপাশে। কিছু মালা পর্দার গা ঘেঁষে ঝুলিয়ে দিন। ফ্লোরে চেষ্টা করুন কার্পেট রাখতে। আর গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিন বিছানা আর মেঝেতে।

এতো গেল একেবারে ট্র্যাডিশনাল লুকের কথা। এবার আসি একটু বেশি স্টাইলিশ লুকে। এরজন্য অবশ্যই বিয়ের অনেক আগে থেকেই নিজের ঘরটি মানে বাসর যে ঘরে হবে সে সম্পর্কে প্রস্তুতি থাকতে হবে। যদি মেঝে টাইলস বা মোজাইক করা থাকে, তা হলে ঘরের আসবাবগুলো রট আয়রনের করলে ভালো লাগবে। অবশ্য কাঠের কিংবা উডটেক্সের হলেও মন্দ লাগবে না। কিন্তু মনে রাখবেন, রুমের আয়তন বুঝে ফার্নিচারগুলো এমন মাপের তৈরি করা উচিত যেন ঘরে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা থাকে। এবার ফর্নিচারগুলোকে একটু ডেকোরেটিভ ওয়েতে রিঅ্যারেঞ্জ করুন। কিছু শোপিস, টবে গাছ, কৃত্রিম ফুল_এগুলো দিয়ে খুব সাদামাটা কিন্তু নান্দনিকভাবে ঘরটিকে সাজান। ঘরে অফিসিয়াল ফাইলপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হ্যান্ডিক্যাম এগুলো না রাখাই ভালো। চেষ্টা করুন রাতটিকে যতটা প্রকৃতির কাছাকাছি রাখা যায়। তাজা, সুগন্ধি কোনো ফুলের বিশাল ঝাকড়া একটা তোড়া রাখুন ঘরের এক কোণে। এটা ঘরে গন্ধ ছড়াবে। আর বিছানা, বালিশ, পর্দা এগুলোতে সলিড সাদা, অথবা হালকা কোনো একটা রং যেমন পিংক, স্কাই ব্যবহার করুন। তার উপরে ছড়িয়ে দিন কনের বিয়ের শাড়ির সাথে ম্যাচ করে এমন কোনো ফুলের পাপড়ি। আলো-আধারির মাঝে, মৃদু ফুলের গন্ধে উপভোগ করুন বাসর রাতটি। খুব বেশি যে খরচ করতে হবে, তা কিন্তু না। কেবল একটু আগাম প্রস্তুতি আর নিজের সময় নিয়ে গুছিয়ে ফেলাই এজন্য যথেষ্ট।

নব দম্পতির ঘর

নতুন জীবন, নতুন একটা সংসার শুরু করতে মোটামুটি সবারই মনে একটু সংশয় কাজ করে। নব দম্পতি হিসেবে অনেকেই নতুন করে সংসার সাজাতে কখন কি করতে হবে, কি কিনতে হবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। এর জন্য প্রথমেই নিজের ঘরটাকে ঠিকঠাক করে নিন। আসলে এখন আমাদের দেশে বাসাবাড়ির আয়তন ধীরে ধীরে এত ক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছে যে, বাসা দেখে আসবাব কেনা উচিত। নতুন বাসাতে প্রথমেই আসবে আসবাব প্রসঙ্গ। সেক্ষেত্রে যদি বাসায় আসবাব আগেই সেট করা থাকে, তা হলে সেগুলো ঘষামাজা করে নিতে পারেন। সেই সাথে টুকিটাকি নতুন কিছু ফার্নিচারও কিনে ফেলতে পারেন। ঢাকার পান্থপথে পাওয়া যাবে ফরেন ফার্নিচার। এখানে অপেক্ষাকৃত কম দামে ফার্নিচার কেনা সম্ভব।

নতুন দম্পতির ঘরে একটু বেশি জায়গা থাকা বাঞ্ছনীয়। একটু আলো-বাতাস আসবে, হাঁটা-চলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। এরজন্য যেটা করতে পারেন, চেষ্টা করুন ফার্নিচারের উচ্চতা একটু ছোট রাখতে। ঘরে বসার জায়গা যেমনই থাকুক খুব জাঁকজমকপূর্ণ না হলে ক্ষতি নেই। মেহমানদের বসার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে একচিলতে কার্পেট আর একটা ডিভান, এক আসনের সোফা এগুলো হতে পারে চমৎকার আয়োজন। ঘরের পর্দায় দুটো লেয়ার রাখতে পারেন। একটা একটু ভারি, আর এর উপরে একটা হালকা পর্দার পরত। এতে চাইলেই দিনের আলোর উপরে আপনি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ঘরে কম্পিউটার, বইপত্র এগুলো দূরে রাখুন। নইলে এগুলো নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। খাটটা একটু বড় তৈরি করুন। তবে খুব বড় না। আর সেটাকে যতটা সম্ভব আরামদায়ক করার চেষ্টা করুন। কারণ, আড্ডা দেওয়া গল্প করা, এসবের জন্য বিছানাই সেরা জায়গা। চাইলে নতুন সংসারে বিছানাটা ফ্লোর টাইপও করতে পারেন। অর্থাৎ কোনো খাট ছাড়া ফ্লোরে ম্যাট, ফোমের গদি বিছিয়ে শোয়ার আয়োজন। এ ধরনের বিছানাতে আড্ডাটাও খুব ভালো জমে। ঠান্ডা, গরমের উপরে নির্ভর করবে ঘরে এসি থাকছে কি থাকছে না। অনেকে এয়ারকুলার ঘরের নিচের দিকে লাগিয়ে থাকেন। কিন্তু এটা আসলে ভুল। কারণ, ঠান্ডা বাতাসের ওজন তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। তাই এসি উপরে লাগানো থাকলে ঠান্ডা বাতাস ধীরে ধীরে নিচে নেমে এসে পুরো ঘরকে ঠান্ডা করে দেবে। নব দম্পতির ঘর সাজানো প্রসঙ্গে কথা হয় পলেস্তরার ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সেলিনা কাদেরের সাথে। তিনি বললেন, 'নব দম্পতির ঘরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রাইভেসি। আর আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করবে

ঘরের সাজসজ্জা। গরমের দিনে ঘরে সাদা আর লাল রং ব্যবহার করতে হবে। আর শীতের দিনে সাদা বাদে অন্য যেকোনো উজ্জ্বল রং। ঘরে খাটের আয়তনটা একটু বড় হলেই ভালো। আর চাদর হিসেবে সুতি কোনো কাপড়। তবে চাইলে জামদানিও কিন্তু চাদরে মানাবে। ঘর ছোট হলে এখানে হালকা রং ব্যবহার করতে হবে। তবে যেকোনো একটা দেয়াল একটু রঙিন করা যেতে পারে।'

ঘরটাকে গুছিয়ে রাখতে যেসব জিনিস সমস্যা তৈরি করে সেগুলো একদিকে গুছিয়ে রাখুন। যেমন কাপড়চোপড়। যেগুলো ধোবার জন্য সেগুলো একটা বেতের ঝুড়িতে আলাদা করে রাখুন। এতে কাপড় ছড়িয়ে থাকবে না। পাশাপাশি কাপড়ের রাখার ওয়ার্ডড্রোব, আলমারি এগুলো চেষ্টা করুন প্রতিদিন একটু গুছিয়ে রাখতে। নইলে একদিনে একবারে গোছাতে গেলে মাথা খারাপ হবার উপক্রম হবে। পর্দা, চাদর, কুশন কভার এগুলো দু-তিন সেট কিনে রাখুন। এগুলো চেঞ্জ করলেই দেখবেন খুব দ্রুত পুরো ঘরের লুক পরিবর্তন হয়ে গেছে।

আসবাবের পাশাপাশি কিছু শোপিস, টবে গাছপালা এগুলোও সাজিয়ে নিন। দেখতে ভালো লাগবে। আর ঘরে গাছপালা থাকলে প্রকৃতির প্রশান্ত আমেজ ঘরে বসেই পাবেন। যারা বিয়ের আগে বা বিয়ের পরপর ফ্ল্যাট কিনবেন তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে ফ্ল্যাটটা একটু উপরের তলায় কিনবেন যেন ধুলো, ধোয়া, ময়লা, পোকামাকড় কম সমস্যা করে। একটা ছোট্ট ঘর, যেখানে প্রিয়জনের সাথে কাটবে কিছু সুখের দিন। আর এই দিনগুলোই আপনার সারা জীবনের সঙ্গী।

0 comments:

Post a Comment