RSS

Saturday, November 7, 2009

পুরুষালি রূপকড়চা

রূপচর্চায় লিঙ্গ ভেদ নেই। অথচ রূপচর্চা কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ত্বন্বী সুন্দরীর ছবি। আবার দেখুন শরীরচর্চার মধ্যে কেমন যেন মিশে আছে কতকগুলো জবজবে শরীর মন্ডল ডাম্বেল ইত্যাদি। কিন্তু সত্যি কি তাই? আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মেয়েরাও ঘরের মধ্যে বা হেলথ ক্লাবে কসরৎ করে ৩৬-২৪-৩৬ হবার চেষ্টা করেন। অন্য দিকে পুরুষরাও বসে নেই। ব্যায়ামাগার ছেড়ে ঢুকে পড়েছেন সান বাথের ইফেক্টিভনেস এবং ক্রিম ময়শ্চারাইজারের কোয়ালিটি নিয়ে। রূপচর্চা আর শরীরচর্চার আসলে একই ব্যাপার। এমন কিছু পুরুষালি রূপকড়চা নিয়ে এবারের কড়চা রূপচর্চা-

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের মনে আসে অন্য চিন্তা, রূপচর্চার উদ্যমে ভাঁটা পড়ে। রূপের পেছনেই তখন বেশি সময় কেটে যায়। সামাজিক প্রতিপত্তি প্রাণে আমাম, স্বপ্নের নারী সবই যখন টাকার ওজনে পাওয়া যায় তাহলে টাকার পেছনেই ছোটাটাই শ্রেয় হয়ে দাঁড়ায। অর্থ লাভের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ওজনের সঙ্গে তখন পাল্লা দিয়ে দেহের ওজনও বেড়ে ওঠে। ইদানীং এই চিত্রের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে পুরুষরাও সৌন্দর্য সচেতন হয়ে উঠছেন। ফিট্নেস নিয়ে বই-এর কোনও অভাব নেই আজকাল। তত্ত্ব আর তথ্যের তাত্ত্বিক আলোচনায় ভরা এগুলো। এর মধ্যে কোনটা যে কার পক্ষে প্রযোজ্য সেটাই বোধগম্য হয় না। রূপচর্চা বা শরীরচর্চার খুব বিশদে যাবেন না। কয়েকটা কথা মনে রাখলেই চলবে। মনে রাখবেন বিলিতি রূপচর্চার বা শরীরচর্চার বই বা ম্যাগাজিন কঠোরভাবে মানবেন না। দু দেশের মধ্যে পরিবেশ এবং জলবায়ুর তফাৎ আছে। ফলে ও দেশের নিয়মবিধি বা পরামর্শ আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। শীত দিয়ে শুরু করা যাক। শীতে কি আপনি মুখে পাউডার লাগাবেন? এখন আপনার ত্বকের প্রয়োজন আর্দ্রতার। তাই শীতের সময় প্রয়োজন ক্রিম বা ময়শ্চারাইজারের। ক্রিম একটু ঘন মোটা জিনিষ, সেই তুলনায় মযশ্চারাইজার ভাল। কোনটা কিনবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার পকেট এবং কোম্পানির উপর। দামি জিনিষ সাধারণত: উচ্চমানের হয়। আবার এ কথাও মনে রাখার প্রয়োজন যে, আর্দ্রতার প্রয়োজন শুধু মুখেই নয় সর্বাঙ্গে, বিশেষত: দেহের আ-ঢাকা অংশে যেখানে শেিতর শুকনো হাওয়ার উপদ্রব। রাত্রে হাতে মুখে কিছু না মাখাই ভাল। রোমকূপ রাতে খোলা থাকে। শেঅয়ার আগে অল্প গরম পানিতে খুব সামান্য সাবানের সাহায্যে হাত মুখ ধুয়ে ফেলুন। ক্রিম লাগালেও শোয়ার আগে তা তুলা দিয়ে মুছে নিন। মুখ তোয়ালে দিয়ে রগড়ে মুছবেন না, চোপে চেপে পানি শুকিয়ে নেবেন।

শীত বা গ্রষ্মি যে কোন ঋতুতে ভোরবেলায় উঠে পড়ুন। ভোরের বাতাস সব ঋতুতে শরীরের পক্ষে ভাল। খোলা হাওয়া শরীরে লাগতে দিন। শীতে অল্প গরম পানিতে স্নান করার সময় ছোবড়া বিশেষ করে ধুধুলের ছোবড়া দিয়ে গা ঘষুণ। শীতেই শরীরে বেশি ময়লা বসে। চোবড়া দিয়ে গা ঘষণে শরীরে রক্তের চলাচল বাড়ে। ত্বকের উপকার হয়। শীতকালে চুলের সমস্যা বাড়ে। এর কারণ বাতাস বাতাস আর দ্বিতীয়ত: শীতের ধুলো। মাথায় ভাল করে তেল মাখুন এবং ভাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন সপ্তাহ অন্তত: তিনবার। শীতকালেই শরীর ভাল থাকে। কেন না এই সময়েই নানান সব্জী পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে এক বিখ্যাত মডেলের কথা মনে পড়ে যায়। তাঁর রূপ রহস্যের গোপন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, সৌন্দর্য আসে ভেতর থেকে বাইরে থেকে নয়। অর্থাৎ দেহের অভ্যন্তরের কলকব্জা ঠিক থাকলেই বাইরে তার প্রতিফলন ঘটবে। এ ক্ষেত্রে খাদ্যের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতের নানান উপকারী সব্জীর সদ্ব্যবহার করুন। তবে যাই খান না কেন দেখতে হবে সেটা যেন হজম হয়।

আবার হজম শক্তি বাড়ানোর সেরা উপায় হল হালকা ব্যায়াম বা যোগাসন করা। আপনি যদি এযাবৎকাল ব্যায়াম না করে থাকেন তবে শুরু করার জন্য শীতকালই প্রকৃষ্ট সময়। কারণ শীতে পরিশ্রম করার ক্ষমতা বাড়ে, চট্ করে ক্লান্তি আসে না। ব্যায়াম বা আসনের অনেক বই বাজারে আছে। সে সব দেখে নিজে নিজেই আপনি তা বাড়িতে শুরু করে দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ অনেক কাজে লাগে।

ব্যায়াম বা আসন করার ক্ষেত্রে একটা দরকারি কথা মাথায় রাখবেন-রোজ যেন মোটামুটি এক নির্দিষ্ট সময়ে সেটা করা হয়। আজ সকাল পাঁচটায়, কাল বেলা আটটায় এ রকম যেন না হয়। এই সময়ানুবর্তিতা জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আমাদের দেশে সুরা বা পানীয় নিয়ে এখনও খোলাখুলি আলোচনা প্রচার বা বিজ্ঞাপন না থাকলেও অনেকেই মনে করেন যে, সুরাপান খুব গর্হিত কাজ নয়। অনেকের ধারণা আছে যে, ব্র্যান্ডি পানে শরীরে শক্তি যোগায়। এটা ঠিক নয়। মনে রাখবেন পানীয়ের প্রতি আসক্তি না থাকলে শীতে ব্র্যান্ডি খেয়ে চেহারা ভাল করার উদ্যোগ না নেয়াই ভাল। তার বদরে শীতের বা সময়কালিন শাকসব্জী ফলমূল খান আর আপনি যদি পানীয়ে আসক্ত হন তবে দেখবেন যেন আসক্তি সীমিত থাকে।

পুরুষদের প্রতি আরেকটি পরামর্শ। মাঝে মাঝে বিউটি পার্লারে যান। সংখ্যায় কম হলেও পুুরুষদের জন্যও বেশ কিছু পার্লার আছে। সেখান থেকে বিউটি ট্রিটমেন্ট করিয়ে আসুন। এতে সঙ্কোচের কোনও কারণ নেই। সব সময়ে নিজেকে ধোপদুরস্ত রাখুন। পোশাকে আশাকে ফিটফাট হন। মন মেজাজও এতে ফুরফুরে থাকবে। আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। “অ্যাপারেল অফট প্রোক্লেমস অ্যা ম্যান”-সেক্সপীয়রের এই উপদেশ মনে রাখবেন। অতএব পোশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। সাজগোজ শুধু মেয়েদের একচেটে নয় পুরুষদেরও সাজার অধিকার আছে। তবে কখনই যেন সেই সাজগোজ উগ্র না হয়।

0 comments:

Post a Comment