RSS

Saturday, November 14, 2009

সৌন্দর্য রক্ষার কৌশল

সাজতে গিয়ে কিংবা ত্বকের যতেœ সববয়সী মেয়েরা ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি করে থাকে। এসব ভুল-ত্রুটি একটু সাবধানতার সাথে এড়িয়ে চললে সৌন্দর্য্য রক্ষার কাজটি অনেক সহজ হয়। ত্বক এবং চুলের রং,ধরন প্রভৃতি নানা বিষয়ের সাথে চোখ, ঠোঁট কিংবা ফেসিয়াল সামগ্রিক বিষয়গুলো একসাথে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করলে আপনি হবেন ‘রূপে অনন্যা’। নিজেকে অপরূপা সুন্দরী নয় বরং নজর করা রূপসী করতে গিয়ে আপনি যে সাধারণ বিউটি মিসটেক-গুলো করে থাকেন তার থেকে সাবধানতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন মোর্শেদ নাসের টিটু। বর্ণনা নয় এই অংশটি সাজানো হয়েছে অনেকটা চেকলিস্ট আকারে-

রুক্ষ ত্বক

মৌসুম কিংবা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ত্বকে শুষ্কতা, রুক্ষতা নানান সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে শীতের সময় ত্বকের সমস্যা সবচেয়ে বেশি নজরে পড়ে। যাকে বলে শুষ্কতা। হিম হিম ঠাণ্ডায় আর কমে যাওয়া আর্দ্রতার বদৌলতে শীত আমাদের দেশের মেয়েদেরকে ত্বকের যতেœ যথেষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। সেজন্য শীত বাড়তে থাকার সাথে সাথে আপনার নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিনে পরিবর্তন আনুন। ব্যবহার করা শুরু করুন ক্রিমি, নন স্ট্রিপিং ক্লিনজার। এধরনের ক্লিনজার ব্যবহার করবেন আপনার মেকআপ তুলতে কিংবা শোবার আগে ত্বকের ময়লা তুলে ফেলার জন্য। সকাল বেলা মুখ ধোবার ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভাল। পোস্ট ক্লিনজিং টোনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ময়েশ্চারাইজার কেনার ক্ষেত্রে কৃপনতা মোটেও করবেন না। খুঁজে দেখুন ওয়েল ফ্রি ক্রিম ফর্মুলা পান কিনা। লোশনের চেয়ে দামী ময়েশ্চারাইজার ভাল। আপনার ত্বক যদি খুব বেশি মাত্রায় তৈলাক্ত হয় তাহলে অবশ্য লোশন ব্যবহার করাই ভাল। তাছাড়া খুব বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের জন্য বাজারে অনেক রকম হিলিং বাম পাওয়া যায় চিকিৎসকের পাশাপাশি।

হেয়ার স্টাইল

চুলে স্টাইল নির্ধারণের ক্ষেত্রে যতœশীল হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। আপনার পরিচিত রূপটি শুধুমাত্র হেয়ার স্টাইল পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। চেহারার সাথে মানানসই চুলের কাট পছন্দ করতে গিয়ে অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ানের পরামর্শ নিবেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন আপনার জীবনযাত্রা এবং রুচির সাথে নিজস্ব হেয়ার স্টাইলের সামঞ্জস্য যেন সবসময়ই বজায় থাকে।

লুকিয়ে থাকা কনসিলার

ডার্ক সার্কেল বা ত্বকে এধরনের অন্য নানান ক্ষতের জন্য কনসিলার অনেকটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু যতœশীল হওয়া প্রয়োজন। প্রথমে আইক্রিম দিয়ে শুরু করুন। কেননা চোখের নিচের ত্বক অন্যান্য অংশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত শুষ্ক। চোখের নিচের অংশটি সবসময়ই ময়েশ্চার প্রয়োজন। কনসিলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরাসরি টিউব কিংবা হাতের পরিবর্তে ব্রাশ ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কনসিলার ব্যবহার ত্বকের যতেœ বুমেরাং হতে পারে।

হলুদ নখ

খুব সূক্ষ্ম নেইল বাফার নখের যতেœ ব্যবহার করুন। সাবধান! সপ্তাহে একবারের বেশি নেইল বাফার ব্যবহার করবেন না। একটি ছোট বাটিতে তাজা লেবুর রস নিয়ে তাতে ১০ মিনিট নখ ডুবিয়ে রাখুন। লেবুর রসে আপনার নখ সতেজতা ফিরে পাবে। নখের যতেœ ক্রিম মাসাজও করতে পারে দিনে দু’বার কয়েক মিনিট ধরে। নেইল পলিশ করার আগে কখনোই বেইজ কোট করতে ভুলবেন না।

আই ল্যাশ

এক সমীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়েছিল কোন কসমেটিক আইটেমটি ছাড়া মেয়েরা চলতে পারে না। বেশিরভাগ রমণীর উত্তর ছিল ‘মাসকারা’। কারণ এই মাসকারা আপনার চোখকে পটল চেরা কিংবা আকর্ষণীয় করে তোলে। মাসকারা ব্যবহারের সময় মনে রাখবেন এটি যেন সবসময়ই ফ্রেশ থাকে। ৩ মাসের বেশি কোন মাশকারা ব্যবহার করবেন না। এর ফলে আপনার চোখ ইনফেকশন কিংবা জ্বালাপোড়া থেকে রেহাই পাবে। ব্যবহারের সময় টিউব থেকে মাসকারা বের করার পূর্বে লক্ষ্য রাখুন অন্য কোন কসমেটিক্স যেন এর সাথে মিশে না যায়। এজন্য কসমেটিক্স লাগানোর উপকরণ তথা ব্রাশ, ফোম, টিস্যু প্রভৃতির ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব শুকনো ও আলাদা আলাদা ব্যবহার করতে পারলে ভাল। মাসকারা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় কোট-এর মাঝখানে সময়টা যেন ক্ষণস্থায়ী না হয়। এছাড়া প্লাস্টিক আই ল্যাশ ব্রাশ ব্যবহার অনেক সময় বেশ কার্যকরী।

ওভার প্লাকড ভ্রু

অনেক সময় ভ্রু প্লাক করতে গিয়ে নানা বিপত্তিতে পরতে হয়। ধরুন একদিকের ভ্রু একটু বেশি প্লাক করা হয়ে গেল। এধরনের বিপত্তি এড়াতে আবার যেন পাশেরটি বেশি প্লাক করতে যাবেন না। এতে আম ছালা দুটোই যেতে পারে। কয়েক সপ্তাহ অন্তত অপেক্ষা করুন পরবর্তী প্লাক-এর পূর্বে। ক্ষত পূরণে সাময়িকভাবে আইব্রো পেন্সিল ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে পেন্সিলের শেড যেন আপনার ভ্রু’র শেডের সাথে মানানসই হয় সেদিকটি খেয়াল রাখবেন। পেন্সিলের শেড দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী করতে ব্রো পাউডার ব্যবহার করুন।

ফাউন্ডেশন

ফাউন্ডেশন ব্যবহার বেশ ঝাঁমেলাপূর্ণ। কিন্তু আপনার যদি কয়েকটি ট্রিকস জানা থাকে তাহলে সঠিক ফাউন্ডেশন কোন ব্যাপারই না। আপনার ত্বক বুঝে বেছে নিন সঠিক ফর্মুলা। যেমন আপনার ত্বক যদি খুব তৈলাক্ত হয় তাহলে ওয়েল ফ্রি, ম্যাট ফর্মুলা যথেষ্ট কার্যকর। যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয় তাহলে ক্রিম অথবা হুইপড ময়েশ্চারাইজিং ফর্মুলা ভাল। ত্বকের ধরনের বিপরীতে ফাউন্ডেশন ব্যবহারে আপনার ত্বকে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। ফাউন্ডেশনের বেইজও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

লিপস্টিক শেড

লিপস্টিক শেড ব্যবহার করার সময় সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নিজেকে কল্পনা করুন একজন কসমেটিক্স আর্টিস্ট হিসেবে। প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্ট-রা অনেক সময় একাধিক শেড-এর মিশ্রণ করে থাকেন কাঙিক্ষত রঙটি পাওয়ার জন্য। তাছাড়া লিপ লাইনার লিপস্টিকের শেডের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব রাখে। পরীক্ষা করতে চাইলে পুরো ঠোঁটে লিপলাইনার লাগিয়ে তারপরে লিপস্টিক ব্যবহার করুন। পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন কি ? অনেক ক্ষেত্রে লিপ গ্লসও লিপস্টিকের শেডের উপর প্রভাব ফেলে।

মিলিয়ে যাওয়া লিপস্টিক

লিপস্টিকের রঙের ক্ষণস্থায়ীত্ব অনেক মেয়ের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে আপনার ঠোঁট বুঝে সঠিক ফর্মুলাটি জানা থাকলে লিপস্টিকের স্থায়ীত্ব বাড়ে। ক্রিমি-গ্লসি ফর্মুলার চাইতে ম্যাট অথবা ওপেক ফর্মুলা অনেক বেশি স্থায়ী। এরপর যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো লিপস্টিকের শেড বুঝে লিপ লাইনার বেছে নেবার বিষয়টি। এবার ব্যবহারের পালা। প্রথমে লিপ বামের একটি পাতলা কোট দিন এবং ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর লাইনার ব্যবহার করুন। পুরো ঠোঁটে পেন্সিলের আবরণ লাগান। মনে রাখবেন লিপ পেন্সিল চুম্বকের মতো কাজ করে। এবার লিপস্টিক ব্যবহার করুন। ইদানীং লিপ ব্রাশ ব্যবহারের প্রচলনও শুরু হয়েছে।

চুল পোড়া

স্ট্রেইট চুলে বেশ আধুনিক লাগে। তবে চুল আয়রণ করতে গিয়ে যাতে পুড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। যদি চুলে পোড়া ভাব দেখেন তাহলে ট্রিম করে দেখতে পারেন ক্ষত পূরণ হয় কিনা। তাছাড়া পোড়া চুলের ক্ষেত্রে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যা শুধুমাত্র এরকম ক্ষতির থেকে চুল সারাতে তৈরি হয়েছে। একই সাথে নিয়মিত রেস্টোরেটিভ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এমনকি শ্যাম্পু ব্যবহার না করলেও কন্ডিশনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন না। অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজিং-এর জন্য সপ্তাহে একবার কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহার করুন। এসব কিছুর পর নিশ্চিন্তে ফ্ল্যাট আয়রন কিংবা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারে ফিরে যেতে পারেন।

0 comments:

Post a Comment