RSS

Saturday, November 7, 2009

দূরে রাখুন অস্থিরতা

সেই গেল বসন্তের প্রথম দিনের কথা। দীর্ঘ প্রস্তুতি আর অপেক্ষার পর সেদিন সুদীপ্ত দাঁড়িয়েছিল তার ভালোবাসার মানুষের সামনে। ইনিয়ে-বিনিয়ে আর ভালোবাসার সবটুকু রঙ মাখিয়ে সে তার স্বপ্নকন্যাকে জানিয়েছিল ‘ভালোবাসি’। কিন্তু জীবনের দীর্ঘতম দিনে সেই ক্ষণেই সুদীপ্ত জেনে গিয়েছিল এ ভালোবাসা কখনো সত্যি হবার নয়। তার ভালোবাসার মানুষ যে বহু আগেই অন্যের হৃদয় বন্ধনে বাঁধা। তারপর কতো দিন যায়, কতো রাত যায়। কিন্তু সুদীপ্ত’র ভাবনার ক্যালেন্ডারে যেন সময় থেমে থাকে সেই আগের জায়গাতেই। তার দিন কাটে তো, রাত কাটে না; রাত কাটেতো দিন কাটেনা। কোনো কাজেই মন বসাতে পারে না সুদীপ্ত। পড়ায় মন বসে না, ছাত্র পড়ানোর টিউশনিতে যেতেও মন বসে না। সব মিলিয়ে কেমন যেন অস্থির আর দমবন্ধ মনে হয় সবকিছু। সুদীপ্তর মতো অজানা এক অস্থিরতায় ভুগছে বহুজাতিক একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা রায়হানও। তার পারিপার্শ্বিক সমাজ আর সংসারে সম্পর্ক নিয়ে কোনো টানাপোড়েন নেই। অফিসেও দিব্যি মাস শেষে পাওয়া যাচ্ছে মোটা অংকের মাইনে। তবু কেন যেন, ইদানিং আর কোনো কাজেই মন বসছে না তার। কর্মব্যস্ত একেকটা দিনকে মনে হচ্ছে সিন্দবাদের ভুতের মতো কাঁধের উপর চেপে বসা জগদ্দল কোনো পাথর। আবার বাড়িতে মা-বাবা কিংবা প্রিয়তম স্ত্রী’র সান্নিধ্যতেও কোথাও যেন একটা তাল কেটে যাওয়া বিষয় ঘটে চলছে দিনের পর দিন। সব মিলিয়ে এই অজানা অস্থিরতাটাই যেন কুুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে রায়হানকে।

আসলে শুধু সুদীপ্ত কিংবা রায়হানই নন, বরং এই সমাজে নানা কারণে আর নানা ঘটনা, দূর্ঘটনাতে পড়েই অস্থিরতা বাসা বাঁধে আমাদের মনে। আর এই অস্থিরতার কারণেই নিজেদের কাজে কিংবা সম্পর্কের মাঝে মনোনিবেশ করতে ব্যর্থ হন তারা। দীর্ঘদিনের অস্থিরতা থেকে ক্রমে ক্রমে একধরণের হতাশাও পেয়ে বসে অনেককে। অথচ আমাদের গতিময় জীবনধারায় যেখানে হতাশা আর মনোসংযোগের অভাব মানেই পিছিয়ে পড়া সেখানে অস্থিরতা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও খুব কম। আর দিনের পর দিন বিষন্নতা যখন ক্ষতিগ্রস্থ করে তোলে আমাদের জীবনী শক্তিকেও তখন অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসার আকুতিটাও হয়ে ওঠে অনেক বড়।

যেকোনো অস্থিরতা থেকে নিজেকে মুক্ত করার প্রথম ধাপ হলো অস্থিরতার কারণটিকে খুঁজে বের করা। প্রায়শই দেখা যায় যে, আমরা যখন পারিপার্শ্বিক আর সব বিষয় ফেলে একটি বিষয় নিয়েই দিনের পর দিন ভাবতে থাকি তখন সেটি আমাদের কর্মচাঞ্চল্যকে অনেকাংশেই স্থবির করে দেয়। হতে পারে বিষয়টি ছিল আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। কিংবা হতে পারে আনন্দের অতিশয্যে আমরা হয়তো একমূখী চিন্তা নিয়ে ভাবতে থাকি একটি সম্পর্কের কথাই। তবে যাপিত জীবনের পথ পরিক্রমায় ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, একই চিন্তায় দিনের পর দিন ঘুরপাক খেয়ে নিজেকে স্থবির করে দেয়ার কোনো মানে হয় না। বরং সবকিছু সুস্থির ভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্লেদাক্ত অতীতকে ভুলে সামনে এগিয়ে যাবার মানসিকতাই আপনাকে মুক্তি দিতে পারে অস্থিরতা থেকে।

অনেক সময় কোনো রকম ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনা না ঘটা স্বত্ত্বেও দিনের পর দিন একঘেঁয়ে রুটিনে চলতে গিয়ে মনের মাঝে জন্ম নিতে পারে অস্থিরতা। দেখা যায়, এই দলের অন্তর্ভূক্ত মানুষেরা তাদের সমাজ কিংবা সংসারের পরিমন্ডলে আপাত সুখী হলেও একধরণের একঘেয়েমী থেকে ভুগতে থাকেন অস্থিরতায়। তখন মন চায়, সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। তবে জীবন থেকে যেমন পালিয়ে বাঁচা যায় না, তেমনি পালানো যায় না কাজ আর পারিপার্শ্বিক সম্পর্কের বলয় থেকেও। কাজেই যদি একঘেঁয়ে কাজ আর সম্পর্কের কারণে কারো মনে জন্ম নেয় অস্থিরতা, তাহলে ব্যস্ততা থেকে খানিকটা অবসরই হতে পারে উত্তম দাওয়াই। চাকরি কিংবা ব্যবসায় আপনার ব্যস্ততার আপেক্ষিক গুরুত্ব যতো বেশিই হোক না কেন, যথাযথভাবে কাজে মনোনিবেশ করতে চাইলে আপনাকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম আর অবসর নিতেই হবে। আর শত ব্যস্ততার মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্যে খানিকটা সময় কাটানো একজন মানুষকে যেভাবে স্থিরতা এনে দিতে পারে অন্য কিছুতেই তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অন্যদিকে সম্পর্কের পরিমন্ডলে থেকেও যারা ভাবেন খানিকটা সময় একটু জিরিয়ে নেয়ার কথা তারা কখনোই সম্পর্কের দায়বদ্ধতাগুলোকে বোঝা হিসেবে দেখবেন না। বরং প্রতিটি সম্পর্কের শত ভালোবাসা আর ভাললাগার মাঝেও একটু জায়গা ছেড়ে দিনে অন্যের জন্য। যেখানে সে দাঁড়াতে পারবে তার স্বকীয়তা নিয়ে আর আপনি তাকে দেবেন সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার। মনে রাখবেন, সব সময় যুক্তি দিয়ে যেমন ভালোবাসা পাওয়া যায় না তেমনি সম্পর্কের মাঝেও রাখতে হয় প্রাণখুলে শ্বাস নেবার মতো একটি জায়গা।

অস্থিরতা দূর করার আরো কিছু টিপস্

০ স্থির ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখুন আপনি কি করছেন আর আপনার কি করা উচিত ছিল।

০ প্রতিদিন ন্যুনতম যে কাজগুলো করা উচিত তার একটি তালিকা তৈরি করুন এবং দিনশেষে এর কতোটা করতে পারলেন আর কতোটা পারলেন না তা মিলিয়ে দেখুন। চেষ্টা করুন যেন প্রতিদিনই আপনার করণীয়র সাথে আপনার করা কাজের ব্যবধান কমে।

০ কাজের সময় অন্য চিন্তাগুলোকে দূরে সরিয়ে শুধু করণীয়গুলোর প্রতি শতভাগ মনোযোগ দিন।

০ নিজের অস্থিরতাগুলো বন্ধু কিংবা প্রিয়জনের সাথে ভাগাভাগি করে নিজেকে হালকা করুন।

০ একই বিষয় নিয়ে দিনের পর দিন না ভেবে নিজের চিন্তাধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসুন।

0 comments:

Post a Comment