RSS

Thursday, February 25, 2010

 উঁচু গলার পোশাক

বাতাসে শিমুল-পলাশের সৌরভ। সকালের শুরুতে নরম রোদে ঝিরঝিরে বাতাস। এই ফাগুনের ছোঁয়া লাগছে সবার মধ্যেই। গরম বলে সিল্ক বাদ, ঠান্ডায় জর্জেট তোলা ইত্যাদি নানা ঝামেলা ঋতুভেদে পোশাক বাছাই করতে গিয়ে। কিন্তু এই এক ঋতু বসন্ত, এমনই চমত্কার—মন যা চায় তা-ই পরা যায়।
বসন্তের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে এ সময় উঁচু গলার পোশাক পরতে পছন্দ করেন অনেকেই। ব্লাউজে উঁচু গলার সঙ্গে একটু লম্বা হাত পরতে পারেন। বছরের অন্য সময়ে গরম এত বেশি থাকে যে বড় হাতার ব্লাউজ পরার কথা ভাবেনও না অনেকে। একইভাবে কামিজ বা ফতুয়ার কলারেও বৈচিত্র্য আনতে পারেন এ সময়। গলাবন্ধ কোটের মতো করেও পোশাকের গলার নকশা করা যায়। মোটকথা পোশাকের কাট ও কাপড় নির্বাচনে এই ঋতুতে স্বাধীনতা অনেক বেশি।

ফ্যাশন হাউস রঙের পরিচালক বিপ্লব সাহা মনে করেন, বছরের এই সময়টাতে প্রকৃতি সবাইকে পোশাকে রং বাছাইয়ে স্বাধীনতা এনে দেয়। তাঁর মতে, ‘আমাদের সবকিছুতেই প্রকৃতির পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ছোঁয়া থাকে। পোশাকের ক্ষেত্রে তো এটা আরও বেশি। যেমন, শীতে গাঢ় রং, গরমে হালকা রঙের পোশাক পরতে আমরা স্বচ্ছন্দ বোধ করি। কিন্তু এই সময়ে এসে আমরা সব রঙের কাপড়েই স্বচ্ছন্দ। কমলা বা রানি রঙের মতো পোশাকেও কাউকে দেখতে খারাপ লাগে না। তা ছাড়া এই সময়টাতে যেমন বসন্তবরণ, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবসের মতো কিছু বড় উত্সব বাঙালি জীবনকে ঘিরে থাকে, তেমনি পারিবারিক নানা পার্বণও যেন ফাল্গুন-চৈত্র মাসেই বেশি হয়। তাই যেকোনো রং যেকোনো বয়সে মানিয়ে যায়। এ সময়ে পোশাকের রং বাছাইয়ে রয়েছে তাই শতভাগ স্বাধীনতা।’
একটি টেলিফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তিলোত্তমা দেওয়ান। আগামী কয়েক দিন যতগুলো নিমন্ত্রণ আছে, সেগুলোর জন্য তৈরি করে রেখেছেন লিনেনের সালোয়ার-কামিজ। কমলা, বাসন্তি, লাল, রানি রঙের পোশাকই তৈরি করেছেন বেশি। তবে বড় হাতার কামিজই করেছেন বেশির ভাগ। আবার কলার তোলা কামিজও বানিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘একটু শীতও লাগে আবার শাল পরার মতোও ঠান্ডা নয়। তাই লিনেন কাপড়টা দুই দিক রক্ষা করেই আরাম দেয়।’
তিলোত্তমার সঙ্গে একমত বিবিয়ানার ডিজাইনার লিপি খন্দকার। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে সাধারণত এন্ডি, খাদি, লিনেন, নরম সিল্ক ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ বছরের অন্য সময়টাতে এ ধরনের কাপড় বেশি ব্যবহার করা হয় না। এই সময়টাই এ ধরনের কাপড় ব্যবহারের ভালো সময়।’
একটু গাঢ়, উজ্জ্বল বা কড়া রংগুলোও এই সময়েই ব্যবহার করা যায়। তবে লক্ষ রাখা উচিত কাটের দিকেও। যেমন, সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে থ্রি-কোয়ার্টার হাত ও একটু উঁচু গলা বেশ সময়োযোগী। আবার চুড়িদার সালোয়ার পরলে যেমন গরমের সময়ে গরম লাগে, ঠান্ডায় ঠান্ডা, কিন্তু এই এই সময়টাতে তা হয়ে ওঠে আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল। একইভাবে সালোয়ার-কামিজে কাজের আধিক্য থাকলেও তা চোখে পড়বে না। বরং নানা ধরনের বাড়তি সংযোজন পোশাকে উত্সবের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। ফতুয়া পরলে একটু ভারী কাপড় হলেই ভালো।একরঙা ফতুয়ার সঙ্গে লিপি খন্দকার রঙিন ফুলেল স্কার্ফ ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন।
লিনেনের ওড়না এখন ভীষণ ফ্যাশনেবল। শীত বেশি নেই বলে শালের চল কমে গেছে। কিন্তু লিনেনের ওড়না হালকা শীত কাটাবে আবার ওড়নার কাজটিও করে দেবে।
মেশিন এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক—সব ধরনের কাজই এই সময়ে যেকোনো অনুষ্ঠানে পরা যেতে পারে বলে মনে করেন শাহরুখ শহীদ। বিশেষভাবে এখন এমব্রয়ডারির কাজ খুবই চলছে। তবে তিনি মনে করেন, কাজ করা কামিজের ক্ষেত্রে ডিজাইনটা কামিজের নিচে থাকাই ভালো। এতে করে ডিজাইন বোঝা যায়। কারণ গলার কাজ অনেক সময়ে ওড়নার কারণে দেখা যায় না। এখনকার সময়ের জন্য কাজ করা কামিজ অনেক বেশি চমত্কার হতে পারে, যদি তাতে রঙের বৈচিত্র্য থাকে। শাহরুখ শহীদের মতে, এই সময়ে আবহাওয়া এত চমত্কার থাকে যে একটু ভারী কাপড় পরাটা সমস্যা নয়। বরং আরামদায়ক। এই কারণে বাড়তি শীতের কাপড় নিতে হয় না। আবার বেশি কাজ থাকলেও তা কাপড়ের সমস্যা করে না ভারী হওয়ার কারণে। এ ছাড়া খুব ঢিলে পোশাক না পরে বরং একটু ফিটিং বা প্লিট দেওয়া পোশাক পরার পরামর্শ দেন তিনি। পোশাকে থাকতে পারে লেইসের ব্যবহার।
সালোয়ার-কামিজের বাইরে শাড়ির ক্ষেত্রেও সফট সিল্ক, মসলিন, এন্ডি শাড়ি ব্যবহার করলে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি আরাম হয় বলে মনে করেন ডিজাইনাররা। এসব শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে থ্রি-কোয়ার্টার বা বড় হাতার ব্লাউজ অনেক বেশি আরামদায়ক হবে এই সময়ে। একটু ভারী শাড়ি হলে শালের দরকার নেই। তবে মসলিনজাতীয় শাড়ি হলে একরঙা পাতলা শাল কাঁধের ওপরে ফেলে রাখা যায়।
বসন্ত ঋতুর শুরু থেকেই আবহাওয়াতে যে ফুরফুরে মেজাজ তা কিন্তু বেশি দিন থাকবে না। তাই যে কদিন আছে সে কদিনে মনের সাধ মিটিয়ে পরে নিন যা ইচ্ছে তা-ই। কোনো রঙেই এখন বারণ নেই ফেব্রিকের ধরনে। শুধু ভারী ও পোশাকের কাট আরামদায়ক হলেই চলবে। এমন দিনে নয় কোনো বাঁধাধরা ফ্যাশন। যা ইচ্ছে তা-ই হোক, তবে অবশ্যই ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে।

0 comments:

Post a Comment