RSS

Saturday, February 13, 2010

ফাগুনের দিন

কোকিল না ডাকলে বা শিমুল-পলাশের দেখা না পেলে না কি বসন্ত আসত না। এখন নাগরিক ব্যস্ততার কারণে দিনপঞ্জির পাতা দেখেই সদর্পে বাসন্তী শাড়িতে তরুণীরা বেরিয়ে পড়েন উত্সবে। তাঁরাই যেন আমাদের নগরজীবনের বসন্ত-দূত। আর এই বসন্ত-দূতদের দেখা পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, চারুকলার বকুলতলা আর বইমেলা তো বটেই। তবে আজকাল ব্যস্ত অফিসে, রাস্তায়ও দেখা মিলছে বাসন্তী পোশাকে বসন্ত বরণ করে নিতে বেরোনো তরুণীদের। পয়লা ফাল্গুনে বসন্ত বরণ করে নেওয়ার রীতি পালন করছেন সবাই। যাঁরা বসন্তের গন্ধ দিব্যি ভুলে আছেন, তাঁরা কিন্তু বাসন্তী শাড়িতে বসন্ত-দূত দেখেই বুঝে ফেলবেন ‘মধুর বসন্ত এসেছে...।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ্তি, ফাহরিয়া, যুক্তা, নুসরাত মিলে এখন থেকেই পরিকল্পনা করছেন বসন্তে তাঁরা কী পরবেন। শাড়ি না কি ফতুয়া? ক্লাস করবেন না কি বকুলতলায় গান শুনবেন? যা-ই করুন আর না করুন, বইমেলায় তো একবেলা যেতেই হবে—এ রকম নানা পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত তাঁরা।

অন্য দিকে নাবিলা, অনন্যা এই দুই বন্ধুর মন ভীষণ খারাপ। গত বছর পড়াশোনা শেষ করে নাবিলা কাজ করছেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আর অনন্যা ব্যাংকার।
এবারের পয়লা ফাল্গুনে অনন্যার ব্যাংক বন্ধ থাকলেও নাবিলাকে অফিসে যেতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছল জীবনের কথা ভেবে মন খারাপ হয় ঠিকই, তবে বসন্ত যেন তার ছোঁয়া লাগিয়ে যায় সবকিছুতেই। তাই তো অফিস করলেও নাবিলার পরনে থাকবে বাসন্তী শাড়ি। আর অফিস শেষে দুই বন্ধু মিলে হলুদ শাড়ি আর কাচের চুড়ি পরে সোজা ছুটবেন ক্যাম্পাস অভিমুখে।
শাড়ি কাপড়ের দোকানে যেন বসন্তের রং লেগেছে। বাংলার ছয় ঋতুর ছয় রং। তবে কোনো কোনো ঋতুতে বাঙালি মেতে ওঠে সর্বজনীন রঙে। তেমনই এক ঋতু বসন্ত। আর তাই এখন দেদারসে বিক্রি হচ্ছে বাসন্তী, গেরুয়া, লাল রঙের শাড়ি। ফ্যাশন হাউস অরণ্যর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবী গজনবী জানালেন, এবারের বসন্ত রঙিন হয়ে উঠবে টাঙ্গাইলের নানা রঙের শাড়িতে। যাঁরা অল্পবয়সী এবং সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে কাটাবেন, তাঁরা সাধারণত টাঙ্গাইলের শাড়িতে ব্লক বা স্প্রে করা শাড়ি পরবেন। শাড়ির রঙে বাসন্তী, লাল আর সবুজই প্রাধান্য পাবে। সেই সঙ্গে এই বয়সীদের খোঁপায় থাকবে পমপম, জারবারা বা লাল গাঁদা ফুল। আবার যাঁরা অফিস করবেন তাঁরা সেদিন হয়তো চিকন পাড়ের তাঁতের শাড়ি পরবেন। সঙ্গে হয়তো খুবই উত্সব-আমেজের রংচঙে ব্লাউজ পরতে পারেন।
একটা পাটভাঙা তাঁতের শাড়ির সঙ্গে কাচের চুড়ি আর খোঁপাভর্তি গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলই যেন চিরায়ত বসন্তের সাজ। কেউ কেউ এই দিনে কপালে আঁকেন মঙ্গলফোঁটা। অফিস করবেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু মোটেই ভাববেন না আমাদের আর বসন্ত কী? নতুন শাড়ি না কিনলেও একটা হলুদ, লাল বা সবুজ জাতীয় শাড়ি বেছে নিয়ে পরে ফেলুন না। সঙ্গে একটা বিপরীত রঙা চুন্দ্রি বাটিক বা লেইস বসানো ব্লাউজ হলে মন্দ হয় না। অফিসে একটা কেজো ভাব রাখতে চাইলে আর কিছু নয়, একটা ছোট্ট টিপ পরে ফেলুন। ব্যস, অফিসের গাম্ভীর্যও নষ্ট হবে না আবার কাজের মধ্যেই নিমন্ত্রণ জানাতে পারবেন ঋতুরাজকে।
সৈয়দা শাহনিলা কাজ করেন একটি দাতা সংস্থায়। বসন্তের প্রথম দিনটিতেই অফিসের কাজে যেতে হবে ঢাকার বাইরে। কিন্তু তাই বলে কি বসন্ত বরণ হবে না? অবশ্যই হবে। শাহনিলা একটি ফতুয়া কিনেছেন বাসন্তী রঙের। তাতে হাতের কাজ এবং চুমকি বসানো রয়েছে। শাহনিলা বলেন, ‘এই পোশাকটি পরেই বেরিয়ে পড়ব অফিসের কাজে। অফিসে পরার জন্য এটি উপযোগী পোশাক, সেই সঙ্গে ফ্যাশনেবল এবং বসন্তকে বরণ করার পোশাক।’
রুবাইয়া খন্দকার কাজ করেন একটি এনজিওতে। অফিসে মেয়েদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় যেকোনো উত্সব তাঁরা উদ্যাপন করেন নিজেদের মতো করে। এ বছর পয়লা ফাল্গুনে অফিস ছুটি। হলে কী হবে, রুবাইয়া বললেন—সবাইকে বলা আছে পরদিন যেন সবাই তাঁতের শাড়ি পরে অফিসে চলে আসেন। হোক সেটা হলুদ, লাল বা সবুজ। সবাই মিলে দারুণ মজা হবে।
যাঁরা শাড়ি পরে অভ্যস্ত নন তাঁরা কিন্তু নির্দ্বিধায় পরতে ফেলতে পারেন সালোয়ার-কামিজ অথবা ফতুয়া। বাটিক কিংবা হাতের কাজের লোকজ মোটিফে নকশা করা ফতুয়া বেশ মানানসই হবে। ফতুয়া পরলে সঙ্গে একটা মালা পরে নিন পুঁতির। দেখবেন অফিসের কাজের মধ্যে কোনো ধরনের জাঁকজমক ছাড়াই আপনার সাজে এসে যাবে উত্সবের ভাব। আর কিছু না হলেও একটা একরঙা কামিজের সঙ্গেই চলতে পারে নানা রঙে টাইডাই করা ওড়না। ফ্যাশন হাউস নগরদোলার হেড অব অপারেশনস মোহাম্মদ আলী আফজাল জানালেন, কর্মজীবীদের কথা মাথায় রেখেই তাঁরা হালকা নকশায় কয়েক ধরনের কাপড়ে শাড়ি তৈরি করেছেন। আবার সালোয়ার-কামিজের একটা বিশাল সংগ্রহও রয়েছে।
এবারের বসন্তে অফিস আছে বলে বসে বসে কেবল অফিসই করতে হবে তা নয়, যে যেখানে যে কাজেই থাকি না কেন, অন্তত পোশাকে এবং সাজে তো প্রকাশ করতে পারি ‘মধুর বসন্ত এসেছে...।’

0 comments:

Post a Comment