RSS

Tuesday, March 9, 2010

এই তো মাধবপুর হ্রদ


‘এটা হলো নীল শাপলা, বুঝছেন...?’ চা-শ্রমিকের সন্তান কৃষ্ণ তাঁতি এভাবেই জলে ভাসা ফুল চেনালো। তারপর মানুষ আসছে দেখে পাড়ের কাছ থেকে গভীর জলের দিকে ভেসে যাওয়া কয়েকটি নীলচে রঙের পাখি দেখিয়ে বলে, ‘এটা হলো নীল হাঁস।’ এভাবে নিজে থেকেই তার মতো করে ফুল ও পাখি চিনিয়ে দিল সে। ফাল্গুনের এক বেলা গড়ানো মুহূর্তে মাধবপুর লেকে পাখির সঙ্গে ফুলের সঙ্গে এমন করেই দেখা।
শুধু কি তাই টলটলে হ্রদের জল, চায়ের গাছ, বুনোফুল, দু-একটা পাখির ডাক...। মন হারানোর কেমন এক পরিবেশ। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে ভানুগাছ-ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়কে মাধবপুর বাজার। সেখান থেকে ডান দিকে মাধবপুর চা-বাগানের কাঁচা মাটির পথ ধরে কিছু দূর এগোলেই চোখে পড়ে পর্যটক বা দর্শনার্থীর দল। এরা ঢাকার একটি কলেজ থেকে এসেছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, এটা প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। তারা গান গাইতে গাইতে পথ চলছে। দুই পাশে মেহগনি, নিম, অর্জুনসহ বিভিন্ন জাতের গাছ। সেই লালচে মাটির পথ দিয়ে কিছুদূর গিয়েই চোখে পড়ে জলের আভাস। এই তো মাধবপুর হ্রদ।
বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। টিলার পাঁজর ঘেঁষে এমন টলটলে জলের ভাসান। সেই জলের বুকে ১২ মাসই কমবেশি ভেসে বেড়ায় নানা জাতের হাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি...। শীতকালে অতিথি পাখির দল আসে এই হ্রদে। হ্রদের জলে গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে নীল শাপলা। হ্রদের দুই পাশে টিলায় টিলায় ছড়ানো চায়ের গাছ। ছায়াবৃক্ষ। আরও আছে অচেনা ঝোপঝাড়। সেই ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে নানা জাতের সাদা, কালচে, গোলাপি রঙের মায়া লাগা বুনো ফুল। ঝোপের ফাঁকে ফাঁকে দেখা মেলে ভাঁট ফুলের। কৃষ্ণ তাঁতি একটি কালচে রঙের ফুল দেখিয়ে বলল, ‘এটা হলো চিনি ফুল।’ এই ফুলের রস অনেকটা চিনির মতো মিষ্টি বলেই এমন নামকরণ।
মাধবপুর লেকের চারপাশে সারা দিন আনমনে ঘুরে বেড়ানো, ক্লান্তি পেলে বসে বুনো নির্জনতায় ডুবে থাকা। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা-বাগানের টিলার নিচে লেকের পাড় ঘেঁষে হাঁটার জন্য সরু পথ করে দিয়েছে। টিলার ওপর আছে খড়ের তৈরি তাঁবু। আর টিলার ওপর থেকে যেদিকেই চোখ যায় বনের নীল রেখা। কৃষ্ণ তাঁতি পূর্ব দিকে বহু দূরের একটি পাহাড়ের ক্ষীণ আভাস দেখিয়ে বলে, ‘এই যে পাহাড় দেখছেন, এটি ভারতে পড়ছে।’ সে সেই পাহাড়ে গিয়েছিল! বলে, ‘না, একদিন বাবা-মা গিয়েছিল। তারা বলেছে।’ মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান—একটা বুনো নির্জনতা আছে। তবে সন্ধ্যা ছয়টার আগেই সেই জায়গাটি থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। সেটাই মাধবপুর চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নির্দেশ।
আর সেই যে ভানুগাছ-বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়কের কথা বলেছি, এই সড়কের শেষ প্রান্তে ধলই সীমান্ত। সেখানে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের স্থানটির দূরত্ব মাধবপুর হ্রদ থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটারের মতো। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দেখতেও চমত্কার জায়গাটি এক ফাঁকে ঘুরে আসা যায়। একসঙ্গে দুটি জায়গায় সহজেই ঘোরা যেতে পারে।

কীভাবে যাবেন
মাধবপুর হ্রদ ও বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধে যেতে হলে ট্রেন বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জে আসতে হবে। তারপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে মাধবপুর হ্রদ বা স্মৃতিসৌধে ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বাসে করে সেখানে যাওয়া যায়। রাতে থাকতে হলে শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে। তার যেকোনো একটিতে থাকা যেতে পারে।

0 comments:

Post a Comment