RSS

Wednesday, March 3, 2010

 পরিবেশবান্ধব প্রতিদিন

যার যার অবস্থান থেকে সামান্য অবদান। এটাই পরিবেশ বাঁচাতে অনেকখানি সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিক খুঁটিনাটিতে না-ই বা গেলাম। নাগরিক হিসেবে সাধারণ দায়িত্বগুলোও যদি আমরা পালন করি, চারপাশের পরিবেশ থাকবে অনেকটাই সুন্দর। এ জন্য চাই শুধু আপনার আন্তরিকতা ও সতর্কতা।

পলিথিনের বিকল্প আছে
প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের মূল সমস্যা হলো, এটা পচে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে অনেক সময় নেয়। যেখানে-সেখানে ফেলা হলে এটি সেই স্থানের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক হাফিজা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আসলে পলিথিন ও প্লাস্টিক আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে বাদ দেওয়া এখনই সম্ভব নয়। প্লাস্টিক ও পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, বাঁশ, কাপড়, বেতের তৈরি পণ্য ব্যবহার করাই যায়। তবে সেসবের সহজলভ্যতাও বাড়াতে হবে।’
হাফিজা খাতুন আরও বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার যদি করতেই হয়, তবে তা কাজ শেষে ভালোভাবে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো যেন যেখানে-সেখানে পড়ে না থাকে।
আমরা অনেক সময় পিকনিক করতে গেলে সঙ্গে নিয়ে যাই প্লাস্টিকের তৈরি একবার ব্যবহারের উপযোগী থালা-গ্লাস। ব্যবহার শেষে এগুলো সব জড়ো করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে। সফটড্রিংকের পেট বোতলগুলোর বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।
নিত্যদিনের কাজের বেলায় আমরা একটু চেষ্টা করলেই এসব ক্ষতিকর জিনিসের ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারি। যেমন প্রতিদিনের বাজার করার জন্য একটাই ব্যাগ থাকতে পারে। সেটা ধুয়ে আবার পরদিনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ব্যবহারের ব্যাগটি হতে পারে পাটের বা কাপড়ের তৈরি। আজকাল ফ্যাশন হাউসগুলোতে পাট ও কাপড়ের তৈরি চমত্কার ডিজাইনের ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে। দামটাও হাতের নাগালেই। যাত্রা, আড়ং, পিরান, নন্দন কুটির, প্রবর্তনাসহ অনেক ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে এসব।
আবার প্লাস্টিকের তৈরি পাটির বদলে শীতলপাটি, সতরঞ্জি ব্যবহার করা যায়। অনেকে বাসায় কার্পেট ব্যবহার করেন। এটায় ধুলা জমে অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। এর বদলে শীতলপাটি বা সতরঞ্জি ব্যবহার করলে তা পরিষ্কার রাখাও সহজ হয়।

এক জিনিসের বারবার ব্যবহার
ইংরেজি রিসাইকেল কথাটার অর্থ একটি জিনিস পুনর্বার ব্যবহারের উপযোগী করে রাখা। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা তৈরির একটি বড় অংশ হলো মানুষকে রিসাইকেলে উত্সাহী করে তোলা। হাফিজা খাতুন বলেন, ‘পুরোনো জিনিস প্রক্রিয়াজাত করে আবার ব্যবহারের কাজটা আসলে খুবই সহজ। একটা সময় আমদের মা-নানি-দাদিরা তা করতেনও। যেমন পুরোনো শাড়ি ফেলে না দিয়ে সেটা দিয়ে কাঁথা তৈরি, পুরোনো মোটা কাপড় থেকে ডোর ম্যাট তৈরি, পুরোনো কাপড় থেকেই হাঁড়ি ধরার কাপড় তৈরি, নারকেলের মালায় তেল, খাবার রাখা। এটাকেই বলা যায় রিসাইকেল। তবে এখন মানুষের হাতে সময় কম। আমরা এখন এই ঝামেলায় না গিয়ে বাজার থেকে নতুন একটা জিনিস কিনে আনাতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। পুরোনো জিনিস কিনে বা সংগ্রহ করে কেউ যদি আবার নতুনভাবে ব্যবহারের উপযোগী জিনিস তৈরির কাজ করেন এবং পরে আমরা সেটা তাঁর কাছ থেকে কিনে নিতে পারি, তবে বেশ ভালো হয়। এতে তাঁর আয়েরও একটা সুযোগ থাকছে।’
এখন নানা ফ্যাশন হাউসে এই রিসাইকেলের ধারণা কাজে লাগিয়ে নানা জিনিস তৈরি হচ্ছে। যাত্রার ডিজাইনার উর্মিলা শুক্লা বলেন, ‘আমরা দুভাবে ডিজাইন করি। সম্পূর্ণ নতুন কিছু জিনিস তৈরি হয়। আবার কিছু তৈরি হয় রিসাইকেল করা জিনিস থেকে। যেমন আমরা পুরোনো চিপসের প্যাকেট থেকে কলমদানি, ফাইল বক্স তৈরি করেছি। কাগজের মণ্ড দিয়ে কলমদানি তৈরি করেছি। ফেলে দেওয়া সফট ড্রিংকের বোতল ব্যবহার করে নানা রকম গয়নার ডিজাইন করেছি। এ ছাড়া খবরের কাগজ দিয়ে তৈরি শপিং ব্যাগও ব্যবহার করি আমরা।’

অন্দরে সবুজের ছোঁয়া
শহরে এখন গাছপালা খুব কম। ঘরের সামনেও আর বাগান করার সুযোগ নেই বললেই চলে। তবে সে জন্য সবুজের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত থাকবেন কেন? ঘরের ভেতরই নানা গাছ লাগাতে পারেন। অফিসেও আজকাল নানা গাছ রাখা হয়। হাফিজা খাতুন বলেন, ‘ঘরে গাছ লাগানোর বেলায় কিছু সতর্কতাও নিতে হবে। যেমন সব গাছ কিন্তু ঘরের ভেতর ব্যবহারের উপযোগী নয়। আবার অনেক গাছেই নানা পোকামাকড় বাসা বাঁধতে পারে। গাছ লাগানোর আগে জেনে নিতে হবে সেটা ঘরে ব্যবহারের উপযোগী কি না। যে নার্সারি থেকে গাছ কিনবেন, সেখান থেকেই এসব সাধারণ জেনে নেওয়া যায়।’

পানি, বিদ্যুত্, গ্যাসের ব্যবহারে সতর্কতা
‘প্রতিদিন বাড়িতে আমরা যে পরিমাণ পানি, বিদ্যুত্. গ্যাসের অপচয় করি; সেটা হয়তো একটা বাসার বিবেচনায় নগণ্য। কিন্তু একটি এলাকার সব বাসার হিসাব নিলেই সেটা কিন্তু অনেক বড় অঙ্কে পৌঁছে যাবে।’ বললেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যাপক ফিরোজা খানম। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে দাঁত ব্রাশ, চুলে শ্যাম্পু করা ও কাপড় ধোয়ার সময় পানির কল বন্ধ রাখা; গ্যাসের চুলা প্রয়োজন না হলে বন্ধ করে রাখা—এসব সাধারণ কথা তো আমরা জানিই। এ ছাড়া বাথরুমে বেসিনের সামনে একটা ছোট বাটিতে করে পানি রাখা যায়। ছোটখাটো প্রয়োজনে কল না ছেড়ে সেখান থেকেই পানি ব্যবহার করা যাবে। এ ব্যাপারে নিজে তো সচেতন হবেনই। বাড়ির শিশু, গৃহকর্মীদেরও সচেতন করে তুলুন।
শীতের সময় দক্ষিণমুখী জানালাগুলো দিনের বেলায় খুলে রাখতে পারেন, যাতে সূর্যের আলো ঢুকে ঘর গরম থাকে।
বিদ্যুতের অপচয় ঠেকানো যায় বিদ্যুত্-সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করে। সাধারণ হলুদ আলোর বাতিগুলো বিদ্যুত্ টেনে নেয় অনেক বেশি। বাড়িতে তাই সাদা আলোর টিউবলাইট ব্যবহার করা যায়। এতে খরচ কমে আসবে। ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের জাতীয় বিপণন কর্মকর্তা নাফেজুল কাদিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিউবলাইটে ব্যালাস্ট নামের একটি ছোট যন্ত্র সংযুক্ত করেও বিদ্যুত্ খরচ কমানো যায়। ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস এটি বাজারে এনেছে। এ ছাড়া কমপ্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট বাল্ব বা এনার্জি সেভিং বাল্বও ব্যবহার করা যায়।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মূল সংযোগ বন্ধ করুন। শুধু রিমোট কন্ট্রোলার দিয়ে বন্ধ করলেও এগুলো বিদ্যুত্ খরচ করতেই থাকে। মোবাইল ফোনের চার্জ দেওয়া হয়ে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিন।

ময়লা ফেলুন সঠিক জায়গায়
বাসার ময়লা যেখানে-সেখানে ফেলা হলে পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়। তাই ময়লা ফেলার একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে। শুকনো ও ভেজা ময়লা আলাদা ব্যাগে ভরে রাখতে পারেন। ওষুধের বোতল, ব্যবহূত ব্যান্ডেজ—এগুলো আলাদা ব্যাগে ভরে ফেলতে হবে। ময়লার ব্যাগ বন্ধ করে ডাস্টবিনে ফেলুন।
পরিবেশ রক্ষার অনেক বিষয়ই শুধু আমাদের হাতে নেই। তবে নিজে সচেতন হওয়া ও অন্যকে সচেতন করার কাজটুকু করতে তো কোনো বাধা নেই। আমাদের চারপাশটা সুন্দর থাকলে সেতো আমাদেরই লাভ।

0 comments:

Post a Comment