RSS

Monday, March 28, 2011

আত্মবিশ্বাস গড়তে

আমার সাত বছরে ছেলেকে নিয়ে বিশেষ কোনো চিন্তা নেই। ওই বয়সেই ছেলে আমার বেশ দায়িত্ববান। পড়াশোনা সব নিজে নিজেই করার চেষ্টা করে। কারও কাছে না শিখেই চমৎকার ছবি অাঁকে। গান গাইতেও ভালোবাসে। কিন্তু আমার ছেলের এত গুণ থাকা সত্ত্বেও একটাই সমস্যা সবকিছু মাটি করে দেয়। ওর নিজের উপর আত্মবিশ্বাসটা একেবারেই শূন্য। বাড়িতে ও ভালো করে পড়া তৈরি করলেও ওর মনে হয় ও পরীক্ষার খাতায় কিছুই লিখতে পারবে না। স্কুলের কোনো কমপিটিশন বা ক্লাস টেস্টের আগে ওর নার্ভাসনেস সাংঘাতিক বেড়ে যায়। আমরা ওকে অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, কনফিডেন্ট হতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এত আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে বড় হয়ে কমপিটিটিভ পৃথিবীতে ও লড়বে কেমন করে?

সাফল্য এবং আত্মবিশ্বাসের মধ্যে যে একটা নিবিড় সংযোগ রয়েছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর ছোটবেলাই হচ্ছে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার সবচেয়ে ভালো সময়। শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাবের একাধিক কারণ থাকতে পারে। আপনার প্রশংসা এবং সমালোচনার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখাই কারেক্ট পেরেন্টিংয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াবার কয়েকটি সহজ উপায়

আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার প্রথম ধাপই হলো নিজের একটা পজিটিভ সেল্ফ তৈরি করা। ছোটরা সবসময় সেটা করতে পারে না, সেই জন্যে ওর হয়ে আপনাকে খানিকটা কনফিডেন্স তৈরি করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই ওকে ছোটখাট কাজের দায়িত্ব দিয়ে দিন, যাতে ও তার মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। আপনাকে বাসার কাজে সাহায্য করলে অথবা নিজের কাজ ঠিকঠাক করতে পারলে সবার সামনে ওর প্রশংসা করুন। কোনো কিছু করতে গেলে ওর কাছ থেকে পরামর্শ নিন। ও খুশি হবে, আর আত্মবিশ্বাসও খুঁজে পাবে। অন্যদের সাথে তুলনা করবেন না। স্কুলে, খেলার মাঠে বা হবি ক্লাসে ওকে ভালো ফল করতে উৎসাহিত করুন। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, আপনার সন্তান যেমন ধরনের ওকে তার জন্যই ভালোবাসুন। নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বোঝা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন না।

০০ আপনার সন্তানকে নিজের মতো করে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিন। লক্ষ্য করুন অবসর সময়ে ও কী করতে ভালোবাসে। যত তুচ্ছই হোক না কেন, সেই ব্যাপারে ওকে উৎসাহ দিন। আপনার সন্তান যেভাবে, যতটুকু করছে সেটার জন্যই ওকে কদর করুন। ওর পছন্দের বিষয়টিকে ভালো করে জানতে বুঝতে সাহায্য করুন। ওর পছন্দের যদি একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশ করে দেন, তা হলে ওর ব্যক্তিত্বের একটা বিশেষ দিক উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ওর পছন্দের বিষয় নিয়ে চর্চা করতে পারবে।

০০ পাঁচ, ছয় বছর হয়ে গেল বাচ্চাকে সব সময় চোখে চোখে না রেখে নিজের মতো করে থাকতেদিন, বেড়াতে দিন, পড়ালেখা করতে দিন। দৃষ্টি রাখুন বাচ্চার উপর, তবে একটু দূর থেকে। পাজল, জেগস, রুবিকস কিউবের মতো খেলনা কিনে দিনয় যার জন্য ধৈর্য্য এবং অধ্যাবসায়ের প্রয়াজন হয়। ওকে নিজের মতো করে খেলতে দিন এবং ভুল করতে করতেই শিখবে। পারতপক্ষে সাহায্য করবেন না। বাচ্চারা এই মজার সমস্যা সলভ করতে পারলে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাবে।

০০ আপনার সন্তানদের রোল মডেল কিন্তু আপনি। আপনাকে যদি আতঙ্কিত হতে দেখে যেকোনো সমস্যায় বা বিপদে, তা হলে বাচ্চার মধ্যেও ভীতি ঢুকে যাবে। আর আপনি যদি ঠান্ডা মাথায় সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন, তা হলে আপনার সন্তানের মধ্যেও সেই গুণ প্রোথিত হয়ে যাবে। সেই জন্য ওর সামনে নিজের ব্যবহার নিয়ে একটু সচেতন থাকুন। একটু বড় হলে বন্ধুবান্ধব বা নিজের মনোজগতের নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে আপনার দারস্থ হবে। সেগুলোর সমাধান করতে যাবেন না উপযাজক হয়ে। বরং সুপরামর্শ দিন, যাতে করে ও নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে।

0 comments:

Post a Comment