RSS

Tuesday, July 7, 2009

বর্ষার অসুখ-বিসুখ

বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভাল লাগে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কাদা মাটিতে হা-ডুডু, ফুটবল খেলতে সব শিশু-কিশোররাই পছন্দ করে এমনকি সুযোগ পেলে বড়রাও। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলে নানা অসুখ-বিসুখ এসে ভর করে শরীরে। বৃষ্টিতে ভিজলে হতে পারে জ্বর, হাঁচি, কাশি, সর্দি, মাথা ব্যথা বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, এছাড়া বর্ষাকালে আরো নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দিতে পারে। বমি, চোঁয়া ঢেকুর, পেট ফাপা, ডায়রিয়া কিংবা আন্ত্রিক, খোঁস-পাঁচড়া, দাদ বা চর্ম সংক্রমণ ইত্যাদি। বর্ষাকালে শিশুরা সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বর্ষাকালে এই সমস্ত অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা সহজেই বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হন। যারা ডায়বেটিসে কিংবা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শিশুরা যদি সঠিকভাবে মায়ের দুধ পায় তবে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

রোগের ধরন ও প্রতিকার
সর্দিকাশি : বর্ষাকালে ছোট-বড় সকলেই সার্দিকাশিতে আক্রান্ত হন সহজেই। যে সব ভাইরাস এই সর্দিজ্বর ঘটায় তারা হল রাইনোভাইরাস। এই ভাইরাস পুরো বর্ষা এবং শীতের প্রথম দিকে আক্রমণ করে। দেখা যায় শিশুরা প্রথমে এই রোগে আক্রান্ত হয় তাদের থেকে সংক্রমণ বাড়িতে প্রবেশ করে এবং পরিবারের সবাই ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয় অথবা বড়দের থেকেও শিশুরা সংক্রমিত হতে পারে। এ রোগ হলে নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকে, সারা শরীর স্যাজ ম্যাজ ও ব্যথা করে। বার বার হাঁচি হয়, প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে। খাওয়া-দাওয়া আনিচ্ছা এবং চোখ লাল হওয়া ভাব দেখা যায়। এই রোগে ৭-১০ দিন প্রচন্ড জ্বরও থাকতে পারে। এই রোগটি সাধারণত ৭দিন স্থায়ী হয়। এই রোগ থেকে ট্রাকিও ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ার মত মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। আবার যারা ধূমপান করেন তাঁদের অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস উইথ ব্রঙ্কিয়াল স্প্যাজম পর্যন্ত ঘটতে পারে।

সাবধানতা
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
০ প্রচুর শাকসবজি, সালাদ খাওয়া ও পানি পান করা
০ ঠান্ডা না লাগানো।
০ ধূমপান বন্ধ করা।
০ ফেশিয়াল মাস্ক পরিধান করা।
০ গরম পানি লবণ দিয়ে পার্পল করা।
০ নাকে ইরিটেশন হলে ন্যাজাল স্প্রে ব্যবহার করা।

আক্রান্ত হলে যা করবেন
০ প্রচুর পানি পান করতে হবে।
০ জ্বর/শরীর ব্যথার জন্য নাপা জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। সর্দি বা হাঁচি বন্ধ করার জন্য অ্যান্টিহিস্টামিনিক খাওয়া যেতে পারে। এই জাতীয় ওষুধ বেশি খেলে সর্দি বসে গিয়ে হাঁপানি দেখা দিতে পারে। এ ওষুধে সারাক্ষণ ঘুম ঘুম ভাব থাকে।

বর্ষায় পেটের অসুখ
বর্ষাকালে নানা ধরনের পেটের অসুখ দেখা দেয়। এটাকে পানিবাহিত রোগও বলা যায়। সবাই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশু, বয়স্করা ও যারা অ্যাক্লোরহাইড্রিয়া নাম অসুখে ভুগছেন অথবা যারা বেশি মাত্রায় এন্টাসিড খান তাদের এই অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করে। আমাদের পাকস্থলীতে যে এসিড উৎপন্ন হয় এটা শুধু হজমে সাহায্য করে না; আমাদের শরীরে কলেরার জীবাণু প্রবেশ করলে এই এসিডের দ্বারা তা মরে যায় বা সহজে বাড়তে পারে না। এই ধরনের এসিড নষ্ট হয়ে গেলে উল্লেখিত জীবাণুগুলি সহজেই অন্ত্রে প্রবেশ করে ও রোগ ঘটায়। এছাড়া এ সময় পেট খারাপ ও বমি হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে ডায়ারিয়া হতে পারে।

ডায়রিয়া হলে যা করবেন-
ডায়রিয়া সাধারণত ছোটরাই বেশী ভোগে। তাই মারাত্মক আকার ধারণ করার আগেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।
০ প্রচুর পানিও খেতে হবে।
০ বাচ্চাদেরকে প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ খেতে দিন। মায়ের দুধে একধরনের অ্যান্টিবডি থাকে যা কিছু জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করে।
০ স্যালাইন খেতে হবে।
০ স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে।

সাবধানতা
বিশুদ্ধ পানি পান করুন। সন্দেহ হলে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করুন। পানির মধ্যে ক্লোরিন সঠিক পরিমাণে মেশালে পানির মধ্যে থাকা অনেক জীবাণু মারা যায়। খোলা খাবার পরিহার করুন। ফল, শাকসবজি ভাল করে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে খাবেন। খাওয়ার বাসনপত্র, গোসলে কাপড়-চোপড় পরিষ্কার পানিতে ধুবেন।

0 comments:

Post a Comment