RSS

Monday, December 27, 2010

অন্য রকম ওড়না, ভিন্ন রকম গয়না

বিয়ের আয়োজনে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন কনে। কনে কী শাড়ি পরলেন, রংটা ঠিক আছে কি না, শাড়ির সঙ্গে ওড়নাটা মানাল কি না—এই নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনা। এই খুঁটিনাটি বিষয়ে লক্ষ রেখেই এখন তৈরি হচ্ছে কনের পোশাক। টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের কর্ণধার মুনিরা ইমদাদ বলেন, একটা সময় ছিল যখন সবাই বেনারসি পরত এবং সঙ্গে থাকত মসলিনের সোনালি ওড়না। এখন সময় বদলেছে, আর এই বদলে যাওয়া সময়ে কনের পোশাকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তাই কনের সাধ গতানুগতিক ঢঙে সীমাবদ্ধ নেই। এখন বিভিন্ন ধরনের শাড়ি যেমন পরছে, তেমনি শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন অনুষঙ্গেও এসেছে বৈচিত্র্য।
কনের বিয়ের মূল শাড়িটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেই শাড়ির সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রতিটি অনুষঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ। মাঝখানে কিছুদিন জর্জেটের খুব ভারী শাড়ির চল দেখা গেলেও ইদানীং সবারই পছন্দ অনেকটা ঐতিহ্যবাহী শাড়িগুলো। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় কাতান শাড়ির নাম।

ফ্যাশনে এখন দেশি কাতান শাড়ির চল আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। এই সঙ্গে আছে টিস্যু, জামদানির মতো দেশি শাড়িগুলোও। আর এই শাড়িগুলো পছন্দের তালিকায় উঠে আসার কারণ হলো, বিয়ের অনুষ্ঠানের পরের এ শাড়ি পরা যায়।
ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান মনে করেন, এ কারণেই এখন শাড়ির সঙ্গে ওড়নার প্রতি কনেরা বিশেষ নজর দিয়ে থাকেন। সবাই কম-বেশি ওড়নাটা জমকালো এবং একটু অন্য রকমভাবে উপস্থাপন করতে চান। মাহিন খান জানান নেট, টিস্যু, মসলিন—এই তিন ধরনের উপাদানেই তৈরি হয় এখনকার ফ্যাশনেবল ওড়না। এসবে জারদৌসি, পুঁতি বা কারচুপির কাজ অথবা এখন যে বাজারে সুন্দর সুন্দর পাড় বা বর্ডার পাওয়া যায়, সেই সঙ্গে বুটি ও ঘুঙুর বসিয়ে তৈরি হচ্ছে জমকালো ওড়না। আবার কাতান শাড়ির সঙ্গে কাতানের ওড়নাও অনেকে পরেন।যা জামদানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কখনো কখনো কনট্রাস্ট আবার কখনো হুবহু একই রঙে মিলিয়ে কনের মাথার ওড়না তৈরি করা হয়ে থাকে।
এই পরিবর্তন গত এক বা দুই দশকের; এর আগে পর্যন্ত মসলিনের জরির কাজ করা ওড়নার চলটাই বেশি ছিল। শাড়ি যে রঙেরই হোক না কেন, তা সে লাল, বা গোলাপি, রানি বা কমলা, ওড়না কিন্তু সোনালিই হবে এবং। আর সেই ওড়নায় চারপাশে থাকতে হবে জরির লেইস এবং মাথায় যেখানটাতে তাজ পরা হয়, সেখানে একটু ভারী কাজ। কিন্তু এখনকার সময়ে এসে বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। আসলে কনের বিয়ের শাড়ির সঙ্গে ওড়নার বর্তমান সময়ের যে ফ্যাশন, তার পার্থক্যের শুরুটা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে। ওই সময় থেকেই বিয়ের শাড়ি হিসেবে টিস্যু, তারও কিছুদিন পর জর্জেট বাজার পেতে শুরু করে। আর এসব শাড়ির জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে অনেক বড় যে কারণ ছিল, তা হলো সঙ্গেই ম্যাচিং ওড়না। তখন থেকেই শুরু ওড়না নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এখন তো রীতিমতো আয়োজন করে ওড়না তৈরি করা হয় শাড়ির সঙ্গে।কখনো কখনো এমনও দেখা যায়, একটি ওড়নার খরচ শাড়ির দামের কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে। মাহিন খানের মতে, বিয়ের ওড়না যেহেতু রুসমতের সময় ব্যবহার করা হয়, তাই এই ওড়না যত সুন্দর হবে ততই ভালো দেখাবে।
বাজার ঘুরে জানা গেল, মসলিনে কারচুপি করা ওড়না পাওয়া যাবে ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। কাতানের ওড়না তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। নেট, মসলিন ও টিস্যুতে জারদৌসি কারচুপি করা ওড়নার দাম পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকায়ও পাওয়া যাবে। জামদানি ওড়না তৈরি করতে ন্যূনতম তিন হাজার টাকা বাজেট করা উচিত। যেকোনো শাড়ির দোকানে বিয়ের শাড়ি কিনতে গেলে ওড়না তো পাবেনই, এ ছাড়া মিরপুরের বেনারসি কুটি, জরিন সিল্ক, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির থেকে কিনতে পারেন বাহারি ওড়না। যদি ফরমায়েশি ওড়না করাতে চান, সে ক্ষেত্রে মসলিন বা টিস্যু কাপড় কিনে চলে যান গাউসিয়ায়। ইচ্ছামতো পাড় ও বুটি কিনে তৈরি করে ফেলুন পছন্দসই ওড়না।
রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান মনে করেন, কনের মাথায় যে ওড়না পরা হবে, সেটা অবশ্যই একটু স্বচ্ছ হওয়া চাই। কারণ, এখন গয়নার ফ্যাশনে যেমন নানা রকমের পাথরের চল এসেছে, তেমনিভাবে নতুন গয়নারও সংযোজন হয়েছে। এখন কনেরা মাথায় অনেক ধরনের গয়না ব্যবহার করে থাকে। শুধু টিকলি নয় বরং টায়রার ফ্যাশন এখন বেশ চলছে। এক লহরে নয় বরং মাথাজুড়ে তিন থেকে পাঁচ লহরের টায়রা পরতেই বেশি পছন্দ করছেন কনেরা। সেই সঙ্গে আবার ঝাপটা না থাকলে চুলের পিন যেটা, দেখতে অনেকটা কানপাশার মতো, সেটাই বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিঁথিপাটির দুই পাশে। আবার কানের দুল থেকে পেছনে টানা চলে যায় খোঁপার কাটা পর্যন্ত। কানিজ আলমাস আরও বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে, লম্বা বেণি করে সেই বেণিতেও গয়না পরা হচ্ছে। তাই এই ক্ষেত্রে ওড়না যত স্বচ্ছ হবে গয়নাগুলো ততটাই ভালোভাবে ফুটে উঠবে। যদি পিওর কাতানের ওড়না হয়, সে ক্ষেত্রে ঘোমটা একটু দূরে সরিয়ে তবেই পরাতে হবে।’
নিউ জড়োয়া হাউস থেকে জানা গেলএখন রাইস পার্লের সঙ্গে মিলিয়ে মাথার টায়রা, ঝাপটার অর্ডার বেশি আসছে, এতে করে মাথার গয়নায় এক ভরি সোনার বাজেট করলেই গড়িয়ে নেওয়া যাবে পছন্দসই গয়না।
গয়নার দোকান অ্যারাবিয়ানসের ব্যবস্থাপক সনৎ হাজরা বলেন, এখন সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় সোনার ওপর রুপোর প্রলেপ দেওয়া গয়না বা মেটালের গয়না বিয়েতে বেশি চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাথায় পরার গয়না রুপোর ওপরে সোনার প্রলেপ দিয়ে করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।সবচেয়ে বেশি চলছে টায়রা, বেণীর গয়না ও ঝাপটা। এই ধরনের গয়নার ক্ষেত্রে অন্তত ১০ হাজার টাকা বাজেট করতে হবে। শুধু গোল্ডপ্লেটেড নয় বরং এসব গয়নায় যুক্ত করা হয়েছে নানান রকমের পাথর। এখন সবচেয়ে বেশি চলছে আনকাট পলকি পাথর। শুধু সোনার রংই নয় বরং সেই সঙ্গে ব্রোঞ্জ বা কপার রঙেও এখন এসব গয়না তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের গয়নার জন্য ঢুঁ মারতে পারেন চাঁদনিচক, গয়না ঘর, অ্যারাবিয়ানস, বসুন্ধরার মতো মার্কেটে। তৈরি গয়না কেনার পাশাপাশি অর্ডার দিতে পারবেন। তবে সোনা কিংবা রুপোর গয়নায় সোনার প্রলেপ যাই হোক না কেন, অন্তত এক মাস সময় হাতে রেখে তৈরি করতে দিন।

0 comments:

Post a Comment