RSS

Monday, December 27, 2010

বিয়ের খাবারের স্বাদ

বিয়ের আয়োজনে সবার আগে চিন্তা করতে হয় অতিথি আপ্যায়ন, মানে খাবারের কথা। এ আয়োজন স্মরণীয় করতে খাওয়াদাওয়ার মানটাও হওয়া চাই ভালো। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে বিয়ের খাবারেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। বিয়ের খাবারে ঐতিহ্যের সঙ্গে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে। কমিউনিটি সেন্টার বা রেস্তোরাঁয় বিয়ের আয়োজন করলে তাঁরাই খাবারের দায়িত্ব নেন। আবার খ্যাতিমান ক্যাটারিং সার্ভিস বা বাবুর্চিদেরও দেওয়া যায় খাবারের দায়িত্ব।

কমিউনিটি সেন্টার
রাজধানীতে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সরকারি কমিউনিটি সেন্টার আছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে অনেক স্থানে এখন কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও কমিউনিটি সেন্টার দেখা যায়। বিয়ের আসরে দুভাবে কমিউনিটি সেন্টারে খাবার দেওয়া হয়। যাঁদের অনুষ্ঠান, তাঁরা বাজার করে দিতে পারেন। অথবা কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষের কাছে অতিথির পরিমাণ ও চাহিদার কথা বলতে হবে। কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ সব রকম আয়োজন করে দেবে। এ ছাড়া আরেকটি নিয়ম আছে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের ক্ষেত্রে। খাবারের প্রতিটি পদের দাম আলাদা আলাদা করে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক অতিথির জন্য সাদা পোলাও ৫০, মুরগির রোস্ট ৭৫, খাসির রেজালা ৮০, গরুর রেজালা ৭০, টিকা কাবাব ১৫, বোরহানি ২৫, জর্দা ১০, সালাদ ৫, চীনা সবজি ২০ ও বুরিন্দা পোলাওয়ের জন্য ৬০ টাকা। এ ছাড়া যদি কেউ আলাদা করে বিয়ের খাবারে দই বা মিষ্টি খাওয়াতে চান, সে ক্ষেত্রে ৫০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে।
আবার প্যাকেজ আকারে কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষকে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ৫০০ মানুষের খাবারের জন্য এক লাখ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এক হাজার ২০০ লোকের জন্য এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিতে হবে কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষকে। ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা প্রতিজনের প্যাকেজও কমিউনিটি সেন্টার করে থাকে। গ্রিন রোডের রূপসা কমিউনিটি সেন্টারের বাবুর্চি আ. জলিল বলেন, অনেক সময় আমরা বাসায় গিয়ে বিয়ের রান্না করে থাকি। এ জন্য আমাদের অতিরিক্ত রান্নার খরচ দিতে হয়।

রেস্তোরাঁ
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেকেই রেস্তোরাঁ বিয়ের আয়োজন করে থাকে। এ জন্য চীনা রেস্তোরাঁগুলো এগিয়ে আছে। ঢাকার ধানমন্ডির জিনজিয়ান রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক রোকনুজ্জামান খান জানান, বিদেশি খাবারের পাশাপাশি দেশি বা উপমহাদেশীয় খাবারও পরিবেশন করা হয় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী।
রেস্তোরাঁগুলোতে চাহিদামতো কাচ্চি বিরিয়ানি, তন্দুরি চিকেন, জালি কাবাব, সালাদ, আলু বোখারার চাটনি, বোরহানি, ফিরনি ও মিনারেল ওয়াটারের প্যাকেজ আছে। এসব প্যাকেজের দাম জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। আবার চীনা বা থাই খাবারের প্যাকেজ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা। রেস্তোরাঁয় বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য কোনো ভাড়া দিতে হয় না। শুধু খাবারের দাম দিলেই হয়।

ক্যাটারিং সার্ভিস
এখন অনেক পরিবার আছে, তারা বিয়েতে রান্নাবান্নার জন্য কোনো ঝামেলা করতে চায় না। তাঁদের জন্য ক্যাটারিং সার্ভিস ভালো। ঢাকার শওকত তেহারি ঘর অ্যান্ড ক্যাটারিং সার্ভিসের শওকত হোসেন বলেন, ‘খাবারের মানের সঙ্গে অনেক সময় পরিবারের সম্মান জড়িয়ে থাকে। বিয়ের জন্য বিভিন্ন রকম প্যাকেজ আমাদের আছে। এমন একটি প্যাকেজ আছে, যেখানে তাঁদের সবকিছু নিজেদের কিনতে হয়। আমাদের বাবুর্চিরা গিয়ে শুধু রান্না করে দিয়ে আসেন। এখানে সবকিছু কেনার ঝামেলা তাঁদের করতে হয়। আরেকটি প্যাকেজ আছে, যেখানে তাঁরা মেনু দেবে আর লোকের সংখ্যা বলবে, আমরা নিজেদের দায়িত্বে সবকিছু করে দেব। এ ছাড়া আমাদের কিছু খাবারের মেনু আছে।’
অন্যান্য ক্যাটারিং সার্ভিসেও একই নিয়ম। খাবারের প্যাকেজ মেনু, যেমন—কাচ্চি, গ্রিল, আলু বোখারার চাটনি, বোরহানি, সালাদ, জর্দা বা ফিরনি ও পানি। এই প্যাকেজের দাম ২৮০-৩০০ টাকা। সাদা পোলাও, খাসির রেজালা, মুরগির রোস্ট, জর্দা বা বোরহানি ও পানি। এই প্যাকেজের দাম ২৫০-২৮০ টাকা। এ ছাড়া তারা গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করে থাকে। গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে তেহারি, বোরহানি, কাবাব, পানি ১৩০-১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। গায়েহলুদের খাবারে খাসির মাংস দিলে দাম পড়বে ১৮০ টাকা।
ঐতিহ্যবাহী ফকরুদ্দিন বাবুর্চি বিয়ের খাবারের জন্য খ্যাত। বর্তমানে ফকরুদ্দিন কাচ্চি বিরিয়ানির হাল ধরেছেন ফকরুদ্দিনের ছেলে মো. রফিক। তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে ২৫ হাজার লোকের আয়োজন করতে পারি আমরা।’ দেশের যেকোনো এলাকার অর্ডারও নেওয়া হয়। ২৫০ থেকে ৩৩০ টাকার বিয়ের খাবারের প্যাকেজ দিয়ে থাকেন তাঁরা। এ ছাড়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে সাদা পোলাওয়ের প্যাকেজ আছে। প্যাকেজ ছাড়া খাবার যদি আলাদা আলাদা নিতে চান, তবে কাচ্চি বিরিয়ানি (হাফ) ১১০, কাচ্চি বিরিয়ানি (ফুল) ১৯০, বিফ তেহারি (হাফ) ৬৫, বিফ তাহেরি (ফুল) ১৩০, চিকেন বিরিয়ানি (হাফ) ১২০, চিকেন বিরিয়ানি (ফুল) ১৯০, চিকেন রোস্ট ৮০, বোরহানি ৩০, ফিরনি ২৫, জালি কাবাব ২৫ টাকা পড়বে।
বিয়েতে মোরগ পোলাও বেশি জনপ্রিয়। নান্না মিয়ার খাবার শুধু পুরান ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত। তাঁর ছেলে হাজি মো. আবদুল্লাহ জানান, যদি খাবারের পরিমাণ বেশি হয় তবে তিন-চার দিন আগে এসে অর্ডার দিতে হয় আর যদি কম হয়, তবে এক-দুই দিন আগে এসে অর্ডার দিলে হবে। এখানে মোরগ পোলাও ১৫০, খাসির কাচ্চি ১৬০, খাসির বিরিয়ানি ১৩০, বোরহানি ১ লিটার ৬০, লাবাং ১ লিটার ৯০ ও টিকা কাবাব ১৫ টাকায় পাওয়া যায়। আর একসঙ্গে সবগুলো খাবারের প্যাকেজ নিলে পরিমাণের ওপর এর দাম নির্ভর করবে।

0 comments:

Post a Comment