RSS

Monday, December 27, 2010

বিয়ের কত্ত আয়োজন

দেখে মনে হতে পারে, যেন কোনো রাজদরবারে বসে আছেন মধ্যমণি রাজা আর রানি। তাঁরা হলেন বর আর কনে। বিয়ের আসরে সিংহাসনের মতো চেয়ারে তাঁরা বসে আছেন। আর সামনে আমন্ত্রিত অতিথিরা। খটকা লাগতে পারে, কনে আবার পা ঝুলিয়ে বসে না কি! আর বরের নাকে রুমালই বা কোথায়!

উত্তর দিলেন ডিজাইনার সাইদা ফজিলাতুন নাজ। বিয়ে বা গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে বর ও কনের পা তুলে বসে থাকার রেওয়াজ বদলেছে। এখন সামান্য উঁচু আসরের জায়গায় সিংহাসনের মতো কিংবা হাতলওয়ালা অথবা হাতল ছাড়া সজ্জিত চেয়ারে পা ঝুলিয়ে আরামে হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বর আর কনে।
গায়েহলুদের আসর প্রসঙ্গে সাইদা ফজিলাতুন নাজ বলেন, উৎসব মানেই রঙের খেলা। আর গায়েহলুদ হলে তো কথাই নেই। তাই গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে রঙের ব্যবহার বেশি করা উচিত। হলুদের আসনে তিনজনের বসার জায়গা রাখা উচিত। তাই আসনটা আকারে কিছুটা বড় আর মজবুত হতে হবে। চাইলে মঞ্চ বানিয়ে তার ওপর একটা আলপনা করা পিঁড়িতেও কনেকে বসানো যায়। কনে হলুদ রঙের শাড়ি পরলে মঞ্চের পেছনের দিকটা হলুদের বিপরীত রং হওয়াই ভালো। পেছনের দিকটা কয়েক রঙের কাপড় দিয়ে সাজানো যেতে পারে। তা হতে পারে চুন্দ্রি, জামদানি বা সুতি কোনো কাপড়। এর সঙ্গে কাঁচা ফুল, প্রদীপ আর ছোট মরিচবাতির ব্যবহারে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। আবার অনেকেই চান ছন, বাঁশের চাটাই বা হোগলা ব্যবহার করে একটু দেশীয় ভাব আনতে। পেছনের দিকটাতে ছোট ছোট ছড়া বা হলুদের কোনো গানের দুই-এক লাইন লিখে দেওয়া যায়।
বিয়ের আসরের প্রসঙ্গে রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের কর্ণধার ডিজাইনার গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, বিয়ের আসরে ঢোকার ফটকটা হবে বেশি জমকালো। চাইলে ছন দিয়ে ঘরের আকার করে দেওয়া যেতে পারে। কিংবা শোলা কেটে স্প্রে রং করে প্লাস্টিকের ফুল লাগিয়ে সাজানো যেতে পারে। বেশি জমকালো করতে অনেকেই শোলা দিয়ে কারুকার্যখচিত পিলার তৈরি করেন। আর এই পিলারের সঙ্গে পেঁচিয়ে দেওয়া যেতে পারে ছোট ছোট মরিচবাতি। ঢোকার দরজার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বর ও কনের বসার মঞ্চটা তৈরি করা যেতে পারে। মঞ্চের ওপর রাখা যেতে পারে সজ্জিত চেয়ার। অনেকে আবার ডিভান আকারের আসন করে থাকেন। পেছনের অংশটা পাতলা টিস্যু কাপড় দিয়ে তার পেছনে ছোট মরিচবাতি লাগিয়ে দেওয়া যায়। এতে করে আলোর আভা বর ও কনের মুখে এসে পড়ে। তবে বর ও কনের আলাদা চেয়ারে বসার ব্যবস্থা থাকলেও রুসমতের (আয়না দেখা, মিষ্টি খাওয়ানো ও মালা পরানো) সময় পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
কমিউনিটি সেন্টারে আলাদা ফুল বা নকশার ব্যবস্থা থাকে না। এমনটা জানালেন ঢাকার সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার কামাল হোসেন। চাইলে বাইরে থেকে কারিগর এনে ফুল দিয়ে মনের মতো মঞ্চ সাজানো যাবে। শাহবাগের ফুলের দোকান ফাতেমা পুষ্পবিতানের মইনউদ্দিন জানান, সাধারণত হলুদের মঞ্চ সাজাতে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা আর বিয়ের মঞ্চ সাজাতে আট থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগে।
বিয়ের আসর আর মঞ্চ ছাড়াও গায়েহলুদ, বর ও কনের বাড়িতে তত্ত্ব পাঠানোর জন্য ডালা, ঝুড়ি আর কুলা সাজাতে হয়। বিয়ের ও গায়েহলুদের ডালা, তত্ত্ব সাজিয়ে দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান হল নাইমা’স কালেকশন। এর স্বত্বাধিকারী নাইমা ফাইজি বলেন, হলুদের কাপড় পাঠানোর ডালাটা হবে কিছুটা বড়। কারণ সেখানে বেশ কয়েকটা কাপড় যাবে। শাড়িটা এমনভাবে সেট করতে হবে যেন দেখে একটা বউ মনে হয়। ছেলেদের পাঞ্জাবি ঠিক একইভাবে দেওয়া যেতে পারে। কনের হলুদের স্যান্ডেল, নাগরা জুতার আকারের কোনো ডালাতে দেওয়া যেতে পারে। পান আর প্রসাধনী ঠিক একইভাবে পাঠালে ভালো। মিষ্টি দেওয়া যেতে পারে আলপনা করা কোনো কাচের জারে কিংবা মাটির পাত্রে। প্রতিটি জিনিস ডালাতে ভালোভাবে সেট করে ওপরে স্বচ্ছ কাগজ দিয়ে আটকে দিলে অনেক বেশি ভালো দেখাবে। তবে নিজের মনের মতো এত সব কাজ করিয়ে নিতে খরচটা একটু বেশি পড়বে, এমনটা জানান তিনি। প্রতিটি ডালা বানানো যাবে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে।
বেত, মোটা কাগজ আর বাঁশের তৈরি ডালা-কুলা পাবেন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, কাঁটাবনে। আকারভেদে ডালা-কুলা কেনা যাবে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে। আর একটু কম দামে কিনতে চাইলে ছুটতে হবে চকবাজারে।
বিয়েবাড়ির পূর্ণতা আসে আলপনার তুলির ছোঁয়ায়। ফজিলাতুন নাজ বলেন, আজকাল বাড়িগুলো টাইলসের। তাই আলপনা করা হয় না। তবে কাপড়ের ওপর আলপনা করে তা বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিংবা গায়েহলুদ দেওয়ার সময় ছোটমণিদের বসার জন্য যে শীতলপাটি বিছিয়ে দেওয়া হয়, সেই পাটিতে আলপনা করলে বেশ লাগে।

0 comments:

Post a Comment