RSS

Monday, December 27, 2010

বর আসবে এখনই

বিয়ে মানে নতুন জীবনের শুরু। এই শুরুটা স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার অন্ত থাকে না। বিয়ের আয়োজনের সবকিছুই হওয়া চাই একদম মনের মতো। শুধু কনেরই নয়, বরদেরও পোশাক নিয়ে থাকা চাই নানা আয়োজন।
বিয়ের পোশাক হিসেবে এখনো শেরওয়ানিই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ফ্যাশনের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর ছাঁট-কাটে কিছু পরিবর্তন চলে এসেছে। সাটিন বা মখমল কাপড় দিয়ে বানানো চাপা শেরওয়ানি ও চাপা চুড়িদার—এটা ছিল সত্তরের দশকের স্টাইল। তবে এখন পাগড়ি থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি—সবকিছুতেই চলে এসেছে বিভিন্ন রূপ।
ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক বলেন, ‘বিয়ের দিনটি বর-কনের জন্য স্বপ্নের দিন। “ব্রাইডাল লাইন আপ বাই এমদাদ হক” কালেকশনের মাধ্যমে বিয়ের পোশাকে সেই স্বপ্নটাই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি। শুধু মেয়ের নয়, বিয়ের দিনটি একটি ছেলের জীবনেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে আজকাল বিয়েতে বা জয়েন্ট রিসেপশনে স্যুট, টাক্সিডো, প্রিন্সকোট পরে থাকেন। কিন্তু বিয়েতে শেরওয়ানির আবেদন অনেক বেশি। নিজেকে এদিন অন্য সবার থেকে আলাদা করে উপস্থাপনের বিষয়টি শেরওয়ানির মাধ্যমেই যেন ফুটে ওঠে।’

মাথার শোভায়
একসময় বরের মাথার পাগড়ি আড়াই গজ কাপড় দিয়েই বাঁধা হয়ে যেত। পাগড়ির লুকেও তেমন বৈচিত্র্য ছিল না। কিন্তু এখন সেখানে চলে এসেছে ভিন্নতা। দেশি কাপড়, যেমন—জামদানি, কাতান, অর্গানজা, টাঙ্গাইল শাড়ি, হাফসিল্ক অথবা টিস্যু ব্যবহার করে পাগড়িতে আনতে পারেন চমৎকার লুক। কখনো তার রং শেরওয়ানির সঙ্গে মিলিয়ে হতে পারেন, আবার কখনো বা পুরো আলাদা। ‘একটি নয়, বরং দু-তিন ধরনের কাপড় দিয়ে পাগড়ি বানালে অনেকটা ভিন্নধর্মী হবে।’
জানালেন এমদাদ হক। তিনি বলেন, ‘আমি পাগড়ি তৈরি করার সময় ছয় গজ শাড়ি বা কাপড় ব্যবহার করি। পাগড়ির কাপড়ে কোথাও কাটাকাটি করি না। বিয়ের পর তো এ পাগড়ি আর কখনো পরা হয় না। ছয় গজের এ কাপড়টি তখন শাড়ি হিসেবেই অন্য কেউ পরতে পারবে।’ পাগড়ির শোভা বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন পছন্দমতো উপকরণও। সামনের দিকে গেঁথে নিতে পারেন মায়ের পুরোনো দুল বা ব্রোঞ্জ।

শেরওয়ানি-বৃত্তান্ত
শেরওয়ানি মানেই চোখধাঁধানো কাজ—এ ধারণা এখন আর প্রযোজ্য নয়। বরং হালকা কাজও ফুটিয়ে তুলতে পারে আভিজাত্য। অনেকেই খুব জমকালো কাজের পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। আবার বিয়ের দিন তো খুব সাদাসিধেভাবেও হাজির হওয়া চলে না। তাই ডিজাইনারকে দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন পছন্দমতো শেরওয়ানি। বিদেশি কাপড় ও কাজের বদলে দেশি কাপড় ও কাজ দিয়েও শেরওয়ানিতে আনতে পারেন চমক। শেরওয়ানিতে জামদানি, মটকা, অ্যান্ডি সিল্ক, কাতান, ডুপিয়ান—এসব কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। খুব ভারী কাজ করা হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বরং শেরওয়ানির সূক্ষ্ম কাজই সবার নজর কাড়বে। ‘শেরওয়ানিতে জরি, চুমকি, কারচুপির কাজ থাকতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। আমার তৈরি করা শেরওয়ানিগুলোতে কাঁথা স্টিচ, হালকা এমব্রয়ডারি অথবা হালকা সুতার কাজ করেছি। কাপড় হিসেবেও বেছে নিয়েছি দেশি উপকরণ।’ জানালেন এমদাদ হক।
শেরওয়ানির ছাঁট-কাটেও এসেছে আধুনিকতা। তবে তা কখনোই যেন বরের জন্য অস্বস্তির কারণ না হয়। জানান এমদাদ হক। তিনি বলেন, এ লাইন কাট, আঙরাখা কাট, বডি ফিটিং কাট এখন বেশি চলছে। ফরমালের পাশাপাশি শেরওয়ানিতে ইনফরমাল একটা লুক দেওয়ারও চেষ্টা করছি। তাতে শেরওয়ানিটা বিয়ের পরও অন্যান্য অনুষ্ঠানে পরা যায়।
গলায় হাই নেক ও ভি-শেপ চলছে এখন বেশ। লম্বার ক্ষেত্রেও ছোট ও লং কাট—দুটোই পুরোদমে চলছে। বরের উচ্চতা কম হলে শেরওয়ানির গলায় হালকা কাজ দিয়ে লাইন দিলে ভালো লাগবে। এতে তাঁকে কিছুটা লম্বাও লাগবে দেখতে। শেরওয়ানির ঝুল এ ক্ষেত্রে হাঁটু অবধি হতে হবে। যাঁরা লম্বা, তাঁদের জন্য শর্ট শেরওয়ানি থেকে শুরু করে লম্বা—সব ধরনের কাটই মানাবে।
বর-কনের পোশাকে সামঞ্জস্য থাকা চাই। কনের শাড়ির মোটিফের কিছু অংশ তুলে আনা যায় শেরওয়ানিতে। কনের শাড়ির কাজ ও রং খুব চকচকে হলে শেরওয়ানির কাজ ও রং কিছুটা ম্যাট হলেই ভালো লাগবে।
দিন না রাত—বিয়ের অনুষ্ঠান কোন সময়ে হবে, তা ভেবে শেরওয়ানির রং নির্বাচন করা উচিত। দিনের বেলায় সফট লুক আনতে চাপা সাদা, হালকা বাদামি, হালকা সোনালি, হালকা গোলাপি বা বেগুনি রং ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন এমদাদ হক। রাতের বেলা তা হতে পারে বটল গ্রিন, মেরুন, গাঢ় বাদামি ও রয়েল ব্লু। একসময় বিয়েতে কালো রং পরার চল একদমই ছিল না। তবে এখন অনেকে এ রঙের পোশাকও পরছেন। কালো রঙের শেরওয়ানি হলে উত্তরীয় বা পাগড়িতে আনতে পারেন রঙের ভিন্নতা।

কোথায় পাবেন
এলিফ্যান্ট রোডে বিয়ের সরঞ্জামের বেশ কিছু দোকান আছে। কেনা ছাড়াও এখান থেকে শেরওয়ানি ভাড়া নিতে পারবেন। ভাড়া নিতে এক হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা লাগবে। কাজ ও কাপড় অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হবে। কিনতে গেলে পাঁচ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকারও শেরওয়ানি পাবেন। বেছে নিন নিজের বাজেট অনুযায়ী।
শেরওয়ানি সেলাইয়ে মজুরি লাগবে পাঁচ হাজার টাকা। সঙ্গে কাজের ওপর নির্ভর করবে বাকি খরচ। দেশি ও বিদেশি নাগরা পাবেন এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। ভাড়া নিতে পারবেন পাগড়িও; পেয়ে যাবেন এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। কিনতে গেলে দাম পড়বে ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা।
এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাছ থেকে পছন্দমতো ডিজাইনে বানিয়ে নিতে পারেন শেরওয়ানি।

উত্তরীয়
‘ছেলেরা এখন বিয়ের পোশাকের সঙ্গে স্কার্ফ ও উত্তরীয় পরছেন। উত্তরীয়গুলো কোনো কাজ ছাড়া অথবা হালকা কাজের হলেই ভালো লাগবে দেখতে।’ বললেন এমদাদ হক। উত্তরীয়গুলো নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারেন দেশি কাপড় ব্যবহার করে।
শেরওয়ানি ব্যবহারের পর তা ভাঁজ করে রাখা উচিত নয়। ড্রাই ওয়াশ করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

0 comments:

Post a Comment