ইদানীং বাসায় ফিরতে প্রায়ই দেরি করছে তৌফিক। গভীর রাতে ফিরে নিতান্ত অনিচ্ছায় খাবার টেবিলে বসে কিছু মুখে দিচ্ছে। কখনো অর্ধেক খেয়ে উঠে যাচ্ছে। তারপর বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাচ্ছে। বিষটুকু গলায় ঢেলে বিছানায় শুয়ে পড়ছে। আর শোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গভীর ঘুম। এই সময়টুকুতে আদিবার প্রতি এতোটুকু মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না তৌফিক। সারাদিন কাজের চাপে বাসায় একবারও ফোন করছে না সে। আদিবা ফোন করলে হাই-হ্যালো বলে একটু পর ফোন রেখে দিচ্ছে। আদিবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। তবে কি আজকাল তৌফিক সীমার সাথে আবারো মিশছে? পুরোনো প্রেমিকাকে কি সে এখনও ভুলতে পারছে না?
রাহুলের ব্যাপারটা অন্যরকম। আজকাল প্রায়ই সে বাসায় ফোনটা বিজি পাচ্ছে। মোবাইলে ফোনে কল করলে শুনতে পায়- 'এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না'। রাহুল রিয়াকে এ ব্যাপারে কিছু বললে বলে_'বাসায় কথা বলছিলাম। তুমি বললে আর ফোন করবো না'। মোবাইল ফোনের কথা তুললে বলে_'চার্জ দিতে মনে ছিল না'। রাহুলের মনের মেঘ কিছুতেই সরে না। রাহুল জানে, রিয়ার কিছু পুরোনো বয়ফ্রেন্ড আছে। এদের কয়েকজনের সাথে কালেভদ্রে পরিচয়ও হয়েছিল রাহুলের। তবে কি তাদের কারো একজনের সাথেই যোগাযোগ রাখছে রিয়া? বিশেষ একজনের প্রতি ওর ভালো লাগা ছিল না তো?
রাহুল কিংবা আদিবার মতো চরিত্র আমাদের চারপাশে খুঁজলে অসংখ্য পাওয়া যাবে। দোষ রাহুল, আদিবা কারোরই নয়। 'সন্দেহ' এমন একটা প্রবণতা যা প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই কাজ করে। যখন চোখের সামনে পর্দা পড়ে, তখনই অন্ধকারের ডালপালা খুলে যায়। অন্ধকার মানেই রহস্য, অন্ধকার মানেই সন্দেহ। দুজন মানুষের সম্পর্কের মাঝে যখন দূরত্বের অন্ধকার এসে দাঁড়ায়, তখনই সন্দেহের দরজা-জানালা উন্মুক্ত হয়ে যায়। একজন আরেকজন সম্পর্কে সবকিছু না জানলেই সন্দেহের বিষবাষ্প মনের মধ্যে জমতে শুরু করে। এ জন্য সবার আগে জরুরি স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে দূরত্বের অবসান। একজন আরেকজনকে ভালোভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে। সবসময় অন্যকে সবকিছু জানাতে ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু জানাতে হবে, জানতেও হবে। আপনার অফিসে যতো চাপই থাকুক, যতো বড় ঘটনাই ঘটুক, যতো গোপন বিপদই হোক না কেন, আপনার উচিত আপনার স্ত্রীকে বলা। আপনি কিছু চেপে গেলেই আপনার স্ত্রী সন্দেহ করবেন। আপনার উপর তার যতো বিশ্বাসই থাকুক, মনে রাখতে হবে, ভালোবাসা একচেটিয়া পেতে চায় সবাই। তাই মনের গলিতে সন্দেহ ঢুকে পড়ে একেবারে নীরবে। এটাকে ঠেকানো খুবই কঠিন। এ জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়া যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি পরস্পর পরস্পরের কাছে সব বিষয়ে খোলামেলা থাকতে হবে। আপনি বাড়িতে কিভাবে সময় কাটাবেন, তা জানার অধিকার আপনার স্বামীর আছে। তবে অধিকারের চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আপনার স্বামী সরাসরি হোক কিংবা ফোনালাপেই হোক আপনার সঙ্গ সবসময়ই চাইবে। আপনার কাছাকাছি থাকতে চাইবে। সেজন্য তাকে সর্বক্ষণ জানাতে হবে আপনি কি করছেন, আপনার কিভাবে সময় কাটছে। আপনার জন্য তার যে উদ্বিগ্নতা এটাকে মূল্য দিতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের একান্ত গোপন কিছু ব্যাপার থাকে। এই বিষয়গুলোকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে সন্দেহ এর মধ্যে না আসতে পারে। প্রেমিক-প্রেমিকারা সারাক্ষণই আতংকে থাকেন, তাদের প্রেম এই বুঝি ভেঙে যায়। প্রেম যদি নিঃস্বার্থ হয়, নির্মল হয়, তবে তাতে সন্দেহ প্রবেশের আশংকা থাকে না। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যতোটা গণ্ডিবদ্ধ, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক ততোটাই বিস্তৃত। একটি ছেলের অসংখ্য মেয়ে বান্ধবী থাকতে পারে। একই ভাবে একটি মেয়ের অসংখ্য ছেলে বন্ধু থাকতে পারে। এতো জনের সম্পর্কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খোঁজখবর নেয়া সম্ভব নয়, সেটা শোভনও নয়। এক্ষেত্রে বিশ্বাস ও আস্থার কোনো বিকল্প নেই। কারো সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা চোখে পড়তেই পারে। তাই বলে সেটাকে 'প্রেম' ভেবে নীচু মনের পরিচয় দেয়াটা উচিত হবে না। সম্পর্ককে দেখতে হবে উদার দৃষ্টিকোণ থেকে।
সম্পর্ককে রাখতে হবে সবকিছুর উধের্্ব। যেকোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে, তা শুরুতেই দূর করে ফেলতে হবে। একে কিছুতেই বাড়তে দেয়া যাবে না। সন্দেহ এমন একটা জিনিস, যা প্রশ্রয় পেলে বাড়তে থাকে। তাই গোড়াতেই এর মূল উপড়ে ফেলতে হবে। এ জন্য পারস্পরিক খোলামেলা আলোচনাই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী। আপনি যদি দেখেন, আপনার সঙ্গী আপনাকে এড়িয়ে চলছে কিংবা আপনার সাথে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে, তবে তার সাথে খোলা মন নিয়ে সবকিছু আলোচনা করুন। অবশ্যই সমাধান বেরিয়ে আসবে। মনে রাখতে হবে, সন্দেহ সমস্যার সূচনা। সন্দেহ হলে সাথে সাথে সমাধান করার চেষ্টা করুন।
0 comments:
Post a Comment