RSS

Tuesday, August 18, 2009

জমকালো অনুষ্ঠানে সালোয়ার কামিজ

কুড়িতে আর বুড়ি নয়। একালে কুড়িতে পা মানে হলো ‘টিন’ তকমাটি পাকাপাকি ঝেড়ে ফেলে তরুণী হওয়ার পালা। তারপর একুশ, বাইশ... আরেকটু বড় মনে হয় নিজেকে। বড় বোন-ভাবীদের মতো পার্টিতে শাড়ি পরার ইচ্ছেটা হয় ভীষণ। এ বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া তরুণীদের নিজের শাড়ির সংগ্রহ সাধারণত কম, আবার অনভ্যস্ত হওয়ায় দাওয়াতে শাড়ি পরে আড়ষ্টতায় ভোগেন অনেকেই। তারুণ্যের উচ্ছলতায় শাড়ির ভারিਆিও প্রায়ই বেমানান। বিশ ও বিশ-ঊর্ধ্ব তরুণীদের পার্টি পরিচ্ছদের এ দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে ‘ড্রেসিডেল’-এর ডিজাইনার মায়া রহমান বলেন, শাড়ির বিকল্প হতে পারে সালোয়ার-কামিজই, তবে তা হতে হবে জমকালো, দৃষ্টিনন্দন, শালীন।

কিছু মৌলিক বিষয়
জমকালো বলতে জামাজুড়ে স্রেফ সলমা-চুমকির ঝলকানি নয়, বরং বড় ভুমিকাটি কাপড়ের।
মায়া রহমানের মতে, অনুষ্ঠানে পরার সালোয়ার-কামিজের জন্য উপযোগী কাপড় সিল্ক, জর্জেট, ধুপিয়ান সিল্ক, মসলিন, টিস্যু−যেগুলো দেখতেই খুব জমকালো। তাতে অল্প সুতা, জরির এমব্রয়ডারি, পাথর, চুমকি, পুঁতির কারুকাজে কামিজগুলো হয়ে উঠবে নজরকাড়া। দিনের দাওয়াতে পরুন ফিকে গোলাপি, সাদা, পেস্ট, পিচ জাতীয় হালকা রংগুলো। রাতের পার্টির জন্য বেছে নিন কালো, বার্গেন্ডি, মেরুন, কফি, নীল, লাল প্রভৃতি গাঢ় রং।

ছাঁট-কাটে অনন্যতা
হালফ্যাশনের চওড়া ঘের, চাপা মুহুরির সালোয়ার ছাড়াও চুড়িদার, ধুতি, পেশওয়ারি সালোয়ার পার্টিতে পরতে পারেন অনায়াসে। ভারী সিল্ক, এন্ডি সুতির কাপড়ে চুড়িদার সালোয়ার বেশ ভালো হয়। আর বড় ঘেরের সালোয়ারের ভাঁজগুলো ভালো ফোটে জর্জেট, পাতলা সিল্ক কাপড়ে−পরামর্শ মায়া রহমানের। চলতি ফ্যাশনে ঢোলা সালোয়ারের সঙ্গে খুব চলছে খাটো কামিজে থ্রি-কোয়ার্টার হাতা। নতুন ধাঁচের আরেক ফ্যাশন চুড়িদার হাতার কামিজও ভালো লাগবে চুড়িদার সালোয়ারের সঙ্গে। হাইনেক, ভি-গলা, নৌকা ছাঁটের গলা (বোটনেক) কামিজে আনবে ভিন্ন মাত্রা। ওড়নাটি চওড়া হওয়াই ভালো।

আরও খুঁটিনাটি
টুকিটাকি কিছু বিষয় জেনে-বুঝে নিন কেমন সালোয়ার-কামিজে হয়ে উঠতে পারেন পার্টির মধ্যমণি। ফ্যাশন হাউস ‘দর্জি’র ডিজাইনার সাশা মানসুর বললেন, আজকাল খুব জনপ্রিয় হয়েছে সালোয়ার-কামিজে কাতান কাপড়ের ব্যবহার। সিল্ক, এন্ডি সিল্কের কামিজের হাতায়, গলায়, দুই পাশে, বুকে কাতান পাড়ের সমন্বয় দারুণ জমকালো লাগে। এর সঙ্গে নিতে পারেন চারদিকে কাতান পাড় দেওয়া মসলিনের ওড়না।
রঙে তো বটেই, দিনের আর রাতের পার্টির পোশাকে তফাৎটা হবে কাপড়েও, জানান তিনি। দিনের অনুষ্ঠানে পরুন ‘ম্যাট’ বা অনুজ্জ্বল কাপড় যেমন এন্ডি সিল্ক। তাতে ঝকমকে সোনালি নয়, ভালো লাগবে ম্যাট সোনালি, তামাটে, অ্যান্টিক রঙের কাজ। ধুপিয়ান, বলাকা, রাজশাহী সিল্কের মতো জ্বলজ্বলে সিল্কগুলো আলো ঝলমলে রাতের পার্টির জন্য যথার্থ।

বেছে নিন আপনারটি
সাশার মতে, লম্বা-রোগা মেয়েদের হাঁটুর ঠিক মাঝ অবধি লম্বা কামিজ, চুড়িদার সালোয়ার বেশ মানিয়ে যাবে। একটু মোটা গড়নের মেয়েদের কামিজের ঝুল হওয়া চাই হাঁটু ছাড়ানো। পোশাকে স্ট্রাইপ এড়িয়ে পরুন একরঙা কাপড়। খাটো, হালকা-পাতলা তরুণীদের হাঁটুর ওপর অবধি ঝুলের কামিজ ও তার সঙ্গে উঁচু হিল জুতায় বেশ লম্বা লাগবে। তাঁরা বাদ দিন আড়াআড়ি (হরাইজন্টাল) স্ট্রাইপের কাপড়।

আনুষঙ্গিক
চুড়িদারের সঙ্গে ফ্ল্যাট জুতা বেশ মানানসই। বৈচিত্র্য আনতে পরতে পারেন নাগরাও। অল্প হিল, কালো জুতা পরা যায় যেকোনো রঙের পোশাকের সঙ্গেই। হালকা রঙের পোশাকে মানাবে অনুজ্জ্বল সোনালি, খয়েরি জুতা। অভ্যস্ত হলে ক্লাচ ব্যাগ নিতেই পারেন। তবে সদ্য তরুণীদের ব্যাগ ঝুলিয়ে চলার অভ্যাস থাকায় হাতলহীন ক্লাচ ব্যাগটিকে ভুলে ফেলে যেতে পারেন কোথাও। তাই তাঁরা পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে হাতে ঝোলান নকশাদার বাহারি ‘বটুয়া’ ব্যাগ, জানান সাশা।
হাতভরা চুড়ি নয়, কਲিতে পরুন ব্রেসলেট। কানের দুলটা ভারী হলে কামিজের সঙ্গে গলায় আর কিছু না পরাই ভালো। ভরাট গাল, গোল মুখের মেয়েরা পরুন লম্বা ঝোলানো দুল। আর লম্বা মুখ, খাড়া নাকের অধিকারীরা পরুন ঝুমকা। রিং, বড় গোল দুল মানিয়ে যাবে চাপা গালের মেয়েদের। কামিজের গলাটা ছড়ানো হলে কানে-গলায় বেশ লাগবে পেনডেন্ট। পার্টিতে সোনা, অক্সিডাইজড বাদ; পরুন রুপা, ইমিটেশন, পাথর বসানো মাল্টিকালার, অ্যান্টিক, কপার কালারের গয়না। রং মিলিয়ে হাতে, পায়ের আঙ্গুলে গলিয়ে নিন মানানসই আংটি। খেয়াল রাখুন, পোশাক-জুতা-গয়নার নকশার রঙে সোনালি-রুপালির গরমিল না হয়।

সাজুগুজু
‘কিউবেলা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি’র কর্ণধার ফারজানা আরমান মনে করেন তারুণ্যের নিজস্ব সৌন্দর্যে এ বয়সের মেয়েরা এমনিতেই সুন্দর হয়ে ওঠে। পার্টিতে যেতে তাই সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে দরকার শুধু ফ্যাশনেবল একটা হেয়ার স্টাইল, সঙ্গে হালকা মুখসাজ।
ঘরেই করতে পারেন এমন কয়েক রকম চুলসজ্জা আর একদম মৌলিক একটা মেকআপের বিষয়ে জেনে নিন তাঁর কাছেই:

"" চুল না বেঁধেই স্টাইল
১. এখন তরুণীদের খুব পছন্দ সোজা, ঝলমলে চুল। এ জন্য চুলটাকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে হালকা ব্লো ড্রাই করে নিন আগে। হেয়ার সেটিং লোশন স্প্রে করুন। পুরো চুলে স্প্রে ঠিকমতো মাখাতে চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিলেই পেয়ে যাবেন চিকমিকে সোজা চুল।
২. ব্লো-ড্রাই করে শাইনিং সেরাম (নানা রকম পাবেন বাজারে) দিন চুলে। তারপর আয়রন করে নিলে হয়ে গেল ঝকঝকে মসৃণ চুল।
৩. কারলিং আয়রন থাকলে চুলে স্পাইরাল স্টাইল করতে পারেন। পার্টির এক দিন আগে শ্যাম্পু করতে হবে এ জন্য। ভলিউমাইজার শ্যাম্পু, কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ব্লো-ড্রাই করলে চুলে বেশ ভরাট ভাব আসবে।

"" বাঁধা চুলের স্টাইল
১. একটু অদলবদলে সাধারণ পনিটেইলই হতে পারে ভীষণ স্নার্ট স্টাইল। চুলগুলো পেছনে টেনে ব্যান্ড দিয়ে বাঁধুন। বাঁধা চুলের একাংশ নিয়ে ব্যান্ডের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে ব্যান্ডটাকে মুড়িয়ে নিন। মনে হবে চুল দিয়েই গোড়া কষে চুল বেঁধেছেন। পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে পরুন চিকন রিবন, নানা রকম ক্লিপ। সামনে চুল ব্যাংগস কাটা থাকলে সেটা কপালের ওপর ছড়িয়ে দিন।
২. কটা ক্লিপ কাঁটার ব্যবহারে করে ফেলতে পারেন ফ্রেঞ্চ টুইস্ট। পেছনে টেনে চুল পুরোটা লম্বালম্বি পেঁচিয়ে নিন। পেঁচানো চুলটাকে ওপরে তুলে আবার কয়েক প্যাঁচে ঘুরিয়ে লম্বালম্বি রোলের মতো করুন। ক্লিপ, কাঁটা দিয়ে আটকে নিন।

"" মেকআপ
প্রথমে পুরো মুখ, তারপর চোখ ও শেষে সাজান ঠোঁট। ত্বকে দাগ না থাকলে মুখে কোনো ফাউন্ডেশন দেওয়ার দরকার নেই। সরাসরি ব্লাশ-অন হিসেবে জেল ব্লাশার দিয়ে নিন।
ত্বকের দাগ ঢাকতে ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে পারেন স্টিক, ক্রিম-টু পাউডার বা ক্রিম-টু ময়েশ্চারাইজার ফাউন্ডেশন। ক্রিম-টু পাউডার ফাউন্ডেশন ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে ত্বকে মেশাতে পারেন। মুখে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার দিয়ে পাঁচ মিনিট পর ফাউন্ডেশন লাগালে তা ভালো বসবে ত্বকে। এর পরও দরকার হলে লাগাতে পারেন কনসিলার।
এরপর লাগান ক্রিম ব্লাশ-অন। চাইলে শিমার দিতে পারেন ব্লাশ-অনের ওপর শুধু গালের হাড়ে। এক পরত লুজ পাউডারের পোঁচে শেষ করুন ত্বকসাজ।
এবার চোখের সাজে ভুরুর নিচে সোনালি, রুপালি বা অফ হোয়াইট আই শ্যাডো দিন হাইলাইটার হিসেবে। বেছে নিন চিকচিকে (শিমার) ধরনের আই শ্যাডো। দুই-তিন রং আই শ্যাডো মিলিয়ে দিতে পারেন। অথবা কম সময়ে মেকআপ করতে চাইলে শুধু বাদামি শ্যাডো দিয়ে মাশকারা, ওপর পাতায় আইলাইনার, নিচে কাজল দিয়ে নিন।
ঠোঁট সাজাতে আগে লিপলাইন করুন। তরুণীদের ভালো লাগবে ফ্রস্টেড লিপস্টিক বা লিপ গ্লসে। শুধু গ্লসে চটচটে ভাব হয় অনেকের। গ্লস দেওয়ার পর বরফ ঘষে নিলে তা কেটে যাবে ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। লিপস্টিকের ওপরও গ্লস দেওয়া যেতে পারে।
ব্লাশ-অন, শ্যাডো, লিপস্টিক, লিপ গ্লসের জন্য পিচ, গোলাপি, ব্রাউনের হালকা শেডগুলো সব রঙের পোশাকের সঙ্গে মানানসই। চোখের সাজকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন নানা ধরনের মাশকারা যেমন−থিকেনিং, ভলিউমাইজিং, কারলিং ও অন্য রং যেমন নীল মাশকারার ব্যবহারে। ব্যস, সালোয়ার-কামিজে পার্টি সাজে আপনি একদম তৈরি!

0 comments:

Post a Comment