RSS

Monday, January 4, 2010

ঝক্কি সামলাবে যারা

মিলির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল মাত্র দেড় মাসের মধ্যে। বিয়ের এত কেনাকাটার মধ্যে অনুষ্ঠান সাজানো, স্থান ঠিক করা, গানের আসর বসানোর ঝক্কি-ঝামেলায় ওর যেন নাভিশ্বাস! তবে কি মনের কোণে লুকানো স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে? পরে অবশ্য মিলির ইচ্ছাপূরণ হলো ষোলআনা। মিলি ওর হলুদে এসেছে বর্ণিল ঢাকাই রিকশায় চড়ে। ওর হলুদের অনুষ্ঠান যেন পুরোটাই একটা গ্রামের মেলা। সবার পোশাকেও গ্রামীণ ছোঁয়া।

 বিয়ের সানাই বাজল রে...

বিয়ে হচ্ছে পরিবার গঠনের প্রথম ধাপ। আর এখন চলছে বিয়ের মৌসুম। চারদিকে বাজছে বিয়ের বাজনা। এই বিয়ে নিয়েই আছে অনেক আচার-প্রথা। প্রতিটি আচার-প্রথারই আছে আবার নানা রকম আয়োজন। এবার জেনে নেওয়া যাক বিয়ের সেই সব আচার-প্রথার সাতকাহন।
ফুচকাবিলাস
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ফুচকা, পিঠা কিংবা ঝালমুড়ির দোকান একটি ভিন্ন ধরনের আবহ তৈরি করে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানস্থলের কোনো এক কোণে দোকানদার তার পসরা সাজিয়ে বসে আর অতিথিরা যাঁর যাঁর মতো সেসব কিনে খান। এ রকম ফুচকা, পিঠা এবং ঝালমুড়ির দোকান দিতে চাইলে যেকোনো ফুচকা, পিঠা কিংবা ঝালমুড়িওয়ালাকে অতিথির সংখ্যাসহ একদিন আগে বলে রাখলেই হবে। তাদের তেমন কোনো চাহিদা থাকে না। সারাদিন তারা যা বিক্রি করবে তার ওপর অল্প কিছু বকশিশ দিলেই তারা খুশি।

আনন্দ মুহূর্তের নান্দনিক ছবি

বিয়ের মুহূর্তটি সবার জীবনের একটি বিশেষ পাওয়া। এ স্মৃতি ধরে রাখতে কে না চায়। এই মুহূর্তগুলো বাঁচিয়ে রাখার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো ছবি বা ভিডিও। আগামী দিনগুলোয় স্মৃতির পাতা হাতড়ে যেন বিয়ের মুহূর্তগুলো ফিরে পাওয়া যায় ছবি বা ভিডিওতে—এর জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে বিয়ের সময়। বিয়ের ছবিগুলো নিপুণ যত্নে আপনার হাতে পৌঁছে দিতে পারে একজন ভালো চিত্রগ্রাহক। বললেন, বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলে এমন একটি প্রষ্ঠািন ওয়েডিং চ্যাপেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও চিত্রগ্রাহক সুমন ইস্যু।

 মেকআপ তোলা

অনুষ্ঠান শেষে মেকআপ তোলা আর বাঁধা চুল খোলা সব কনের কাছে এক ভয়াবহ সমস্যা! সহজ সমাধান বাতলে দিলেন ফারজানা আরমান—আজকাল ভারী মেকআপ তেমন করা হয় না। হালকা মেকআপ হলে তুলায় বেবি অয়েল বা বেবি লোশন দিয়ে মুখের বেইজ মেকআপটা তোলা যাবে। একটু কড়া মেকআপ মুছতে ক্লিনজিং মিল্ক তুলায় লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। চোখসাজটা একটু ভারী হয়েই থাকে, সে ক্ষেত্রে ‘আই মেকআপ রিমুভার’ ব্যবহার করাটাই শ্রেয় এবং অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের সব প্রসাধন ব্যবহার করতে হবে।
স্প্রে করে বাঁধা চুল ছাড়াতে প্রথমে চুলে ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে মোটা দাঁতের চিরুনিতে জটটা আলতোভাবে ছাড়িয়ে নিন। তারপর শ্যাম্পু করুন। একটু বেশি করে কন্ডিশনার লাগিয়ে পাঁচ-সাত মিনিট রাখুন। পরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন।

 বউসাজের সাতকথা

হলুদবরণ সাজে যে শ্রেষ্ঠা, লাজরাঙা কনেসাজে যে রাজেন্দ্রানী—সে যে বিয়ের কনেটিই! জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষণটিতে কোনো মেয়েই না চায় অদ্বিতীয়া হতে? আর তাই কন্যাদের চাই সেরা কনেসাজ। চাই নিজেকে অপরূপা করতে খানিকটা বাড়তি যত্ন-আত্তিও।
ইচ্ছেটা তো ষোলআনা, সময়টা কম। এ যুগের শশব্যস্ত মেয়েদের চাকরির ছুটিতে, পড়াশোনার কয়েক দিনের অবসরে চটপট সারতে হচ্ছে বিয়ের কাজটুকু। আবার নিজের বিয়ের বাজার থেকে শুরু করে মঞ্চের ফুলসজ্জার তদারকি—সব কাজেই দিনমান দৌড়ঝাঁপ এখন কনেরাই করছে। এই ঠাসবুনোট কর্মতালিকায় সব কনের অপ্সরী হওয়ার ইচ্ছে পূরণের সুযোগটা করে দিচ্ছে বিউটি পারলার। কনের পূর্ণাঙ্গ সৌন্দর্যবর্ধনে পারলারগুলোয় এখন থাকে ব্রাইড বা কনের জন্যই বিশেষ ‘ব্রাইডাল প্যাকেজ’।

বর-কনের বাহারি বাহন

পালকি চড়ে বউ আসবে, ঘোড়ার গাড়িতে করে বর। অথবা এসব কিছু নয়, একদম আধুনিক কায়দায় বর-বউ যাবে ফুলের সাজে সাজানো গাড়িতে চড়ে। যেটাই হোক না কেন, আগে জানা থাকা চাই এসব বাহন কোথা থেকে, কিভাবে যোগাড় করা যাবে।

ঘোড়ার গাড়ি
অনেকেই বিয়ের অনুষ্ঠানে আভিজাত্য আর বৈচিত্র্যময়তা প্রকাশ করতে চায়। বিয়ের আয়োজনকে একটু ভিন্ন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে ঘোড়ার গাড়ি বা টমটম ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্য বাহনের মতো ঘোড়ার গাড়ির ভাড়াও দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। দূরত্ব কমবেশির ওপর ভাড়া কমবেশি হয়। ঢাকার মধ্যে সারা দিনের জন্য ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। যদি একটু দূরের পথ হয় তবে ভাড়া কিছুটা বেশি দিতে হবে।
ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। ঘোড়া ও গাড়ি আলাদাভাবে সাজাতে পারেন। সাজাতে খরচ পড়বে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। আর যদি নিজে সাজানোর ঝামেলা নিতে না চান, তবে ভাড়ার সঙ্গে সাজানোর খরচ যোগ করে দিলেই পেয়ে যাবেন সুন্দরভাবে সাজানো ঘোড়ার গাড়ি।

হলুদ উৎসবের তত্ত্ব তালাশ

বিয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর মজার দিক হলো গায়ে হলুদ। যত তোড়জোড় সবই থাকে এই হলুদবরণ উত্সবকে ঘিরে। কেননা বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে এবং কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে হলুদের তত্ত্ব পাঠাতে হয়। সেই তত্ত্ব দিয়েই সাজানো হয় বর-কনেকে। তাই তো গায়ে হলুদের দিন আগেই এসব সাজাতে বসে যান সবাই। কেউ ডালা-কুলা, কেউ বা সুন্দর মোড়কে মুড়িয়ে দিচ্ছেন উপহারসামগ্রী। অনেকে হাঁড়িতে রং করান। এসব হাঁড়ি হলুদের মঞ্চে, মিষ্টির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আগের মতো সুটকেসে করে তত্ত্ব পাঠানোর রীতি কমে গেছে। বিয়ের সামগ্রীগুলোও এখন হলুদের তত্ত্বের সঙ্গেই পাঠানো হয়। সে জন্যই এখন এই তত্ত্ব সাজানোই শিল্পে রূপ নিয়েছে। বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব আনার জন্য শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা।