RSS

Sunday, May 16, 2010

স্বপ্ন ছড়ানো লিভিং রুম

জার্মান দার্শনিক ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের মত অনুযায়ী, মানুষের প্রাচীনতম পাওয়ার আকাঙক্ষা হল ঝিনুকের খোলার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার ইচ্ছে। শুনতে অদ্ভূত লাগলেও এটা সত্যি, মানুষ যখন ইগলুতে বাস করে কিংবা গুহায় কি কুঁড়ে ঘরে বাসস্থান গড়ে, তখন লক্ষ্য থাকে একটাই-নিরাপত্তা, গোপনীয়তা আর কিঞ্চিৎ আরামের আয়োজন করা। মানুষ এমনই জীব, যার সামাজিকতা চাই, বন্ধুত্ব-মেলামেশা, আবার চাই প্রাইভেসিও। এমন ঘর চাই যেখানে প্রচুর বন্ধু আসবে, চলবে আড্ডা, হইচই, হুল্লোড়, খানাপিনা অথবা স্রেফ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিনোদনে ডুবে থাকা যাবে নিশ্চিন্তে। এর জন্যেই এল লিভিং রুম আইডিয়া। আসলে, পুরনো দিনে যে ঘরটি এমনিতে বন্ধ রাখা হত আর বিয়ে বা পুজো উপলক্ষে খুলে দেওয়া হত বন্ধু বা আত্মীয়ের জন্যে, সেটিই আজকের লিভিংরুম। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, ব্যস্ততম দ্রুতগতির জীবন ‘ওপেন প্ল্যান লিভিং কনসেপ্ট’-এর জন্ম দিয়েছে। বাড়ির বিভিন্ন ঘর যে অংশটিতে এসে মিলে যাচ্ছে, যুক্ত হচ্ছে, তাকেই বলা হচ্ছে লিভিং।


লিভিং রুম একদিকে যেমন শিল্প এবং হস্তশিল্পের অনবদ্য সমাহারে গৃহস্থের রুচি ও ব্যক্তিত্বের পরিচয়, অন্য দিকে তেমনই বাড়ির প্রতিটি সদস্য এবং আগত বন্ধুদের পক্ষে আবশ্যিকভাবে আন্তরিক হওয়া উচিত। অবশ্যই ঘরটিতে থাকতে হবে প্রচুর বসার জায়গা, যেমন সোফা, চেয়ার বা কোচ। প্রতিটিই হবে আরামদায়ক। আমাদের দেশের মতো ব্যবস্থায়, যেখানে এখনও যৌথ পরিবার প্রথা চালু আছে, সেখানে তো বটেই, যে কোনও লিভিং রুমেই একাধিক কনভারসেশন এরিয়া রাখা উচিত। অর্থাৎ বসার ব্যবস্থা এমন করে করতে হবে যেন বিভিন্ন বয়সের, নানা মেজাজের মানুষ একই সময়ে পছন্দমত দলে ভাগ হয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন।

আধুনিক জীবনযাপনের আনুষঙ্গিক যন্ত্রগুলো, যেমন মিউজিক সিস্টেম, টেলিভিশন, ম্যাগাজিন, ডিস্ক, রেকর্ড, বই, আরও নানা ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, খেলার সরঞ্জাম, বোতল ইত্যাদি রাখা হয় লিভিংরুমেই। এত জিনিসপত্র রাখার উপযোগী ঘর অনেকেরই থাকে না। বড়সড় একটি ওয়াল ক্যাবিনেট থাকলে সব কিছুই ধরে যায় ঠিকই, কিন্তু সব ক্যাবিনেট ছোট-ছোট ইউনিটে ভাগ করা সবচেয়ে ভাল, দরকার পড়লে সরিয়ে নেওয়া যাবে। ক্যাবিনেটে সবকিছু এমনভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে যাতে সব মিলিয়ে একটা

রুচির পরিচয় ফুটে ওঠে! উপমহাদেশীয় পেন্টিং, ভাস্কর্য, গ্রাফিক দিয়ে সাজিয়ে তুলুন আপনার লিভিংরুম। পশ্চিমি স্টাইলের মেশিন-নির্মিত শো-পিসের থেকে এগুলো বহুগুণ বেশি রুচির পরিচায়ক। অথচ অর্থনৈতিক খোলা হাওয়ায় এগুলোই আমাদের মার্কেট ছেয়ে ফেলছে। আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে, যেখানে প্রতিটা বর্গ ইঞ্চি আঁটোসাঁটোভাবে অঙ্ক করা, সেখানে আলাদা ডাইনিংরুম অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে লিভিংরুমেই এই ব্যবস্থা করতে হয়। যদিও ডাইনিং অঞ্চলে একটু গোপনীয়তাই বাঞ্ছনীয়। এজন্যে একটা পরদা বা ডিভাইডারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যদি তাতে দমবন্ধ ভাব তৈরি না হয়। অন্য মেটেরিয়ালের তুলনায় কাচের তৈরি জিনিসই ব্যবহার করা ভাল। ডাইনিং চেয়ার হবে সোজা, হালকা; লিভিংরুম চেয়ারের ঠিক উল্টো। এমন কাঠের মিস্ত্রিকে দিয়েই চেয়ার করানো উচিত, যার চেয়ার তৈরি করায় সুনাম আছে। ডাইনিং টেবিলের বেস কাঠ, পাথর বা ধাতুর তৈরি হতে পারে। টেবলটপ হিসেবে কাঁচই জনপ্রিয়। পরিষ্কার করা যায় সহজে, দামও সাধ্যের মধ্যেই। ডাইনিং কিচেনের কাছাকাছি হলে ভাল হয়।

যেহেতু লিভিংরুম আমাদের নানা কাজে ব্যবহৃত হয়, সেভাবেই ব্যবস্থা রাখা উচিত। সিটিং এরিয়া, ইজিচেয়ারের সঙ্গে বই পড়ার ব্যবস্থা, ডাইনিং প্লেস বা একটা পিয়ানো সমেত মিউজিক অঞ্চল, সবকিছুর নির্দিষ্ট অঞ্চল থাকবে। পেন্ট আর লাইটিংয়ের সাহায্যেও এই ডিভিশন দৃশ্যমান করে রাখা যায় বিশেষভাবে। আবার অন্যভাবেও বড় ভূমিকা আছে। বসার জায়গার জন্যে প্রয়োজন ইন্টিমেট লাইট; পড়া বা কোনও কাজ করার জন্যে স্পষ্ট বা ফ্লেক্সিবল আলো প্রয়োজন। খাওয়ার জায়গায় সবচেয়ে ভাল হয় ঝুলানো আলোর ব্যবহার, ঠিক টেবিলের উপরে থাকবে। ঘরটিকে সামগ্রিকভাবে রোমান্টিক আবেদন দেওয়া যায় লুকনো আলোর ব্যবহারে। তাক, ফার্নিচারের পিছনে থাকবে এই সব আলো। কোনও বিশেষ শিল্পবস্তু আলোকিত করা যায় স্পষ্ট লাইটের ব্যবহার করে। এ কথা নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করবেন না যে, লিভিংরুম সমসাময়িক কালের প্রতিচ্ছবি!

0 comments:

Post a Comment