RSS

Monday, September 19, 2011

মনোযোগ বাড়াতে

সময়টা যেন খুব দ্রুত চলছে। তার ছাপ পড়ছে সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো মানুষের মনেও। অনেকেরই দেখা যায়, একটি বিষয়ের প্রতি নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগের অভাব। কেউ বা একাধিক কাজের চাপে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। কোন কাজ আগে করবেন, আর কোনটি পরে—তা বাছাই করতে পারেন না। এর অন্যতম কারণ, মনোযোগ দিতে না পারা।

মনোযোগহীনতা কি রোগ?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল বলেন, ‘মনোযোগ মানসিক স্বাস্থ্যের একটি উপাদান। কিন্তু পড়ায় মন নেই, কাজে মনোযোগ নেই, পরিবারের প্রতি মনোযোগ নেই—এগুলো সম্পূর্ণ আপেক্ষিক কথা। মনোযোগ সৃষ্টিশীলতার অনুষঙ্গ, তাই দেখা যাবে, ছাত্রটির মনোযোগ গানের প্রতি বেশি বা ফেসবুকের প্রতি বেশি। যিনি কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না, তিনি হয়তো পরিবারে মনোযোগী। আর পরিবারের উদাসীন মানুষটি হয়তো একনিষ্ঠ কর্মী। তাই মনোযোগহীনতা কথাটা আপেক্ষিক। যদি দেখা যায়, তিনি কিছুতেই কোথাও মনোযোগ দিতে পারেন না, তখন বলতে হবে তাঁর মেধার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এই মনোযোগহীনতা যখন হতাশা এবং অতি উদ্বেগের পর্যায়ে চলে যায়, তখন এটি রূপান্তরিত হয় রোগে।

কেন নষ্ট হয় মনোযোগ


মোহিত কামাল বলেন, মনোযোগ একদিকে কেন্দ্রীভূত না রাখতে পারার সঙ্গে বয়সের একটি সম্পর্ক আছে। যাঁরা ৫০-এর বেশি বয়সের, তাঁরা শারীরিক কারণেই একটু অমনোযোগী হতে পারেন। আর যাঁরা অতিরিক্ত কর্মব্যস্ত, তাঁরা একাধিক কাজের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ দিতে পারেন না। আর তরুণদের ক্ষেত্রে বলব, যুগের অস্থিরতা মানসিক যাতনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই তরুণেরা একদিকে মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে খুবই কম। পাশাপাশি হরমোনজনিত ব্যাপার তো জড়িত আছেই।

মনোযোগহীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও হতাশা

মনোযোগহীন মনের সঙ্গে সিদ্ধান্তহীনতা, সব শেষে জীবন ও কাজের প্রতি হতাশার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সোজা কথায়, মনোযোগ দিতে না পারলে আপনার স্মৃতিতে ঘটনার নিবন্ধন হবে না, পরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে হতাশা আসবেই। অথচ চলতে-ফিরতে আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবেই। অবশ্য কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁরা সব সময়ই সিদ্ধান্তে টলমল করতে থাকেন। এটি কাজের চাপেও হতে পারে, স্মৃতিশক্তি কমে গেলেও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত চিকির‌্যাসা প্রয়োজন।

মনোযোগ ধরে রাখতে

ঢাকার শান্তিনগরে অবস্থিত ‘ইয়োগা স্পিরিট’-এর যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক ও বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. হারুন বলেন, মনোযোগ ধরে রাখার অভ্যাসটি মনস্তাত্ত্বিক হলেও কিছু কিছু অনুশীলনের মাধ্যমে মনোযোগ দেওয়ার অভ্যাস তৈরি করা যায় এবং এর মধ্যে একটি উপায় হলো ইয়োগা বা যোগব্যায়াম। এর মাধ্যমে মনোযোগী ব্যক্তিটি মনোযোগ বাড়াতে শিখবেন, পাশাপাশি অস্থির মানুষটিও মনোযোগী হতে শিখবেন। শুধু চাই মনোযোগী হওয়ার ইচ্ছা।

কিছু পরামর্শ

 যদি আপনার সন্তান পড়ালেখায় মনোযোগী না হয়, বুঝে নেবেন, সে অন্য কোথাও মনোযোগ বেশি দিচ্ছে। খুঁজে বের করুন সেই উর‌্যাসটা কী। যদি তা ভালো কিছু হয়, যেমন গান, নাচ, বই পড়া, কবিতা, বিতর্ক, তাকে উর‌্যাসাহ দিন এবং পাশাপাশি পড়ালেখার কথা স্মরণ করিয়ে দিন। আপনার উর‌্যাসাহে সেও পড়ালেখার প্রতি উর‌্যাসাহিত হবে।
 আপনার সন্তানের মনোযোগের কেন্দ্র যদি হয় নেশা, আসক্তি, নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট কিংবা ক্ষতিকর কিছু, তাহলে জেনে রাখুন, সে অবস্থা থেকে সন্তানকে সরাসরি পড়ালেখায় মনোযোগী করা খুব দুরূহ একটি ব্যাপার। তাই তাকে প্রথমে ইতিবাচক বিনোদনের দিকে উর‌্যাসাহিত করুন। এরপর তাকে পড়ার প্রতি মনোযোগী করাটাও সহজ হবে।
 মনোযোগ বাড়াতে হলে কাজের মধ্যে প্রেষণা খুঁজে নিতে হবে। প্রেষণার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা ও উর‌্যাসাহকে নাড়া দিতে পারলেই মনোযোগ বাড়বে।
 প্রতিদিনের কাজের একটি গুরুত্বানুসারে সাজানো তালিকা তৈরি করুন। দুশ্চিন্তা কমবে। মনোযোগও থাকবে।
 শরীরের পাশাপাশি মনেরও কিছু ব্যায়াম আছে। যাঁরা উদ্বেগ কিংবা তীব্র হতাশায় ভোগেন, তা কাটিয়ে উঠতে পারলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
 মনোযোগের অভাব যদি রোগের পর্যায়ে না চলে যায়, তাহলে মেডিটেশন করতে পারেন। ইয়োগা, শ্বাসের কিছু ব্যায়ামও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক মো. হারুনও মনোযোগ বাড়াতে যোগব্যায়ামের ওপর বেশ গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, অর্ধমর‌্যাসন্দ্রাসন, পুরুষ্কাসন সর্বাঙ্গাসন ও শিথিল হওয়া মনোযোগ বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর কিছু আসন ও ব্যায়াম। কীভাবে কিছু আসনের সহায্যে মনোযোগ বাড়াবেন, তার কিছু পরামর্শ হলো:
বসে অথবা শবাসনে শুয়ে চোখ বন্ধ করুন। পায়ের আঙুল থেকে শুরু করে মাথার চুল, প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করুন। ১৫-২০ মিনিট এভাবে চিন্তাশূন্য থেকে চেষ্টা করুন। আপনার শরীর ও মনের স্থিরতা ফিরে আসবে।
বজ্রাসনে বসুন। দুই হাতে, দুই পায়ের গোড়ালি চেপে ধরুন। মাথার তালু দুই হাঁটুর মধ্যে মেঝেতে রাখতে হবে। নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর গোড়ালি থেকে যতটুকু সম্ভব ওপরে তুলতে হবে। মনে রাখবেন, এ অবস্থায় গোড়ালি লাগানো থাকবে ও মাথার তালু যতটুকু সম্ভব হাঁটুর কাছে থাকবে। কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড এভাবে স্থির থাকবেন। খেয়াল রাখবেন, নিঃশ্বাস যেন স্বাভাবিক থাকে। ১০ সেকেন্ড পর কোমর ধীরে ধীরে নামিয়ে গোড়ালির ওপর রাখুন। এবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে আগের অবস্থায় চলে আসুন। পরপর তিনবার করবেন। প্রতিবার করা শেষে শবাসনে ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নেবেন।
প্রথমে বজ্রাসনে বসুন। তারপর হাঁটুগেড়ে নিলডাউনে বসার ভঙ্গিমায় আসুন। ডান হাঁটু ও বাঁ হাঁটু ছয় ইঞ্চি করে ডানে ও বাঁয়ে নিন। অর্থার‌্যা দুই পায়ের পাতার ফাঁকে এক ফুট ফাঁকা থাকবে। দুই হাতের তালু দুই ঊরুর ওপর রাখুন। নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোমর থেকে ওপরের অংশ যত সম্ভব পেছনে নিন এবং ডান হাতে ডান পায়ের ও বাঁ হাতে বাঁ পায়ের গোড়ালি চেপে ধরুন। মাথা সম্পূর্ণ পেছনে এলিয়ে দিন। এ অবস্থায় কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর আবার নিলডাউনে চলে আসুন। এর পর বজ্রাসনে বসুন। এভাবে তিনবার অনুশীলন করুন। মনে রাখবেন, প্রতিবার আসন শেষে শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।
মনোযোগ বাড়াতে এসব আসন-অভ্যাস করলে আপনার মনই শুধু নয়, শরীরও সুস্থ থাকবে।

0 comments:

Post a Comment