RSS

Saturday, July 9, 2011

শরীর ঠিক তো মনও ঠিক

শরীর, মন, প্রাণ—এ তিনটি একসঙ্গে বাঁধতে ব্যায়ামের নেই জুড়ি। শারীরিক ব্যায়ামের মধ্যে বেছে নিতে পারেন যোগব্যায়ামের সূর্য নমস্কার। যোগব্যায়ামের আগে শরীরকে আসনের উপযোগী করে তুলতে যে ব্যায়ামগুলো অভ্যাস করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘সূর্য নমস্কার’। বলছিলেন প্রশান্তি ইয়োগা, আয়ুর্বেদ অ্যান্ড ন্যাচারোপ্যাথি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রশিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস।

পূর্বপ্রস্তুতি
পাঁচ থেকে ৯৫ বছরের যেকোনো বয়সেই আসন শুরু করা যেতে পারে। তবে আসন শুরুর আগে সঠিকভাবে আসন সম্পর্কে জেনে নিন।
 সকাল ও সন্ধ্যা এ আসন অভ্যাসের উপযুক্ত সময়।
 ভারী খাবার খাওয়ার তিন ঘণ্টা পর, হালকা খাবার খাওয়ার দেড় ঘণ্টা পর এবং পানীয় খাওয়ার ৩০ মিনিট পর এ আসনটি অভ্যাস করুন।
 ব্যায়ামের উপযোগী খুব ঢিলেঢালা নয়, আবার খুব আঁটসাঁট নয় এমন পোশাক পরুন।
 প্রতিটি আসনের পর বিশ্রাম নেবেন।
 যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁরা এ আসনটি করা থেকে বিরত থাকুন।
 কোমরে ব্যথা থাকলে দ্বিতীয় ও একাদশ ধাপ করা নিষেধ।
আপনিও কোনো অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে নিজে নিজেই অভ্যাস করতে পারেন সূর্য নমস্কার।

সূর্য নমস্কারের ধাপ
প্রথমে পা দুটিকে জোড়া করুন। তালু দুটিকে বুকের সামনে প্রণাম করার ভঙ্গিতে লাগিয়ে সোজা অবস্থায় দাঁড়ান।

প্রথম ধাপ
সূর্য নমস্কারের প্রথম ধাপ হলো অর্ধচন্দ্রাসন। শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটিকে মাথার ওপর সোজা করে পেছনের দিকে ৯০ ডিগ্রি বাঁকা হওয়ার চেষ্টা করুন এবং অল্প কিছু সময় থাকুন।

দ্বিতীয় ধাপ
এবার সহজ পদহস্তাসন। প্রথম অবস্থা থেকে দ্বিতীয় স্থিতিতে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা হয়ে ঝুঁকুন। পা সোজা রেখে হাত দুটিকে পায়ের পাতার পাশে এবং মাথাটিকে হাঁটুতে লাগানোর চেষ্টা করুন।

তৃতীয় ধাপ
দ্বিতীয় আসন থেকে তৃতীয় আসনে যাওয়ার সময় ডান অথবা শ্বাস নিতে নিতে বাঁ পা পেছন দিকে সোজা করুন, কোমরে চাপ দিন এবং মাথা ওপরের দিকে রাখুন। এটিকে বলা হয় অশ্ব সঞ্চালনাসন।

চতুর্থ ধাপ
চতুর্থ ধাপ হলো সেতু আসন। তৃতীয় আসনে যে পা পেছনে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার বিপরীত পা-কেও পেছনে নিয়ে যান এবং পরে গোড়ালি থেকে কাঁধ একটি সোজা লাইনে রাখুন। এ সময় মাথা সামনে থাকবে। এ অবস্থায় শ্বাস ত্যাগ করতে হবে।

পঞ্চম ধাপ
চতুর্থ আসন থেকে পঞ্চম আসন শশংকাসনে আসার সময় প্রথমে গোড়ালির ওপর বসে শ্বাস নিতে হবে। হাত দুটি সামনে প্রসারিত করুন এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাথা মেঝেতে স্পর্শ করুন।

ষষ্ঠ ধাপ
শশংকাসন থেকে অষ্টাঙ্গ নমস্কার মুদ্রাসনে আসার সময় শ্বাস নিতে নিতে হাঁটু, বুক ও থুতনি মেঝে স্পর্শ থাকা অবস্থায় শ্বাস ছেড়ে দিন এবং দম বন্ধ রাখুন।

সপ্তম ধাপ
ষষ্ঠ ধাপ থেকে সর্পাসনে আসার জন্য হাত দুটি সোজা করে মাথাটি ওপরের দিকে নিয়ে আসুন। কোমর নিচে নামান। এ অবস্থায় শ্বাস নিন।

অষ্টম ধাপ
সর্পাসন থেকে পর্বতাসন। এ আসনে কোমর ওপরে তুলুন। হাত সোজা থাকবে এবং হাঁটু ওপরে তুলে পায়ের গোড়ালিকে মেঝেতে স্পর্শ করান। এ সময় শ্বাস ত্যাগ করতে হবে।

নবম ধাপ
পর্বতাসন থেকে শশংকাসনে আসতে হবে পঞ্চম ধাপের মতো।

দশম ধাপ
তৃতীয় ধাপ অশ্ব সঞ্চালনাসনে পা পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই পা-কে প্রথমে দুটি হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে আসুন। কোমরে চাপ দিয়ে শ্বাস নিতে নিতে মাথা ওপরের দিকে নিয়ে যান আগের মতো।

একাদশ ধাপ
অন্য পা দুটি হাতের মধ্যে নিয়ে আসুন। পা সোজা রেখে মাথাকে হাঁটুতে স্পর্শ করানোর চেষ্টা করুন এবং শ্বাস ছাড়ুন। অর্থাৎ তৃতীয় ধাপটির পুনরাবৃত্তি করুন।

দ্বাদশ ধাপ
অবশেষে আবার দ্বিতীয় ধাপটি। শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটি মাথার সঙ্গে লাগিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং পা পেছনের দিকে নিয়ে ৯০ ডিগ্রি বেঁকে যান, অর্থাৎ অর্ধচন্দ্রাসন নিয়ে আপনার সূর্য নমস্কার শেষ করুন।

উপকারিতা
 সূর্য নমস্কার আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরকে সতেজ করে তোলে। ফলে শরীর নমনীয় এবং যেকোনো ব্যায়ামের উপযোগী হয়।
 সূর্য নমস্কারে সারা শরীরের ব্যায়াম হয়। তাই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বলিষ্ঠ ও রোগমুক্ত হয়। এর ফলে হূৎপিণ্ড, ফুসফুস ও পাকস্থলী সবল হয়ে ওঠে।
 সূর্য নমস্কার মেরুদণ্ড ও কোমরকে নমনীয় রাখে এবং এসব জায়গার অতিরিক্ত মেদ দূর করে।
 এই অভ্যাসের ফলে মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং অস্থিমজ্জা সবল হয়। ফলে আম বাত, গিঁটে বাত সহজে আক্রান্ত করতে পারে না।
 সূর্য নমস্কারে রক্তের অশুদ্ধি দূর হয়। ফলে চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এতে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে আসে।
 হাত, পা, বাহু, কাঁধ প্রভৃতি অঙ্গের মাংসপেশি পুষ্ট এবং সুন্দর হয়। ফলে দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
 মানসিক শান্তি, শক্তি ও তেজ বৃদ্ধি পায়।
 দেহকে অতিরিক্ত মেদ জমা থেকে বিরত রাখে।
 চুলের গোড়া শক্ত করে।
 শরীর-মন সুস্থও সবল রাখে।
মেয়েদের জন্য নিয়মিত সূর্য নমস্কার অভ্যাস অত্যন্ত উপকারী।

0 comments:

Post a Comment