দুই বন্ধুর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক যত গভীরই হোক না কেন, তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতেই পারে। কথাটি সহোদর ভাই-বোনদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ, ভাই-বোনরা বন্ধুর মতোই। দুজন যদি শিশু এবং পিঠাপিঠি হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। কারণে-অকারণে ঝগড়া, হাতাহাতি লেগেই থাকে। মাঝে মাঝে এমনও হয়_তাদের ঝগড়া ভাঙাতে মা-বাবা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তারা ছেলেমেয়েদের গায়ে হাত তুলতেও বাধ্য হন। তবে মা-বাবা হাত তুলুন আর যাই করুন, যারা ঝগড়াঝাটি কিংবা হাতাহাতিটা করছে, তাদের কিছুই যায় আসে না। তারা কিছু সময়ের জন্যে হয়তো বন্ধুর মতো আচরণ করে, তারপর একটু সুযোগ পেলেই শুরু করে দেয় শত্রুর আচরণ। এই দৃশ্য দেখা যায় সবার ঘরে ঘরে।
যে কারণে এটি সব মা-বাবার কাছে বেশ স্বাভাবিক বিষয়। হঁ্যা, বিষয়টা স্বাভাবিকই বটে। তবে স্বাভাবিক বিষয়ও কখনো কখনো অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ভাই-বোনের ঝগড়াঝাটি যখন হয়, তখনই যদি বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যায়, তাহলে আর কোনো সমস্যাই থাকে না। কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিষ্পত্তি না হয়ে যদি বিষয়টি অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায় এবং শিশুমনে যদি এর কোনো প্রভাব থেকে যায়, তাহলে অবশ্যই সেটা অনেক বড় সমস্যা। কারণ, যে বয়সে একটি ছেলে অথবা মেয়ে মারামারি করে, সে বয়সে কোনো বিষয়ে যদি সে আঘাত পায় কিংবা কোনো কারণে যদি তার মনে ভয় ঢোকে, তাহলে সারাজীবন এর জন্যে ভোগান্তি পোহাতে হবে। আর কিছু না হোক, দেখা যাবে এই দুই ভাই-বোনের মধ্যে আজীবনের জন্যে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। সামাজিক জীবনে যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। এ ধরনের পরিণাম যেন দেখতে না হয়, এজন্যে মা- বাবার উচিত সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া।
মনোমালিন্য কখন হয়
ভাই-বোনের মধ্যে মনোমালিন্য হতে পারে বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তবে একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রধানত দুটি কারণে মনোমালিন্যের সূত্রপাত হয়। প্রথম যে কারণ সেটি হলো_পরিবারে দ্বিতীয় সন্তানের আগমন। অর্থাৎ যে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি এতদিন ধরে এককভাবে মা-বাবার আদর-ভালোবাসা পেয়ে আসছিল, সে যখন দেখে তার আরেকটি ভাই কিংবা বোন হয়েছে আর সব আদর সে নিয়ে নিচ্ছে, তখন তার মধ্যে একটু হলেও হিংসে কাজ করে। দ্বিতীয় ভাই কিংবা বোনের জন্মের পর যেহেতু তার প্রতি মা-বাবার আদর একটু কমে গেছে, তাই সে সবকিছুর জন্যে দায়ী করতে থাকে নবজাতককে। এভাবেই মনোমালিন্যের শুরু। দ্বিতীয় কারণটি হলো বয়সের ব্যবধান। দশ বছরের একটি শিশু সব বিষয়ে মোটামুটি ভালোই জ্ঞান রাখে, যা চার বছরের একটা শিশুর থাকে না। চার বছরের শিশুটি যখন তার দশ বছরের ভাই অথবা বোনকে এটা সেটা সম্পর্কে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকে, তখন সে বিরক্ত হয়ে ধমক দেয়। এতে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। শুরু হয় মনোমালিন্য। আর ঝগড়াঝাটি হতে থাকে যখন তখন।
মা-বাবার করণীয়
ছেলেমেয়ের ঝগড়াঝাটি হোক কিংবা ঝগড়াঝাটি পরবতর্ী মনোমালিন্যই হোক, সবকিছুর সমাধান করতে হবে মা-বাবাকেই। সচেতন থাকতে হবে, তারা যেন এতো দূর পর্যন্ত যেতে না পারে। এর জন্যে তাদের কিছু কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন_
০০ শিশুরা যদিও পরিপূর্ণ মানুষ নয়; তবু পরিপূর্ণ মানুষের মতোই ব্যক্তিত্ব রয়েছে তাদের। পরিপূর্ণ মানুষের একেকজনের ব্যক্তিত্ব যেমন একেকরকম, ঠিক তেমনি একেকটি শিশুর ব্যক্তিত্বও একেকরকম। তাই মা-বাবার উচিত তাদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্বকেই গুরুত্ব দেওয়া। তারা যদি এক শিশুর ব্যক্তিত্ব অন্য শিশুর সাথে তুলনা করতে যান এবং সেই অনুযায়ী যদি তাদেরকে মূল্যায়ন করেন, তাহলে এই শিশুদের মনের মধ্যে বিষয়টা তখনই ঢুকে যাবে। শুরু হবে মনোমালিন্য। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
০০ সব বাবা-মা নন; তবে কিছু কিছু বাবা-মা এমন আছেন যারা তাদের সন্তানের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করেন। কোনো বাবা-মায়ের মধ্যে যদি পক্ষপাতিত্ব থাকে, তাহলে তাদের ছেলেমেয়ে কখনোই স্বাভাবিক হবে না। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য তো থাকবেই, উগ্র ভাবও থাকতে পারে। তাই আপনার উচিত অবশ্যই নিরপেক্ষ হওয়া। নিরপেক্ষ বাবা-মা যেকোনো সন্তানের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। তারা তখন নিজেরা নিজেরা মনোমালিন্য করে না বরং যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে মা-বাবার কাছে বলে কিংবা নালিশ করে।
০০ বাচ্চারা যখন কোনো বিষয়ে কথাকাটাকাটি করে তখন মা-বাবার উচিত হবে, তাদের সব কথা শুনে তারপর কিছু একটা বলা। যদি কথাকাটাকাটির শুরুতেই তাদেরকে থামিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কারো বিরুদ্ধে কোনো সত্য অভিযোগ থাকলেও তারা সেটা প্রকাশ করার সুযোগ পাবে না। ফলে নিজেরা মনে মনে কষ্ট পেতে থাকবে। আর মনোমালিন্য চলে যাবে চূড়ান্ত পর্যায়ে।
০০ পাড়ার অন্য ছেলেমেয়ে এসে মাঝেমধ্যে সহোদরদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধায়। তাই মা-বাবার উচিত হবে পাড়ার যেসব ছেলেমেয়ের সাথে তাদের সন্তান মিশছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। অর্থাৎ এমন কারো সাথে মিশতে না দেওয়া, যে বা যারা তাদের ছেলেমেয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরাবে।
0 comments:
Post a Comment